২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে বিজেপি ৪৩৭ কোটি ৪ লক্ষ টাকা অনুদান পায় যা বিগত বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪২ কোটি ১৫ লক্ষ ! নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে তাতে প্রকাশ পেয়েছে এই চিত্র। ২০১৭-১৮তে কংগ্রেসের প্রাপ্ত অনুদান ছিল ২৬ কোটি টাকা যা ২০১৮-১৯ নাগাদ বেড়ে হয় ১৪৮ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা। এডিআর এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৬-১৭ এর তুলনায় ২০১৭-১৮ নাগাদ কংগ্রেসের অনুদান কমেছিল প্রায় ৩৬ % । এডিআর এর রিপোর্টে বলা হয়েছে- "দলগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী বিজেপি-র ৭৪২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা এসেছে ৪৪৮৩টি অনুদান থেকে এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ১৪৮কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা এসেছে ৬০৫ টি অনুদান থেকে।"এডিআর এর রিপোর্টটি মূলতঃ ২০,০০০ টাকা বা তার বেশী অনুদানের ওপরে নির্ভর করে তৈরি করা। বিজেপির ঘোষিত অনুদানের পরিমান কংগ্রেস, এনসিপি , সিপিআই, সিপিআই(এম) ও তৃণমূল কংগ্রেসের ঐ একই সময়ে প্রাপ্ত সম্মিলিত অনুদানের থেকে তিনগুণ বেশী।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, "২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ১৫৭৫ টি কর্পোরেট/ব্যবসায়িক অনুদান থেকে বিজেপি পেয়েছে ৬৯৮.০৯২ কোটি টাকা ও ২৭৪১ টি ব্যক্তিগত অনুদান থেকে পেয়েছে ৪১কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। একই সময়ে কংগ্রেস ১২২টি কর্পোরেট/ব্যবসায়িক অনুদান থেকে পেয়েছে ১২২কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ও ৪৮২ টি ব্যক্তিগত অনুদান থেকে পেয়েছে ২৫কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ।" অতীতের ১৩ বছরের মতন ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষেও বহুজন সমাজ পার্টি জানিয়েছে যে তারা ২০,০০০ টাকার ওপরে কোন অনুদান পায়নি ।
বিজেপি, কংগ্রেস ও তৃণমূলকে মিলিতভাবে ৪৫৫কোটি ১৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে দ্য প্রোগ্রেসিভ ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট। এই প্রোগ্রেসিভ ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট উপরোক্ত তিনটে রাজনৈতিক দলকে সর্বাধিক অনুদান প্রদানকারী দুটি সংগঠনের একটি। এই ট্রাস্ট বিজেপিকে ৩৫৬.৫৩৫ কোটি টাকা ( বিজেপির প্রাপ্ত মোট অনুদানের ৪৮.০৪%) ও কংগ্রেসকে ৫৫.৬২৯ কোটি টাকা ( প্রাপ্ত অনুদানের ৩৭.৪৪%) দিয়েছিল। প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বিজেপি ও কংগ্রেসে যথাক্রমে ৬৭.২৫কোটি টাকা( ৯.০৬%) ও ৩৯ কোটি টাকা( ২৬.২৫%) পেয়েছিল।
এডিআর-এর রিপোর্টে আরো উল্লেখ আছে যে বিজেপির ৪৫২টি অনুদান থেকে প্রাপ্ত ৫১৪.৪৮ কোটি , তৃণমূল কংগ্রেসের ৮৯টি অনুদান থেকে প্রাপ্ত ৪৪.২৬ কোটি টাকা ও কংগ্রেসের ৫১টি অনুদান থেকে প্রাপ্ত ৪.৫১ কোটি টাকার ক্ষেত্রে চেক/ডিমান্ড ড্রাফ্ট এর অসম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে যেখানে চেক-এর ক্রমিক সংখ্যা, কোন ব্যাঙ্কের ড্রাফ্ট তার বিস্তারিত তথ্য সহ বহু গলদ রয়েছে। রিপোর্টে তাই এডিআর উল্লেখ করেছে যে – "সম্পূর্ণ চেক/ডিডি-এর তথ্য ব্যতিরেকে এইসব লেনদেনের দাতা ও অর্থের উৎস সন্ধান অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ বিষয়।" বিগত কয়েক বছর যাবত এডিআর এই প্রশ্ন বারবার করে তুলেছে যে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা অনুদান সংক্রান্ত বিবরণের সাথে রাজনৈতিক দলগুলো অর্থদাতাদের প্যান কার্ডের বিস্তারিত তথ্য ও সম্পূর্ণ ঠিকানা দেওয়ার যে বাধ্যবাধ্যকতা তাকে মান্যতা দিচ্ছে না ।
২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এর যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল এডিআর তাতেও দেখা গিয়েছিল যে কর্পোরেট অনুদানের সিংহভাগই পেয়েছিল বিজেপি। ২০,০০০ টাকার ওপরের অনুদানের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল ৬টি জাতীয় রাজনৈতিক দলের মোট প্রাপ্ত অনুদান ছিল ১০৫৯কোটি ২৫লক্ষ টাকা যার মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৯১৫কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। অনেক পিছিয়ে ৫৫কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা পেয়ে কংগ্রেস ছিল দ্বিতীয়। ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে কর্পোরেটদের টাকা রাজনৈতিক দলগুলিতে ঢোকার ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত ধরণের গোপনীয়তা বাস্তবিকই খুব চিন্তার বিষয়। সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে যেমন কর্পোরেট অনুদান না নেওয়ার ঘোষিত অবস্থান রয়েছে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে সেই স্বচ্ছাতার অভাব রয়েছে।
শেয়ার করুন