আসানসোল, এই শিল্পাঞ্চলকে এক সময় বলা হত "জার্মানির রূঢ়" । এখন আর কেউ বলে না। শিল্প কারখানার ধোঁয়ায় এই শিল্পাঞ্চলের আকাশ হয়ে থাকতো লাল আবিরের মতো। কিন্তু সেসব দিন আজ অতীত। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া উদারবাদের ধাক্কায় একে একে নিভিছে "দেউটি" । স্বাধীন ভারতে সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল শিল্পায়ন, ব্যাংক এবং বিমার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলিকে সরকারি আওতায় আনা হয়েছিল। স্বাধীনোত্তর ভারতে বিদ্যুৎ, রেল সহ বিভিন্ন ভারী শিল্প গুলি গড়ে উঠেছিল সরকার পৃষ্ঠপোষকতায়।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলের গর্বের সেই শিল্পগুলি হয় আজ বন্ধ বা রুগ্ন। বন্ধ বা কারখানাগুলোকে বন্ধ বা রুগ্ন করে তোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারি নীতি আজ প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ। যে গতিতে বেসরকারিকরণের কাজ চলছে তার ফলে আগামীতে জেলায় সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত শিল্প হয়ত নামমাত্র কিছু থাকবে। ইতিমধ্যে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের মানচিত্র থেকে মুছে গেছে সাইকেল কর্পোরেশন বা সেনরালে কোম্পানি, বার্নপুরের বার্ণস, বন্ধ হয়েছে হিন্দুস্তান পিলকিংটন গ্লাস ফ্যাক্টরি, বন্ধ রানীগঞ্জের বালকো,বার্নস ও চিত্তরঞ্জনের হিন্দুস্থান কেবলস্। কঠিন এ সময়।
এই লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের জনগণের প্রধান দাবি, "বেরোজগারি দূর করো, বন্ধ শিল্পের জমিতে শিল্প গড়ে তোলো"
এই শিল্পাঞ্চলের গর্ব CLW যারা অত্যাধুনিক রেল ইঞ্জিন তৈরি করতে পারে। স্মরণে থাকা দরকার রেলই হচ্ছে তার ক্রেতা । কিন্তু সরকারি নীতিতে CLW আজ সংকটে। CLW তে 6000 এইচ পি ইঞ্জিন তৈরীতে খরচ হয় মাত্র ১০ কোটি টাকা। দুটি ছয় হাজার হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন যুক্ত করে টুইন ইঞ্জিন তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে সেখানে খরচ খুব বেশি হলে ২১ কোটির আশেপাশে থাকবে। যেখানে "অলস্ট্রম" এর কাছ থেকে ১২০০০ এইচ পি এই ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে ৩২ কোটি টাকা দিয়ে। এর ফলেই বোঝা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই চায় না নিজের সংস্থাকে টিকিয়ে রাখতে। CLW আধুনিকীকরণ বা শূন্যস্থানে নিয়োগে কোন সরকারি প্রচেষ্টাই দেখা যাচ্ছে না। আসলে সরকার চায় সিএল ডব্লিউ সংস্থাটিকে রুগ্ন করে বন্ধ করে দিতে - উল্টোদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার পুনরায় কয়লা শিল্পকে মালিকদের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। আরএসএস নিয়ন্ত্রিত বিজেপি সরকার এখনই ১৬০টি কয়লা খনি প্রকল্পকে মনিটাইজেশন পাইপ লাইনের মধ্যে আনতে চলেছে। খুবই দ্রুততার সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ারিং পদ্ধতির মাধ্যমে ১৬০ টি কয়লাখনি প্রকল্পকে লিজের মধ্যে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে। মোদি সরকারের পূর্বে বেসরকারি উদ্যোগে কয়লা খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু বাজারে তা বিক্রির অনুমতি ছিল না। কিন্তু মোদি সরকার ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় আসার পর Coal Mines Special Provision Act, 2015 নিয়ে আসে। এই আইনে কয়লা খনন ও বাজারে বিক্রির স্বাধীনতা বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি পেয়েছে ।
ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রেও ভারত সরকার ২৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে। বর্তমানে কিছু আধুনিকীকরণের কাজ হলেও কেন্দ্রীয় সরকার সদর্থক ভূমিকা পালন না করলে শিল্প শ্রমিকের রুটি রুজির ওপরে আক্রমণ নেমে আসবে। ইস্পাতশিল্পে সেল কর্তৃপক্ষের নেতিবাচক ভূমিকার প্রতিবাদে সর্বাত্মক ধর্মঘট প্রমাণ করেছে শ্রমিকদের ক্ষোভ । সংগঠিত শিল্প কেন্দ্রীয় সরকার তার নির্দিষ্ট নীতির মধ্য দিয়ে ধ্বংস করেছিল। আজ যখন তা আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে তখন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনগণের মুখে উঠে আসছে। বাম আমলে গড়ে ওঠা সালানপুর, জামুড়িয়া, আসানসোল, রানীগঞ্জে শিল্পগুলো কর্মসংস্থান দিয়েছিল আজ সেই শিল্প গুলিও মৃতবৎ। রাজ্যে তৃণমুলী সরকারের নীতির ফলে আজ তা ধ্বংসের মুখোমুখি।এছাড়াও তৃণমূলের লুঠ আদিবাসীদের জমি দখল,বেলাগাম শ্রমিকদের উপর অত্যাচারে বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শ্রমিকদের ছাঁটাই ও পুলিশি জুলুম ধ্বংস করতে চলেছে এই শিল্প শহরকে।
এই নির্বাচন মানুষের কাছে
বে -রোজগারির বিরুদ্ধে বন্ধ শিল্পের জমিতে শিল্প গড়ে তোলার দাবীতে বামপন্থীদের আহ্বানে মানুষ এগিয়ে এসেছেন, আশা জাগাচ্ছেন।