সুস্নাত দাশ
রাজনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ ও সুভাষচন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গি
চিত্তরঞ্জন দাস শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৬ জুন, ১৯২৫। তার আগে সুভাষচন্দ্র বসুকে ১৯২৪ সালের ২৫ শে অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়। তবে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নয়। দাশের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বাঙলার স্বরাজ্য দলে তথা রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলতার আবির্ভাব ঘটে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও আলগা হতে থাকে। এ প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসু লিখেছেন, “বাঙলায় ১৯২৬ সালের ইতিহাস প্রধানত হিন্দু–মুসলমান বিরোধের ইতিহাস। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক মনোভাব ১৯২৬ সালে এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যা পূর্বে কখনো দেখা যায়না । বস্তুত দাসের মৃত্যুর পর স্বরাজ্য দলের প্রতি মুসলমানদের আস্থা হ্রাস পায়। তবে চিত্তরঞ্জন দাশের জীবিতকালেই মুসলিমদের একটা অংশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯২৪ সালে ভারতে খিলাফত আন্দোলন প্রাসঙ্গিকতা হারালে খিলাফতিদের একটা অংশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যুক্ত হন। অপর অংশ কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যোগদান করেন। বস্তুত খিলাফত আন্দোলনকারীদের সরকার বিরোধী মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে হিন্দু-বিরোধিতায় রূপান্তরিত হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থাকে অত্যাচারী হিন্দু শাসন বলে বিবেচনা করতে থাকে। এমনকি, হিন্দুদের সঙ্গে সম্মিলন নয়, আলাদা থাকার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে মুসলিমদের আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টা হিন্দু নেতাদের মধ্যেও দেখা যায়নি। এরূপ পরিস্থিতিতে বাঙলার বিভিন্ন স্থানে ১৯২৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। কলকাতা ২ এপ্রিল দাঙ্গা কবলিত হল। আর্য সমাজ কর্তৃক আয়োজিত শোভাযাত্রা মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে দাঙ্গার সূত্রপাত । ১৭ মে খিদিরপুরে দাঙ্গা বাধে। পাবনায় দাঙ্গা শুরু হয় ১ জুলাই। উল্লেখ্য যে কলকাতায় দাঙ্গা তিন পর্বে হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২২ এপ্রিল এবং তৃতীয় দফায় ১১ জুলাই। তৃতীয় দফায় দাঙ্গার সুত্রপাত হয় রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এবং বেলগাছিয়া–পাইকপাড়া অঞ্চলে।
আলোচ্য সময়কালে সুভাষচন্দ্র বসু সুদূর মান্দালয় জেল বন্দী। তবে বাঙলার পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন। বাঙলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মর্মাহত বসু মর্মবেদনা প্রকাশ করে সন্তোষ কুমার বসুকে চিঠি লিখলেন ( ১এপ্রিল, ১৯২৬) । বস্তুত চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর ১ বছরের মধেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তাঁর হতাশাও গোপন করেননি। প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন দাঙ্গার পুঙ্খানুপুঙ্খ কারণ অনুসন্ধানের। একমাত্র সাংস্কৃতিক ঐক্যের মাধ্যমেই গঠনমূলক ঐক্য সম্ভব বলে সুভাষচন্দ্র মনে করেন। তবে হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টিতে মুসলিমদের প্রতিক্রিয়াশীল ( সাম্প্রদায়িক) রাজনীতিও দায়ী বলে সুভাষচন্দ্র বসু মনে করেন। সুরঞ্জন দাশের গবেষণায় তা সমর্থিত হয়েছে। দাশ তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে মোল্লারা গ্রামে গ্রামে হিন্দু-বিরোধী প্রচার করে মুসলিম জনসমষ্টিকে সংগঠিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত হিন্দু সংগঠন গুলি সাম্প্রদায়িক (Revivalist) হতে থাকে। তবে সাম্প্রদায়িক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রচেষ্টাও যথেষ্ট লক্ষ্য করা যায়। বহু হিন্দু এবং মুসলিম ব্যক্তিত্ব ধর্মীয় চেতনার উর্দ্ধে থেকে দাঙ্গা-আক্রান্তদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে নলিনী শেঠ এবং মৌলবি ওয়াহেদ হোসেনের নাম স্মরণীয়। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারও বহু মুসলিম কে উদ্ধার করেছিল। ফলস্বরুপ, অবাঙালি হিন্দুরা তার পরিবারে লুঠ–তরাজ চালায়। দাঙ্গায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম অত্যন্ত বিচলিত হন। প্রভাব পড়ল তার লেখনীতে। ১৯২৬ সালে কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত বিপিসিসি র প্রাদেশিক সম্মেলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনের উদ্বোধনী সঙ্গীতের জন্য কাজী নজরুল রচনা করেন “কাণ্ডারি হুঁশিয়ার” ।
অন্যদিকে কমিউনিস্ট পার্টির তরফ হতেও ইশতেহার বিলি করে আহ্বান জানানো হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার। উল্লেখ্য যে দাঙ্গায় বিচলিত যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত এবং মৌলানা আবুল কালাম আজাদ যৌথ ভাবে একটি ইস্তেহার প্রকাশ করেন। তবে তাদের ইস্তাহারে শুধুমাত্র বলেন যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা স্বরাজ লাভের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এরূপ পরিস্থিতিতে সুভাষ চন্দ্র বসু বিনা শর্তে মুক্তি লাভ করেন। ইতিমধ্যে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। মান্দালয় কারাগারে যখন বন্দি ছিলেন তখন তার উদ্যোগে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দুর্গা পুজো করার অধিকার তিনি আদায় করে নিয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে, বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠার আহবান সুভাষ চন্দ্র জানান। অন্যদিকে হিন্দু মহাসভার সভাপতি মুঞ্জের বক্ত্বব্যের বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ জানান। রাজনৈতিক কার্যাবলীতে (মূলত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কার্যাবলীর অন্তর্ভুক্ত) হিন্দু মহাসভার হস্তক্ষেপের সুভাষ চন্দ্র বিরোধী ছিলেন। প্রকৃত পক্ষে, হিন্দু–মুসলমান সমস্যার ধর্মীয় আবেদনে নয়, রাজনৈতিক ভাবে সমাধানে সুভাসচন্দ্র বসু আগ্রহী ছিলেন।
উল্লেখ্য যে ১৯২৭ সালের নভেম্বরে সুভাষচন্দ্র বসু বিপিসিসির সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৩০ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র সুভাষ চন্দ্র বসু কিন্তু মুসলিমদের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন। রংপুর রাজনৈতিক সম্মেলনে সাহিত্যে উভয় সম্প্রদায়ের ঐক্যের বার্তাই তিনি দিলেন। তবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতি কংগ্রেসের উদাসীন মনোভাবকে পরবর্তীকালে বসু কটাক্ষ করেন। ১৯৩৫ সালে ফজলুল হক কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলে বসু ভিয়েনা হতে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তবে নির্বাচনোত্তর পর্বে, এমনকি প্রয়োজনে জোট করে , সরকার গঠনে বসু আগ্রহী ছিলেন। বস্তুত জোট মন্ত্রীসভা গঠনে মুসলিম লীগের সঙ্গে আলোচনায় হিন্দু-মুসলমান সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবার সম্ভাবনা ছিল। ফলে কংগ্রেস দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী ছিলেন। বস্তুত সুভাষ চন্দ্র বসুর বিশ্বাস ছিল অভিন্ন আর্থ-সামাজিক কর্মসূচীর ভিত্তিতে বঙ্গদেশ ঐক্যবদ্ধ হবে। এমনকি, হিন্দু–মুসলমান জনসাধারণকেও একসঙ্গে মেলাবে বাঙালিদের মধ্যে (কারও কারও মধ্যে) সাম্প্রদায়িকতার গভীরতা স্বীকার করে নিয়েও কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতা রোধ করবে–এ নিশ্চয়তা দিলেন। আহ্বান জানালেন মুসলিম এবং তপসিলি জাতিভুক্ত ব্যক্তিদের কংগ্রেসে যোগদান করার। সুভাষচন্দ্র বসু একই সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ছিলেন। ( ১৯৩৮) বি.পি.সি.সি-র সভাপতি রূপে ৮ থেকে ২০ জুন পূর্ববঙ্গ সফর করেন। সফর শেষে প্রত্যয় জন্মায় বাঙলার মুসলিমরা শীঘ্রই কংগ্রেসে যোগদান করবেন। যদিও কয়েকটি স্থানে তাকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছিল। তথাপি হিন্দু-মুসলমান সমস্যাকে সুভাষচন্দ্র ধর্মের ভিত্তিতে নয়, অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করতেন “একজন মুসলমান কৃষক এবং একজন হিন্দু মুসলমান জমিদারের মধ্যে যতটা মিল ছিল তার চেয়ে ঢের বেশি মিল ছিল একজন মুসলমান কৃষক এবং একজন হিন্দু কৃষকের মধ্যে।’’ ধর্ম নয়, অর্থনৈতিক অবস্থাই বসুর ব্যাখ্যাই প্রাধান্য পেয়েছে।
উল্লেখ্য যে ইংরেজদের বাঙলা সরকার ১৯২৪ সাল থেকেই কংগ্রেসকে হিন্দু প্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ গুলির যথাযথ জবাব সুভাষচন্দ্র দিয়েছেন ১৯৩৮ সালে। আর দায় চাপালেন সাম্প্রদায়িক মুসলমানদের উপর। কুমিল্লা জনসভায় সুভাষচন্দ্র বলেন—“হিন্দুরা যদি আজ কংগ্রেসে সংখ্যাধিক হইয়া থাকে তাহার জন্য দায়ী সেইসব মুসলমান যাঁহারা মুসলমান জনসাধারণের কংগ্রেসে যোগদানের পথে বাধা সৃষ্টি করেন। মুসলমানরা অগ্রসর হইয়া আসুন এবং স্বাধীনতার আন্দোলন পরিচালনা করুন। আমি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতির পদ ত্যাগ করিতে এবং তাহাদের হাতে সে দায়িত্ব তুলিয়া দিতে প্রস্তুত আছি।’’ ময়মনসিং টাউন হলে ১৭/০৬/১৯৩৮ তারিখের বক্তৃতাটিও অনুরূপ। সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলায় এমন উদার এবং সাহসী বক্তৃতা আর কে দিতে পেরেছেন? উল্লেখ্য এসময় সুভাষচন্দ্র ভারত ইতিহাসের অপ–ব্যাখ্যার জন্য বিদেশী ঐতিহাসিকদের দায়ী করেন। হিন্দু-মহাসভার পক্ষ থেকেও ভারত-ইতিহাসের নানারূপ সাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক বিকৃতি ঘটানোর বিরুদ্ধে তিনি দেশবাসীকে সচেতন করে দেন এবং তাদের ভোট না দিতে আবেদন করেন।
যুক্তবঙ্গের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রবল হয়ে ওঠে ১৯৩০-এর দশকে। সুভাষচন্দ্র বসুকে তার মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছিল। আর এস এস তাদের নিজস্ব কর্মসূচি সম্পাদন করতে শুরু করে দেয় আর অবিভক্ত বাংলায় এই ঘটনা হিন্দু মহাসভা কে অক্সিজেন যোগায় মহাসভা প্রচার করতে শুরু করে যে মুসলিম মন্ত্রিসভার রাজত্বে বাংলার হিন্দুরা সুরক্ষিত নয় ইংরেজ ও মুসলমান মিলিতভাবে বাঙালি হিন্দুর সর্বনাশ করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে হিন্দু জাতীয় সংবাদপত্র গুলি ও এ সময় হক মন্ত্রিসভার কড়া সমালোচক হয়ে ওঠে ফলে ইতিমধ্যে ১৯২৩ সালে সাভারকার হিন্দুত্ব নামক হিন্দু জাতীয়তাবাদের একটি তত্ত্ব তার অনুগামীদের মধ্যে প্রচার করেন তাতে বলা হয় ভারতবর্ষে হিন্দুদের পিতৃভূমি তাই স্বাধীন ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক সাভারকার সাভারকারের এই তত্ত্বে বর্ণহিন্দুরা আকৃষ্ট হয়েছিল সাভারকার ছাড়া অপর যে হিন্দু নেতা এই সময় জঙ্গী হিন্দুবাদ হিন্দুত্ববাদ প্রচার করেন তিনি হলেন ডাক্তার বালকৃষ্ণ শিবরাম চোখের ডাক্তার এই তিলক ভক্ত মারাঠি যুবক কংগ্রেসের সঙ্গে সব সংশ্রব ত্যাগ করে হিন্দু মহাসভার নেতা হয়েছিলেন এবং পুনেতে হিন্দু তরুণদের সামরিক শিক্ষা প্রদানের জন্য একটি মিলিটারি একাডেমি ও গঠন করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আর এস এস এর সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি ইতালিতে মুসোলিনির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং কিভাবে সেখানে ফ্যাসিস্ট সংঘ সামরিক কাজ করে চলেছে সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেন আরএসএস ফ্যাসিস্ট এবং নাচ যুব সংঘের মত গঠন করাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য হাজার ১৯২৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে দোসরা অক্টোবর কলকাতায় হিন্দু মহাসভার সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন যে মহাসভার লক্ষ্য হলো ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে ফজলুল হক মন্ত্রিসভা গঠনের আগের বছর হাজার ১৯৩৬ সালের সম্ভবত প্রথম বার বাঙালি হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দু মহাসভার মঞ্চ থেকে দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রচার করতে শুরু করে ১৯৩৬ সালের ১৫ ই আগস্ট কলকাতার ভারত সভা হলে হিন্দু মহাসভার একটি সভায় সভাপতির ভাষণে ডক্টর রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় বাংলার হিন্দু মুসলমানকে দুটি পৃথক জাতি হিসাবে বর্ণনা করেন সুভাষচন্দ্র বসু এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে সাভারকার হিন্দু মহাসভার সভাপতি হয়েছিল।
কংগ্রেস এবং ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির জো মন্ত্রিসভার পক্ষে বিধানচন্দ্র রায় ছিলেন কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড কর্তৃক এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান তিনি হতাশ হয়ে কয়েক বছরের জন্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে শোনে থাকেন পরবর্তীকালে যখন সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি হন তখন তার গান্ধীর মধ্যে যে চিঠি চালাচালি হয় তাতেও একথা প্রমাণিত মূলত গান্ধী আজাদ ও ঘনশ্যাম দাস আপত্তিতেই বাংলার মন্ত্রিসভা কংগ্রেস ও ফজলুল হক জোটের দাঁড়া করতে অসম্মত হয়েছিলেন অর্থাৎ কংগ্রেসের মধ্যে যে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী শক্তি প্রবল ছিল তারা এক্ষেত্রে জয় লাভ করে মৌলানা আজাদ ফজলুল হককে পছন্দ করতেন না কিন্তু কংগ্রেসের এই পদক্ষেপের ফলে বাংলার রাজনীতিতে মুসলিম লীগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসে যায় তা তিনি বুঝে উঠতে পারেননি এই ঘটনা পরবর্তীকালে বাংলা তথা ভারতের রাজনীতি ও সমাজকে অন্ধকারের অতলে নিক্ষেপ করে ফজলুল হক মুসলিম লীগের খপ্পরে পড়তে বাধ্য হন এ বিষয়ে ডক্টর নীতিশ সেনগুপ্তের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গলি স্পিকিং পিপল গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা আছেন যাই হোক এসবের ফলে কৃষক প্রজা পার্টি ও কংগ্রেসের জোট মন্ত্রিসভা হাজার ১৯৩৭ সালে আর হলো না ফজলুল হক মুসলিম লীগের সাহায্য নিতে বাধ্য হলেন এবং কৃষক প্রজা পার্টি লীগ তফসিলি এমএলএ দের নিয়ে জোট মন্ত্রিসভা গঠন করলেন এই সময় এই নির্দল হিসাবে নির্বাচিত অথচ হিন্দুত্ববাদী এমএলএ ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিরোধী নেতা হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সুভাষচন্দ্র কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির হিন্দুত্ববাদী কর্মপন্থা একেবারেই পছন্দ করেননি। শ্যামাপ্রসাদ ও হিন্দু-মহাসভার সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো বহু সভা-মঞ্চ সুভাষচন্দ্রের নির্দেশে ফরোয়ার্ড ব্লক কর্মীরা ভন্ডুল করে দেয়।
সম্পূর্ণ লেখাটি তিনটি পর্বে প্রকাশিত।