আমাদের রাজ্যের প্রান্তিক জেলা কোচবিহার নয়টি বিধানসভা নিয়ে কোচবিহার কেন্দ্রের অবস্থান। তার মধ্যে তুফানগঞ্জ বিধানসভা আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের, মেখলিগঞ্জ বিধানসভা জলপাইগুড়ি, লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।
টি এম সির ও বিজেপির বিরুদ্ধে বাম প্রার্থীর সমর্থনে নয়টি বিধানসভা এলাকাতেই প্রচার চলছে। প্রচারে মূলত তুলে ধরা হচ্ছে দুই শাসকের, মানুষের সাথে প্রতারনার কথা।
রাজ্যে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের কথা, সর্বব্যাপী দুর্নীতির কথা, আকাশ ছোয়া মূল্যবৃদ্ধির কথা, কর্মহীনতার কথা, ইলেকশন বন্ড নিয়ে দুর্নীতির কথা।
জেলার মানুষেরা দেখেছিল রেড ভলেন্টিয়ারদের জীবনকে বাজি রেখে লড়াইয়ের কথা। জেলাতে সেটিং এর কথা আস্তে আস্তে মানুষের প্রতিদিনই অভিজ্ঞতা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে । এখন খুব বেশি বলতে হচ্ছে না।
প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন মানুষেরা প্রতিদিন উৎসাহের সাথে বামপন্থীদের প্রচার শুনছেন এবং প্রতিদিন বামফ্রন্টের মিছিলের পরিধি বাড়ছে।
কোচবিহারের অহংকার রাজবাড়ী, সাগরদিঘী, মদনমোহন মন্দির, মধুপুর ধাম, বানেশ্বরীর মোহন, গোসানিমারি রাজপাট, মনীষী পঞ্চানন বর্মার স্মৃতি,বীর চীলারায়ের ঐতিহ্য।
কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের বদান্যতায় কোচবিহার এর ঐতিহ্য আজ ভূলুণ্ঠিত। সংবাদপত্রের শিরোনামে কোচবিহার আজ রাজনৈতিক সন্ত্রাসের জেলায় পরিগণিত হয়েছে। ঐতিহাসিক জেলা কোচবিহার।
জেলার উন্নয়ন শিকেয় তুলে বিজেপি ও তৃণমূল পারস্পারিক লোক দেখানোর কলহ ও কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। আর মিডিয়া ব্যস্ত এই বাইনারি পলিটিক্সে। তাই ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া কৃষক, পড়াশুনা শিখে কাজ না পাওয়া যুবক কাজের সন্ধানে প্রতিনিয়ত ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া,এই প্রভাব শাসক দল গুলির বিরূদ্ধে। কোচবিহার কেন্দ্রের প্রার্থী কমরেড নীতিশ চন্দ্র রায়,আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের প্রার্থী কমরেড মিলি ওরাও , জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী দেবরাজ বর্মনের সমর্থনে নতুন নতুন অংশ রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে সকালবেলা শীতলকুচির রাজবংশী সম্প্রদায়ের একজন যুবককে খুন হয়।তারপরেই সংখ্যালঘু চারজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে খুন হয়ে যাওয়ার পরে একটা তীব্র বাইনারি চিত্র সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরিকল্পিত সুকৌশলে কোচবিহারের মত শান্ত জেলা অশান্ত হয়ে উঠে। রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষদের তাদের জীবন যন্ত্রণার ঘটনাগুলোকে আড়ালে রেখে আলাদা রাজ্যের স্লোগান, তাদের ভাষার দাবি, এই ধরনের বিষয়গুলোকে সামনে এনে জেলার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষদের পাল্লা দিয়ে বংশীবদন টি এম সি,অনন্ত মহারাজ গ্রেটার কোচবিহার আলাদা রাজ্য গঠন এর প্রতিশ্রুতি আজ বিভ্রান্ত, দিশাহীন।
বামফ্রন্টের আমলের তিল তিল করে গড়ে তোলা এই শান্ত কোচবিহার এই সময়কালে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে। এই জেলার মানুষ এত বারুদের গন্ধ, বেআইনি অস্ত্রশস্ত্রের আতঙ্কের পরিস্থিতে আগে কখন পরতে হয়নি। প্রতি মুহূর্তে সন্ধ্যার পর গত বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামের প্রান্তিক বন্দর গুলির বাজার মানুষের জনশূন্য হয়ে থাকে। গ্রামের প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের সন্ধ্যার বাজারের কেনাকাটা লাটে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর এক প্রভাব ভয়ংকর। এই মানুষেরা টি এম সি ও বিজেপির বিরূদ্ধে।
এছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার পাচ্ছেন না, কৃষি মান্ডি দালালদের দখলে,আলুর বন্ড সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না।এই মানুষ বাম দিকে আসছে ও আসবে যদি অবাধ ভোট দিতে পারে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন কৌশলে বিরোধী ভোটার দের ভোট দিতে বাধা ও প্রচার করছে।
কোচবিহার জেলায় কার্যত কোন ভারী শিল্প নেই। বামফ্রন্টের আমলে চকচকার শিল্প তালুক গড়ে উঠেছিল,এই সময়ে প্রায় ধ্বংস এর পথে,এম পি,রাজ্য মন্ত্রীর কোন ভূমিকা নেই। বাম আমলে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন একটা ভারী শিল্প চেহারা নিয়েছিল। তৃণমূলের আমলে জেলারি ঐতিহ্য আজ বেসরকারীকরণের পথে।
শিল্প ধ্বংস হয়েছে শিক্ষিত বেকার যুবকদের কার্যত: কোন কর্মসংস্থানের জায়গা নেই। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে জেলার নিউ ময়নাগুড়ি যোগীঘোপা রেলপথ দাবি সমিতি আন্দোলন কুচবিহার জেলার রেলপথের মানচিত্রে যুক্ত করা হয়েছে যার সুফল জেলার মানুষ পাচ্ছে। এই সময়ে আর কোন উন্নয়ন হয়নি।
জেলার মেডিকেল কলেজ এই তৃণমূলের আমলে একটি শহরের জেলা হাসপাতালের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে কার্যত জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিল্ডিং তৈরি হয়েছে ডাক্তার নেই চিকিৎসা নেই গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থা কোচবিহার জেলায় এখন বেসরকারি হাতে,স্বাস্থ্যস্বাথির সুযোগ সব জায়গায় নেই।
জেলার আইন শৃংখলা অবনতি হয়েছে,নিরাপত্তা আজ কোচবিহার জেলার বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে।
কোচবিহার জেলার লক্ষ লক্ষ পরিযায়ি শ্রমিক কাজের খোঁজে রাজ্যের বাইরে থাকেন। তারা কেরল সরকার এর মজুরি ও অন্য রাজ্যের শ্রমিকদের মজুরী নিয়ে প্রকাশ্যে বলেন।যা বামের পক্ষে।
অল্প পয়সায় পরিবার নিয়ে বাইরে থাকে, শিশু শ্রম তাদের মধ্যে যুক্ত হচ্ছে জেলার তপশিলি জাতি অংশের মানুষ তাদের পরিবারের মহিলা শিশুরা বেঁচে থাকবার জন্য এই ধরনের পরিযায়ী বাইরে বেশ কিছু রাজ্যে শোষিত হচ্ছে।তাদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তীব্র সংকট গ্রামের পর গ্রামের মানুষ বাইরে চলে যায়।
জেলায় বেকারদের কর্মসংস্থানের দাবী ও দুর্নীতি, লুটের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বাম আন্দোলন ছাপ এই নির্বাচনের ইস্যু হবে।
বাম আমলে ধারাবাহিকভাবে চাকরি একটা রুটিন মাফিক হত। প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল শিক্ষিত যুবকদের আজকে তা টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি এসব কিছুই প্রভাব দুটো সরকারের বিরুদ্ধেই মানুষের জনমত তৈরি হচ্ছে।সেটিং এর বোঝা পড়া চলছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির লড়াই ওষ্ঠাগত কোচবিহারের গণতান্ত্রিক পরিবেশ। কোচবিহারের এখানে রাজবংশী, উদ্বাস্তু মানুষ, দক্ষিণ দেশীয় মানুষ সংখ্যালঘু মানুষের একটা আত্মার আত্মীয় সম্পর্ক ছিল। এটা এক যুগে সবটাই ধ্বংস করল। আমাদের জেলার এক পাশে যেমন আসাম আরেক পাশে বাংলাদেশ পাশে ভুটান একটা সবকিছু মিলে একটা অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ কোরিডর জেলার চেহারা।
আজকে আতঙ্কের জেলা তৈরি হয়েছে। সমস্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি। পালা বদল হচ্ছে তৃণমূল করেন সকালে বিকেলে বিজেপি এই অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। জেলার বন্দরের খুচরো ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ সংকট তাদের অর্থনীতিতে চলে এসেছে মূলত জেলায় বিভিন্নভাবে বেসরকারি সপিং মলের জাতে।
খুচরো ব্যবসা প্রায় লাটে উঠার মত অবস্থা। সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা কার্যত নেই। বামফ্রন্টের আমলে যে কটি মাঠ হয়েছে, সেই মাঠগুলো আজ ধু ধু করছে।
কেন্দ্রের মন্ত্রী কোচবিহার জেলার মানুষ দুহাত তুলে তাদের ভোট দিয়েছিলেন অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। কোচবিহারে প্রান্তিক জেলা ব্যাপক উন্নয়ন হবে কার্যত এই মন্ত্রীর অবহেলা উন্নয়ন না করতে পারার ছাপ এখানে পরিলক্ষিত হয়েছে। একটা এয়ারপোর্ট বিমান নামছে না। গতিশীল ট্রেন নেই। হয়নি নতুন কোন ইন্ডাস্ট্রি। স্পোর্টস হাবের ঢাক ঢোল পিটিয়ে শিলান্যাস হলেও মাঠ হল কই।
গত বিধানসভার শীতলকুচির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গরিব মানুষের বেঁচে থাকার রুটি লড়াই এ লড়াইয়ের সামিল হচ্ছে মানুষ বামপন্থীদের আহবানে এই জেলার কৃষিকাজের উপরে নির্ভরশীল সারা বছর কাজ হয় না কৃষি মাটিতে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারেনা তৃণমূলের দালাল বাহিনীর জন্য।
এই বিপন্ন কৃষক ক্ষেতমজুর শিক্ষিত যুবক তারা আজকে জাতিসত্তা, ভাষা, ধর্ম, মেরুকরণ সবকিছু থেকে বেরিয়ে এসে আবার সেই পুরনো বামপন্থা লড়াই ফিরে আসতে চাইছে। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ভোটে সমর্থন বাড়ছে, অবাধ ভোট নতুন ইতিহাস তৈরি হবে সারা রাজ্যের সাথে এই প্রান্তিক জেলাতে। বর্ডার এলাকার দুনীতি, ছিট মহলের প্রশ্ন,বাংলাদেশের সাথে বৈধ বানিজ্যকরণ,চ্যাংড়াবান্ধার ব্যবসার সংকট এই নির্বাচনে টি এম সি ও বি জে পি কে উত্তর দিতে হবে। তোর্সা তৃতীয় সেতু বামেদের দাবি।
রাজবংশী মানুষের ফিরে যাওয়া অংশ বুঝে উঠছে,তারা প্রতারিত হয়ে চলছে ওদের দ্বারা,তারাও চায় আগের দিন ই ভাল ছিল।
আমরা বামফ্রন্ট এর থেকে এলাকার গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের কাছে,শান্তি সম্প্রতি ঐক্য ফিরিয়ে আনতে কমরেড নূতীশ চন্দ্র রায় কে সিংহ চিহ্নে বোতাম টিপে ভোট দিতে আহ্বান জানাছি।