মহামারী ও ধনকুবেরদের সম্পত্তি বৃদ্ধির আন্তঃসম্পর্ক
প্রভাত পট্টনায়েক
(মূল নিবন্ধটি পিপলস্ ডেমোক্রেসি পত্রিকার ২৫ অক্টোবর, ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত)
সম্পদ বন্টনের সম্পর্কে যথার্থ মন্তব্য করতে গেলেও সেই সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্যাদি ব্যাখ্যা করা ভীষণই কঠিন কাজ। এর কারণ, সম্পদ বন্টনের হিসাব করতে গেলে যাকে অন্যতম ভিত্তি ধরতেই হয় সেই স্টকের মূল্যমানে এতই ওঠা নামা হতে থাকে যে তার প্রভাবে শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকাকালীন আচমকাই ধনীরা আরো বেশি ধনী হয়ে উঠলেও বাজারে মন্দা নেমে এলেই যে রাতারাতি সম্পদ বন্টনের আগের চিত্রটি পাল্টে যায় এমন নয়। একে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলা যায়, ধনীরা তাদের সম্পদের একটি অংশকে স্থিতিশীল অবস্থায় এবং অন্য অংশটিকে এমন চেহারায় বজায় রাখেন যা ক্ষণস্থায়ী সম্পদ হিসাবে কার্যকর।
ঐতিহাসিকভাবে সময়ের এমন কিছু পর্ব তৈরি হয় যখন সম্পদ বন্টনের হাল হকিকত সম্পর্কে নিশ্চিন্তে কথা বলা যাবে। মহামারীর অবস্থা চলাকালীন এমনই একটি সময়। মহামারী চলাকালীন একের পরে এক মাস ধরে যখন পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়ে বেরোজগারির যন্ত্রনায় বিদ্ধ হচ্ছেন ঠিক তখনই ধনকুবেরদের বিপুল পরিমাণে সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে যার প্রভাবে সারা পৃথিবীতে সম্পদ বন্টনের অসমতা আরও বেড়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ডের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানিয়েছে (গার্ডিয়ান পত্রিকার ৭ অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত) এই বছরেই এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ধনকুবেরদের সম্পত্তির বৃদ্ধি ঘটেছে ২৭.৫ শতাংশ, ঐ মাস গুলিতেই মহামারীর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ছিল একথা মনে রাখতে হবে। জুলাই মাসের শেষদিকে এই সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ১০.২ ট্রিলিয়ন ডলার / ৭.৮ ট্রিলিয়ন ইউরো তে পোঁছে গিয়ে এক নতুন নজির সৃষ্টি করেছে। এর আগে এমন নজির তৈরি হয় ২০১৭ সালের শেষে, সেবার সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৮.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। সেই থেকে এখনও অবধি সারা পৃথিবীতে ধনকুবেরদের সংখ্যা ২১৫৮ জন থেকে সামান্য বেড়ে হয়েছে ২১৮৯ জন কিন্তু ঐ পর্বেই তাদের মত সম্পদের পরিমাণ সেই তুলনায় অনেকটা বেশী হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালের শেষ থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস অবধি সেই সম্পদ বৃদ্ধির হার ১৩ শতাংশ। যদিও আসল কথা হল, এই বৃদ্ধি বস্তুত আর্থিক ক্ষেত্রে দুই যুযুধান পদক্ষেপের সম্মিলিত ফল - ২০২০ সালের এপ্রিল অবধি অবনমনের ঠিক পরেই ক্রমবর্ধমান গতিতে জুলাই মাসের শেষ অবধি ২৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি।
এধরনের আর্থিক বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। যেহেতু জনগণের বেশিরভাগেরই হাতে সম্পদ বলে সেভাবে কিছুই থাকেনা বা যেটুকু থাকে তার মূল্যমান স্টকের দামে উত্থান পতনের ন্যায় ওঠা নামা করতে পারে না, ফলত স্টকের দাম বাড়লে সমাজে সম্পদ বন্টনের অসাম্য বাড়ে এবং স্টকের দাম পড়ে গেলে সেই অনুযায়ী অসাম্যের সূচক নেমে আসে। এসব থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে, সমাজে সম্পদ বণ্টনে অসাম্যের চিত্রে আচমকা পরিবর্তনের বাস্তবতার ভিত্তিতে কোনরকম নিশ্চয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।
এবছর এপ্রিল মাসের পর থেকে সম্পদ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিত অবশ্য অনেকটাই আলাদা। ইউনিয়ন ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ডের মুখপাত্র এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসের আগে অবধি যখন স্টকের দাম ক্রমশ নিচে নামছিল সেই অবস্থায় ছোট কিংবা মাঝারি ব্যাবসায়ী সংস্থাগুলির মতো উদ্বেগ গ্রস্থ হয়ে বিলিয়নেয়ররা নিজেদের শেয়ার বিক্রি করেন নি, ধরে রেখেছিলেন - সেই সময় তারা ছোট - মাঝারি সংস্থাগুলির বিক্রি করা স্টক গুলি কিনে নিচ্ছিলেন। এপ্রিল মাসের পরে যখন স্টকের দাম আবার বাড়তে শুরু করে তখন সেই কম দামে কেনা স্টকের বানিজ্যে তাদের হাতে প্রভূত পুঁজি জমা হয়। এমনটা হবারই ছিল কারণ নিজেদের স্টক ধরে রাখার মত ক্ষমতা ছোট পুঁজিপতিদের ছিল না। এভাবেই মহামারীর সময়ে একদিকে গরীব জনতা যাদের সম্পদ বলে কিছুই নেই তাদের চরম দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে আরেকদিকে অপেক্ষাকৃত কম বিত্তবানদের থেকে সম্পদ আহরিত হয়ে পুঁজির ঘনীভবন তীব্রতর হয়েছে। শুধুমাত্র স্টকের দাম বেড়ে যাওয়াতে এই ঘটনা ঘটেনি, এর কারণ সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলতে সেই নির্দিষ্ট পদ্ধতির ব্যবহার যাকে মার্কস "পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ" বলেছিলেন।
সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেনিন বলেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রতিটি আর্থিক কিংবা রাজনৈতিক যেকোনো সংকটেই পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ ঘটে ; সংকটের ধরণ সম্পর্কে লেনিন যে তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন আজ চাইলে সেই তালিকায় কেউ জনস্বাস্থ্যে সংকট কিংবা বলা যায় যেকোনো অন্যান্য সংকটের কথাও যুক্ত করতে পারেন। কেন্দ্রীভূতকরনের সাধারণ পদ্ধতি হল সংকটের সময়ে ছোট উৎপাদকবর্গ (এই ধাক্কা একেবারে সমাজের নিচে অবধি মেহনতের বিনিময়ে উৎপাদকদেরও নিপীড়ন করে তবে সেক্ষেত্রে যা ঘটে তাকে কেন্দ্রীভূতকরণ না বলে "পুঁজির আদিম সঞ্চয়" বলেই অভিহিত করা উচিত হবে) এবং সেই সূত্রে তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগকারী ব্যাংক এবং ঋণ যোগানো সংস্থাগুলির ধ্বংস সাধন। এদের সবাইকেই বড় বড় কোম্পানিগুলি গিলে খায় অথবা এতদিন ধরে এইসব ছোট ছোট সংস্থাগুলি যে বাজার ধরে রেখেছিল তা দখল করে।
এই সাধারণ পদ্ধতি ছাড়াও আরেকভাবে এই কেন্দ্রীভূতকরণ করা হয়, ব্যাংক এবং শেয়ার বাজারে পড়ে থাকা অজস্র ছোটখাটো সংস্থার ক্ষুদ্র পুঁজির একীকরণ দ্বারা। প্রথমে ব্যাখ্যা করা উপায়ের থেকে এর চরিত্র ভিন্ন, যদিও কেন্দ্রীভূতকরনের লক্ষ্যে এটি খুবই শক্তিশালী প্রকরণ।
উপরোল্লিখিত দুধরনের প্রকরণ ব্যতিরেখে মহামারীর সময়ে আরেক কায়দায় পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ করা হয়েছে। সংকটের সময়ে স্টকের দাম পড়ে যাবার ধাক্কা সামলাতে এইসব বড় ধনকুবের সংস্থাগুলি সমর্থ হলেও ছোট ছোট পুঁজিপতিরা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সেই সামর্থ্য কোনপ্রকার "সাহস", "মনোবল" কিংবা "উদ্যোগী" সক্ষমতার জন্য আদৌ আসেনি (যেমনটা পুঁজিবাদ নিজের সম্পর্কে রূপকথায় সাজিয়ে গুছিয়ে লেখে এবং প্রচার করে) বরং এই সামর্থ্যের একমাত্র কারণ হল তাদের আর্থিক সঙ্গতি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
আর্থিক ক্ষেত্রের অকস্মাৎ ওঠা নামার সাথে বড় সংস্থাগুলি নিজেদের পথচলাকে তাল মিলিয়ে রাখতে পারে বলেই তারা সংকটের সময়ে টিকে থেকেছে, এমনকি ঐ সময়েই তারা বিরাট আকারের মুনাফাও কামিয়েছে যা ছোট পুঁজির ক্ষমতায় কুলোয় নি। শেয়ার বাজারের অস্থিরতার মোকাবিলা করতে তাদের সাফল্য আদৌ এই কারণে নয় যে তারা ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না, বরং বাস্তব কারণ ঠিক এর উল্টো - তারা সর্বদাই ঝুঁকি নিতে বিমুখ।
নিজেদের বৃহৎ আর্থিক সঙ্গতির কারণেই ঝুঁকি না নিয়েও বাজারে টিকে থাকার মতো বিলাসিতা দেখানোর সুযোগ তাদের রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেও নিজেদের অক্ষত রাখার বিলাসিতা। এই কারণেই তারা নিজেদের সম্পদকে এমন চেহারায় রূপান্তরিত করে রাখতে পারে যাতে ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া যায়, সেইসব নানাবিধ চেহারার মধ্যে স্টক এক ধরনের চেহারা মাত্র - তাদের সম্পূর্ণ সম্পদের পরিচয় কখনই নয়। সেই জোরেই শেয়ার বাজারের সংকট কখনো অভূতপূর্ব মাত্রায় পৌঁছালেও তারা অবিচলিত থাকতে পারে। ঐ একই সংকটকালে অন্যান্য ছোট পুঁজির দম শেষ হয়ে যায়। আর ছোট পুঁজির উপরে নেমে আসা সেই বিপর্জয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়েই বৃহৎ পুঁজি মুনাফা কমিয়ে নিতে পারে কারণ ছোট সংস্থাগুলি তখন উদ্বেগের চাপে নিজেদের স্টক বেচে দিতে শুরু করে।
একটি উদাহরণের সাহায্যে এই ব্যাপারটিকে আরও ভালোভাবে বোঝা যেতে পারে। আমার হাতে যদি সম্পদ হিসাবে ১০০ টাকা থাকে তবে সেই অর্থ আমি সেই চেহারায় রূপান্তর করতে চাইবো যাতে আমার মুনাফার পরিমাণ সর্বোচ্চ হবার সুযোগ হয়, এমনকি সেই কাজে মূলধন হারানোর ঝুঁকি সত্বেও সেই সুযোগ হারাবো না। আমি ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি বলে আমার এই ব্যাগ্রতা এমন আদৌ নয়, আসলে কম আর্থিক সঙ্গতির কারণেই ঐ বাড়তি আয়টুকু অর্জন করতে আমি মরিয়া। সুতরাং আমি আমার সমস্ত অর্থটাই শেয়ার বাজারে (স্টক কেনায়) বিনিয়োগ করবো। এখন এই একই প্রসঙ্গে যদি আমার কাছে ১০০ টাকার বদলে ১ মিলিয়ন পরিমাণ টাকা থাকতো তার মানে আমার ভরসাযোগ্য রোজগার ইতিমধ্যেই রয়েছে এবং আমি নিজের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের অর্ধেক শেয়ার বাজারে ( স্টক কেনায়) বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতাম কারণ বাকী অর্ধেক অংশটিকে বিনিয়োগ না করে ব্যাংক ব্যালেন্স হিসাবে ফেলে রাখার মতো সুযোগ আমার থাকতো। এবার যদি শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের কারণে সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ হয় ১০ শতাংশ তখন যে ১০০ টাকার সম্পূর্ণটাই বিনিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে (ঐ ১০০ টাকাই তার বিনিময়যোগ্য সম্পদের সম্পূর্ণ পরিমাণ) তাকে নিজের সম্পূর্ণ সম্পদের পরিমাণে ১০ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে, কিন্তু যে ১ মিলিয়নের মালিক এবং তার অর্ধেক মাত্র সে বিনিয়োগ করেছিল, তাকে ঐ একই সময়ে একই সংকটের ধাক্কায় নিজের সম্পূর্ণ সম্পদের উপরে মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। এমনটা হয় কারণ সার্বিক ১০ শতাংশ কেবলমাত্র তার বিনিয়োগ করা সম্পদের অর্ধেকের উপরেই প্রযোজ্য হয়, বাকি অর্ধেক সুরক্ষিত থাকে। এই জন্যেই দ্বিতীয় ক্ষেত্রের বিনিয়োগকারী শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের ধাক্কার মোকাবিলা করতে পারে, প্রথম জন পারে না। ঐ একই কারণে উদ্বেগ জনক পরিস্থিতিতে প্রথম প্রকারের বিনিয়োগকারী মরিয়া হয়ে নিজের স্টক বেচতে শুরু করবে, কিন্তু দ্বিতীয় জন, যার হাতে অনেক বেশি স্টকের মালিকানা রয়েছে সে নতুন বিক্রি হওয়া স্টকগুলি কিনে নেবে এবং নিজেদের পছন্দসই মুনাফা কামাতে পুনরায় বাজার চাঙ্গা না হওয়া অবধি সেগুলি নিজের মালিকানাধীন রাখবে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শেয়ার বাজারের এমন উত্থান পতন খুবই সাধারণ ঘটনা, কিন্তু সংকটের সময়ে বাজার সূচকে পতনের অভিঘাত আরও গভীরতর হয় তা সেই পতনের পিছনে কারণ যাই হোক না কেন। এমনটা হওয়া সুনিশ্চিত হয় কারণ ঐ সময়েই ছোট ছোট পুঁজিপতিদের সর্বনাশের উপর পা রেখে বৃহৎ ধনকুবেরগণ নিজেদের আরও বেশি বিত্তশালী করে তোলে। এই পর্বে পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ ঘটে ক্ষুদ্রের বিরুদ্ধে বৃহতের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে। সম্পদ বৃদ্ধির এই গোটা পর্ব জুড়ে যা চলে তাতে পুঁজির আদিম সঞ্চয়ের যুগের শেষে মেহনতকারি উৎপাদকদের কপালে যা জুটেছিল, পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরনের বর্তমান যুগে ছোট পুঁজির মালিকদেরও সেই একই পরিণতি হয়। বৃহৎ পুঁজির মালিকেরা যদি ছোট ছোট পুঁজিপতিদের ১০০ টাকা মূল্যের স্টক ১০০ টাকাতেই কেনে তবে তাদের কোনো লাভ নেই। এধরনের বিনিময়ের মূল্য চোকাতে নগদ তহবিল ভেঙে, নাহলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অথবা নিজেদের কোনো সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা দিতে হয়। এসব করে তাদের মালিকানাধীন মোট সম্পদের পরিমাণ বাড়ে না। কিন্তু যদি তারা ছোট পুঁজির ১০০ টাকা মূল্যের স্টক শেয়ার বাজারে সংকটের কারণে ৫০ টাকায় নগদে কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া টাকায় কিনে নিতে পারে তবে বাজারের অবস্থা ভালো হলে তারা সেই স্টকটিই পুনরায় ১০০ টাকায় বেচে নিজেদের সম্পদের পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে নেবে। এক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজির মুনাফার ৫০ টাকা একইসাথে ছোট পুঁজির ৫০ টাকার ক্ষতির প্রতিমুল্য হিসাবেও প্রতিপন্ন হবে, যেমনটা পুঁজির আদিম সঞ্চয়ের যুগে প্রায়শই হতো।
ইউনিয়ন ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ডের মুখপাত্র এভাবে সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনাকে যতই মহামারীর কারণে পুঁজিবাদের সীমানার বাইরের একটি অস্বাভাবিক পদ্ধতির ফসল বলুন না কেন আসলে তিনি ডাহা ভুল বলছেন। সম্পদ বাড়িয়ে নেওয়ার এমন কেরামতি চিরকালই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার যুক্তিনিষ্ঠ এবং প্রথাসম্মত প্রকরণ। এমন বললে অত্যুক্তি হবে না যে পুঁজিবাদ সর্বদাই সভ্যতার সংকটকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মুনাফা নিশ্চিত করে, এবং ব্যাপারটা ঠিক সেই পদ্ধতিতেই করে যেমনটা এই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পদের (পুঁজির) কেন্দ্রীভূতকরণ বৃদ্ধি পাওয়া একের পর এক দেশে ঘটেছে, আমাদের দেশেও হয়েছে। পূর্বোল্লিখিত প্রতিবেদনই একথা স্পষ্ট করেছে যে মহামারীর পর্বে ভারতে ধনকুবেরদের সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ - পরিমাণে ৪২৩ বিলিয়ন ডলার (সূত্র: The Wire, ১৬ অক্টোবরের প্রতিবেদন)। এই সময়ের মধ্যেই পণ্য উৎপাদন কমেছে চারভাগের একভাগ, সেই একই পথে কমেছে কর্মসংস্থান – এতেই স্পষ্ট ধারণা করা যায় পুঁজিবাদ কিভাবে কাজ করে।
মূল নিবন্ধের অনুবাদ: ওয়েব ডেস্কের পক্ষে সৌভিক ঘোষ