মহান মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে মোদির হাস্যকর দাবির রাজনৈতিক দিক
গৌতম রায়
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীশক্তি প্রথম থেকে সার্বিক ভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলে নি।পাক হানাদার বাহিনির আক্রমণ কে জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির উপরে আক্রমণ- এটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময়েও মনে করতো না, তেমন এখনো মনে করে না।পাকহানাদারদের পাকিস্থান সৃষ্টির পর থেকেই তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্থানের মানুষদের উপর যে অর্থনৈতিক অবরোধ, সেটিকে আর এস এস বা তাদের সেই সময়ের রাজনৈতিক সংগঠন হিন্দু মহাসভা বা ভারতীয় জনসঙ্ঘ স্বীকার করতো না।সামাজিক,সাংস্কৃতিক অবরোধগুলিকে হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের দ্বারা স্বীকারের প্রশ্ন ই তো আসে নাকারন, মুসলিম লীগের মতোই মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিতে পাকিস্থান সৃষ্টি আর হিন্দু জাতীতার ভিত্তিতে ভারতের খন্ডিত স্বাধীনতা- এটাই ছিল মুসলীম লীগ, জামাত ই ইসলাম, আর এস এস, হিন্দু মহাসভা, রামরাজ্য পরিষদ, জনসঙ্ঘের রাজনৈতিক বিশ্বাস, ভিত্তি এবং অবস্থান।তাই হিন্দু - মুসলমান উভয় রাজনৈতিক শক্তিই মুসলিম জাতীয়তার কফিনে পেরেক ঠোকার প্রথম ঘটনা, '৫২ র মহান ভাষা আন্দোলনকে কখনো সার্বিক দৃষ্টিতে স্বীকার করে নি।ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতীতাবাদের যে বৈজয়ন্তী উড়েছিল , তার নির্যাসকে সম্বল করে অখন্ড বাঙালি সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে অন্নদাশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে '৫৩ সালে শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাহিত্যমেলা।ভারতে যেমন হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি সাহিত্য মেলা র সুষ্ঠু সংগঠনে প্রবল প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল, এক ই কীর্তি করেছিল অবিভক্ত পাকিস্থানে মুসলিম লীগ।মনে রাখতে হবে, পাকিস্থানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন তখনো অনুষ্ঠিত হয় নি।ফলে শাসক শিবিরে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল মুসলিম লীগের।তাই শামসুর রাহমানকে এই সাহিত্য মেলায় যোগদান আটকাটে মুসলিম লীগ চেষ্টার কসুর করে নি। অপর পক্ষে কংগ্রেসের ভিতর যাঁরা দেশভাগের সমর্থক ছিলেন, হিন্দু মহাসভার সঙ্গে একযোগে দেশভাগ চেয়েছিলেন, প্রথম সাধারণ নির্বাচনে('৫২) ভারতে কমিউনিস্টদের শক্তি বৃদ্ধি দেখে , তাঁরা মুক্তচেতনা বিকাশে এই সাহিত্যমেলাকে ভন্ডুল করতে হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের মতো অতো উগ্র অবস্থান নেয় নি। তবে বাঙালির সাংস্কৃতিক মিলনের এই সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে ভারত ও পাকিস্থান, উভয় দেশের শাসকই সমান সক্রিয় ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল ভিত্তিই ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার বিরোধিতা।আর এই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাই হল হিন্দু, মুসলিম উভয় সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তির জিয়নকাঠি।উনিশ শতকের শেষ ভাগে অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনার বিকাশের অঙ্গ হিশেবেই জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটতে থাকে।ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ , তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষিত সমাজের ভিতরে যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, তাকে ভেস্তে দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে।শিক্ষিত উচ্চবিত্তের ভিতরে যে ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ সম্পর্কে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেই ক্ষোভ যাতে কোনো অবস্থাতেই নব বিকাশমান মধ্যবিত্ত এবং বিশেষ ভাবে নিম্নবিত্তের মানুষদের ভিতরে সঞ্চারিত না হতে পারে, ব্রিটিশ সেই উদ্দেশে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে। শিক্ষিত , উচ্চবিত্ত এবং কিছু টা মধ্যবিত্ত ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালির ভিতরে যে ব্রিটিশ বিরোধী মানসিকতা ধূমায়িত হচ্ছে, তাকে একটা ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের মোড়কে আবৃত করে দিতে উত্তর ভারত এবং অবিভক্ত পাঞ্জাবের যে অংশটি হিন্দু বণিক, লালা সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, সেই অংশ এবং সেখানকার মানুষদের ব্যবহার করা শুরু হয়ে যায়। বাংলায় নবজাগরণকে হিন্দু পুনরুত্থানবাদী চেতনায় রূপান্তরিত করতে ব্রিটিশ তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে।বঙ্কিমচন্দ্র , শশধর তর্কচূড়ামণিদের চিন্তাচেতনাকে নবজাগরণের ভাবনায় আবদ্ধ না রেখে , সেই চেতনাকে হিন্দু পুনরুত্থানবাদী ভাবনায় জাড়িত করতে তৎপর হয় ব্রিটিশ।আর সেই ভাবনাটিকেই ক্রম বিকাশমান জাতীয়তাবাদী চেতনা, যেটি নির্ভেজাল ভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের তীব্র বিরোধিতা করে গড়ে উঠছিল, তার একটা প্রবাহ কে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তায় পর্যবসিত করে দেওয়া হয়।
একদিকে বাংলার বুদ্ধিদীপ্ত বিভাসার একটি অংশকে ধর্মান্ধ জাতীয়তার পক্ষে ব্যবহার করে ব্রিটিশ নিজেদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের ক্রমবর্ধমান জনরোষকে অন্যখাতে বইয়ে দিতে সচেষ্ট হয়।ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ক্ষোভ যাতে ১৮৫৭ তে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো পরিস্থিতি তৈরি না করে, হিন্দু- মুসলমানের সন্মিলিত ঐক্য যাতে কোনো অবস্থাতেই ব্রিটিশ স্রাজ্যবাদের তখ্ ত কে কাঁপিয়ে দিতে না পারে,সেজন্যে ব্রিটিশের শিক্ষার ধ্যানধারণাতে পুষ্ট ভারতীয় নাগরিকদের একটি অংশ কে তারা ধর্মান্ধ জাতীয়তার ধারা সরবরাহের কারখানা হিশেবে ব্যবহার করতে থাকে।জাতীয়তার উদ্ভবকালে যে চেতনাতে ব্রিটিশ বিরোধিতা ছিল , সেই দ্যোতনায় সাম্প্রদায়িক হিন্দু চেতনাকে হিন্দু পুনরুত্থানবাদী ভাবনার মোড়কে ঢুকিয়ে দেয় ব্রিটিশ নিজেদের ই কিছু পেটোয়া লোকেদের মাধ্যমে।ফলে বিকাশকাল থেকেই ভারতে জাতীয়তাবাদের চিন্তাতে হিন্দু পুনরুত্থানবাদের মোড়বে ধর্মান্ধ মানসিকতা, বিশেষ করে মুসলমান বিরোধী মানসিকতা প্রশ্রয় পেতে থাকে।এই মানসিকতাই পরবর্তীতে আরো পরিপুষ্টতা লাভ করে আমাদের জাতীয় আন্দোলনে হিন্দু সাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার ঘটায়। অপরপক্ষে বাংলাতে উন্মেষলগ্নে জাতীয়তাবাদকে উগ্র হিন্দু ধর্মান্ধতার লক্ষ্যে পরিচালিত করবার সাথে সাথে ব্রিটিশ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এবং পাঞ্জাবে হিন্দু শ্রেষ্ঠী প্রভাবিত অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতার ধারণাকে পরিপুষ্ট করতেও তারা বিশেষ রকমের সহায়কের ভূমিকা পালন করতে শুরু করে।কেনেথ জোন্সের গবেষণায় পাঞ্জাবে হিন্দু ব্যবসায়ীদের দ্বারা হিন্দু আধিপত্যের ভিত্তিতে দেশভাগের প্রথম পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য আমরা পাই।লালা লাজপত রাই সম্পাদিত , লাহোর থেকে প্রকাশিত ' ট্রিবিউন'পত্রিকাতে উনিশ শতকের শেষ ভাগে এবং বিশ শতকের সূচনাপর্বে কোন কোন অঞ্চল নিয়ে হিন্দু ভারত গঠন করা উচিত সে সম্পর্কে মানচিত্র সম্বলিত দাবিপত্র পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল।
তাই ধর্মীয় ভিত্তিকে জাতীয়তার মূল বিষয় হিশেবে তুলে যে পাকিস্থান কায়েম করেছিল মুসলিম স্বাতন্ত্রবাদীরা, যাদের সঙ্গে সমগ্র মুসলমান সমাজের সার্বিক সম্পর্ক এবং সমর্থন ছিল- এটা ধরে নেওয়া ইতিহাসের অপলাপ মাত্র, সেই শক্তি বাংলাভাগের ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য পেয়েছিল আর এস এসের সেই সময়ের রাজনৈতিক সংগঠন হিন্দু মহাসভা, তার নেতা শ্যামাপ্রসাদ, এন সি চ্যাটার্জী প্রমুখদের কাছ থেকে।কংগ্রেসের ভিতরের ও উচ্চবর্ণের হিন্দু অভিজাতদের স্বার্থরক্ষাকারী , ক্ষমতাপিপাসু অংশ মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের সাফল্য কায়েম করতে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল।তাই মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ,ভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রিক বাঙালি জাতীতাবাদ এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করবার লক্ষ্যে মহান ভাষা আন্দোলন কোনো অবস্থাতেই মুসলিম সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীদের মতোই , হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীদের কাছে সমর্থন যোগ্য হবে না।হয় ও নি।এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরো পরিপুষ্টতা লাভ করে পশ্চিম পাচিস্থানের সাম্রাজ্যবাদী, হানাদার মানসিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই একের পর আন্দোলন, যেমন; ছয় দফার আন্দোলন, উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান করে চূড়ান্ত লড়াই করে মহান মুক্তিযুদ্ধে।এই আন্দোলন গুলির প্রতি ভারতের অবিভক্ত এবং বিভাগোত্তর কমিউনিষ্ট পার্টিগুলির পরিপূর্ণ সমর্থন ছিল।কারন, ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাকে কোনো দেশেই কখনো কমিউনিস্টরা সমর্থন করে নি।কংগ্রেস দল ও তাঁদের অবস্থানগত প্রশ্নে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের '৭১ পর্যন্ত কোনো আন্দোলনে নীতিগত বিরোধিতা করে নি।কিন্তু হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার বিরুদ্ধাচরণ করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্থানে জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির যে আন্দোলন , সেই আন্দোলনকে কখনোই সমর্থন করে নি। আর এস এস ,হিন্দু মহাসভা, জনসঙ্ঘ চিরদিন ই পাক হানাদারদের আক্রমণকে সার্বিক ভাবে বাঙালিদের উপর আক্রমণ বলেই স্বীকার করে না।তারা পাক হানাদারদের আক্রমণকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানে কেবলমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর আক্রমণ হিশেবেই দেখে।পাক হানাদারেরা জাতিধর্মের বিচার না করে বন্দি নয় মাসে বাঙালি নারীর উপরে যে দানবীয় তান্ডব চালিয়েছে, হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি সেই তান্ডবকেই স্বীকার করে না।তারা এই নৃশংসতাকে পাকিস্থানের মুসলমান শাসকদের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের হিন্দু মা , বোনেদের উপর অত্যাচার করে বর্নণা করে।হিন্দু নারীর পাশে মুসলমান নারীর পাক হানাদারদের হাতে চরম অমর্যাদাকে কখনো আর এস এস স্বীকার ই করে না।পাক হানাদারিকেও আর এস এস দেখে মুসলিম আজ্রাসন হিশেবেই।তাই অল্পকিছুদিন আগে আর এস এসের তাত্ত্বিক ব্যক্তিত্ব মোহিত রায়, মুক্তিযুদ্ধের কালে পাক হানাদারদের হাতে কেবলমাত্র হিন্দু নারীর সম্ভ্রম হানির কথা বলেই আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন।মুসলিম নারীর ও পাক হানাদারদের হাতে সব হারানো ঘিরে মোহিত রায়ের কলম থেকে একটি অক্ষর ও নিঃসৃত হয় নি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের কালে হিন্দু - মুসলিম উভয় সাম্প্রদায়িক দলগুলি ছাড়া ভারতের অন্যসব রাজনৈতিক দলগুলি হিন্দু- মুসলমানের সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক ভাবনাকে অস্বীকার করে পাক হানাদারদের দ্বারা আক্রান্ত বাংলাদেশের নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ কে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্কসবাদী) ই ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির ভিতরে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে ভারত সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল।ধীরে ধীরে ভারত সরকার, কংগ্রেস দল বা অ জনসঙ্ঘ রাজনৈতিক দলগুলি সেই পথে হাঁটে। আর এস এস - জনসঙ্ঘ কিন্তু সেদিন কেবলমাত্র হিন্দু শরণার্থী ঘিরেই নিজেদের ভাবনাকে সীমাবদ্ধ রেখেছিল।অটলবিহারী বাজপেয়ী সংসদের ভিতরে বা বাইরে ভারতীয় সেনাদের বিক্রমের কথা বার বার বলেছিলেন।ভারতীয় সেনাদের বিক্রমকে তিনি মুসলমান রাষ্ট্র পাকিস্থানের বিরুদ্ধে হিন্দু ভারতের জয় হিশেবে তুলে ধরতেই বেশি সচেষ্ট ছিলেন।বাজপেয়ী কিন্তু একটি বারের জন্যে ও পাক হানাদারদের থেকে স্বাধীনতার জন্যে জীবনপণ করে লড়াই করা হিন্দু - মুসলমান নির্বিশেষে সার্বিক বাঙালিদের সংগ্রাম বা তাদের উপর অত্যাচার ঘিরে একটি শব্দ ও উচ্চারণ করেন নি।
এই প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীতে ঢাকায় গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে গুজরাটে সত্যাগ্রহ এবং পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ঘিরে যে কথা বলেছেন, তার রাজনৈতিক প্রেক্ষিতটা আমাদের চিন্তা করা দরকার।মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে গুজরাটে যে সাম্প্রদায়িক গুজরাট বেরাদরি আন্দোলন চলছিল, যেটি গুজরাটে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ এবং প্রতিক্রিয়াশীলতার আমদানি ঘটাতে বিশেষ সাহায্য করেছিল, সঙ্ঘ কর্মী হিশেবে সেই আন্দোলনে যুক্ত মোদির বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহের মতো হাস্যকর দাবির বিষয়টি আমাদের ভাবা দরকার। রাজনৈতিক দল হিশেবে ভারতীয় জনসঙ্ঘের আদর্শগত অবস্থানের সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিন্দুমাত্র সাযুজ্য নেই।মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্তম্ভ হিশেবে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িকতাকে অস্বীকার, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকার।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান এই তিনটি চেতনার একটির সঙ্গেও নরেন্দ্র মোদি যে রাজনৈতিক দল বা চেতনার প্রতিনিধিত্ব করেন, তার বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই।সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপোষ এবং সমঝোতা করেই হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির জন্ম ও বিকাশ।হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবির যে প্রায় শতাব্দী ব্যাপী প্রচেষ্টার ফলে ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতা এই মুহূর্তে দখল করতে সক্ষম হয়েছে, এই গোটা প্রক্রিয়াতে তাদের কৃতকার্য হওয়ার মূলে আছে প্রথমে ব্রিটিশ পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপোষ।আর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রথম বৈশিষ্ট্য ই হল পাক সাম্রাজ্যবাদ এবং তাদের প্রধান মুরুব্বি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা।মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ অখুশি হতে পারে এমন কোনো কাজ কখনো আর এস এস বা তাদের কোনো সময়ের রাজনৈতিক সংগঠন করে নি।তাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের চরম পরিপন্থী, মার্কিন দেশের সেই সময়ের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সোভিয়েট ইউনিয়ন কে শায়েস্তা করতে , ভারত কে শায়েস্তা করার নীতির পরিপন্থী বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোনো অবস্থান নেওয়া কোনো আর এস এস নেতা কর্মীদের পক্ষে রাজনৈতিক ভাবে অসম্ভব ছিল।