Battle Of Stalingrad Cover 2025

স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ - ইতিহাসের সঞ্চারপথ বদলে দেওয়ার লড়াই

সৌভিক ঘোষ

নাৎসি সেনাবাহিনীর রণকৌশল নিজেকে প্রায় অজেয় প্রমাণ করেছিল। এরই নাম ‘ব্লিৎসক্রিগ’- সহজ বাংলায় ‘ঝড়ের বেগে সার্বিক আক্রমণ’। আধুনিক যুদ্ধ ট্যাংক ও হেভি মেশিনগান, সুসজ্জিত বিরাট পদাতিক বাহিনী এবং আকাশপথে বোমারু বিমানের হানা সবটা একসাথে। রক্তমাংসের মানুষ কোনোদিন এমন আক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে না, এমনটাই প্রচার চলছিল। ইউরোপের অর্ধেকেরও বেশি ততদিনে ঐ রণকৌশলের সামনে আত্মসমর্পণ করেছে। বিশ্বজয়ের পরিকল্পনাকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে খনিজ তেলের এক নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ দরকার ছিল জার্মানির। নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদের জোরে তেমনটা আর সম্ভব হচ্ছিল না, হিটলারের মনোযোগ গেল ককেশাসের দিকে।

ঐ অঞ্চলের বিরাট তৈলভাণ্ডার দখল করতে হবে। মলোতভ-রিবেনট্রপ অনাক্রমণ চুক্তি ভঙ্গ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের আসল কারণ এটাই।

১৯৪১ সালের ২২শে জুন, জার্মান সেনাবাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করল।

stalingrad 1941

এর ঠিক দু-মাস পরে অগাস্ট মাসের ২৩ তারিখ নাৎসি বিমানবাহিনী স্তালিনগ্রাদে বোমা ফেলতে শুরু করে। এক হাজার টনেরও বেশি বোমা পড়ল, এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষের মৃত্যু হল।

জার্মান সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ ডিভিশনের উপরে স্তালিনগ্রাদ দখলের দায়িত্ব ছিল। সেনা অফিসারেরা ততদিনে চিঠি লিখতে শুরু করেছে, ঐ বছরের ক্রিসমাস তারা নিজেদের পরিবারের সাথেই উদযাপন করবে। ধরেই নেওয়া হয়েছিল রাশিয়াকে হারানো আর কেকের মধ্যে দিয়ে চুরি চালানো অনেকটা একইরকম। জোসেফ স্তালিনের নামে চিহ্নিত একটা গোটা শহর তখন ক্রমশ এক বিরাট ধ্বংসস্তুপের চেহারা নিচ্ছে।

যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের শত অনুরোধেও স্তালিন শহর ছেড়ে গেলেন না। যুদ্ধ বলতে তখনও যা চলছে তাকে জার্মান সেনাবাহিনীর আক্রমণ আর সোভিয়েত সেনাবাহিনীর কোনওমতে টিকে থাকাই বলতে হয়।

ফিল্ড রিপোর্ট পড়ে হিটলার ধরেই নিলেন তিনি এবারেও জিততে চলেছেন। ককেশাসের তেল দখল করার বিষয়টি তখন পিছনে চলে গেছে। যেভাবেই হোক স্তালিনগ্রাদ দখল করতে হবে, নির্দেশ দেওয়া হল। ইতিহাস নির্ধারিত সঞ্চারপথে এই প্রথম ভাঁজ পড়ল, যুদ্ধ জেতার আধুনিকতম রণকৌশল যা ইতিমধ্যে ইউরোপের মাটিতে সফল মুখোমুখি হল এক সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতির।

স্তালিনগ্রাদের মুখোমুখি জার্মান প্যাঞ্জার ষষ্ঠ ডিভিশন, তাদের দুদিকে সহায়ক হিসাবে হাঙ্গেরি, ইটালি আর রোমানিয়ার সেনাবাহিনী। এমন বিকট আক্রমণের মোকাবিলায় প্রাথমিক পর্বের টিকে থাকার লড়াইতে সোভিয়েত বাহিনী সফল হল। ক্যালেন্ডারে তখন সেপ্টেম্বর মাস শেষ হতে চলে চলেছে। এবারের যুদ্ধ নাৎসি পরিকল্পনার উল্টোদিকে চলতে শুরু করেছিল। তার আক্রমণ চালায়, ধরে নেয় সামনের কয়েক কিলোমিটার উন্মুক্ত, পরের দিন সেই এলাকা থেকে পুনরায় ‘কাউন্টার ফায়ার’ আসতে শুরু করে। বিমানবাহিনীর ভরসায় জার্মান পদাতিক সেনাবাহিনী সামনে এগিয়ে যেত, স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে সেই বিমান হানাও ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছিল।

কারণ?

সোভিয়েত বাহিনী নিজেদেরকে জার্মানদের এতটাই কাছাকাছি রাখত যে উপর বোমা ফেললে নিজেদেরই খুন করা হত। ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি, দোকানপাট এমনকি মাটির নিচে নর্দমাকেও সোভিয়েত সেনাবাহিনী ‘ট্রেঞ্চ’ হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করল। এসব জায়গায় লুকিয়ে থেকে সোভিয়েত স্নাইপাররা প্রায় অদৃশ্য থেকে গুলি চালানোর কৌশল শিখে নেয়। জার্মান বিমানহানার মোকাবিলা করার জন্য রাতের অন্ধকারও হাতিয়ার হয়ে ওঠে। তখনও সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে সকলের হাতে রাইফেল নেই। একজন রাইফেল নিয়ে এগোলে তার পিছনে আরেকজন চলে। সশস্ত্র সঙ্গীটি আহত হলে বা মারা গেলে তবে সে রাইফেল হাতে পায়। ভাঙাচরা ঘরবাড়ির ভিতর থেকে নিরন্তর রাইফেলের গুলি, কোথাও উপর থেকে সজোরে ছোঁড়া পাথর বা ইঁটের বড় বড় টুকরো এমনকি দরকার পড়লে গামলা ভর্তি ফুটন্ত জলও জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার হচ্ছিল। পচা-গলা মৃতদেহের স্তুপের ভিতরে লুকিয়ে থাকা স্নাইপারদের বুলেট, আচমকা ছোট-বড় রাস্তার নর্দমার ঢাকা সরিয়ে বাইরে এসে অ্যান্টি ট্যাংক মেশিনগানের গুলি, শত্রু যাতে এতটুকুও বিশ্রাম নিতে না পারে তাই সারা রাত ধরে চলা ‘ফায়ার’- এমন লড়াই নাৎসি’রা কেন দুনিয়ায় কেউই কখনো দেখেনি। সমরবিদ্যার সিলেবাসে ‘আর্বান ওয়ারফেয়ার’ বলে আজকের দুনিয়ায় যা পড়ানো হয়, সোভিয়েত সেনাবাহিনী কার্যত তারই ব্যকরণ লিখছিল।

প্যাঞ্জার ডিভিশনের এক সেনা, উইলি হফম্যান চিঠিতে লিখলেন- ‘ভাঙাচোরা বাড়িঘরের মধ্যে যেগুলি এখনো কিছুটা ব্যবহারযোগ্য তার সবজায়গায় ওরা লুকিয়ে রয়েছে। এরা কেউ মানুষ নয়, সবকটা শয়তানের মুর্তি। আগুন কিংবা গুলি কিছুই ওদের গায়ে লাগে না’।

আসলে জার্মান সেনাবাহিনী ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছিল।

রাশিয়ায় শীতকাল এগিয়ে আসছে। ওভারকোট থেকে ভিতরে পরার জামা অবধি সেই শীতের হাওয়া কেটে ঢোকে, হাতের আঙ্গুল অবশ হয়ে পড়ে, রাইফেলের গরম নজলে হাত চেপে রেখে তবে সাড় মেলে। ঠাণ্ডা হাওয়ার দাপটে ঠিকঠাক চোখ খুলে রাখা যায় না। জার্মান সেনাবাহিনী এমন শীতের মোকাবিলা করতে জানে না।

দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার আশায় তারা এসবের দিকে মনোযোগ দেয়নি। রেশন, বারুদের মজুত সবই পিছন দিক থেকে সরবরাহ করে তারা সামনে এগিয়ে চলে। ইউরোপেও তারা সেভাবেই এগিয়েছে, সেখানকার আবহাওয়া জার্মানদের অনেকটাই পরিচিত ছিল।

এবার পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা।

এমন ভয়ানক শীত হিটলার কিংবা তার বাহিনী কারোরই জানা নেই।

কিন্তু একজন সেকথা জানতেন, তিনি অপেক্ষা করছিলেন।

মার্শাল জুকভ তাকে জানিয়েছেন ‘অপারেশন ইউরেনাস’ শুরু হবে। জার্মান সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ ডিভিশন ততদিনে শহরের অনেকটাই ভিতর অবধি এসে পৌঁছেছে। তারা ধরে নিয়েছে যে তারা এগিয়েছে, আসলে তাদের এগোতে দেওয়া হয়েছে। অমন তাড়াহুড়োয় জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধ সহ যাবতীয় সরবরাহের মজুত লাইন অনেকটা পিছনে পড়ে রয়েছে, সেটাই জুকভের পরিকল্পনার ভিত। এবার সেই লাইন থেকে ষষ্ঠ ডিভিশনকে একেবারে আলাদা করে দিতে হবে। তারা শহরের অনেকটা ভিতর অবধি এসে গেছে এবার তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলা হবে, সমরবিজ্ঞানের পরিভাষায় একেই বলে ‘এনসার্কেলমেন্ট’।

জার্মানির সহায়ক হিসাবে ইটালি, হাঙ্গেরি আর রোমানিয়া থেকে পাঠানো সেনাবাহিনীকে সরাসরি আক্রমণ করা হবে। একদিকে জার্মান বাহিনীকে ঘিরে ফেলা আরেকদিকে তাদের স্যাঙ্গাত বাহিনীর উপর আক্রমণ- এটাই অপারেশন ইউরেনাসের মূল ভাবনা।

রাশিয়ায় শীতকাল এগিয়ে আসছিল, জার্মান সেনাবাহিনী অধৈর্য হয়ে উঠছিল।

আর জোসেফ স্তালিন অপেক্ষা করছিলেন।

জার্মান সেনাবাহিনী শুরুর দিকে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ লড়াইকে খাটো করে দেখেছিল। তাদের ধারণা ছিল না যা ঘটছে সেসব কয়েকজন একগুঁয়ে সেনাবাহিনীর জেদি মনোভাবের প্রতিফলনমাত্র নয়, এটাই লাল ফৌজের রণকৌশল। জার্মান ষষ্ঠ ডিভিশনের অভিজ্ঞ কম্যান্ডার জেনারেল ফ্রেডরিখ উইলহেল্ম আর্ন্সট পাউলাস অবশ্য বুঝতে পারছিলেন পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, এমন কিছু ঘটছে যা একেবারে নতুন।

ততদিনে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ হিটলারের জন্য ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। যাই ঘটুক না কেন, যে কোনও মূল্যে তিনি স্তালিনগ্রাদকে নিজের পায়ের তলায় দেখতে চাইছেন।

১৯৪২ সালের ২৮শে জুলাই জোসেফ স্তালিন একটি সরকারী আদেশনামায় সাক্ষর করলেন। গোটা দেশ জেনে গেল আর এক পা’ও পিছনো যাবে না- ‘নট ওয়ান স্টেপ ব্যাকওয়ার্ডস’। এই নির্দেশকে নিজেদের মতো করে বুঝে নিয়ে লাল ফৌজ সিদ্ধান্ত নিল পিছনোর জন্য ভলগা নদীর পরে আর কোনও জমি নেই- ‘দেয়ার ইজ নো ল্যান্ড বিহাইন্ড ভলগা’।

তারা যে চারদিক থেকে লাল ফৌজের ঘেরাটোপে আটকে গেছে সেটা উপলব্ধি করতে জার্মান বাহিনীর অনেকটা দেরি হয়ে যায়। প্রথমে হাঙ্গেরি আর ইটালির বাহিনী, পরে রোমানিয়ার ফৌজও জুকভের পরিকল্পনার সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল। স্তালিনগ্রাদের ধ্বংসাবশেসে আটকে থাকা জার্মান সেনা তখন আর আক্রমণ করছে না, ঢেউ’র মতো একের পর এক অ্যামবুশের মুখোমুখি নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চালাচ্ছে। ন্যুনতম খাদ্যের রেশন নেই, বারুদের সরবরাহ নেই- এতদিন যারা তাদের উপরে ছায়ার মতো হামলা করছিল তারা এইবার দেওয়ালের ভিতর থেকে, মাটির তলা থেকে বেরিয়ে এল। একদিকে ভয়াবহ ঠাণ্ডা, লাল ফৌজের বুলেটে আহতদের চিকিৎসার সরঞ্জাম-ওষুধও শেষ হয়ে গেছে। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে জার্মানরা ছিল হানাদার, দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা নিজেদের অসহায় অনুভব করতে শুরু করেছিল। হানাদার বাহিনীর চিরকালই লক্ষ্য থাকে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ শেষ করা, মার্শাল জুকভ সেকথা জানতেন। আর তাই জার্মানরা লাল ফৌজের রণকৌশল বুঝতে পারেনি, নাহলে তারা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েই তৈরি হত, তারা একেবারেই উল্টো ভাবনায় পরিচালিত হয়েছিল।

সোভিয়েতের লাল ফৌজ যুদ্ধকে ইচ্ছা করেই দীর্ঘমেয়াদী লড়াইতে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিল। তেমনটি না করতে পারলে তারা নিজেদের যুদ্ধাস্ত্রে সুসজ্জিত করে তোলার সুযোগ পেত না। নাৎসি’রা যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন কারমন করে তখনও লাল ফৌজের হাতে উপযুক্ত পরিমাণে রাইফেল, গুলি, যুদ্ধ ট্যাংক, বোমারু বিমান এসব ছিল না। প্রথম দিকে তারা ‘পোড়ামাটির নীতি’ অনুসারে চলতে বাধ্য হয়। জার্মানরা প্রাথমিক সাফল্যেই আত্মহারা ছিল, তারা বুঝতে পারেনি আগামীদিনে লাল ফৌজের যুদ্ধ ট্যাংক তাদের ট্যাংকগুলিকে লড়াইয়ের ময়দানে চুরমার করে পিষে দেবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন অতি দ্রুত নিজেদের সামরিক সরঞ্জামে সাজিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, সেই লক্ষ্যে সফলও হয়।

ক্রমশ বোঝা যাচ্ছিল সোভিয়েত সেনাবাহিনী সম্পর্কে জার্মানদের ধারণা কতটা ভুল ছিল।

উইলি হফম্যান’দের মতো জার্মান সেনারা যখন যুদ্ধ সম্পর্কে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছিল ঠিক তখনই লাল ফৌজের একজন নিজের স্ত্রী’কে চিঠি লিখে জানায়- ‘তোমার প্রতি আমার প্রেম কখন যে দেশের প্রতি ভালোবাসায় বদলে যায় ঠিক বলতে পারব না। এদুয়ের মধ্যে কি পার্থক্য রয়েছে তাও আমি জানি না’। এমন বাহিনীকে চাইলেই হারিয়ে দেওয়া যায় না। ওয়ার ফ্রন্ট থেকে পাঠানো জার্মান সেনাবাহিনীর ফিল্ড রিপোর্ট বদলাতে শুরু হল। এতদিন তারা এগিয়ে চলার বার্তা দিয়ে এসেছে, এবার তারা বলতে শুরু করল লাল ফৌজ প্রতিদিন পাল্টা লড়াই চালাচ্ছ। যে সমস্ত এলাকায় তাদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছিল সেখানেও যথেষ্ট প্রতিরোধ হচ্ছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় নিশ্চিত বলে নাৎসি’রা প্রথম দিন থেকে প্রচার করছিল। একসময় তারা লাল ফৌজের আড়াল থেকে যুদ্ধকৌশলে বিরক্ত হয়ে একে ‘র‍্যাটেনক্রিগ’ বা ‘ইঁদুরদের যুদ্ধ’ বলে চিহ্নিত করেছিল। মাটির নিচে ছোট বড় নর্দমাকে সোভিয়েত সেনারা যেভাবে ট্রেঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করছিল তারই প্রেক্ষিতে এমন নামকরণ। ক্রমশ অবস্থা বেগতিক উপলব্ধি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী গোয়েবলস নতুন ভাষ্য পেশ করে- ‘বলশেভিকরা ঠিক মানুষের পর্যায়ে পড়ে না, তাই এদের লড়াইও মানুষের মতো না। কুখ্যাত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক থেকে শুরু করে শিকাগো’র মাফিয়া অবধি সকলেই শেষ অবধি মানুষ, আমাদের আক্রমণের মুখোমুখি হলে তারাও বুঝত প্রতিরোধের চেষ্টা করা কতটা বৃথা। কিন্তু বর্বর লাল ফৌজের জন্য তো আর মানুষের নিয়ম খাটে না, তাই তারা একেবারে নিশ্চিহ্ন না হওয়া অবধি নিরর্থক লড়াই করে যাচ্ছে’।

এ হল ভাষ্য গোয়েবেলসীয় প্রচার কৌশলের এক যথাযথ উদাহরণ।

কিন্তু এর জোরে সাময়িকভাবে ধামাচাপা দেওয়া গেলেও বাস্তবিক পরিস্থিতি বদলায় না। আসলে হিটলার ও তার নাৎসি সহযোগীরা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না লাল ফৌজ তাদের হারিয়ে দিচ্ছে। স্তালিনগ্রাদে আটকে পড়া ষষ্ঠ ডিভিশনের তরফে প্রতি দিন সাতশো টন সরবরাহের দাবী জানানো হচ্ছিল, জার্মানির যুদ্ধমন্ত্রক এয়ার লিফটের মাধ্যমে অর্থাৎ যুদ্ধবিমানের সাহায্যে সাড়ে তিনশো টন সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতি, লাল ফৌজের ঘেরাটোপে দমবন্ধ হয়ে আসা জার্মান সেনাবাহিনীর আশা ছিল নাৎসি সরকার তাদের উদ্ধার করবে। যেভাবেই হোক না কেন নতুন রসদ, বাহিনী এসে পৌঁছবে। হিটলার ঘোষণা করলেন- একজনও জার্মান সেনা বেঁচে থাকলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। একদিকে ভয়ানক ঠাণ্ডা, আরেকদিকে আহতদের বিনা চিকিৎসায় মরত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রেশনের বরাদ্দ অর্ধেক করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে জার্মান ডিভিশনের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে যায়। এয়ার লিফটের ঘোষণা হলেও পরে বোঝা যায় রাশিয়ার আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে আদৌ কোনও পরিকল্পনাই করা হয়নি। তিরিশ শতাংশ বিমান ভুল এলাকায় ড্রপ করে চলে যায়, তাদের হাতে যেটুকু পৌঁছায় তাতে অর্ধেক বাহিনীকে অনাহারে কাটাতে বাধ্য হতে হয়।

ষষ্ঠ ডিভিশনের সেনাবাহিনী বুঝতে পারে তাদের মুক্তির আর কোনও সম্ভাবনা নেই, নিজেদের দেশের সরকারও আর কিছুই করবে না।

ততদিনে লাল ফৌজ পাল্টা আক্রমণের পর্যায়ে এগিয়ে এসেছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি।

ইয়াকভ নিজের দেশের জন্য লড়াই করতে ভয় পায় না, লড়াই করতে চায়। পিতার থেকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাই। তার চোখে চোখ রেখে সেকথা বলার সাহস জুটিয়ে নিতে না পারায় পিতার দেহরক্ষীদের সামনে বড় ছেলে আবদার জানায়। তারা যেন পিতাকে জানিয়ে দেয় ইয়াকভ যুগাশভিলি ফ্রন্টে যেতে ভয় পায় না! গার্ড হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমরেডরা ততদিনে সেই পিতাকে নিয়েই রীতিমত ব্যস্ত।

কেন?

মাথার উপরে প্রতিমুহূর্তে বোমারু বিমান যাতায়াত করছে, তবু তিনি অন্য কোথাও যাবেন না।

এহেন মানুষকে কিভাবে বলা যায় তার বড় ছেলে বর্বরদের সাথে মুখোমুখি লড়াই করতে চায়। তবু বলা গেল। প্রিয় নেতার বড় সন্তানের প্রতি গার্ডদের কিছুটা বাড়তি স্নেহ ছিলই। তারা খানিকটা বাড়তি কথা বলেই তার কাছে সেই আর্জি জানাল। বেশিরভাগ সময়ই তিনি যেভাবে শুধু শুনতেন... বলতেন খুবই কম... অনেকটা সেভাবেই যেন এড়িয়ে গেলেন!

তবে কি নিজের সন্তানকে যুদ্ধে পাঠাতে পিতা ভয় পাচ্ছেন?

একদিন দুপুরের দিকে ভাঙ্গা ছাদের উপর তিনজন সেনা অফিসার ও সেই ছেলেকে সাথে নিয়ে উঠে এলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। ছাদের একদিকে একটি হেভি মেশিনগান... মাটিতে হেলিয়ে রাখা রয়েছে। বিমান লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে, আকাশে উড়ে বেড়ানো বিরাট যন্ত্রটাকে মাটিতে আছড়ে ফেলে দিতে এমন অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়। সবাইকে চমকে দিয়ে পিতা এবার ছেলের মুখের দিকে ফিরলেন।

‘তুমি নাকি যুদ্ধে যেতে চাইছ’?

‘হ্যাঁ’!

‘ঐ মেশিনগানটি ধরো তো, দেখো- পূর্বদিক থেকে ওরা হামলা চালাচ্ছে... দেখতে পাচ্ছ’?

‘হ্যাঁ’!

‘এবার কি করতে পারো দেখি’।

একের পর এক ফায়ার করল সেই ছেলেটি। ভয় ছিল না, যথেষ্ট সাহসের সাথেই সে নেশিনগান থেকে ফায়ার করে চলল। তবে তার নিশানা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। ব্যাপারটা আশ্চর্য্যের না, উড়ন্ত বিমান লক্ষ্য করে ফায়ার করার সময় এমন কিছু খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

কিন্তু তিনি যে শুধু পিতা না, তিনি জোসেফ স্তালিন।

তাই মুচকি হেসে নিজের বাহিনীর অফিসারদের দিকে ফিরে বললেন ‘ওর ভালো পোস্টিং এর জন্যে তোমরা আমার কাছে তদবির করছ কেন? দেখতেই পাচ্ছ, ও তো একেবারেই একটা আনাড়ি! সাধারণ সেনাবাহিনীতে আমাদের লোকজন যেভাবে থাকে সেভাবেই থাকতে পারলে যাক, কিন্তু তার চাইতে বাড়তি কিছুই হবে না’।

ইয়াকভকে জার্মান সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করার পরে হিটলারের তরফে স্তালিনকে সরাসরি টেলিফোনে বার্তা দেওয়া হল, ‘আপনাদের হাতে আটক থাকা জার্মান মেজরকে ছেড়ে দিন... আমরাও জুনিয়র স্তালিনকে ছেড়ে দেব’।

ঐ একবারই পলিটব্যুরোর মিটিংয়ে একা হয়েছিলেন... আইনি ভাষায় মাইনরিটি হয়েছিলেন।

সবাই বলেছিল হিটলারের শর্ত মেনে এবারের মতো ঐ জার্মান মেজরকে ছেড়েই দেওয়া যাক। সুযোগ হলে আবার ধরা যাবে। না হলে যদি কিছু একটা ঘটে যায় তাহলে দেশের লোকের মনোবল ভেঙে যাবে।

গোটা দেশের মানুষকে নিজের সন্তান ভাবতে পারতেন বলেই সটান জবাব দিয়েছিলেন- ‘বদমায়েশটা পড়াশোনা তেমন শেখেনি শুনেছিলাম, কিন্তু এমন মূর্খ তো জানতাম না! ওকে বলে দাও সেনাবাহিনীতে হস্তান্তর হয় সমান সমান পদমর্যাদায়। ওরা যাকে ধরেছে সে আমাদের একজন পদাতিক সেনা। আর আমরা যাকে ধরেছি সে ওদের একজন মেজর! আগে ওরা আমাদের একজন মেজরকে ধরুক, তখন না হয় ভেবে দেখা যাবে’।

ছেলের শবদেহ কফিনে চেপে পিতার সামনে ফিরে আসে।

এই একটি ঘটনাতেই বোঝা যায় স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ কেন ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেনাবাহিনীর পাশপাশি গোটা দেশের জনগণ কেন ঐ যুদ্ধে লড়াই করতে নেমেছিল?

কেন জিতেছিল?

কারণ ঐ যুদ্ধ দুনিয়াজুড়ে অনেকের মতো স্তালিনকেও সন্তানশোকে বিদ্ধ করেছিল। দেশের মানুষকে নিজের সন্তান হিসাবে দেখতে পেতেন বলেই সেদিন স্তালিনের সন্তান প্রাণ হারিয়েছিল। একে মনে রেখেই গোটা দুনিয়াজুড়ে কমিউনিস্টরা সিদ্ধান্ত নেন নেতার সন্তান হারানোর দুঃখে তারাও যুক্ত হবেন। উনি নিজের সন্তান হারিয়েছেন, এবার থেকে আমরা সকলেই ওর সন্তান। ‘উই আর চিলড্রেন অফ স্তালিন’ তাই নিছক কোনও স্লোগান নয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে গোটা দুনিয়ার মুক্তিকামী জনগণের লড়াইয়ের শপথ- ওয়ার ক্রাই।

‘দীর্ঘদিন আপনাদের কোনও চিঠি লিখিনি। আমার যাবতীয় উৎসাহ হারিয়ে গেছে, হাসতেও ভুলে গেছি। আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি যখন সারা শরীরে গোটাকয়েক জট পাকানো স্নায়ু ছাড়া আর কিছু রয়েছে বলে অনুভব হয় না। আমার সঙ্গে আর যারা বেঁচে রয়েছে সকলেরই এক অবস্থা। এমন চিঠি লেখার জন্য যদি সেনা আদালতে আমার কোর্ট মার্শাল হয়, যদি আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয় তাহলে সেটাও আমার আজকের পরিস্থিতির চাইতে অনেক ভালো বন্দোবস্ত হবে। আমি আর কিছুই আশা করি না। আমার মৃত্যুসংবাদ পেলে কাঁদতে বসবেন না এটুকুই চাইব। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাবেন, একে অন্যের খেয়াল রাখবেন।’

এই চিঠি ব্রুনো কালিগো’র লেখা, জার্মান বাহিনীতে কর্পোরাল ছিলেন। লাল ফৌজের ঘেরাটোপে আটকে পড়া অবস্থায় মা বাবার উদ্দেশ্যে তিনি এ চিঠি লিখেছিলেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না তখন জার্মান বাহিনীর মনোভাব কী অবস্থায় ছিল।

স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে বিশ্ব-পরিস্থিতির ভারসাম্যে বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। মার্শাল জুকভের নেতৃত্বে অপারেশন ইউরেনাস সফল হয়। লাল ফৌজের ঘেরাটোপে আটকে পড়া জার্মান সেনাবাহিনী কিছুতেই মুক্ত হতে পারেনি, আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

১৯৪৩ সালের ৩১শে জানুয়ারি তারা আত্মসমর্পন করে।

ফেব্রুয়ারি মাসের তিন তারিখে স্তালিন ঘোষণা করলেন- ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের মাটি থেকে হানাদার শত্রুদের বের করে দেওয়া শুরু হয়েছে’। ঐ বছর নভেম্বর নাগাদ সোভিয়েত লাল ফৌজ ইউক্রেনের কিয়েভ পুনরুদ্ধার করে, এর পরে ক্রুশকের যুদ্ধেও তারা জার্মান বাহিনীকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ হারার পরে জার্মানি আর একটি যুদ্ধেও জিততে পারনি, ক্রমাগত পিছিয়ে গেছে। ‘দেয়ার ইজ নো ল্যান্ড বিহাইন্ড ভলগা’ বলে শপথ নিয়ে লাল ফৌজ যে যুদ্ধ শুরু করেছিল ১৯৪৫ সালের ২রা মে রাইখস্ট্যাগের মিনারে লাল পতাকা উড়িয়ে তা শেষ হয়।

এর কিছুদিন আগেই এপ্রিল মাসের ২৬, ২৭ আর ২৮ তারিখ, তিনদিন ধরে চারদিক থেকে শুধুই লাল ফৌজের এগিয়ে আসার খবর আসতে থাকে, বোঝা যায় যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে। হিটলার এবং নাৎসি জার্মানি দুটোরই পরাজয় নির্ধারিত হয়ে গেছে, এগিয়ে আসছে লাল ফৌজ। কয়েকমাস আগেও যাদের কেকের মধ্যে দিয়ে ছুরি চালানোর মতো অনায়াসে শেষ করে ফেলা হবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ২৯শে এপ্রিল হিটলার দুটি উইল লিখলেন। একটি ব্যক্তিগত, যাতে উল্লেখ ছিল দীর্ঘদিনের বন্ধু ইভা ব্রাউনকে তিনি স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করছেন। আরও লিখলেন, যেহেতু বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি হেরে যাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের মতো বিচার তিনি সহ্য করতে পারবেন না তাই তারা দুজনেই নিজেদের জীবন শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

মাটির নিচের বাংকারে বিবাহের কাগজে সইসাবুদ করে তার দুজনে হিটলারের কক্ষে চলে যান। ঘরে ঢোকার আগে হিটলার নিজের রাজনৈতিক দলিলে তাদের প্রত্যেককেই নাৎসি পার্টি থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা করেন যারা যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত বুঝে তাকে আত্মসমর্পনের পরামর্শ দিয়েছিলেন, হেরম্যান গোয়েরিং’র নাম সে তালিকায় উল্লেখযোগ্য। ঘরের নিভৃতে যাওয়ার আগে নির্দেশ দিয়ে গেলেন যাতে তাকে এবং ইভা ব্রাউন দুজনকেই লাল ফৌজ জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় না পায়।

মৃত্যুর পরে যেন সেনাবাহিনী তাদের মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

তারা ঘরে ঢুকে যাবার পরেই বাংকারের সৈনিক এবং অন্যান্য কর্মচারীরা আনন্দে চিৎকার করে গান গাইতে, নাচতে শুরু করেন। লাল ফৌজের হাতে গ্রেফতার হবেন, নৃশংস যুদ্ধাপরাধের হিসাব নিতে আদালতে তাদের বিচার চলবে সেই আতংকের থেকেও তারা যে হিটলারের শাসন থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন সেই আনন্দই ঐ মুহূর্তে তাদের উত্তেজনার একমাত্র অবলম্বন ছিল। সেই ফুর্তির আওয়াজ এতো জোরালো ছিল যে ঘর থেকে স্বয়ং হিটলার তাদের কিছুটা কম শব্দ করতে নির্দেশ পাঠান!

হ্যাঁ, প্রবল পরাক্রমের জীবিত অবস্থাতেই এমন ঘটনা ঘটে।

এর কিছুক্ষন পরে হিটলারের ঘর থেকে একটি গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বাকিরা আরও একটি গুলির আওয়াজের জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করেন। সেই আওয়াজ আর আসে না। শেষে অধৈর্য হয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে এলে দেখা যায় মেঝেতে দুটি পিস্তল পড়ে রয়েছে। ইভা বিষ প্রয়োগ করে নিজেকে শেষ করেছেন, হিটলার নিজের মাথায় গুলি চালিয়েছেন। মুখটা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল- তিনি সোফায় একদিকে কাত হয়ে পড়েছিলেন।

সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং সবচেয়ে পরাক্রমি শাসকের পরিণতি শুধু একটা গুলি, তাও নিজেরই হাতে নিজের দিকে নিশানা করা।

ঘটনার কথা জানাতে ভোররাতে স্তালিনকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলো। পরপর বেশ কয়েকটি রাত টানা জেগে থেকে স্তালিন কিছুক্ষন আগেই বিশ্রাম নিতে, ঘুমোতে গেছিলেন। লাইন অপারেটর তাই কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন এখুনি তাকে জাগানো উচিত হবে কি না! শেষ অবধি স্তালিন উঠে এলেন। কানে রিসিভারটি ধরে জানতে চাইলেন শেষ আপডেট কী?

'হিটলার ইজ ডেড'।

এটা শোনার পরে টেলিফোনের এপার থেকে যে কথাটি উচ্চারিত হয়েছিল আজও সারা পৃথিবীর মানুষকে নিজের পায়ের তলায় পিষে, মাড়িয়ে সিংহাসনে বসতে চায় যারা তাদের সবার প্রতি ঐ একই মেজাজে একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করা চলে। মার্শাল জুকভের থেকে টেলিফোনে খবর পেয়ে সেদিন স্তালিন বলেছিলেন-

‘Now He's Had It’.

অন্য কেউ এরকম কিছু বললে কথার শেষে সম্ভবত বিস্ময়বোধক চিহ্ন থাকত।

কিন্তু কথাটা যে জোসেফ স্তালিন বলেছিলেন, তাই শেষে ফুলস্টপ বা দাঁড়ি ছিল।

আরও একবার স্পষ্ট হল কেন তিনি স্তালিন আর কেন তার নামে চিহ্নিত শহরে হিটলারের বাহিনীর পরাজয়ের সুত্রপাত হয়েছিল।

স্তালিনগ্রাদ, আস্ত একটি শহর হিটলারের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিল।

সেই লড়াই যুদ্ধের ইতিহাস আর ইতিহাসের সঞ্চারপথ দুইই বদলে দিয়েছিল।

ব্যবহৃত ছবি সোশ্যাল মিডিয়া সুত্রে সংগৃহীত
তথ্যসুত্রঃ
১) অ্যান্টনি বিভোর; স্তালিনগ্রাদঃ দ্য ফেইথফুল সিজ; পেঙ্গুইন বুকস
২) ফ্রাঞ্জ স্নাইডার ও চার্লস বি গ্যুলান্স; লাস্ট লেটার্স ফ্রম স্তালিনগ্রাদ; প্রেগার পাবলিশার্স আইএনসি
৩) ভ্লাদিমির সেভ্রুক; পাসওয়ার্ড ভিক্টরিঃ দ্য গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ার; রাদুগা পাবলিশার্স

শেয়ার করুন

উত্তর দিন