এই ব্যাপক ধর্মঘট দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের নজীর, এই লড়াই শত বাধা সত্বেও মাথা না নোয়ানো স্পর্ধার
২৭শে সেপ্টেম্বরের ধর্মঘট প্রসঙ্গে সারা ভারত কৃষকসভার প্রেস বিবৃতি
ঐতিহাসিক ‘ভারত বনধ’-এর সাফল্যে সারা ভারত কৃষকসভা দেশের জনসাধারনের অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং ঘোষণা করছে আন্দোলন – সংগ্রামের আগামী লক্ষ্য হল দেশব্যাপী কর্পোরেট শোষণের বিরুদ্ধে পিপলস ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন।
সারা দেশে আজ যে মহৎ এবং ঐতিহাসিক বনধ পালিত হয়েছে তার সাফল্যের জন্য দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে । এই ধর্মঘটের মূল স্লোগান ছিল ‘দেশের কৃষিক্ষেত্র থেকে কর্পোরেটরা হাত সরাও’ এবং ‘মোদি-শাহ গদি ছাড়ো’।
এখনো অবধি প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে বলা যায় কৃষকদের এই সংগ্রাম ক্রমশই আরও বেশি সারা দেশ জূড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সারাদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের যে ছবি দেখা গেছে তাতে স্পষ্ট আজকের কর্মসূচীতে মহিলারা, প্রবীণেরা, যুববয়সী এমনকি অপেক্ষাকৃত কমবয়সীরাও ব্যাপক আকারে অংশগ্রহণ করেছেন। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট এবং ত্রিপুরার মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও বন্ধের প্রভাব ছিল ব্যাপক, সারা দেশের মতো এই রাজ্যগুলিতেও দোকানপাট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পূর্ণ অচল ছিল, পরিবহন বন্ধ ছিল। উত্তরপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী এলাকায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই মহিলারা ছিলেন। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার’এর নির্বাচনী এলাকা মোরেনা’তেও অত্যন্ত সফলভাবে বনধ পালিত হয়েছে।
আজকের ভারত বনধ এক বিশাল আকার নিলেও আগাগোড়া এর প্রকৃতি ছিল অহিংস প্রকৃতির যা সত্যিই অসাধারণ। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপরে হামলা চালায় বলে খবর পাওয়া গেছে। এহেন হামলায় কৃষক আন্দোলনের গণচরিত্রই ফুটে উঠছে এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারনের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়কেই স্পষ্ট করছে।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরালা, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, বিহার, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে বনধের ব্যাপকতম প্রভাব পড়েছে। মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, আসাম, কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং গুজরাটের গ্রামাঞ্চলগুলিতে বনধ সফল হয়েছে। দেশের প্রত্যেক প্রান্তেই বিশাল আকারের বিক্ষোভ এবং রেল ও রাস্তা রোকো কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
সারা ভারত কৃষকসভা এই ভারত বনধের সাফল্য অর্জনে ট্রেড ইউনিয়নগুলির ব্যাপক অংশগ্রহণে প্রশংসা জানায়। বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল এই ধর্মঘটকে সমর্থন করেছে। কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, যুব-ছাত্র সমাজ, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য সকল পেশার সংগঠনের কর্মীরা আজকের সফল ভারত বনধের অবিচ্ছেদ্য অংশ থেকেছেন।
গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার বিভিন্ন আন্দোলনে যৌথ সংগ্রামের ফলে দেশের শ্রমিক-কৃষকের মধ্যে যে দৃঢ় শ্রেণীগত ঐক্য গড়ে উঠেছে তারই সাফল্যের প্রমান আজকের ভারত বনধ, দেশজুড়ে কর্পোরেট শোষণের বিরুদ্ধে কৃষি, শিল্প ও পরিষেবাক্ষেত্রেসহ বৃহত্তর যুক্তফ্রন্টের সংগ্রামই হল এই আন্দোলনের রাজনৈতিক দিশা। যে রাজনৈতিক দলগুলি এখনো কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করছে তারা জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখোমুখি হবে এবং জনগণের উত্তাল আন্দোলন আগামীদিনে জনবিরোধী রাজনীতিকে পশ্চাদপসারণ করতে বাধ্য করবে।
সংগ্রামী অভিনন্দন সহ
হান্নান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক
অশোক ধাওয়ালে, সভাপতি