বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ এর বিরূদ্ধে লড়াই এ উত্তাল ভারতবর্ষ অগ্নিগর্ভ ভারতবর্ষের মাটিতে ,৫ই নভেম্বর ১৯১৩,উত্তরপ্রদেশের বারানসীর কাশীতে জন্মগ্রহণ করেন সুকুমার সেনগুপ্ত (মামার বাড়িতে ) ।আদি বাড়ি বর্ধমানের কাটোয়ায়।বাবা চারুচন্দ্র সেনগুপ্ত,মা বিভামনি সেনগুপ্ত।বাবা ছিলেন বিহারের পুসায় এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের স্টাফ ।প্রাথমিক শিক্ষা সেখানেই। বিহার থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করে চলে আসেন মেদিনীপুরে কাকার বাড়িতে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে।ইন্টারমিডিয়েট পাঠরত অবস্থাতেই যোগ দেন স্বাধীনতা সংগ্রামে । ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৩৪ সালে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।ঢাকা সেন্ট্রাল জেল,আলিপুর সেন্ট্রাল জেল ঘুরিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দামান সেলুলার জেলে।সেখানেই তার পরিচয় হয় গনেশ ঘোষ,অনন্ত সিং প্রমুখ বিপ্লবীদের সাথে।
রাজনেতিক বন্দীর মর্যাদা,রাজবন্দীদের মুক্তি প্রভৃতি দাবিতে জেলে ৩৭ দিনের লাগাতার অনশনে অংশ নেন। ১৯৩৮ সালের ১৮ই জানুয়ারী গনেশ ঘোষ ও অন্যান্যদের সাথে তাকেও জাহাজে তুলে কলকাতায় পাঠানো হয়। জায়গা হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। সেখানেই অর্জন করেন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ। পার্টি তখন বেআইনি ।
১৯৩৯ এ আবার সমস্ত রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবিতে ৩৬ দিনের লাগাতার অনশনে অংশগ্রহন করেন। এই লড়াই প্রায় বিজয়ের মুখে গেলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছুতোয় পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৬ এর ৩১শে আগস্ট মুক্তি পান জেল থেকে। মুক্ত সুকুমার সেনগুপ্ত কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা অফিস ,কলকাতার ডেকার্স লেনের অফিস,গোয়াবাগান লেনের পার্টি কমিউন ঘুরে পার্টির নির্দেশে চলে আসেন মেদিনীপুরে। জেল থেকে বেরিয়েই নিজেকে নিয়োজিত করেন পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে।
মেদিনীপুর জেলায় প্রথম পার্টি সম্মেলন হয়েছিল ১৯৪৩ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৫ জন সদস্যকে নিয়ে। ১৯৪৭ সালের এপ্রিলে ৫০৪ জন সভ্যকে নিয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনে সুকুমার সেনগুপ্ত অংশ নেন এবং সম্মেলন থেকেই নির্বাচিত হন জেলা কমিটিতে। ১৯৪৮ এ গ্রহণ করেন জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব।
স্বাধীন ভারতেও পার্টির কাজ করতে গিয়ে তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত প্রথম দফার জেলা কমিটির সম্পাদক থাকাকালীনও বেশিরভাগ সময় তাঁকে জেলেই কাটাতে হয়। ১৯৪৮ এর মার্চে পার্টি বেআইনি ঘোষিত হবার সাথে সাথেই তিনি গ্রেপ্তার হন। দমদম জেলে ৬ মাস কাটিয়ে মুক্তি পেয়েই তিনি মেদিনীপুরে ফিরে আসেন। ১৯৫০ এ আবার গ্রেপ্তার হয়েই টানা দু'বছর কাটান বক্সা ক্যাম্পে। ১৯ বছর ৯ মাস দীর্ঘ কারাজীবন সুকুমার সেনগুপ্তের ।
সংশোধনবাদ বিরোধী সংগ্রামের উত্তাল পর্বে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদের বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ৩২ জন সদস্য। মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে ভিত্তি করে সম্পূর্ণ নতুন করেই জেলায় পার্টিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেন।
১৯৬৪ সালের ৬-৭ জুন গড়বেতা শহরে জেলা কনভেনশন থেকে কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্তের উপস্থিতিতে ২৫ জন কে নিয়ে গঠিত হয় পার্টির মেদিনীপুর জেলা কো-অর্ডিনেশন কমিটি। সম্পাদক নির্বাচিত হন সুকুমার সেনগুপ্ত। জুলাই মাসে অন্ধ্রপ্রদেশে তেনালি কনভেনশনে অংশ নিলেও ত্যাগরাজ হলে অনুষ্ঠিত সপ্তম কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেননি আগের রাতেই গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ায়।
সি.পি.আই(এম) গঠিত হবার পর থেকেই তিনি পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য ও মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯২ এ জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। রাজ্যকমিটির সদস্য ছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ছিলেন সি.আই.টি.ইউ-র মেদিনীপুর জেলা কমিটির সভাপতি এবং রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য।
সুকুমার সেনগুপ্ত রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পেনশন কমিটির সভাপতি ছিলেন। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে রাজ্যে যে কমিটি গঠিত হয়,তার অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৯৩,১৬ই সেপ্টেম্বর ,কলকতা পার্টির রক্ত পতাকা উড্ডীন রেখে সি পি আই (এম )রাজ্য কেন্দ্রেই হৃদস্পন্দন স্তব্ধ। সুকুমার দা 'সাবাশ 'বলার মানুষ , মানুষের প্রতি ভালো বাসা ,দুরন্ত সাংগঠনিক দক্ষতা ,আত্ম ত্যাগ ,মতাদর্শের প্রতি অবিচলতায় মানুষেরই হৃদয়ে থাকবেন সুকুমার দা সেলুলার জেলের ফলকে লেখা নাম ,মিউজিয়াম এ থাকা সুকুমার দার ছবি আমাদের আজও গর্বিত করে । সূত্র - আমাদের পূর্বসূরিরা - এন বি এ
শেয়ার করুন