উল্লেখ স্বয়ং প্যাটেলের চিঠিতেই, গান্ধী-হত্যার পর মিষ্টি বিলি আরএসএস’র

অঞ্জন বেরা

আজ থেকে সাতাত্তর বছর আগে, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিল্লিতে বিড়লা হাউসের মধ্যে প্রার্থনা সভায় যাওয়ার সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদী নাথুরাম গডসের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ঠান্ডা মাথায় অনেক ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার পরিণতি ছিল গডসের পর পর তিনটি গুলি। এ ঘটনার দিন দশেক আগেও গডসেরা বিড়লা হাউসেই গান্ধীজীকে হত্যার চেষ্টা করে। তবে সেবার সফল হয়নি।

গান্ধী-হত্যা বলাবাহুল্য কোনও গেরুয়াবাদী গ্যাঙের আকস্মিক দুঃসাহসিকতা ছিল না। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পিছনে ছিল সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা। ব্যক্তি গান্ধীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়াও এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল না। পরিকল্পনা ছিল দেশ জুড়ে হিংস্র সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার জমি তৈরি করা।

‘সাম্প্রদায়িক বিষ’-এর পরিণতিতেই যে গান্ধীজীর অমূল্য জীবনের বলিদান দেশকে সহ্য করতে হয়েছে, একথা স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নিজেই লিখেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রধান এম এস গোলওয়ালকারকে। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে লেখা চিঠি। গান্ধীজীর হত্যাকাণ্ডের পর আরএসএস’র লোকজনের মিষ্টি বিতরণের ঘটনাও চিঠিতে সখেদে উল্লেখ করেন সর্দার প্যাটেল। গান্ধী হত্যার প্রেক্ষাপটে আরএসএস নিষিদ্ধ হয় ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। রাজনৈতিক কাজকর্মে যুক্ত না থাকার মুচলেকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দিয়ে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয় আরএসএস।

সরকারি নির্দেশিকায় (তারিখ-৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮) স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়— দেশের মধ্যে সক্রিয় ঘৃণা ও সহিংসতার যে শক্তি জাতির স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে এবং তার সুনামকে কালিমালিপ্ত করছে, সেই শক্তিকে নির্মূল করতেই আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করা হলো। সর্দার প্যাটেল ১৯৪৮ সালের ১৮ জুলাই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে চিঠিতে লেখেন: কোনও সন্দেহ নেই, গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রে হিন্দু মহাসভার চরম অংশ জড়িত। আরএসএস’র কার্যকলাপ সরকার ও রাজ্যের অস্তিত্বের জন্য স্পষ্টতই বিপদ। প্যাটেল আরএসএস সম্পর্কে কী বুঝেছিলেন তাতে কোনও অস্পষ্টতা নেই।

কেন স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাড়ে পাঁচ মাসের মাথাতেই গান্ধীজীকে হত্যা করার মতো চরম পথ হিন্দুত্ববাদীরা নিয়েছিল? উত্তর সকলেরই জানা।

গান্ধীজীকে হিন্দুত্ববাদীরা হত্যা করে হতাশা থেকে। ঔপনিবেশিক-উত্তর স্বাধীন ভারত সঙ্ঘ পরিবারের পছন্দসই ছিল না। ‘মুসলিম’ পাকিস্তানের পালটা পথে ভারতও হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে উঠুক এমনই তারা চেয়েছিল। ধর্মীয় মৌলবাদীরা শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে অভিন্ন। মুসলিম লিগ যেমন চায়নি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণতান্ত্রিক পাকিস্তান, তেমনই গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণতান্ত্রিক ভারত চায়নি হিন্দুত্ববাদীরাও। তাদের লক্ষ্য ছিল ‘মনুস্মৃতি’র ভারত নির্মাণ।

স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশেষত শেষ লগ্নে অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে গান্ধীজীর আপসহীন অবস্থান অবিস্মরণীয়।‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তিনি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৪৭-৪৮ সালে দাঁড়িয়ে তথাকথিত ‘উদ্বাস্তু বিনিময়’ ব্যবস্থাকেও তিনি মানেননি। পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা চলে আসবেন ভারতে, আর ভারতের মুসলিমরা পাড়ি দেবেন পাকিস্তানে— এই ব্যবস্থাকে তিনি স্বতঃসিদ্ধ বলে বিশ্বাস করতেন না। স্বাধীন ভারত পাকিস্তানের মতো ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হোক একথা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন আমৃত্যু।

ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সাধারণতন্ত্র ছিল আমাদের ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌলিক অভিজ্ঞান। প্রকৃত পক্ষে, ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া একটি রাষ্ট্র আজকের সময়ে প্রকৃত অর্থে সাধারণতন্ত্র হয়ে উঠতে পারে না। ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলে তা সমতা-ভিত্তিক রাষ্ট্র হতে পারে না;তাই ‘মুসলিম’ রাষ্ট্রের মতো, ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-এও অসাম্যই রাষ্ট্রীয় নীতি হতে বাধ্য।

মুশকিল হচ্ছে, সাধারণতন্ত্র শুধুমাত্র নাগরিক-কেন্দ্রিক নয়, সব নাগরিক সেখানে আইনের চোখে বিধিবদ্ধভাবে সমান। ফলে সাধারণতন্ত্র প্রকৃত অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ না হয়ে উপায় নেই।‘বাঞ্চ অব থটস’ গ্রন্থে (১৯৬৬ সালে সংকলিত) ‘স্বাধীনতা’ সংগ্রাম ‘ব্রিটিশবিরোধী’ সংগ্রামে পরিণত হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে গোলওয়ালকার লিখছেন,‘ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সমতুল্য করা হয়। এই প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতা সংগ্রামের সমগ্র ধারা, তার নেতৃত্ব এবং সাধারণ মানুষের উপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলেছে।’ (‘বাঞ্চ অব থটস’, ২০১৮; পৃষ্ঠা ১৩৮)

হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিম মৌলবাদীরা ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের শরিক ছিল না বা সেই সংগ্রামের বিরোধী ছিল। সেটাই ছিল তাদের একমাত্র ভবিতব্য। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের শক্তি কখনই ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের বিরোধী হয় না—হওয়ার উপায়ও নেই। তারা স্বভাবত সাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদ-পন্থী।

প্রকাশ্যে তারা যে ভাষাতেই কথা বলুক,সঙ্ঘ পরিবার ঔপনিবেশিক-উত্তর ভারতের সব কিছুর বিরুদ্ধে। শুধু ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে নয়; সংবিধান, সাংবিধানিক ব্যবস্থা, গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, ভাষাভিত্তিক রাজ্য, লিঙ্গ সমতা, জাতীয় পতাকা— সব কিছুর বিরুদ্ধে। আর পরাধীনতার পর্বে ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামেরও তারা বিরুদ্ধে।

দীন দয়াল উপাধ্যায় তাঁর ‘ইন্টিগ্রাল হিউম্যানিজম’ (‘একাত্ম মানবতাবাদ’) পুস্তিকাতে (১৯৬৪-৬৫) ভারতের সংবিধানের ‘মৌলিক ভ্রান্তি’ বলতে উল্লেখ করেছেন ‘ভারতমাতা’র ধারণার অনুপস্থিতি। তাঁর কাম্য ‘ধর্মরাজ্য’। যে ‘ধর্মরাজ্য’-এ ‘আইনসভা’ ও ‘বিচারবিভাগ’-এর উপরে হবে ‘ধর্ম’-র স্থান! অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম।

মুসলিম লিগ ‘পাকিস্তান’ পেয়েছিল, কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা তাদের পছন্দসই হিন্দুরাষ্ট্র পায়নি। গান্ধী-হত্যার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণতান্ত্রিক ভারতের ধারণার বিরুদ্ধে তাদের বিরোধিতাকে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সেইসঙ্গে তারা চায়,দেশবাসীর ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী সংগ্রামের যাবতীয় ইতিবাচক অভিজ্ঞানকে নস্যাৎ করতে।

হিন্দুত্ববাদের অন্যতম মূল সঙ্কট ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সর্বাত্মক বিযুক্তি। শুধু বিযুক্তি নয়, তারা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামেরই প্রতিপক্ষ এবং ঔপনিবেশিক শক্তির উপাসক। ঔপনিবেশিক প্রভুরা সব সময়ই সাম্প্রদায়িক বিভাজনবাদী রাজনীতির একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক।

ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসাবে ঔপনিবেশিক— উত্তর ভারতের ধারণার সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির দ্বন্ধ স্বভাবতই মৌলিক। ঔপনিবেশিক-উত্তর ভারত তাদের ইচ্ছামতো হিন্দু-রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত না হওয়ায় হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি তার হতাশা গোপন করেনি।

‘হিন্দুত্ববাদীরা’ তাদের কট্টরপন্থী ‘মুসলিম’ দোসরদের মতনই, শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের ধারণার বিরোধী নয়, একচেটিয়া পুঁজির যুগে সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্তরা ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদেরও একনিষ্ঠ দোসর। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী গণসংগ্রামকে গৌরবান্বিত করে এমন কোনও কিছুই তাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়।

তা বলে কি হিন্দুত্ববাদীদের একটা ‘স্বাধীনতা’ দিবস থাকবে না? বিশেষত তারাই যখন ভারত রাষ্ট্রের বর্তমান শাসক। শাসক শ্রেণিগুলির সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক শক্তি? ফলে সঙ্ঘ পরিবার তাঁদের নিজস্ব ‘স্বাধীনতা’ সংগ্রাম বানিয়ে নিয়েছে সদর্পে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত পৌষ সংক্রান্তির দিন (১৪ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলেছেন, প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস হচ্ছে ২২ জানুয়ারি। তাঁর দাবি, অযোধ্যার রামমন্দিরে 'রামলালা'র মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনেই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করেছে ভারত। সেই দিনটিকে পৌষ শুক্ল দ্বাদশীর পরিবর্তে ‘প্রতিষ্ঠা দ্বাদশী’হিসাবে পালন করা উচিত। একই সঙ্গে, ওই দিনটিকে ভারতের ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’দিবস হিসেবে পালন করা উচিত বলেও তাঁর অভিমত। ভাগবতের দাবি, বহু শতক ধরে চলে আসা 'পরচক্র' (শত্রুর হামলা)-কে পরাজিত করে ওই দিনই ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে।

আরএসএস প্রধানের একথা নতুন কিছু নয়, হিন্দুত্ববাদীদের তথাকথিত ‘হাজার বছরের’ স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা ও মর্মবস্তুতে অভিন্ন। হিন্দুত্ববাদী কুরাজনীতির এটাই সার কথা।

এভাবে হিন্দুত্ববাদীরা দুটো অপযুক্তি হাসিল করতে চায়। (এক) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী গণসংগ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে নস্যাৎ করা। তাদের কুরাজনীতিতে ‘স্বাধীনতা’ সংগ্রাম শুরু হয়েছে মুসলিম শাসকদের আমল থেকে। এভাবে তারা মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী/ আক্রমণকারী হিসাবে দেখাতে চায়। (দুই) এভাবে তারা তাদের ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কালো অতীতকে ধামাচাপা দিতে চায়।

ধান্ধার ধণতন্ত্রের পর্বে ভারতের শাসক দল এই প্রথম এমন এক শক্তি যারা ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী গণসংগ্রামে কখনও শরিক ছিল না শুধু নয়, সেই সংগ্রামের সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। এভাবে চললে এমন একদিন খুব দূরে নেই যেদিন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হিন্দুত্ববাদীরা ‘অপরাধী’ হিসাবে চিহ্নিত করবে।

গান্ধীজীকে শুধু একবার হত্যা করা হয়নি, গত সাড়ে সাত দশক ধরে হিন্দুত্ববাদীরা তাঁর নৈতিক অবস্থানকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। লাগাতার। গত বছরের ২৮ মে সাভারকারের জন্মদিনে দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করা হয়। ২০০৩ সালে সংসদে সাভারকারের ফটো টাঙানো হয়। ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ গঠনের আদত লক্ষ্য পূরণের কর্মসূচি যত গতি পাচ্ছে ততই নিহত গান্ধীজীর স্মৃতিকে তারা তাড়া করছে। গান্ধী প্রসঙ্গে মুখ্যত দু’ভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত— গান্ধীজী সম্পর্কে উচ্চকিত কুৎসার ‘গরম’ পন্থা এবং কুশলী মিথ্যাচারের ‘নরম’ পন্থা।

গডসেকে শাসক দলের নেতারা বলছেন ‘দেশপ্রেমিক’। গান্ধীজীর জন্ম দিবসে একটি স্বতন্ত্র সরকারি বিজ্ঞাপনও এখন বিলুপ্ত। আবার সকলেরই নিশ্চয় মনে আছে, গতবছর রামমন্দির উদ্বোধনের আগের দিন প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর শুভেচ্ছা বার্তা। অযোধ্যার ‘মহোৎসব’কে ‘ভারতের চিরন্তন আত্মার বহিঃপ্রকাশ’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতির মন্তব্য ছিল, ‘‘গান্ধীজীও ভগবান রামের বড় ভক্ত ছিলেন।’’

হিন্দুত্ববাদীরা রামমন্দির নির্মাণকে ‘জাতীয় পুনর্গঠনের প্রতীক’ বলেও দাবি করছেন।‘পুনর্গঠন’ মানে কী? ‘হিন্দুরাষ্ট্র’-র প্রবক্তারা কি ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের অবসান ঘটেছে বলে মনে করছে? ‘রাম মন্দির’-সংক্রান্ত প্রচারে হিন্দুত্ব এবং রাষ্ট্র-শক্তিকে একীকৃত দেখানো হচ্ছে সুকৌশলে।

কিন্তু কেন এত মরিয়া বিজেপি-আরএসএস বাহিনী? কারণ গত নির্বাচনের ফলাফল। চারশো আসন পার করার বাসনা দুরাশা থেকে গেছে। গত নির্বাচনে অযোধ্যা ভূমিতে পর্যন্ত শাসক পরাস্ত। বেনারসে মোদীজীর ভোট অঙ্কে সিঁদুরে মেঘ! ধর্মের নামে অনন্ত প্রতারণা প্রকল্পের ফাঁদে সঙ্ঘ পরিবার এখন নিজেই ধরা পড়ছে!

তবে ‘অর্গানাইজার’ পত্রিকাকলম ধরেছে মোহন ভগবতের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমর্থনে। ‘অর্গানাইজার’পত্রিকার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ সংখ্যায় (অনলাইন সংস্করণ) সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকার লিখেছেন ‘কনস্টিটিউশন অ্যাট সেভেন্টি ফাইভ: রিভাইটালাইজিং রিপাবলিক’ শীর্ষক প্রবন্ধ। শততম বর্ষে সঙ্ঘের কর্মসূচি আর রাষ্ট্রের কর্মসূচির মধ্যে যেন কোনও পার্থক্য থাকছে না।বলা হচ্ছে,ভারতের 'স্ব'-কে পুনরুজ্জীবিত করতেই রামমন্দির আন্দোলনের সূচনা ; এবং এভাবেই নাকি ভারত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে পথ প্রদর্শন করবে। সঙ্ঘ পরিবার ক্রমাগত তার ছদ্ম-ন্যারেটিভ বদলে চলেছে।

বৃহৎ পুঁজির মদত পুষ্ট এই নিও লিবারেল সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলায় সর্বশক্তি সমবেত না করে উপায় নেই। পশ্চিমবঙ্গে বাড়তি বিপদ, তৃণমূল কংগ্রেসের কুরাজনীতি। হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শকে মদত জোগাচ্ছে তৃণমূলের নৈরাজ্যবাদী রাজনীতি। তারাই জমি তৈরি করছে সঙ্ঘ পরিবারের রাজনৈতিক অভিযানের। তাই ব্যাপকতর সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতার সুরক্ষায়। পশ্চিমবঙ্গে বৃহৎ মিডিয়া পোষিত ‘বাইনারি’-র অপরাজনীতিকে ভাঙতে হবে যৌথ প্রয়াসে।

Highlights

‘সাম্প্রদায়িক বিষ’-এর পরিণতিতেই যে গান্ধীজীর অমূল্য জীবনের বলিদান দেশকে সহ্য করতে হয়েছে, একথা স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নিজেই লিখেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রধান এম এস গোলওয়ালকারকে। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে লেখা চিঠি। গান্ধীজীর হত্যাকাণ্ডের পর আরএসএস’র লোকজনের মিষ্টি বিতরণের ঘটনাও চিঠিতে সখেদে উল্লেখ করেন সর্দার প্যাটেল।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন