জনগণের কন্ঠস্বর শোনোঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে প্রতিহত কর
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো মোদী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে যাতে একতরফা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে ভারত সফরে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফ থেকে প্রযুক্ত চাপের সামনে তারা মাথা না ঝোঁকান। মার্কিন প্রশাসনের একমাত্র স্বার্থ হল দ্বিতীয়বারের জন্য ভোটের বাজারে ট্রাম্পের দর বাড়িয়ে মার্কিন কর্পোরেটদের আস্থা অর্জন করতে তাদের সামনে পুরস্কারের মতো ভারতের অর্থনৈতিক বাজারকে আরও বেশি মুক্ত করার খবর প্রচার করা।
ভারতের কৃষিক্ষেত্র ও কৃষিজীবীদের স্বার্থে মার্কিনীদের এই কর্মসূচি সবচেয়ে জোরাল এবং সবচেয়ে বেশি বিরুপ প্রভাব ফেলবে, তার সাথে আমাদের দেশের দুগ্ধজাত পণ্য এবং পোল্ট্রি বানিজ্যেও এই প্রভাবের আওতায় পড়বে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কৃষিজীবীদের সর্বনাশ করে সেদেশের বাজার দখল করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দেশের কৃষিবাণিজ্য সংস্থাগুলিকে কৃষিজাত পণ্যের দাম অস্বাভাবিক কম রাখতে সাহায্য হিসাবে ৮৬৭ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেয়। ট্রাম্প চান এদেশে ব্যবসা করে এমন বিদেশি কৃষিবাণিজ্য সংস্থগুলির উপর প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক তুলে নিক ভারত সরকার, এই আমদানি শুল্ক ভারতের কৃষিজীবীদের, খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতিকরণ ক্ষেত্রগুলির এবং সর্বোপরি কোটি কোটি ভারতীয়র রুটিরুজির নিশ্চয়তায় এক নৈতিক পাহারাদার হিসাবে কাজ করে।
ট্রাম্পের নিশানায় ভারতের স্বাস্থ্য-পরিষেবাক্ষেত্রও রয়েছে কারণ এখনও অবধি এই ব্যাবস্থা সুলভে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দেশের বিশালাকায় ফার্মাসিউটিক্যাল কর্পোরেশনগুলিকে এদেশে ব্যবসা করে বিপুল মুনাফা লুঠ করতে দিতে চায়, তাই তারা এদেশে ব্যবসা করতে আসা বৈদেশিক সংস্থাগুলির উপর বাধ্যতামূলকভাবে প্রযোজ্য সরকারি অনুমতির (লাইসেন্সিং) প্রথা তুলে দিতে ভারত সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে।
ই-কমার্সের ক্ষেত্রেও মার্কিন কর্পোরেটদের একইরকম আগ্রাসী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তারা ভারতকে তোষামোদ করার পন্থা নিয়েছে যাতে ভারত ডব্ল্যু টি ও’র (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন) শাসনাধীন ডিজিটাল ট্রেড ট্রিটি’তে সই করে। এর ফলে বৃহৎ মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবসায়ী সংস্থাগুলি খুব সহজেই দেশের সীমানার পরোয়া না করে যেখানে খুশি বিনামূল্যে তথ্য আদান-প্রদান করার ব্যবস্থা কায়েম করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে পারবে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরেই চাপ তৈরি করা উচিত যাতে তারা আমেরিকায় এইচ আই বি ভিসার ক্ষেত্রে যে সমস্ত নিষেধমূলক বিধিপ্রকরণ রয়েছে - যার ফলে ভারতের আই টি শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা শিথিল করে।
সোলার শেল অথবা ঐ জাতীয় ছোট আকারের ভারতীয় উৎপাদন ক্ষেত্রগুলির ওপর প্রযোজ্য রপ্তানি ভর্তুকি তুলে দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
ইউনাইটেড নেশনস’র ডাকে আয়োজিত, জলবায়ূ পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষিত প্যারিস চুক্তি থেকে একতরফা জেদে নিজেদের সরিয়ে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রশমন সংক্রান্ত তহবিলে মূলধন জমা করা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ দেয় অর্থ যোগাতেও অস্বীকার করে তারা। ভারত দূষণ এবং জলবায়ূ পরিবর্তন সংক্রান্ত সংকটে ভীষণরকম আক্রান্ত। ভারত সরকারের উচিত পরিবেশ রক্ষার দায় অস্বীকার করার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই একগুঁয়ে মনোভাবকে প্রতিরোধ করা এবং পাল্টা চাপ সৃষ্টি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের দায়িত্ব স্বীকার করতে বাধ্য করা, কারণ তারাই ঐতিহাসিকভাবে গ্রিন হাউস গ্যাসের সর্বোচ্চ নির্গমনকারী দেশ।
আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ এবং আইন মোতাবেক ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে সবচেয়ে বড় বিপদ। এরা ভারতের মতো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের জীবনজীবিকার নিশ্চয়তাকে ধ্বংস করতে চায়। শেষ এক বছরে ভারতে ইস্পাত জাতীয় পণ্যের উপর একচেটিয়াভাবে শুল্কবিন্যাস চাপানোর ফলে রপ্তানি কমতে কমতে এখনই ৪৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতকে উন্নত দেশ হিসেবে নতুনভাবে বর্গভুক্ত করার সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে এতদিন আমাদের দেশের পক্ষে পরিবর্তনশীল শর্তাবলী সম্বলিত এবং দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরী বিশেষ সংস্থানগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
সামরিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন চুক্তিগুলির সাহায্যে চাপ সৃষ্টি করে এবং সেগুলিকে কার্যকর করতে গাজোয়ারি মনোভাব দেখানোর মধ্যে দিয়ে বস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থরক্ষা করে নিজেদের অস্ত্রব্যবসাকে তারা প্রসারিত করবে আমাদের দেশে যা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং সুরক্ষার প্রশ্নে ক্ষতিকর।
ভারতের অর্থনীতি এবং প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের সামনে মাথা না নামিয়ে তাকে প্রতিহত করার জন্য বিজেপি সরকারের কাছে পলিটব্যুরো দাবি জানাচ্ছে। বিজেপি সরকারের আমলে ভারতের মর্যাদা ক্রমশ নিচে নেমে এখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এক অধস্তন মিত্রের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা বিশ্বের দরবারে ভারতের স্বাধীন সত্ত্বা ও স্বার্থের পরিপন্থি।
সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের এই ভারত সফরের ঘটনায় দেশজুড়ে সংগঠিত প্রতিবাদকে স্বাগত জানাচ্ছে। বিজেপি সরকারের উচিত ভারতের জনগণের এই মনোভাবকে মর্যাদা দেওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের সামনে মাথা উঁচু রাখা।
শেয়ার করুন