কমরেড সীতারামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশ কারাত

সীতারাম ইয়েচুরি সম্পর্কে অতীত কালের বাক্যে কিছু লেখা আমার পক্ষে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও বেদনাদায়ক কাজ। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের রাজনৈতিক জীবন একে অন্যের সাথে নানাভাবে জড়িত এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে আমরা দু’জনেই কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম আন্দোলনের বহু উত্থান ও পতনের পর্যায়গুলির সাক্ষী থেকেছি। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে, ১৯৭৪ সালে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমদের পরিচয় এবং তারপর ভারতের ছাত্র ফেডারেশনে একসাথে কাজ করেছি, তারপরে পার্টিতেও। সাঁইত্রিশ বছর ধরে আমরা একসাথে পার্টি কেন্দ্রের কাজের সাথে যুক্ত থেকেছি। আমি পার্টি কেন্দ্রে কাজ করতে শুরু করি ১৯৮৫ সালে, এর দু’বছর পর সীতারাম যুক্ত হয়। পার্টিতে আমাদের কাজ অনেকটাই একই অভিমুখে এগিয়েছে। ১৯৮৪ সালে, পার্টির দ্বাদশ কংগ্রেসের পর আমরা একসাথে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য নির্বাচিত হই। ১৯৮৮ সালে ত্রয়োদশ কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলী এবং ১৯৯২ সালে পলিট ব্যুরোর সদস্য - প্রতিবার আমরা একইসাথে নির্বাচিত হয়েছিলাম।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সহ দেশের সামগ্রিক বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সীতারাম ইয়েচুরির যে বহুমাত্রিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ অবদান রয়েছে তাকে সামগ্রিকভাবে উপস্থিত ও ব্যাখ্যা করতে আমার আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। পার্টিতে মতাদর্শগত, কর্মসুচী বিষয়ক ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণের প্রশ্নে তাঁর সুনির্দিষ্ট কৃতিত্বের বিষয়েই আপাতত আমি মনোনিবেশ করছি।

সীতারামের স্মৃতিচারণায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছু আলোচনা উঠে এসেছে, প্রায় সকলেই দেশজুড়ে বিরোধী দলগুলিকে একত্রে টেনে নিয়ে এসে একটি মঞ্চ গড়ার বিষয়ে তাঁর অবদানকে তুলে ধরেছে। এ কাজে তার দক্ষতা দেশের জনসাধারণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই আমি চাইব পার্টির অভ্যন্তরে মার্কসবাদ চর্চায় তাঁর গুরুত্বপুর্ণ অবদান নিয়ে কিছু আলোচনা করতে। পার্টি কেন্দ্র ও পলিটব্যুরোতে সীতারামের নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ভিত্তিতে পার্টির মতাদর্শগত অবস্থান নির্ধারণ করা।

প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সিপিআই (এম) দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ ও বাম সংকীর্ণতাবাদী বিচ্যুতি - উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। ১৯৬৮ সালে আয়োজিত বর্ধমান প্লেনাম থেকে মতাদর্শগত প্রশ্নে গৃহীত দলিলটি এদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এক যুগান্তকারী দলিল। তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিচারে এবং দুনিয়াজুড়ে কমিউনিস্ট পার্টিগুলির মধ্যে বিতর্কের আবহে ঐ দলিল ছিল ভারতের মাটিতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রয়োগে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পথে এগোনোর দিকনির্দেশ। সেই ভাবনাকেই আজকের পরিস্থিতিতে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন সীতারাম।

অক্টোবর বিপ্লবের ৭০-তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে সিপিএসইউ-এর সাধারণ সম্পাদক মিখাইল গর্বাচেভ একটি বক্তৃতা দেন। তাঁর বক্তৃতায় এমন কিছু সূত্রায়ন ছিল, যা তৎকালীন দুনিয়ার সামাজিক দ্বন্দ্বসমূহ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামকে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচ্যুতি। সিপিআই(এম)-ই ছিল প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি যারা গর্বাচেভের ঐ বক্তব্যের বিরোধিতা করে। ১৯৮৮ সালের মে মাসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে সেই বিরোধিতার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে ঐ বছর আগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে আরও একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় – ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রসঙ্গে’। এতে উল্লেখ করা হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্তের নামে বেশ কিছু ভ্রান্ত ও বিপজ্জনক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই প্রসঙ্গে তৃতীয় আর একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় ১৯৯০ সালের মে মাসে। তখন পূর্ব ইউরোপে সংকট, যার প্রভাবে সমাজতান্ত্রিক সরকারগুলি একের পর একটি ভেঙে যাচ্ছিল। সিপিআই(এম)-র তরফে গৃহীত তৃতীয় দলিলে ঐ সকল দেশে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার কাজে মতাদর্শগত অবক্ষয় ও বিচ্যুতির উল্লেখ করা হয়েছিল। এই তৃতীয় দলিলটি রচনার সময় সীতারামের গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা ছিল। পরবর্তীকালে ঐ দলিলের ওপর ভিত্তি করেই সিপিআই(এম)-র মতাদর্শগত দলিল গৃহীত হয়।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে। সোভিয়েত পরবর্তী দুনিয়ায় নিজেদের মতাদর্শগত অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে রক্ষার কাজে সিপিআই(এম)-কেও সেই ধাক্কার মোকাবিলা করতে হয়েছিল। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালে মাদ্রাজে আয়োজিত পার্টির চতুর্দশ কংগ্রেস থেকে সেই মতাদর্শগত দলিলটি গৃহীত হয়। পার্টি কংগ্রেসের অধিবেশনে ঐ প্রস্তাবের উপরে বিস্তৃত আলোচনার জন্য দলিলটি পেশ করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। আলোচনার সারসংক্ষেপ করে জবাবী বক্তব্য রাখার দায়িত্বও তাকেই দেওয়া হয়। পার্টির তরফে মতাদর্শগত দলিল পেশ করা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার কাজ সাধারণভাবে কমরেড এম বাসবপুন্নাইয়াই করতেন। সেই প্রথম পলিট ব্যুরোর তরফে নির্ধারিত প্রস্তাবকে পার্টি কংগ্রেসে উপস্থাপনা করার দায়িত্ব পালন করেন এমন একজন, যিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য। এর থেকেই বোঝা যায় মার্কসবাদী তাত্ত্বিক হিসাবে পার্টি তাঁকে তখনই স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই থেকে পলিট ব্যুরোর আলোচনায় মতাদর্শগত যাবতীয় বিষয়ে তিনিই ছিলেন প্রধান উত্থাপক।

কার্ল মার্কসের ১৭৫ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৯৯৩ সালের মে মাসে কলকাতায় একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজিত হয়। এই সেমিনারের বিষয় ছিল, 'সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি ও মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতা'। একুশটি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরা এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ের পরিস্থিতিকে বিশেষভাবে খেয়ালে রাখতে হবে - সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে, পূর্ব ইউরোপেও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে আলোচনার জন্য এটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক কর্মসুচি। বিভিন্ন প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, নিজেদের মতামত জানিয়েছিলেন। সীতারাম ছিলেন পার্টির তরফে আন্তর্জাতিক দপ্তরের প্রধান। ঐ সেমিনারে পার্টির প্রতিনিধি হিসাবে তিনিই বক্তব্য পেশ করেছিলেন। ঐ সেমিনার আয়োজনে প্রধান সংগঠকও ছিলেন তিনি।

পরবর্তীকালে পার্টিতে মতাদর্শগত প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থানকে সময়োপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কাজের খসড়া তৈরি এবং তাকে যথোপযুক্ত করার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই সীতারামের উপরেই ন্যস্ত হয়। ২০১২ সালে কোঝিকোড়ে আয়োজিত পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেসে সীতারাম সেই দলিলটি পেশ করেছিলেন, বিস্তারিত আলোচনার শেষে সেই দলিলটি ঐ কংগ্রেস থেকেই গৃহীত হয়।

মতাদর্শ চর্চায় সীতারামের আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ অবদান রয়েছে। তার সেই কৃতিত্বকে তুলে ধরতে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) দ্বিতীয় সরসংঘ চালক (মুখ্য নেতা) এম এস গোলওয়ালকর 'উই অর আওয়ার নেশন হুড ডিফাইন্ড' শিরোনামে ৭৭ পৃষ্ঠার একটি বই লেখেন। ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত সে বইতে তিনি যা লেখেন তাতে স্পষ্ট হয়ে যায় সংঘ প্রস্তাবিত হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণার গোড়ায় রয়েছে ফ্যাসিবাদী নীতি প্রসূত চিন্তাভাবনা। গোলওয়ালকরের সেই মূল বইয়ের লিখিত কপি খুঁজে পাওয়া রীতিমত কঠিন ছিল। সীতারাম বইটির একটি তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার সমালোচনা লেখেন এবং এই কাজ করার জন্য ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত বইটির একটি কপিও তিনি খুঁজে বের করেছিলেন। ফ্রন্টলাইন পত্রিকায় সীতারামের লেখা সমালোচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে ঐ লেখাটিকেই আরও বিস্তৃত আকারে ফ্রন্টলাইন প্রকাশনার পক্ষ থেকে একটি পুস্তিকা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। সদ্য প্রয়াত এ জি নূরানী ছিলেন আরএসএস-র বিষয়ে অন্যতম একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি সীতারামের লেখা সেই বইটির বিশেষভাবে প্রশংসা করেছিলেন। হিন্দুত্বের আদর্শগত ও রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কে উপযুক্ত ও স্বচ্ছ দূরদৃষ্টির থাকার কারনেই সীতারাম ঐরকম তীক্ষ্ণ সমালোচনা লিখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্যকে সুরক্ষিত রাখার সংগ্রামে, হিন্দুত্বের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতায় তিনি নিজের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন।

কমিউনিস্ট পার্টির জন্য কর্মসুচি হল নিজেদের রণনীতি-রণকৌশলগত সংগ্রামের দিকনির্দেশ। ১৯৬৪ সালে পার্টির ৭ম কংগ্রেসে সিপিআই(এম)-এর কর্মসূচি গৃহীত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে উপযুক্ত রণকৌশল কি হওয়া উচিত সেটাই ছিল প্রধান বিষয়। ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় পার্টি পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই সিপিআই(এম) নিজেদের কর্মসুচি গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীকালে দুটি গুরুত্বপুর্ণ ঘটনার কারনে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে কর্মসুচিকে সময়োপযোগী করতে হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের জন্য আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে শ্রেণীশক্তির ভারসাম্যে বদল ঘটে, এটা ছিল প্রথম ঘটনা। দ্বিতীয়টি ছিল, ভারতে পুঁজিবাদ বিকাশের নয়া কৌশল হিসাবে নয়া উদারবাদী জমানার সূত্রপাত।

সময়োপযোগী কর্মসুচি নির্ধারণের কাজে পার্টি একটি কর্মসুচি (প্রোগ্র্যাম) কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের আহবায়ক ছিলেন হরকিষেন সিং সুরজিৎ, সীতারামও এই কমিশনের সদস্য ছিলেন। আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজি ও নয়া উদারবাদী ধনতন্ত্র ভারতে কোন পথে কার্যকরী হচ্ছে সেই প্রসঙ্গে পার্টি কর্মসুচীতে নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদগুলির সময়োপযোগী বয়ান তৈরির কাজে সীতারামই প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিট ব্যুরোতে ঐ প্রসঙ্গে যাবতীয় আলোচনায় তিনি অত্যন্ত সদর্থক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৬৪ সালে গৃহীত কর্মসুচিতে ভারতের রাষ্ট্র চরিত্র সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, সময়োপযোগী পার্টি কর্মসূচিতেও তাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় সীতারাম ও আমাকে একসাথে দৃঢ়সংকল্প উদ্যোগ গ্রহন করতে হয়েছিল।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভ ও মোদি সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার মধ্যে দিয়ে ভারতের রাজনীতি দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন ঘটে। ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক চরিত্র ক্ষুণ্ন হওয়ার বিপদটাই মূখ্য হয়ে যায়। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, যার মোকাবিলায় উপযুক্ত রাজনৈতিক-রণকৌশলগত লাইন গ্রহণ করতে হয়। এ কাজে সীতারাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। পরিস্থিতির এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কর্তৃত্ববাদী-হিন্দুত্বের রাজনৈতিক কর্মসূচির মোকাবিলায় উপযুক্ত রাজনৈতিক কৌশলগত লাইন নির্ধারণের কাজেই সীতারাম ব্যস্ত ছিলেন।

পলিট ব্যুরোর শেষ যে আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন, তাতে সামনের বছর এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য পার্টি কংগ্রেসের সময়সূচী ও জরুরী নথিপত্র তৈরির কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

এর পরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতিপর্বে অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য বিভিন্ন জরুরী কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, এটা নিয়ে তাঁর খুবই দুশ্চিন্তা ছিল। কথা বলার সময় বারবার তিনি সেই উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন। আমি তাঁকে প্রতিবার এই বলে শান্ত করতে চেষ্টা করছিলাম, খুব তাড়াতাড়ি তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এবং কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু হায়! তা আর হল না।

পার্টিতে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির যাবতীয় অবদানকে একটি লেখায় প্রকাশ করা এই মুহূর্তে আমার পক্ষে কঠিন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রতি গভীর ও একনিষ্ঠ দায়বদ্ধতা পালনে তিনি যা কিছু করেছেন তাকে এক কথায় 'নির্দিষ্ট পরিস্থিতির সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ' বলেই চিহ্নিত করতে হয়। পার্টিতে আমরা যারাই তাঁকে কমরেড হিসাবে দেখেছি, জানি, লেনিনের ঐ উক্তিটি তাঁর বিশেষ পছন্দের ছিল। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুরক্ষিত রাখতে তিনি এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীর ছিল বিস্তৃত। তাঁর এসব গুণ বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের পার্টি কর্মী ও প্রগতিশীল মানুষদের অনুপ্রাণিত করবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন