ওয়েবডেস্ক
১৮৮৭ সাল। সে বছরেই মে মাসে জারকে খুন করার চেষ্টার দায়ে আলেকজান্ডার উলিয়ানভ নাম এক 'নারদনিক' বিপ্লবীর ফাঁসি হয়েছিল। এই উলিয়ানভের ভাইয়ের নাম ভ্লাদিমির; বয়স তার তখন ১৭। ১৮৮৬ তে তার বাবা মারা যান আর পরের বছরই দাদার ফাঁসি। এই দাদার কাছ থেকেই ভ্লাদিমির পেয়েছিলো মার্ক্সবাদের সাথে প্রথম পরিচয়। পড়েছিল মার্কস-এঙ্গেলস এর বজ্রনির্ঘোষ ঘোষণা -ইউরোপকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে একটা ভূত- কমুনিজমের ভূত... কমিউনিস্ট বিপ্লবের আতঙ্কে শাসক শ্রেণীরা কাঁপুক। শৃঙ্খল ছাড়া সর্বহারার হারাবার কিছু নেই। জয় করবার আছে সারা জগৎ। এই সঙ্গে হাতে এসেছিলো বিভিন্ন দেশীয় সাহিত্য- আর চের্নিশেভস্কির 'কি করতে হবে' উপন্যাস। জার জমানার নির্মম স্বৈরতন্ত্র, দাসত্ব, পুঁজিপতিদের তৈরি করা সীমাহীন শোষণের পরিবেশ আর সাথে অল্প অল্প মার্ক্সবাদ আর সাহিত্যের পথ ভ্লাদিমিরের মনে তৈরী করেছিল নিপীড়িত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা আর অত্যাচারের প্রতি ঘৃণা। সেগুলোর স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যেত ভ্লাদিমিরের স্কুলের রচনার খাতায়। কিন্তু দাদার ফাঁসির পর থেকে ভ্লাদিমির হঠাৎ অনেক পরিণত হয়ে ওঠে। সে বছরই সে ভর্তি হয় কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে- জড়িয়ে পরে ছাত্রআন্দোলনে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়, গ্রেপ্তারও হয়। গ্রেপ্তারির সময় জেলখানায় দারোগা ভ্লাদিমিরকে জিজ্ঞেস করে এসব ঝামেলা করে কি করবে? শেষমেশ তো এই জেলের দেওয়ালেই মাথা ঠুকতে হবে। ভ্লাদিমির উত্তর দিয়েছিলো- "দেওয়াল তো বটেই, কিন্তু ঘুনধরা; ঠিক জায়গায় ধাক্কা দিয়ে যেতে পারলে ভেঙে পরবে।" এরপর ভ্লাদিমির কাজান শহরেই মার্ক্সবাদী পাঠচক্রে যোগ দেয় এবং তার সাথে সাথে এক্সটার্নাল ছাত্র হিসেবে সেন্ট পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ফার্স্টক্লাস ডিগ্রি লাভ করে। সামারার আদালতে যোগ দেয় তরুণ এক উকিল হিসেবে যে বেশিরভাগ সময়ই গরিব কৃষকদের হয়ে লড়তো আর বাকি সময় মার্ক্সবাদের অনুশীলনে মগ্ন থাকতো। এই সময়েই ভ্লাদিমির গ্রামের হাল, কারখানার শ্রমিকের জীবনযাত্রা- সবের সাথে মার্ক্সবাদ আর তখনকার রাশিয়ার রাজনৈতিক ধারাগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরী করে এবং তা থেকে আন্দোলনের পথ খুঁজতে রাজনৈতিক লেখালেখির দিকে মনোনিবেশ করে। ১৮৯৪-এ ভ্লাদিমির লেখে 'জনগণের বন্ধুরা' কেমন ও কিভাবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সাথে লড়ছে' নামক একটি বই যাতে সে নারদনিক বিপ্লবীদের তত্ত্বকে নস্যাৎ করে দিয়ে সর্বহারার নেতৃত্বে শ্রেণী রাজনীতির গুরুত্ব আরোপ করে। ১৮৯৫ এ আবার ভ্লাদিমির আরেকটা বই 'নারদনিকবাদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব' লেখে যেখানে সে সরাসরি বক্তব্য রাখে 'আইনি মার্ক্সবাদী'দের বিরুদ্ধে যারা পুঁজিপতিদের তৈরী করা আইন মোতাবেক মার্ক্সবাদের সংস্কার করে আদতে মার্ক্সবাদের অন্তঃসারকে অস্বীকার করে বিপ্লবটাকেই নষ্ট করতে চান। এবছরেরই ভ্লাদিমির তৈরী করলেন 'শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তিসংগ্রাম লীগ' এবং সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি লিখে যেতে থাকেন একের পর এক ইস্তেহার- কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে ভ্লাদিমির লেখে: "আপন মুক্তির জন্য রুশ শ্রমিকশ্রেণীর এই সংগ্রাম একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম, এবং এর প্রথম লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক স্বাধীনতা। সর্বোপরি শ্রমিকদের মুক্তি অবশ্যই হবে খোদ শ্রমিকশ্রেণীরই কাজ"। এর পর থেকে আর কেউ তাকে ভ্লাদিমির বলে চিনতো না; ভ্লাদিমির হয়ে উঠলেন লেনিন।