Site icon CPI(M)

দুঃস্বপ্নের এক দশক – চন্দন দাস

২৫ নভেম্বর ২০২০, বুধবার

পর্ব ৮

সংখ্যালঘুদের ঠকিয়ে
বিজেপির সুবিধা করেছে তৃণমূল


২৫ মে, ২০১৯ ছিল দিনটি। আটচল্লিশ ঘন্টা আগে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে। নবান্নে একতরফা সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। সেদিন বলেছিলেন,‘‘আমি মুসলমানদের তোষণ করি। সবাই বলে। করব। কোটি বার করব। এ’ রাজ্যে ৩১.৯% মুসলিম। আমি না দেখলে তাদের কে দেখবে?’’ আরও বলেছিলেন,‘‘যে গোরু দুধ দেয়, তার লাথি খাওয়াও ভালো।’’
মুসলমানদের তিনি মনে করেন ‘দুধ দেওয়া গোরু’ — প্রকাশ্যে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।

আমি মুসলমানদের তোষণ করি। সবাই বলে। করব। কোটি বার করব। এ’ রাজ্যে ৩১.৯% মুসলিম। আমি না দেখলে তাদের কে দেখবে?’’ আরও বলেছিলেন,‘‘যে গোরু দুধ দেয়, তার লাথি খাওয়াও ভালো।’’

মমতা ব্যানার্জি ধর্মীয় বিভাজনকে এই ভাবেই ব্যবহার করতে চেয়েছে। বিজেপির ‘হিন্দুত্ব’-র পালটা নিজেকে ‘মুসলিম তোষণকারী’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে গেছেন লাগাতার। এর পিছনে আছে একটি সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ। আর তাঁর এই প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে মমতা ব্যানার্জি সুবিধা করে দিয়েছেন বিজেপির, আরএসএস-র।
রাজ্যের সমাজকে, গরিব, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মানুষকে বিজেপির মডেলে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার কাজ তৃণমূল কংগ্রেস শুরু করেছিল ২০০৬-’০৭ থেকেই। অথচ সংসদে ২০১৯-র ডিসেম্বরে যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রবল বিরোধিতার মধ্যে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ্‌ পাশ করাচ্ছেন, তখন অনুপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের ৭ জন সাংসদ। সেই আইন করে বিজেপির প্রধান ‘টার্গেট’ সংখ্যালঘুরাই। ২০০৩-এ নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন হয়। সরকার তখন এনডিএ-র। যুক্ত করা হয় ‘১৪এ’ ধারা। ওই ধারা অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন মনে করলে প্রত্যেক ভারতবাসীর নাম নথিভুক্ত ও একইসঙ্গে প্রতিটি নাগরিকের জন্য ‘ন্যাশনাল আইডেনটিটি কার্ড’ ইস্যু বাধ্যতামূলক করতে পারে। ২০০৩-র সেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে আরও বলে দেওয়া হয়েছে যে, ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অথরিটি তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন মনে করলে প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি করতে পারে।


২০১৯-র ডিসেম্বরে যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রবল বিরোধিতার মধ্যে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ্‌ পাশ করাচ্ছেন, তখন অনুপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের ৭ জন সাংসদ।

জাতীয় নাগরিকপঞ্জী(এনআরসি)-র ভিত্তি হলো সেই সংশোধনী। সেই ভিত্তি তৈরি হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে। সেই মন্ত্রীসভায় ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেদিন বিরোধিতা করেননি।


মমতা ব্যানার্জির সংখ্যালঘু-দরদ এমনই।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে ভূমিসংস্কারের ফলে ৩০লক্ষাধিক কৃষক পেয়েছেন ১১লক্ষ ২৭হাজার একরেরও বেশি জমি। পাট্টা প্রাপকদের মধ্যে ১৮% গরিব সংখ্যালঘু। তবু গরিব, মধ্যবিত্ত সংখ্যালঘু মানুষের এক বড় অংশকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ‘বামফ্রন্ট বেছে বেছে মুসলমানদের জমি নিয়ে নিচ্ছে।’ ২০০৭-র ফেব্রুয়ারি থেকে এই প্রচারটিকে আগুনের মত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। তাৎপর্যপূর্ণ হলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত হিন্দুত্ববাদীরা সেই সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে পূর্ণ সমর্থন করেছিল। এমনকি ২০১৬-তেও।

NRC র’ বিরুদ্ধে কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদ।

কিন্তু কী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের স্বার্থে?

যা প্রতিশ্রুতি সংখ্যালঘুদের দিয়েছিলেন, তার কতটা মমতা ব্যানার্জি পূরণ করেছেন? বিচার করা দরকার।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘুদের মধ্যে শিক্ষার অগ্রগতির হয়েছিল। মাদ্রাসায় ছাত্র তার একটি প্রমাণ হতে পারে। যদিও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন, এমন সবাই সংখ্যালঘু, তা নয়। কিন্তু বড় অংশ সংখ্যালঘু। গত সাড়ে ন’ বছরে রাজ্যে মাদ্রাসা বেড়েছে ৯টি। মমতা ব্যানার্জিই রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা মন্ত্রী। ১৯৭৭-এ রাজ্যে মাদ্রাসা ছিল ২৩৮টি। ২০১০-’১১-তে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০৫টি। এখন তা ৬১৪। রাজ্য সরকারেরই হিসাব। এছাড়াও মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্র ২০১০-’১১-তে ছিল ৪৯৪। গত সাড়ে ন’ বছরে ১টি বেড়েছে। ১০০ নিউ সেট আপ মাদ্রাসা, ১২টি ইংরাজি মিডিয়াম মাদ্রাসা বামফ্রন্ট সরকারের সময় কালে হয়েছিল। গত সাড়ে ন’ বছরে আর একটিও বাড়েনি।
মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা দপ্তরের মন্ত্রী। তিনি ঊর্দু ভাষার প্রসারে, যতনে অত্যন্ত আগ্রহী — এমনটিই প্রচার। কিন্তু তাঁরই দপ্তর জানাচ্ছে — রাজ্যে ঊর্দুতে পড়াশোনা হয় এম মাদ্রাসা এখন যা, তাই ছিল ২০১১-তেও। একটিও বাড়েনি। আছে সেই ১৭-তেই
তাঁর বাকি প্রতিশ্রুতিগুলির হাল কী?


মমতা ব্যানার্জির প্রতিশ্রুতি ছিল সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বিশেষ তহবিল তৈরি হবে। সাড়ে ন’ বছর কেটে গেছে। আজ পর্যন্ত হয়নি।

তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বেতন কাঠামো গড়ে তোলা হবে। এমন কিছুও হয়নি। বিভিন্ন মাদ্রাসায় প্রায় ৫হাজার যুবকের চাকরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১০-এ। তারপর বিধানসভা নির্বাচন চলে আসায় কাজ শেষ করা যায়নি। তৃণমূল সরকারে এসে সেই সব পদ পূরণ করেনি।
তৃতীয়ত, মমতা ব্যানার্জির ঘোষনা ছিল — প্রয়োজনীয় মাদ্রাসা তৈরি করা হবে। রাজ্যে গত ছ’ বছরে মাদ্রাসা হয়েছে ৯টি। বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বছরে মাদ্রাসা ছিল ৬০৫টি। ২০১৭-তে তা দাঁড়িয়েছে ৬১৪-তে।


চতুর্থত, ২০১১-র জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন ১০,০০০ আন রেজিস্টার্ড মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেবেন। তা এখনও পর্যন্ত ২৩৫-এ।


সেই মাদ্রাসার শিক্ষকরা, ছাত্রছাত্রীরা সরকারের কোনও সহায়তা পান না। তাঁরা আন্দোলন করলে পুলিশ টেনে হিঁচড়ে ভ্যানে তুলেছে।


পঞ্চমত, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বিশেষ কমিশন করা হবে ছিল মমতা ব্যানার্জির ঘোষনা। এমন কোনও ‘বিশেষ’ কমিশন আজ পর্যন্ত হয়নি

বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালেই ১৯৯৬-এ রাজ্যে সংখ্যালঘু কমিশন তৈরি হয়। একই সঙ্গে তৈরি হয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম।


ষষ্ঠত, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির আদলে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। হয়নি এমন কিছুও। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সময়কালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা বিতর্ক, গোলমালের সূত্রপাত।
সপ্তমত, ঘোষনা ছিল — ‘সংখ্যালঘুদের কর্মসংস্থানে প্রাধান্য দেওয়া হবে’। তাও হয়নি। মাদ্রাসায় চাকরির যে সংস্থান বামফ্রন্ট সরকার করে এসেছিল, সেই পদগুলি গত সাড়ে ন’ বছরে পূরণ করেনি মমতা-সরকার। বরং সরকারী চাকরিতে সংখ্যালঘু কমেছে। ২০১৪-র এপ্রিল থেকে ২০১৫-র মার্চ — এক বছরে রাজ্য সরকারে মুসলমান কর্মচারীর সংখ্যা ১৯, ৩৪২ থেকে নেমে গেছে ১৮,৯৯১-এ

। গত কয়েক বছরে তা আরও কমেছে সন্দেহ নেই। কমেছে খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ কর্মচারীও। একবছরে রাজ্যের সরকারী কর্মচারী খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১৬৪২ থেকে ১৫৩৮-এ নেমেছে। বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে ৩৪৭৯ থেকে নেমে হয়েছে ২৭৪৯জন।

বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তৈরি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

ঘোষনা ছিল ৫৬টি মার্কেটিং হাব হবে রাজ্যে। ২০১২-র অক্টোবরে ঐ হাবগুলির ঘোষনার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন সেখানে প্রায় ছাপান্ন হাজার সংখ্যালঘু ছাত্রদের কাজের বন্দোবস্ত হবে। পরে প্রতিশ্রুতিটিই বদলে গেছে। ২০১৬-র ১লা আগস্ট নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতা ব্যানার্জি ঘোষনা করলেন — রাজ্যে ১৮৩টি মার্কেটিং হাব হবে। তাতে সংখ্যালঘু যুবক যুবতীরা স্টল পাবেন। যদিও এটিও হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের এমএসডিপি প্রকল্পের টাকায় রাজ্যে অনেকগুলি ‘কর্মতীর্থ’ নামের ভবন বানিয়েছে রাজ্য সরকার। এখানে দোকান পাবেন মহিলা, তফসিলী জাতি এবং সংখ্যালঘুরা — এমন ঘোষণাও ছিল। এগুলির কয়েকটিতে স্টল বিলি হয়েছে। চালু হয়নি। বেশিরভাগে তাও হয়নি।


আমাদের সংবিধানের আওতায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবু শুধু সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা হাসপাতালের ঘোষনা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। অনেক লেখালেখিও হয়েছে এটি নিয়ে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

তৃণমূল কংগ্রেস ইমাম, মোয়াজ্জিনদের ভাতা চালু করেছে। এটি তাদের একটি ‘সাফল্য’ বলে তারা প্রচার করে। কিন্তু রাজ্য সরকারেরই তথ্য বলছে — ইমাম, মোয়াজ্জিনদের জন্য বামফ্রন্ট সরকার কোনও ভাতা চালু করেনি। কিন্তু ওয়াকফ বোর্ডের আওতায় ১ কোটি টাকার একটি করপাস ফান্ড গড়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। সেই টাকায় ওয়াকফ মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনদের সন্তানদের স্টাইপেন্ড, ফেলোশিপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগই তৃণমূল কংগ্রেস সৃষ্টি করতে পারেনি, ফলে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সংখ্যালঘুরাও। তবে ২০০৬-’১১ — র মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার সংখ্যালঘু উন্নয়ন সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলিতে সৃষ্টি হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম।
<বর>
এই ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারেরই একটি নথীর উল্লেখ করা যায়। নিগমের পক্ষ থেকে একটি ৫৬ পাতার নথীতে সেরা ১১টি কাজকে চিহ্নিত করা হয় ‘মাইলফলক’ হিসাবে। ২০১৮-র শেষে তৈরি ওই নথীর ১১টি ‘মাইলফলক’-র মধ্যে মমতা-শাসনের মাত্র ২টি কাজকে নিগম বেছে নিতে পারে। একটি, ২০১৫-তে সংখ্যালঘুদের আবাসনের সুযোগ দেওয়া। যদিও সেই কাজ আগে শুরু হয়েছিল। মমতা-শাসনের অবদান নয়। দ্বিতীয়টি, ২০১৭-তে ৩২লক্ষ সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। যদিও স্কলরাশিপের টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের কোনও অবদান নেই। আর স্কলারশিপের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়বে — তাই স্বাভাবিক। নথীটিতে আর একটি নজর কাড়া তথ্য হলো — ২০১১ থেকে ২০১৫ — নিগমের উদ্যোগে হওয়া কোনও কাজকেই ‘উল্লেখযোগ্য কিংবা তাৎপর্যপূর্ণ বলে নিগম বেছে নিতে পারেনি।
রাজ্য সরকারের নিগমই সংখ্যালঘু উন্নয়নে তৃণমূল কংগ্রেসের অবদান খুঁজে পাচ্ছে না। এই হলো অবস্থা।


২০১০-র ফেব্রুয়ারিতে বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘুদের ও বি সি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়। মমতা ব্যানার্জি তার তীব্র বিরোধিতা করেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বামফ্রন্টের পদ্ধতিই চালু রাখলেন। কিন্তু সুযোগ কমিয়ে দিলেন।

রাজ্যের ও বি সি তালিকায় ৬৬টি সম্প্রদায় ছিলো ২০১০-এ। তার মধ্যে ১২টি সম্প্রদায় ছিলো মুসলিম। ২০১১-র মার্চে ও বি সি তালিকায় ১০৮টি গোষ্ঠী দাঁড়ায়। তার মধ্যে ৫৩টি মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। ৯টি বৌদ্ধ এবং ১টি করে খ্রীষ্টান এবং জৈন সম্প্রদায়ের গোষ্ঠী। গরিব মুসলিমদের প্রায় ৮৮ শতাংশ ও বি সি তালিকায় চলে আসে। রাজ্যের ও বি সি তালিকার মধ্যে দুটি ভাগ রাখা হয়েছে। একটি ‘অধিক অনগ্রসর’। অন্যটি ‘অনগ্রসর’। অধিক অনগ্রসর অংশের জন্য ১০ শতাংশ এবং অনগ্রসর অংশের জন্য ৭ শতাংশের জন্য সরকারী চাকরিতে সংরক্ষণ চালু হয়েছে।
এখন ও বি সি তালিকায় ১৭৭টি গোষ্ঠী আছে। তার মধ্যে ‘অধিক অনগ্রসর’ আছে ৮১টি গোষ্ঠী। শুধু ‘অনগ্রসর’ ও বি সি তালিকায় আছে ৯৬টি গোষ্ঠী। অর্থাৎ যে ‘অধিক অনগ্রসর’ কমে হয়ে গেছে ও বি সি তালিকার ৪৬%। ২০১১-য় ‘অধিক অনগ্রসর’ ছিল ও বি সি তালিকার ৫৫ শতাংশ। মমতা ব্যানার্জির সরকার যেখানে সুযোগ কম সেখানে গোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন।


চালাকি কত রকমের হয়, শিখতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে।
মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই কিনতে ২৫০ টাকা, অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের প্রতি মাসে ১০০টাকা করে দেওয়া শুরু হয় বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে। সব ছাত্রীর বিনামূল্যে ইউনিফর্মও সেই সময়েই দেওয়া শুরু। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয় ২০০৭-এ। গরিব সংখ্যালঘু ছাত্রীদের বিশেষ বৃত্তি দেওয়ার কাজও বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালেই।

সিপিআই(এম) সংখ্যালঘুদের জন্য কিছুই করেনি’ — এই ন্যারেটিভটিকে তার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে তৃণমূল কংগ্রেস। লক্ষ্য ছিল প্রধানত গরিব সংখ্যালঘুদের বিভ্রান্ত করা। কারন, বামফ্রন্টের গণ সমর্থনের এক বড় ভিত্তি গরিব সংখ্যালঘুরা।




ধারাবাহিক চলবে….


পর্ব ৯
রাজ্যের যৌবনকে বিপথগামী করার চেষ্টা
তৃণমূলের

শেয়ার করুন