করোনা ,লকডাউনে অর্থনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভূত জানালো আরবিআই

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ) বলেছে, ২০০৮ সালের মন্দার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ছাপিয়ে যেতে পারে ১৯৩০ সালের ‘দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা মহামন্দাকেও। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন-এর একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভারতবর্ষে ৪০ কোটি মানুষ চলে যেতে পারেন দারিদ্রসীমার নীচে। সমীক্ষা সংস্থা মুডি’জ তাদের ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৩ থেকে নামিয়ে এনেছে ২.৫ শতাংশে। শুধু তাই নয়, কত দিনে এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা যাবে, তারও কোনও দিক্‌নির্দেশ নেই। 

বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রকাশিত ঋণনীতি রিপোর্টে এক দিকে জারি হল সতর্কবার্তা। বলা হল, করোনার জেরে মন্দার খাদের মুখে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা বিশ্ব অর্থনীতি ভারতের আর্থিক বৃদ্ধিকেও ধাক্কা দেবে। লকডাউনের জেরে গভীর হবে অর্থনীতির ক্ষত। কতটা, তা বলা কঠিন এখনই। অন্য দিকে সেই রিপোর্টেই শোনা গেল শীর্ষ ব্যাঙ্কের আক্ষেপ— ঠিক যখন ২০২০-২১ সালের বৃদ্ধি মাথা তুলবে বলে ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল, তখনই সব ওলটপালট করে দিল কোভিড। এই রিপোর্টে যে প্রসঙ্গগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা হল-

১. করোনা সংক্রমণ দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বদলে দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। সংক্রমণের আগে পর্যন্ত আর্থিক বৃদ্ধির (GDP) একটা ইঙ্গিত দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণ (Corona outbreak) পরবর্তী পর্যায়ে সেই বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হবে। জানিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।

২. বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত পিচ্ছিল। সংক্রমণের প্রভাব, প্রকোপ আর মাত্রার সঙ্গে যোগ হয়েছে লকডাউন। এসবের প্রভাবে বৃদ্ধির হার অনিশ্চিত। এমনটাই বলেছে আরবিআই। 

৩. গ্রাহক মুদ্রাস্ফীতি শেষ তিন মাসে ধার্য হয়েছিল ৬.৭% আর ৩.২% ধার্য হয়েছে চলতি অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসের জন্য। অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ, ২০২১। গ্রাহক মুদ্রাস্ফীতি পর্যালোচনা করে আর্থিক নীতি ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আরবিআই এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে করোনা সংক্রমণ মুদ্রাস্ফিতির ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। অনেক অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, লকডাউনের আবহে চাহিদার সঙ্গে জোগানের ভারসাম্যের তারতম্য হলে মানুষ মজুত করতে শুরু করবে। যা পাইকারি বাজারের কাছে অশনি সঙ্কেত।

৪. বাজারে নগদের জোগান চালু রাখতে একাধিক সিদ্ধান্ত মার্চে নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার মধ্যে অন্যতম রেপো রেট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো। ব্যাঙ্ক আর জনগনের হাতে নগদের জোগান বাড়াতে করখাতে ও ইএমআই ক্ষেত্রে একাধিক বিধি লাঘব করা হয়েছে।আরবিআই সূত্রে খবর বাজারে নগদের জোগান চালু রাখতে চলতি অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে রেপো রেট ৪.৬৫% করা হতে পারে যদি করোনা পরবর্তী সময়ে বাজারের গতি নিম্নমুখী হয়। জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটা সূত্র। যেহেতু পরিস্থিতি অত্যন্ত ঘোলাটে তাই এখনই আগামী দিনের আর্থিক বৃদ্ধির কোনও সম্ভাব্য ইঙ্গিত দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। 

৫. ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী মন্দার ছোঁয়া। কমেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। পণ্যের দামের ক্ষেত্রেও নিম্নগতি পরিলক্ষিত। এই পরিস্থিতি সংক্রমণ পরবর্তী পর্যায়ে জারি থাকবে। ইঙ্গিত আরবিআই সূত্রের। তবে বাজারের দিকে লক্ষ্য রাখছে আরবিআই। অভ্যন্তরীণ চাহিদা স্থিতিশীল রাখতে ও আর্থিক লেনদেনে গতি আনতে সময়েই পদক্ষেপ নেবে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। 

তবে করোনা প্রতিরোধের পরে সব কিছু স্বাভাবিক হলে ভারতের অর্থনীতি ছন্দে ফিরবে বলেও আশা আরবিআইয়ের। যদিও সেটা কবে, সেই উত্তর নেই রিপোর্টে। উল্টে আতঙ্ক উস্কে তাদের মন্তব্য, ভারতের ভবিষ্যতে কোভিডের ছায়া স্পষ্ট। অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা সারিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানো নির্ভর করবে, ভাইরাস সংক্রমণকে কত দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে এবং কত দ্রুত চারপাশ স্বাভাবিক হচ্ছে তার উপরে। 

এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষায় অবশ্য পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার নামবে ৪.৮ শতাংশে। তবে তা একেবারেই প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা। শ্লথ হবে বিশ্ব অর্থনীতি। দুর্ভোগ বেশি বইবে এশীয় প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল। ভুগবে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন