প্রভাত পট্টনায়েক
স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে এমন কোনও বাজেট উপস্থাপন করা হয়নি যা ২০২৫ সালের বাজেটের মতো খোলাখুলিভাবে শ্রমজীবী মানুষের জীবনকে উপেক্ষা করেছে। অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল বিশ্লেষকই একমত যে, এই বাজেটের মূল কৌশল হলো মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোগব্যয়ের ওপর কর ছাড় দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। তবে এই কৌশল তখনই কার্যকর হতে পারে যদি এই কর ছাড়ের জন্য তৈরি হওয়া ঘাটতি, সরকারি খাতে খরচ কমানোর মাধ্যমে পূরণ না করতে হয়। কর ছাড়ের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের আয় এবং তার ফলে ভোগ্যপণ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেলে সামগ্রিক চাহিদা বাড়ে এবং অর্থনীতি উদ্দীপ্ত হয়। কিন্তু আবার কর ছাড়ের ফলে সরকারি তহবিলের যে পরিমাণ ঘাটতি হয় তাকে সরকারি ব্যয় হ্রাস করে পূরণ করতে হয়। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের (RE) তুলনায় এবারের বাজেটে সরকারের ব্যয় মাত্র ৭.৪ শতাংশই বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে জাতীয় অর্থনীতিতে কার্যকর বৃদ্ধি হবে সামান্যই। একে জিডিপির শতাংশের নিরিখে হিসাব করলেই বোঝা যায় সরকারী ব্যয় আসলে কমছে।
সরকারের এই ব্যয় সংকোচনের ফলে মূলত আঘাতপ্রাপ্ত হবে খাদ্য ভর্তুকি ও বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলো। খাদ্যের ভর্তুকি বাবদ ২০২৪-২৫ এর সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় এবারের বাজেটে বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু এবারের বাজেট বরাদ্দকে ২০২৩-২৪ সালের প্রকৃত বরাদ্দের (রিয়াল টার্মস) সাথে তুলনা করলেই স্পষ্ট হয়, এবার বরাদ্দের পরিমাণ আসলে হ্রাস পেয়েছে। গ্রামীণ রোজগার প্রকল্প খাতে ২০২৪-২৫ সালের বাজেটের মতোই ৮৬,০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই নিরিখে এবারের বরাদ্দ এতটুকুও বাড়েনি মনে হলেও আসলে ২০২৩-২৪ সালে একই খাতে ৮৯,১৫৪ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের সাথে তুলনা করলেই স্পষ্ট হবে যে বরাদ্দ আসলে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবছর ২৫ জানুয়ারী পর্যন্ত এমএনরেগা খাতে মজুরি বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৬,৯৫০ কোটি টাকা। তাই যা ঘোষণা করা হয়েছে, প্রকৃত পরিমাণ তার থেকে আরও কম।
বাজেটে সামগ্রিক ভাবে সামাজিক খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের বাজেট ২০২৪-২৫ (BE)-এর তুলনায় ৯.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, এটি জিডিপির অনুপাতে হ্রাস পেয়েছে। বিদ্যালয় শিক্ষার বাজেট ৭৩,০০০ কোটি টাকা (২০২৪-২৫ BE) থেকে বেড়ে ৭৮,৬০০ কোটি টাকা হয়েছে, তবে এটিও জিডিপির অনুপাতে কমেছে। সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি এবং পোষণ-২ প্রকল্পে গত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় মাত্র ৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, ফলে এগুলি কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। অন্যান্য অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এবার বরাদ্দ ঘোষণার নিরিখে একই কথা বলা যায়।
সামাজিক খাতের ওপর এই চাপ সৃষ্টি করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কর ছাড় দেওয়ার অর্থ হলো দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষদের থেকে ক্রয়ক্ষমতা সরিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে স্থানান্তর করার প্রয়াস। ঐ সকল প্রকল্পের সুবাদে যারা সামান্য কিছু সুবিধা পান সেই বিশাল সংখ্যক দরিদ্র শ্রমজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মধ্যবিত্তের একাংশের হাতে তাকে পুনর্বণ্টন করা। এবছরের বাজেট শুধু যে সার্বিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে উৎসাহ যোগাতেই যে ব্যর্থ তাই নয়, শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষের নানা প্রয়োজনীয় প্রাপ্য কমিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বেতনভোগী মধ্যবিত্তকে করছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০২৫-২৬ বাজেট সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে কোনও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না; বরং এটি মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কিছু সুবিধা দিলেও, তা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিনিময়ে করা হয়েছে। এটি সম্পদ বণ্টনকে আরও অসম করে তুলবে। মধ্যবিত্তের কর ছাড়ের বোঝা দরিদ্রদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, অথচ ধনীদের কোনও কর বৃদ্ধি করা হয়নি এবং আর্থিক ঘাটতিও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, যাতে বিশ্ব লগ্নী পুঁজির সমর্থন বজায় থাকে। তবে অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতিতে বেতনভোগীদের আর্থিক সহায়তা যোগানো উচিত নয় এমনটা ধরে নিলে অবশ্যই ভুল হবে। কিন্তু দরিদ্র শ্রমজীবীদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা কমানোর বিনিময়ে সেই সহায়তা দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। অথচ এবারের বাজেটের আর্থিক পরিকল্পনার মূল কথা সেটাই।
এই কৌশল অর্থনীতির স্থবিরতা কাটাতে পারবে না, তবে তিনটি কারণে এটি বিজেপি সরকারের জন্য লাভদায়ক হতে পারে। প্রথমত, দরিদ্র জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা কমবে। অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতে বেশি অর্থ থাকার ফলে মূলত সংগঠিত ক্ষেত্রের পণ্যের চাহিদা বাড়বে, যা আসলে একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করবে। কারণ, সংগঠিত ক্ষেত্রের পণ্যের উৎপাদন হয় মূলত একচেটিয়া পুঁজির মালিকানায়। এমন কৌশলকে মার্কস ‘পুঁজির কেন্দ্রীভবণ’বলে চিহ্নিত করেছিলেন। এতে একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থরক্ষা হয়, ক্ষুদ্র পুঁজিকে লুট করে বৃহৎ পুঁজির কলেবর বৃদ্ধি পায়। আজকের ভারতে জাতীয় রাজনীতির উপর কর্পোরেট-হিন্দুত্ববাদী আঁতাতের আধিপত্য ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থ রক্ষার দায় মেটাতেই এনডিএ সরকার নিজেদের বাজেটে এমন পরিকল্পনা করেছে।
দ্বিতীয়ত, সাধারণ তথ্য ও পরিসংখ্যানে অসংগঠিত খাতের উৎপাদনের হ্রাস সঠিকভাবে দেখা হয় না। জিডিপি গণনার বিভিন্ন দ্রুত ও প্রাথমিক অনুমানের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান নির্ধারণের পদ্ধতিতে একমাত্র কর্পোরেট সেক্টরের আর্থিক ওঠানামকেই সামগ্রিক অর্থনীতির সাথে যুক্ত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এমন কৌশল অবলম্বনের ফলে ঐ নীতির ভিত্তিতে জাতীয় আর্থিক অবস্থাকে ব্যাখ্যা করার সময় ক্রমাগত আগেকার অবস্থার চাইতে অনেক বেশি ভাল পরিসংখ্যান তুলে ধরা যায়। বলা চলে, সরকারের পছন্দের কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে খুশি করার পাশাপাশি সরকার নিজেদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হিসাবকে ইচ্ছামত রদবদল করে পেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়। আর্থিক পরিস্থিতিকে ভালো দেখিয়ে দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদী শর্তগুলি এমনভাবে পাল্টে দেওয়া যায় যাতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল দেখায়। চরিত্রের দিক থেকে এই বাজেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট এটাই।
তৃতীয়ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কর ছাড় সুস্পষ্ট এবং জনপ্রিয়, কিন্তু এই ছাড়ের কারণে দরিদ্রদের কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে, তা সহজে দৃশ্যমান হয় না। সরকার ধারণা করছে যে, এই ঘোষণায় একদিকে যেমন কর ছাড়ের কারণে সুবিধাভোগীদের উল্লেখযোগ্য সমর্থন অর্জন করা যাবে, তেমনই দরিদ্র মানুষকে কোথাও বঞ্চনা করা হয়নি বলে খুব সহজেই দায় এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে। এধরনের অর্থনীতির প্রভাবে দরিদ্র শ্রমজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হওয়া কিংবা সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন কমতে থাকার সম্ভাবনা রোধে জনগণকে একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হিন্দুত্ববাদী বিভাজনের রাজনীতিকে সর্বদাই সক্রিয় রাখাও সম্ভব হবে।
এটি ভাবা ভুল হবে যে, এই বাজেটএ গৃহীত নীতিগুলো কোনো এলোমেলো সিদ্ধান্তের ফল। সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, এটি একটি পরিকল্পিত কৌশল। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বাজেট অধিবেশনের সূচনাকালে দেওয়া ভাষণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রশংসা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীও বারবার বলেছেন যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণিই অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। এটা বলে অর্থমন্ত্রী নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন। এতেই বোঝা যায় এই বাজেট কোনও আকস্মিক সিদ্ধান্তের ফলাফল নয়। এ হল সেই ‘কৌশল’যার জোরে শ্রমিকশ্রেণী এবং মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা যায়। এতে কর্পোরেট-হিন্দুত্ব জোটের আধিপত্য কিছু বাড়তি সমর্থন আদায় করতে পারে। জনগণকে বিভাজিত করার পাশাপাশি নয়া-উদারনৈতিক গোঁড়ামিকে আঁকড়ে ধরে রেখে ঐ ‘কৌশল’আসলে আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজিকে খুশি রাখে। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন এই কৌশলে ধনীদের উপর এতটুকু বাড়তি কর চাপে না, জিডিপির শতাংশের নিরিখে রাজস্ব ঘাটতিও বৃদ্ধি পায় না। নয়া-উদারবাদী দুনিয়ায় এ দুটি নীতিই আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজির বিশেষ পছন্দের।
বাজেট বরাদ্দের নাম করে কাদের প্রতি কিভাবে তাচ্ছিল্য প্রকাশ করা হচ্ছে সেকথা বুঝতে আর কোনও অসুবিধা হয় না। মধ্যবিত্তকে কিছু সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য আজ দেশের সরকার শ্রমজীবী গরিব মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে চাইছে। নিজেদের সাফল্য প্রচারের জন্য দরিদ্র জনসাধারণের ক্ষতি করতেও দেশের সরকার রাজি। কেউ সম্ভবত ভাবছেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় তো এমনটাই স্বাভাবিক। আমাদের মনে রাখতে হবে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমন আচরণ অভূতপূর্ব, অস্বাভাবিক। এতদিন অবধি যারাই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হয়েছে তারা প্রত্যেকেই নিজেদের কাজকে ‘শ্রমজীবীদের কল্যাণে একনিষ্ঠ পরিকল্পনা’ হিসাবে দাবি করেছে। আজকের ভারতে এমন একটি সরকার চলছে যারা শুধু প্রকাশ্যেই মধ্যবিত্তের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় না, সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার সময় দরিদ্র শ্রমজীবী জনসাধারণকে শাস্তি দেওয়ারও বন্দোবস্ত করে।
এই কৌশল যদিও সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে, তবু এটি দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে না। অর্থনীতির প্রকৃত পুনরুদ্ধারের জন্য সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির প্রয়োজন, যা এই বাজেট কোনোভাবেই নিশ্চিত করছে না।
ফসলের ন্যায্য দাম নির্ধারণে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশকে আইনী বৈধতা দেওয়ার জন্য কৃষকদের দাবিকে বাজেটে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজিকে বিনিয়োগে উৎসাহ যোগাতে লাল গালিচা পেতে স্বাগত জানানোর কায়দায় ভারতীয় বীমা ব্যবসায় বিদেশী সংস্থাকে একশো শতাংশ মালিকানা কায়েমের অধিকারও দেওয়া হয়েছে। দেশীয় একচেটিয়া পুঁজিকে বৃহত্তর বিনিয়োগ সহ পাশবিক মেজাজে উৎপাদনী শিল্প স্থাপনের কাজে এগিয়ে চলার উপদেশও বাজেট বক্তৃতায় রয়েছে। যদিও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে অভ্যন্তরীণ বাজারে সামগ্রিক চাহিদার অভাবের জন্য পুঁজি বিনিয়োগে মালিকপক্ষের অনীহাই দায়ী। এর কারণ আয়ের অসম বণ্টন, যেখানে লাভের অংশ ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও মজুরি কার্যত একই স্তরে আটকে রয়েছে।
এমন অসাড় আর্থিক পরিকল্পনা সত্বেও সরকারের আশা ছিল বাজেট ঘোষণার পরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজার সম্পর্কে উৎসাহিত হবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটল না। বাজেট বক্তৃতার পরেই ভারতীয় মুদ্রার মূল্যে ধ্বস নামে। ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট ঘোষণার দু’দিনের মধ্যে ৩ ফেব্রুয়ারি মার্কিনী ডলারের দাম ৮৭ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তাহলে সবশেষে কি দাঁড়াল? জনসাধারণের একাংশকে সুবিধা দিতে আরেক অংশকে নিষ্ঠুর কায়দায় বঞ্চিত করা হল, সরকারের তরফেই নিজেদের পিঠ চাপড়ানোও হল, কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে কোনও সুরাহা হল না।