

না, তিনি কোন অপরাধী নন। তিনি জিওর্দানো ব্রুনো।
একজন দার্শনিক, একজন গনিতজ্ঞ এবং একজন জ্যোতির্বিদ।
জিওর্দানো ব্রুনো রোমের ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধাচারন করেছিলেন। অ্যারিস্টটলের মতের বিরদ্ধাচারন করেছিলেন। বাইবেলে বর্ণিত মহাবিশ্বের ব্যাখ্যা মানতে অস্বীকার করেছিলেন। পৃথিবী গোলাকার - এই বলে বাইবেলের বর্ণনার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা সেই প্রথম ব্যাক্তিই ব্রুনো। তাই মৃত্যুদণ্ড।
তার জন্ম হয় ১৫৪৮ সালে। ইতালির নেপলসে, নোলা নামের এক শহরে। সৈনিক পরিবারের সন্তান। ছোট থেকেই যুক্তিবাদী চরিত্র ছিল তার, স্পষ্ট বক্তা হিসাবে চিহ্নিত হলেন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থি থাকাকালীন। ১৫৭৫-এ বিদ্যালয় শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়, পড়ার বিষয় ছিল মূলত থিওলজি - ধর্মতত্ত্ব।
১৫৮১ সালে প্যারিসে গেলেন - গোঁড়া ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে তার কর্মসূচী ততদিনে ফ্রান্সে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কাজ করতে গিয়ে উপলব্ধি করলেন সংশোধিত বলে নিজেদের পরিচয় দিলেও অন্যান্য চার্চগুলিও একই প্রকৃতির গোঁড়া এবং ধর্মান্ধ। ১৫৮৩ নাগাদ লন্ডনে চলে গেলেন, অক্সফোর্ডে পড়ানোর সুযোগ পেলে সেখানে কোপার্নিকাসের গবেষণা সকলের সামনে প্রচার করেন।
পৃথিবীর গতি সংক্রান্ত আলোচনায় বৈজ্ঞানিক যুক্তি সম্বল করে ব্রুনো গোটা ইতালি ঘুরেছেন, ইংলন্ড, ফ্রান্স, জার্মানি সর্বত্র গেছেন, যুক্তিবাদের প্রচার করেছেন। জীবন সংকট জেনেও ১৫৯১ সালে আবার ইতালিতে ফিরেছেন। অবিরাম প্রশ্ন করে চলা এবং অন্যকে প্রশ্ন করতে শেখানোই ছিল তার ব্রত।
চার্চের আক্রমন থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চেষ্টা করলেও শেষ অবধি অদম্য জেদ এবং সাহসকে সত্যের পথে অবিচল রাখাই নিজের জীবন রক্ষার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। বিচারের সময় অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সাথে বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন " আমার শেষবিচার সম্পর্কে আমার থেকেও আপনাদের ভয় বেশী"।

তেজ
শৈশবেতে মায়ের সাথে দেখতে গেলাম ঠিক,
জীবন্ত এক জ্বলছে মানুষ, সে নাকি নাস্তিক।
চিতা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে যাজক-শ্রেণীর দল;
হাজার মানুষ এসব দেখেও নীরব-নিশ্চল।
'অপরাধি' পুড়ছে; মুখে নির্ভীকতার ছাপ,
বুক ভরা তাঁর তাচ্ছিল্য নেই চোখে উত্তাপ।
ওষ্ঠে হাসি; মুখাবয়ব শান্ত দীপ্তি ভরা,
অনল শিখা জড়িয়ে ধরে মৃত্যু ডাকে ত্বরা।
অগ্নি কাড়ে দৃষ্টি তবু, প্রশান্ত তাঁর মুখ,
তাঁর মৃত্যুর যন্ত্রণা মোর দীর্ণ করে বুক।
অনুভূতিহীন জনতা ভীড় করেছে যত,
চলেছে জয়োল্লাস, আমি কাঁদছি অবিরত।
মা বলে থামরে বাছা, এবার তোকে জানাই,
এই মানুষই বলেছেন, ইশ্বর কিছু নাই।
ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন জিওর্দানো ব্রুনো। বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথম শহীদ। আজকের ভারতে সেই ইতিহাস মনে রাখা বড় বেশি প্রাসঙ্গিক।