বিজেপি বিরোধী সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে বিকল্প সরকার গঠনই লক্ষ্য। শিলিগুড়িতে অনিল বিশ্বাস ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
সাংবাদিক বৈঠকে সূর্য মিশ্র জানান, গণতন্ত্র, মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর আক্রমণ থেকে শুরু করে দুর্নীতি, দলবাজি, কাটমানির কথা ওরাই বলছে। পশ্চিমবাংলার মানুষকে এ থেকে রক্ষা করার জন্য এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা লড়াইয়ের ময়দানে আছি। রাজনৈতিক সংগ্রামে নির্বাচনে আমরা একটা বিকল্প সরকার দেব আমাদের নির্দিষ্ট কর্মসূচির নিরিখে।
সূর্যকান্ত মিশ্র জানান, বিজেপি সারা দেশের পয়লা নম্বর শত্রু। বিজেপি এমন একটি পার্টি যাদের নিজেদের পরিচালনা করার কোনও অধিকার নেই। নাগপুর থেকে আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হয়। বিজেপি রাজনৈতিক দল হিসাবে মূলত আরএসএস’র কর্মসূচি রূপায়ণ করে। আরএসএ’র অ্যাজেন্ডা যা এতদিন কেউ রূপায়িত করেনি, বিজেপি সেই অ্যাজেন্ডা রূপায়িত করতে গিয়ে সংবিধান, সংসদ, গণতন্ত্রের ওপরে বুলডোজার চালাচ্ছে। যে উগ্র দক্ষিণপন্থা আমরা প্রত্যক্ষ করছি এই সঙ্কটের সময়কালে তার প্রতিনিধিত্ব করছে আরএসএস এবং আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার।
মিশ্র জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রের সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্যের সরকার ব্যর্থ। নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন মহাভারতে আঠেরো দিনের যুদ্ধ হয়েছিল। তার থেকেও তিনদিন বেশি সময় চেয়ে একুশ দিন ধরে থালা বাজিয়েও করোনা মোকবিলা করা যায়নি। থালার বাজনা কতদূর পৌঁছাল জানি না, কিন্তু তার চেয়ে অনেক দ্রুত বেগে তারপরে আমরা দেখেছি সংক্রমণ বাড়ছে। ব্রাজিল, আমেরিকাকে টপকে ভারত এখন সংক্রমণের সর্বোচ্চ হারে পৌঁছেছে। পশ্চিমবাংলায় সংখ্যা দিয়ে কিছু বোঝার কোনও উপায় নেই। কারণ আমাদের দেশের সবকটা রাজ্যে জনসংখ্যার বিচারে টেস্টিংয়ের যে হিসাব তাতে পেছনের দিকে যে পাঁচটা রাজ্য আছে পশ্চিমবঙ্গ তার মধ্যে আছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীর মতো সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসায় বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরের পর থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। সেপ্টেম্বর চলে গিয়েছে কিন্তু সংক্রমণ বাড়ছে। যতদিন যাচ্ছে সংক্রমণ বাড়ছে এবং আমরা সরকারের দেউলিয়াপনা দেখতে পাচ্ছি স্পষ্টভাবে। সরকারে যা দায়িত্ব ছিল তা আমরাই পালন করেছি। খাদ্যের সঙ্কটে আমরা মানুষের পাশে থেকেছি, মানুষের কাছে স্যানিটাইজার নিয়ে আমরা গিয়েছি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার আমাদের করতে হয়েছে, ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের অভাব থাকলে আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। এমনকি কোভিড সহ অন্যান্য অসুখের জন্য আমাদের হেল্পলাইন তৈরি করতে হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স, স্বেচ্ছাসেবক তৈরি রাখা, চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করা, অক্সিজেন সলিন্ডার রাখা, পালস অক্সিমিটারের ব্যাবস্থা করা, অ্যান্টিবডি টেস্ট করা—আমাদের করতে হয়েছে যা সরকারেরই করার দরকার ছিল, কিন্তু তা করেনি।
পাহাড়ের সমস্যা প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র বলেন, নির্বাচন এলেই আমরা সরকারের তৎপরতা দেখতে পাই। একথা আশঙ্কা করার কারণ আছে যে ভুল করে গোর্খাল্যান্ড কথাটি লেখেনি। একটা পরিস্থতি তৈরি করার জন্য এই কাজটি করা হয়েছে। পরে নানা আপত্তি আসায় কথাটি প্রত্যাহার করা হয়। পাহাড় চিরকাল আমরা খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছি যে কেন্দ্র-রাজ্য, বিধানসভায় আলোচনা, আইন করা, প্রনোজন অনুসারে সেই আইনের সংশোধন করা এবং সর্বোশেষ আমরা বলেছিলাম যে দার্জিলিঙের স্বায়ত্বশাসনের সাংবিধানিক গ্যারান্টি থাকতে হবে। যাতে রাজ্য সরকার ইচ্ছে হলেই সেই ক্ষমতা কেড়ে নিতে না পারে। সর্বদলীয় সভায় আলোচনা করে সর্বসম্মতভাবে সেই বিল বিধানসভায় পাশ করিয়েছিলাম। তার পরের ইতিহাস সবাই জানে। পাহাড়ে আগুন জ্বলেছে। আমরা শান্তির চেষ্টা করেছি। সাংবিধানিক গ্যারান্টি সহ ষষ্ঠ তফশিলের মাধ্যমে পাহাড়ের সর্বোচ্চ স্বায়ত্বশাসনের ক্ষমতা প্রদানের কথা আমরাই প্রথম থেকে বলে এসেছি। পাহাড় ইস্যু নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার নীতিহীন রাজনীতি করছে। জিটিএ করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি। সাংবিধানিক কোনও গ্যারান্টিও নেই। যাঁরা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন তাঁরাই এখন পাহাড়ছাড়া।
অনিল বিশ্বাস ভবনে এদিন উত্তরবঙ্গে পার্টির সাত জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হন সূর্য মিশ্র। উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, পার্টির দার্জিলিঙ জেলা কমিটির সম্পাদক জীবেশ সরকার।
মিশ্র আরও বলেন, ভোটের জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। নিয়মিত ভোট বর্তমান রাজ্য সরকার করেনি। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের চৌত্রিশ বছরে নিয়মিত নির্বাচন হয়েছে। শিলিগুড়িতে পৌর কর্পোরেশন এবং মহকুমা পরিষদের ক্ষেত্রে আমরা বারবার দেখেছি, মেয়াদ শেষেও নির্বাচন হয়নি। আমরা লড়াইয়ের ময়দানে আছি। পঞ্চায়েত, মহকুমা পরিষদ, কর্পোরেশন, পৌরসভা, বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: গণশক্তি পত্রিকা।
শেয়ার করুন