যৌথ বিবৃতি
২২জুন ২০২৫
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশন, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক পার্টি ও সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক-এর পক্ষ থেকে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইরানে আমেরিকার বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে বামপন্থী দলগুলি
আমরা, স্বাক্ষরকারী পাঁচটি বামপন্থী দল, ইরানে আমেরিকার বোমা হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। এটি ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের চরম লঙ্ঘন এবং এই হামলা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বাড়াবে, পশ্চিম এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েল এই হামলার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে বলছে যে, ইরান নাকি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-র মহাসচিব রাফায়েল গ্রোসি ১৯ জুন জানিয়েছেন: “আমরা এমন কোনও প্রমাণ পাইনি যে ইরান পরিকল্পিতভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে।” এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও স্বীকার করেছে যে, তাদের কাছে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্তের কোনও চূড়ান্ত প্রমাণ নেই। উপরন্তু, ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-র একটি স্বাক্ষরকারী দেশ।
এই বাস্তবতা সত্ত্বেও, ইজরায়েল ১২ জুন ইরানের উপর হামলা চালায় যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কোনও সম্ভাব্য আলোচনাই শুরু না হয়। এখন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে এই আগ্রাসনে সামিল হয়েছে, যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই আলোচনার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইজরায়েল জোট কোনও গোয়েন্দা রিপোর্ট বা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা করে না, বরং তারা ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দিতেই বদ্ধপরিকর। এই আগ্রাসনের আসল উদ্দেশ্য হল ইরানকে ধ্বংস করা, পশ্চিম এশিয়ার উপর সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্ব কায়েম করা এবং বিশ্বব্যাপী সম্পদ প্রবাহের উপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এই যুদ্ধের লক্ষ্য মূলত সামরিক-শিল্প পুঁজির স্বার্থ রক্ষা এবং দীর্ঘস্থায়ী সংকট থেকে আন্তর্জাতিক পুঁজির মুক্তির পথ তৈরি করা।
এই হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র B-2 স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ইরানের উপর বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমা ফেলেছে—যেটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণের কথা, যেখানে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যুদ্ধ শুরু করা হয়েছিল। এটা অত্যন্ত বিদ্রূপাত্মক যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—যা একমাত্র দেশ হিসেবে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করেছে, এমনকি তখনও যখন জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ছিল—আজ পারমাণবিক হুমকি নিয়ে কথা বলছে!
এই মার্কিন আগ্রাসন যে যুদ্ধকে ভয়ঙ্কর মাত্রায় বৃদ্ধি করবে এবং বিশ্বশান্তি ও সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকায় বিপর্যয় ডেকে আনবে, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষত ভারতের মতো দেশগুলির জন্য, যাদের পশ্চিম এশিয়ার উপর তেল আমদানি ও অভিবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নির্ভরতা রয়েছে, এই যুদ্ধ ভয়ানক প্রভাব ফেলবে। যুদ্ধজনিত অর্থনৈতিক সংকটের সবচেয়ে বড় শিকার হবে সাধারণ শ্রমজীবী জনগণ।
ভারত সরকারের উচিত অবিলম্বে তার মার্কিনপন্থী ও ইজরায়েল-পন্থী বিদেশনীতি পরিত্যাগ করা এবং যুদ্ধ থামানোর বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়া। আমরা আমাদের সমস্ত ইউনিটকে আহ্বান জানাচ্ছি যাতে অবিলম্বে এই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করা হয় এবং দেশের সমস্ত শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—আমাদের সঙ্গে এই মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হোন।
এম. এ বেবি সাধারণ সম্পাদক সিপিআই(এম), ডি রাজা সাধারণ সম্পাদক সিপিআই, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সাধারণ সম্পাদক সিপিআই(এমএল)-লিবারেশন, মনোজ ভট্টাচার্য সাধারণ সম্পাদক আরএসপি, জি. দেবরাজন সাধারণ সম্পাদক এআইএফবি