চিরউজ্জ্বল রাজনৈতিক জীবন

বিমান বসু

কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবন ছিল অতি সাধারণ এবং আড়ম্বরহীন। রাজনৈতিক জীবন ছিল উজ্জ্বল। যুব সংগঠনে যুক্ত হওয়ার আগে থেকেই আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন কফি হাউসে বুদ্ধদেবের এক বছরের সিনিয়র ভবতোষ সাহার মাধ্যমে।

বুদ্ধদেবের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল স্বল্পকালীন ছাত্র আন্দোলন, যুব আন্দোলন এবং যুব সংগঠনের পুনর্নির্মাণের কাজের মধ্য দিয়ে। ১৯৬৭ সালে যে যুব সংগঠনকে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল তার প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১৯৬৮ সালে।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুস্পুত্র হলেও বেলেঘাটায় না থেকে উত্তর কলকাতার শোভাবাজারে তাঁর জ্যাঠামশাই রাখাল ভট্টাচার্যের বাড়িতে (প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক) বসবাস করতেন। সেই সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পরিবারকে আলাদাভাবে বসবাস করার জন্য তাঁকে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করতে হয়েছিল। কিন্তু দু’বছরের মধ্যে কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্তের নির্দেশে তিনি পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে বহু বছর একসঙ্গে পার্টির নানা কাজে যুক্ত থেকে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। কখনও কখনও আত্মগোপনে একসাথে থেকেছি, এমনকি এক বিছানাতেও ঘুমোতে হয়েছে। একটা ছোট্ট ব্যাগে তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে জেলার পর জেলায় যুব আন্দোলনের সময় এবং পরে পার্টির সংগঠনের কাজে তাঁকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখেছি। বক্তা হিসাবে বুদ্ধদেব জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারতো। কিন্তু কখনও কঠিন পার্টি জীবনে তাঁর কাছ থেকে কোনও অভিযোগের কথা শুনিনি।

জ্যোতি বসুর পরে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও দক্ষতার ছাপ তিনি রাখতে পেরেছিলেন এবং যুব সমাজকে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন। আমার বিচারে বুদ্ধদেব হয়ে উঠেছিলেন এক প্রকৃত কমিউনিস্ট। তাঁর নিজের জীবনে প্রয়োজন ছিল খুবই সীমিত। এমনকি মন্ত্রীসভার সদস্য হিসাবে শুরুতে ট্যাংরার ছোট কামরাতে থাকলেও পরে পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’কামরার ফ্ল্যাটেই ছিল তাঁর আবাস। ছোট কামরায় তাঁর অসুবিধার কথা ভেবে সরকারি  ফ্ল্যাটে তার জন্য বড় কামরার ব্যবস্থা করা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, তিনি কত সাধারণ জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন, যা অনেক ক্ষেত্রে দুর্লভ।

কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। এই অনাড়ম্বর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের চলে যাওয়ায় শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্যকে সমবেদনা জানাচ্ছি।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লাল সেলাম।

আজ গণশক্তি পত্রিকায় প্রকাশিত।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন