আরএসএস নিজেদের মতাদর্শ অনুযায়ী পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ছোট করে দেখে, দেখায় এবং সেই চিন্তাভাবনাই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিজেদের বাহিনীকে নিয়োজিত করে। বেদ,পুরাণকে ভারতের ইতিহাস বলে চালিয়ে দিতে তারা আগ্রাসী কর্মসুচি নেয় এবং সার্বিকভাবে মনুবাদের ন্যায় একটি আপাদমস্তক পিতৃতান্ত্রিক, নারিবিদ্বেষী এবং প্রতিক্রিয়াশীল মতবাদকেই ভারতের সংস্কৃতির নামে প্রচার করে। তাদের ধামাধরা রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের সরকার সর্বতোভাবে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের স্বপ্নের হিন্দুরাস্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রুপায়ন করতে সক্রিয়।
সেই অনুযায়ীই সেই সরকারের তরফে যুক্তি হাজির করে বলা হয়েছিল সেনাবাহিনীর জওয়ানরা মূলত গ্রামীন পরিবেশ থেকে আসেন, তাদের মধ্যে মহিলাদের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি। তা ছাড়া দেহগঠন সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারনে মহিলারা যুদ্ধ করার উপযুক্ত নন। মাতৃত্ব, সন্তান পরিচর্যার দ্বায়িত্ব পালন, যুদ্ধক্ষেত্রে বিপক্ষের হাতে ধরা পড়ার বিপদ এইসবকিছুই যুক্তি হিসাবে আদালতের সামনে হাজির করা হয় সরকারের তরফে। মেয়েরা কী পেতেন? • পার্মানেন্ট কমিশন দেওয়া হলেও কমান্ডিং অফিসার বা নেতৃত্বে বসানো হত না। শুধুমাত্র স্টাফ অফিসার হিসেবেই নিয়োগ করা হত। • বায়ুসেনায় সমস্ত শাখাতেই মহিলাদের পার্মানেন্ট কমিশনের জন্য বিবেচনা করা হয়। এখন যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবেও মহিলাদের নিয়োগ হচ্ছে • নৌসেনার যে সমস্ত শাখায় অফিসারদের সমুদ্রে যেতে হয় না, সেখানে মহিলাদের শর্ট সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ করা হয়। এডুকেশন, আইন, নেভাল কনস্ট্রাকটর, নেভাল আর্মামেন্ট শাখায় মহিলাদের পার্মানেন্ট কমিশনের জন্য বিবেচনা করা হয়। • সেনার ১০টি শাখায় মহিলাদের শর্ট সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ করে পার্মানেন্ট কমিশনের জন্য বিবেচনা করা হয়—জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল, এডুকেশন কোর, সিগনালস, ইঞ্জিনিয়ার্স, অ্যাভিয়েশন, এয়ার ডিফেন্স, ইলেকট্রনিক্স ও মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার্স, সার্ভিস কোর, অর্ডন্যান্স কোর, ইনটেলিজেন্স।
স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে যে বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছেন এদেশের মহিলারা সেই যুগের অবসান ঘটল এই রায় ঘোষণায়। রীতিমত ভৎর্সনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে "পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন মহিলারা। সেনাবাহিনীতে যখন সক্ষমতা ও সাফল্য নিয়ে মহিলাদের সন্দেহ করা হয় তখন আসলে তাদের অপমান করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য সরকারের দিক থেকে মানসিক গঠন বদলানো দরকার"। কোর্ট বলল • মেয়েদের প্রতি বৈষম্য বস্তাপচা মানসিকতা। • শারীরিক গঠন ও সামাজিক ধারণার ভিত্তিতে মহিলাদের ভূমিকা খাটো করে দেখানোর যুক্তি বিরক্তিকর। সংবিধান-বিরোধীও। • পরিবারের দায়িত্ব শুধুই মহিলাদের, এই ধারণাটাই সন্তানধারণ, মাতৃত্ব,পরিবারকে মেয়েদের প্রতিবন্ধকতা বলে দেখে।
মহিলারা এতদিন শর্ট সার্ভিস কমিশনের আওতায় স্বল্পমেয়াদে সেনাবাহিনীতে ১০ থেকে ১৪ বছর কাজ করার সুযোগ পেতেন,অবসরের পরে কোন পেনশন অথবা অন্য কোন সুযোগ সুবিধাও পেতেন না তারা। এই রায় ঘোষণার ফলে মহিলারা এখন থেকে কুড়ি বছর কাজ করার অধিকার এবং পুরুষ সহকর্মীদের মতোই মেধা ও কৃতিত্বের ভিত্তিতে কর্নেল ও তার চেয়েও উচ্চ মর্যাদায় পদোন্নতির সুযোগ পাবেন। মনুপন্থার হাত থেকে ভারতের মহিলাদের এবং সার্বিকভাবে ভারতের সমাজকে বাঁচিয়ে দিয়ে আদালতের এই রায় আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যথেষ্ট উৎসাহ যোগাবে।
সেনার বিধি শর্ট সার্ভিস কমিশন কী? • শর্ট সার্ভিস কমিশনে সর্বাধিক ১৪ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়। • পার্মানেন্ট কমিশন না দিয়েও কাউকে ২০ বছর পর্যন্ত চাকরিতে রাখা হয়, যাতে তিনি পেনশন ও অন্য অবসরকালীন সুবিধা পান। আরও পড়তে নিচের লিংকগুলি ব্যবহার করুন
গণশক্তি
দ্য হিন্দু
দ্য ইকোনমিক টাইমস
আনন্দবাজার পত্রিকা
শেয়ার করুন