শেয়ার করুন
ধর্মঘট সফল কেন?
সবচেয়ে বড় দশটি ট্রেড ইউনিয়ন আজ একসাথে-যার ফলে মোট ২৫ কোটি শ্রমিক-মজদুরের সমর্থন নিয়ে সারাভারতে ধর্মঘটের আহ্বান, ১৭৫ টি কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের সংগঠনের সম্মিলিত লড়াইতে গ্রাম-ভারত বন্ধের ডাক এবং ৬০টি ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একযোগে ছাত্র ধর্মঘটের আওয়াজ তলায় কার্যত সাফল্য এমনিই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা নির্দেশিকায় মজুরি ছাঁটাই, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি এমনকি ধর্মঘট করলে পরিণতি সম্পর্কে ভীতিপ্রদর্শন আর অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে নবান্ন থেকে জারি হওয়া 'ডাইস নন'র ফতোয়া উড়িয়েই সবজায়গায় মানুষ ধর্মঘটের সমর্থনে দুহাত তুলেছেন। শাসকের চোখরাঙানি, শাস্তির বার্তা সত্ত্বেও মানুষ আবারো একবার প্রমান করলেন ইতিহাস তারাই রচনা করেন। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রের তথ্য পরিসংখ্যান দপ্তর (সি এস ও) প্রকাশ করে দেয় মোদী সরকারের আমলে এগারো বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হারে নেমে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি, একের পর এক শিল্প বন্ধ হবার সময়ে শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে বাজার চাঙ্গা করার রাস্তায় না হেঁটে সরকার কর্পোরেটদের কর মুকুব বাড়িয়েছে - সরকারের তরফে দাবি ছিল এতে শিল্পে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে, মন্দা কাটিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। শ্রমিকদের ধর্মঘটে যাওয়ার একটি প্রধান দাবিই ছিল মজুরির বৃদ্ধি, শিল্পে উৎপাদন যে বাড়েনি কেন্দ্রীয় দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতেই স্পষ্ট হয়ে গেলো ধর্মঘটের ঠিক আগের রাতে۔۔۔ একদিকে নোটবাতিলের ধাক্কায় দেশজুড়ে বহু ছোট শিল্প বন্ধ, তারই অনুসারী হয়ে শিল্প এবং কৃষিতে ব্যাংকের ঋণের পরিমান ক্রমাগত কমে যাওয়া সবমিলিয়ে সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে সর্বগ্রাসী। পেট্রোপণ্য সহ মানুষের বেঁচে থাকতে প্রয়োজনীয় রোজকার যাবতীয় সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। ব্যাংক, বিমা , রেল, বিমান সহ সবকটি লাভজনক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেই বেসরকারি হাতে বেচে দিতে সরকারের ব্যগ্রতা সরকারি কর্মচারীদের এই ধর্মঘটের ময়দানে টেনে এনেছে, দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে সরকারের একচোখা ফ্যাসিস্ট মনোভাব সাধারণ মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে তাই তারাও রাস্তায় নেমেছেন প্রতিরোধ মজবুত করতে। গোটা দেশজুড়ে স্বাধীনতার ৭০বছর বাদে আরও একবার আজাদীর স্লোগান উঠছে যাতে সবাই গলা মেলাচ্ছেন। এই পরিস্থিতে বন্ধ স্বাভাবিক ভাবেই ন্যায্য ও যথাযথ, কোনো শক্তিই জনগনের সম্মিলিত মেজাজের সামনে টিকতে পারেনা - ইতিহাসের এই শিক্ষা আরও একবার প্রমাণিত। মানুষের বেঁচে থাকার সমস্যাগুলির একটিরও সমাধান করতে না পেরে মোদী সরকার ধর্মের তাস খেলতে CAA আইন পাশ করে, NRC'র ঘোষণা করেই ভেবে নিয়েছিল তারা জিতে গেছে, নিজেদের অভিজ্ঞতায় মানুষ বুঝেছে এসবের আসল উদ্দেশ্য মূল সমস্যাগুলি থেকে তাদের চোখ সরিয়ে দেওয়া। তাই সারা দেশে এই অমানবিক আইন বাতিলের মিছিল শেষ অবধি এসে মিলে গিয়েছে ধর্মঘটের স্লোগান তোলা মিটিং, পিকেটিং আর পথসভাগুলিতে। আমাদের রাজ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল, মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ বানচাল করতে নিজের পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ নিজেকে বন্ধের দাবিগুলির সমর্থক বলেছেন, মুখে বিজেপি বিরোধিতার কথা বললেও রাজ্যে নিজের সরকারি আধিকারিকদের দিয়ে NPR' র কাজ চালু রেখেছেন। নিজের দলের নেতা কর্মীদের মানুষকে বন্ধে সমর্থন জানানোয় বাধা দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। এসব করে কেন্দ্রের ষড়যন্ত্রীদের সাথে নিজের একাত্মতাই প্রকাশ করেছেন একাধিকবার, এবারও।
সকাল থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মানুষ কি চাইছেন - স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খালি, রাস্তায় রাস্তায় দোকানপাট বন্ধ, বেলা বেড়েও বাজারহাট খোলেনি, লোকজন অফিসমুখী নন, দুচারটি বাস সরকারি ফতোয়ায় পথে নামলেও সেগুলিতে যাত্রী নেই - এলাকায় এলাকায় বন্ধের সমর্থনে প্রচার মিছিলে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং বন্ধ সফল হবার পাশাপাশি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের কথা চাপতে রাজ্য পুলিশের হাতে সুজন চক্রবর্তী সহ বাম নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতার হওয়া এটাই প্রমান করলো - জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে সরকার - কেন্দ্র এবং রাজ্যে দুজায়গাতেই।