তীর্থঙ্কর রায়
ভারতবর্ষের শিল্প ক্ষেত্রের বড় অংশই ছিলো সংগঠিত। সংগঠিত শিল্পে শ্রমিকদের অধিকার এতদিন সুরক্ষিত ছিলো। ভারতের স্বাধীনতার আগে পরের বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন গুলির লাগাতার সংগ্রামকে কিছুটা স্বীকৃতি দিয়েছিল স্বাধীন ভারতের সরকার। সেই সূত্রে শ্রমিকদের স্বার্থে কিছু রক্ষাকবচ ছিলো। যেমন স্থায়ী শ্রমিককে কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া চাকরি থেকে বরখাস্ত বা বদলি করা যাবেনা, সামাজিক সুরক্ষা ও মজুরি গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি অধিকার গুলি নিশ্চিত করা গিয়েছিলো। ডিএ'র ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গিয়েছিলো। কিন্তু ২০১৪ পর বর্তমান বিজেপি সরকার স্থায়ী নিয়োগ, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতো শ্রম আইনগুলি। সেই অধিকার ও সুরক্ষার রক্ষাকবচগুলি ধ্বংস করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এনেছে শ্রম কোড। এই কালা আইনে ছত্রে ছত্রে রয়েছে বিভ্রান্তি। এই বিভ্রান্তিকে ব্যবহার করে মালিকের স্বার্থে শ্রমিকদের শোষণের সংস্থান থেকেই যাচ্ছে।

এক অদ্ভুত কালবেলা দেখছি আমরা। ২০১৪-২৫ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলে প্রথমে হামলা হয়েছে সংবিধান, গণতন্ত্রের স্তম্ভ গুলিতে। দেশের সংবিধানের ওপর। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের ওপর হামলা হয়েছে। সেগুলোর চেয়েও বড় হামলা হয়েছে শ্রমজীবী দের অধিকারের ওপর।
এই আবহেই আগামী ৯ ই জুলাই দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে সিআইটিইউ সহ কেন্দ্রীয় ১০ টি ট্রেড ইউনিয়ন গুলি। এই ধর্মঘট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিকদের কাছে।
সংগঠিত ক্ষেত্রের শিল্প এতদিন দেশের বিপুল মানুষের রোজকারের সংস্থান হত। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ ছিলো চটকল, রেল, ইস্পাত, কয়লা, ব্যাঙ্ক, বীমা সহ বিভিন্ন সংগঠিত ক্ষেত্র। ২০১৪ সালের পর থেকে ক্রমশ সরকার রাষ্ট্রয়ত্ব ক্ষেত্রের লাগামছাড়া বেসরকারিকরণ শুরু করে দিলো। স্থায়ী শ্রমিক দের ভলেন্টারি রিটায়ারমেন্ট দিয়ে ক্রমশ রুগ্ন করে দেওয়া শুরু হল রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রকে।
২০১৪-২৫ এই ১১ বছরে দেশে মাত্র জনা দশকের কাছে দেশের নব্বই শতাংশ সম্পদ গচ্ছিত আছে। দিন দিন দেশে সম্পদের বৈষম্য দৃষ্টিকটু ভাবে চোখে পড়ছে। একাংশের কাছে কোন কিছুর অভাব নেই অন্যজন সামান্য প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২৪ সালে মানে গতবছর বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১৪৯ টি দেশের মধ্যে ভারতবর্ষ ১২৬ নং স্থানে রয়েছে। বেকারি, দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি ক্রমশ লাগামছাড়া ভাবে বাড়ছে দেশে।
স্বনির্ভর অর্থনীতির বুনিয়াদ তৈরির জন্য ১৯৫০ থেকে ভারী শিল্পের বিকাশ শুরু করেছিল স্বাধীন ভারতের সরকার। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট এন্ড রেগুলেশন এক্ট লাগু করে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিল্প শুরু হয়। কয়লা, বিদ্যুৎ, রাসায়নিক, সার, লোহা, ইস্পাত, রেল, বিমান, জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি ভারী শিল্প তৈরী হয়। লক্ষ্য ছিলো নিরাপদ স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরী করা দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ শক্ত করা।
কর্পোরেট দের লাগামছাড়া বিপুল আয়ের ইচ্ছা ও একটি দক্ষিণপন্থী সরকারের উচ্চাকাঙ্খার মিশ্রনে ক্রমশ অর্থনীতি যত বিপদের দিকে চলেছে। ততই লাগামছাড়া বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে।
এর প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয় জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন কে ভেঙে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে মোট বিলগ্নিকরণের হার ৬০ শতাংশ পেরিয়েছে। বিলগ্নিকরণে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হয়েছে। এই সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আমিদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা তার প্রমান। লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। ব্যায় সংকোচ করতে গিয়ে টাটা এয়ার ইন্ডিয়ার মেন্টেনেন্সের সাথে যুক্ত, অভিজ্ঞ গ্রাউন্ড ক্রু, সেফটি ও সিকিউরিটির সাথে যুক্ত কর্মীদের ছাটাই করেছে। লাভ রাখতে পুরোনো প্লেনগুলি আজও ব্যবহারের উপযুক্ত কিনা সেটা গুরুত্ব দেয়নি। এই গাফিলতির কারণে আড়াইশো মানুষের মৃত্যু হল। বিজেপি ও তৃণমূল আজকাল প্রচার করে বেসরকারি হলে পরিষেবা নাকি ভালো হবে। এই বেহাল পরিষেবা কি রাষ্ট্রয়ত্ব ক্ষেত্রে আগে তো ছিল না।
আমাদের রাজ্যে চটকলগুলির অবস্থা দেখেছেন তো? একটি উদাহরণ দি। এককালে পাট উৎপাদনে সেরা রাজ্য ছিলো পশ্চিমবঙ্গ। খাদ্য সামগ্রী মজুত ও সংগ্রহ করে রাখতে পাটের বস্তার বিপুল চাহিদা ছিলো। এই চাহিদা দেখেই ব্রিটিশ গঙ্গার দুই ধারে এদিকে হুগলী ওদিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা, হাওড়া জেলায় চটকল গড়ে ওঠে। ক্রমশ রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে আশ্চর্য যুক্তি হাজির হয়। যে পাটের যোগান মিলছে না। বন্ধ হয়ে যায় মিল গুলি। শ্রমিকদের ন্যূনতম প্রয়োজন সমস্যার কথা না ভেবে লক ডাউনের সময় মিল গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলেই গেট বাহার করে দেওয়া হয় একটা বড় অংশের শ্রমিক কে। দিন দিন রাজ্যের চটকলগুলিতে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। ৯০/২০ মানতে চাইছে না মিল মালিকরা। কার্যত পুলিশ ও সরকার মালিকের পক্ষে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের শোষণ করছে। মিল গুলোতে কোনটাতে চার দিন কোনটাতে পাঁচদিন কাজ হচ্ছে। এখন মিল গুলোতে বাধা ঠিকাদার রয়েছে। মিলের উবৃত্ত কাজ করাতে ঠিকাদার কে দিয়ে বাইরে থেকে শ্রমিক আনানো হচ্ছে। বহু মিলে রীতিমতো ট্রাকে ভরে ঠিকা শ্রমিক আনা হয়। ঠিকার নিয়ম যা মজুরি মিল দেবে তার একটা অংশ ঠিকাদার পাবে। আর মিল ম্যানেজমেন্টের থেকে সেলামি তো আছেই। ঠিকা শ্রমিকদের জন্য মজুরি ছাড়া কোন সামাজিক সুরক্ষা নেই। কোন কারণে দুর্ঘটনা হলে ঠিকাদার বা মালিক কেউ দায় নিতে চায় না। মিল এলাকায় কান পাতলে শুনতে পাবেন আগে যেখানে একটা লোক তিনটে মেশিন চালাতো আজ সেখানে ৬ টা মেশিন চালাচ্ছে। আট ঘন্টা কাজের বদলে নয়-দশ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় খাটানো হচ্ছে। শ্রমিকদের টিফিনের সময় কমিয়ে কাজের সময় বাড়িয়ে দিচ্ছে ম্যানেজমেন্ট। মিলের থাকার জায়গাগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে শতাব্দী প্রাচীন। থাকার জায়গাগুলি তথৈবচ। কোন কোন কোয়ার্টার কয়েক শতাব্দীর বেশি পুরোনো। এখন বাড়ির ছাদ দেওয়াল থেকে চাঙ্গর খসে পড়ে বাড়িতে। এভাবেই চট শ্রমিকদের জীবন যন্ত্রনা চলতে থাকে। কেন্দ্রের শ্রম কোড গুলি চালু হলে বিপর্যয় নেমে আসবে এই চট শিল্পে। শ্রম কোড লাগু হবার আগে থেকেই তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে তৃণমূল সরকার। একদিকে কেন্দ্র শ্রম কোড চালু করছে অন্যদিকে আগে ভাগে সেই শ্রমকোড চালু করতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল। এই দুই শাসকের বিরুদ্ধেই আমাদের প্রতিবাদ।
বিদ্যুৎ, ইস্পাত শিল্পে ক্রমশ স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। ভারী শিল্পে ঠিকা শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। রেলের লাইন মেরামতি থেকে স্লিপার পাতা রেল লাইনে পাথর ফেলা এসব কাজ এখন ঠিকা শ্রমিক রা করে থাকে। আগে এখানেই স্থায়ী শ্রমিকরা কাজ করতো। ক্রমশ ঠিকার ওপর নির্ভরশীলতায় রেলে দুর্ঘটনার পরিমান বাড়ছে। মডেল স্টেশনের নাম করে কসমেটিক উন্নয়ন করার চেষ্টা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের রাজ্যে বিদ্যুৎ শিল্পে ক্রমশ স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা কমিয়ে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ বাড়ছে। ক্রমশ রাষ্ট্রয়ত্ব ক্ষেত্রের বিদ্যুৎ বিপনন সংস্থাকে রুগ্ন করার চেষ্টা হচ্ছে। দিন দিন বিদ্যুতের মাশুল চড়ছে। স্মার্ট মিটার চালু করে গরীবের পকেট কাটার একটা ফন্দি এঁটেছিলো সরকার। সেটা আটকানো গেছে লাগাতার আন্দোলনের চাপে। কিন্ত শাসকের ছলের অভাব হয়না। তাই লড়াই জারি রাখা ছাড়া গতি নেই।
শুধু কি বিদ্যুৎ? আগে ব্রেথ ওয়েটের ওয়াগান ফ্যাক্টরির জন্য স্ক্র্যাপ মেটাল কারখানা, ইন্টারন্যাশনাল কম্বাকশনের মত কারখানা চলতো। আজ ব্রেথওয়েট রুগ্ন হওয়ায় অনুসারী ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা গুলো ও ধুকতে শুরু করেছে। ব্রেথওয়েট জেশপের মত কারখানায় ক্রমশ স্থায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। ঠিকায় নিযুক্ত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বলতে কিছুই নেই।
শিল্পের জমিকে ব্যবহার করা হচ্ছে রিয়েল এস্টেট ও লাভজনক ব্যাবসার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। বামফ্রন্ট আমলে শিল্প নীতি ছিলো শিল্পের জমিকে শিল্পের কাজে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু বিজেপির পথে চলে এরাজ্যের তৃণমূল সরকার আইন করে শিল্পের জমিকে অতিরিক্ত মুনাফা দেয় এমন লাভজনক ব্যবসায় ব্যবহার করার জন্য ছাড়পত্র দিচ্ছে। শিল্পের জমিতে নতুন করে কোন শিল্প গড়ে উঠছে না।
যে সমস্ত ভারি শিল্প গুলো আছে সেগুলিকেও সংকুচিত বা ছোট করে দিতে চাইছে সরকার। তার শেয়ার তার স্বত্ব বেসরকারি হাতে বিক্রি করে। প্রভাব পড়ছে শিল্পের উৎপাদনে এমনকি দেশের অর্থনীতিতে। বহু লোক কে ছাটাই করা হচ্ছে। শ্রমকোড এমন ভাবে চালু করতে চাইছে সরকার যাতে শিল্প কারখানায় ইউনিয়ন করার অধিকার টুকু না থাকে। এই ধরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আজকাল ঠিকায় নিযুক্ত শ্রমিক নিয়োগ হচ্ছে সমস্ত সংগঠিত ক্ষেত্রে। এদের না আছে সামাজিক সুরক্ষা। না আছে পেনশন বা গ্রাচুইটি। রাজ্য ও দেশজুড়ে অনেক শিল্পে ঠিকা শ্রমিকরা মারা যাচ্ছেন দুর্ঘটনায় তাদের পরিবার কোন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। ঠিকা শ্রমিকরা ঠিকাদার নিযুক্ত ও অসংগঠিত হওয়ায় প্রতিবাদের লহর তৈরী হচ্ছে না। শ্রম কোড লাগু হলে শ্রমিকদের কার্যত কোন অধিকার যে থাকবে না এটাই তার প্রমান।
।শুধু কি তাই? আজকাল সংগঠিত ক্ষেত্রে মজুরীর হার কমে গেছে বহু বছর ঘুরেছে কিন্তু মালিকের ষড়যন্ত্রে মজুরি বাড়েনি সংগঠিত শিল্পে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত আয়ের জন্য বা সংসার চালাতে শ্রমিকরা কেউ হকারি করছেন, কেউ টোটো চালাচ্ছেন, কেউ খাবারের স্টল দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের তৃণমূলের প্রশাসন উচ্ছেদ করছে। বা বিজেপির রেল পুলিশ তাদের স্টল ভেঙে দিচ্ছে রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। তাদের পুনর্বাসনের কোন সুযোগ না দিয়েই এই অত্যাচার করা হচ্ছে।
কেন বিপদ? কোনো আমরা বলছি ৯ তারিখের দেশব্যাপী ধর্মঘটকে ঐতিহাসিক করে তুলুন। তাহলে আপনাকে শ্রমিকমারা শ্রম কোড কি সেটা বুঝতে হবে। বিজেপি সরকারের শ্রম কোড আইনে পূর্বতন শ্রম আইনের মত বিচার বা জুডিশিয়াল ক্ষমতা নেই। বরং এর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যদি মালিক শ্রমিকের প্রতি কোন অন্যায্য আচরণ করে তাকে গেট বাহির করেন বা বরখাস্ত করেন তাহলে মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার কোন সংস্থান এই শ্রম কোডে থাকবে না।
শ্রম কোডে এক্সিকিউটিভ বা কার্যনির্বাহী ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকার কিছু প্রশাসক নিয়োগ করবে শ্রমিকদের স্বার্থ দেখার নাম করে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখছি সরকারী আমলা রা সাধারণত শ্রমিক দের স্বার্থ কার্যত দেখেন না। ন্যূনতম মজুরি বা ফ্লোর লেভেল মজুরীর কথা বলা হলেও মজুরীর হার কত তা শ্রম কোডে বলা নেই। অর্থাৎ শ্রমিকদের স্বার্থ তার অধিকার মজুরি সুরক্ষিত থাকলো না। মালিকের মন মর্জি মত বেতন মিলবে। আইনি প্রতিবিধানের সুযোগ মিলবে না। এবছর প্রথমে সরকার দৈনিক মজুরি বা পিসরেট মজুরি বা ফুড়ন মজুরি ঘোষণা করবে। এতে দৈনিক দুই চার ঘন্টার কাজে শ্রমিক নিয়োগ হবে। মজুরি ঐ দুই চার ঘন্টার কাজের জন্যই মিলবে সারা দিনের মজুরি মিলবে না। এর বিরুদ্ধে বিচারালয়ে যাওয়ার কোন সংস্থান আইনে নেই। সম কাজে সম বেতনের কোন প্রভিশন এই আইনে নেই। এখনকার আইন মোতাবেক লেবার ট্রাইব্যুনাল র রায়ে যদি কোন মালিক অসম্মতি জানান তাহলে ক্রিমিনাল কোর্টে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকছে না। ধরুন আপনি ৩০ বছর চাকরি করলেন কোন মিলে আপনার পদের কোন স্থায়িত্ব থাকবেনা। পেনশন গ্রাচুইটির দায়িত্ব নেবেনা মালিক। আপনার সঙ্গে বেগার শ্রমের সম্পর্ক মালিকের। আপনি প্রতিবাদ করলে আপনাকে স্রেফ বসিয়ে দেবে নাহলে গেট বাহির করে দেবে। প্রতিবাদে আপনি কোর্টে যেতে পারবেন না ধর্মঘট করার অধিকার আপনার থাকবে না। আজ আমাদের কাছে আসল লক্ষ্য আমাদের শ্রমিক ভাইদের অধিকার আদায় করার সংগ্রাম জারি রাখা। এই লড়াই আমাদের দেশ, আমাদের দেশের শ্রমজীবী, সাধারণ মানুষকে বাঁচাবার লড়াই। স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতার পরে যে দাবী আমরা আদায় করেছি। ব্রিটিশ শাসনে হোক বা স্বাধীন ভারতবর্ষে সেই দাবী আদায় করার জন্য শ্রমিক শ্রেণীকে রাস্তায় নেমে বৃহত্তর সংগ্রাম গড়েই করতে হয়েছে। তাই আজকে যখন আমাদের অর্জিত অধিকারের ওপর আঘাত এসেছে। শ্রমিক তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার ধর্মঘট কে ব্যবহার করছে। এই ধর্মঘট কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু তৃণমূল বিজেপির মধ্যে বোঝাপড়া দেখুন আমাদের রাজ্যে শ্রমিক গরীব মানুষের অধিকারের দাবীতে ধর্মঘট ডাকলে বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে যায় তৃণমূলের। কর্পোরেটের পক্ষে তৃণমূল ও বিজেপি দুজনেই এটা বুঝতে কারোর বাকি নেই। তারা দাঁত নখ বের করে রাস্তায় নেমে ধর্মঘট ভাঙতে নেমে পড়ার তোড়জোড় শুরু করেছে। অতীতেও আমরা ধর্মঘট করতে গিয়ে দেখেছি প্রতিবাদ বা মত প্রকাশের অধিকার ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃত হলেও। কর্মচারী দের এক দিনের বেতন কাটা হয়েছে। বা কর্মজীবন থেকে এক দিন মুছে দেওয়া হয়েছে। এই অত্যাচার সরকারী ভাবে হয়েছে। শ্রমিক দের ভয় দেখানো হয়েছে যে তুমি যদি কাজে না আসো সারা জীবনের জন্য তোমার কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। এই শ্রম কোড বাতিল না করা গেলে শ্রমজীবী মানুষদের কোন অধিকার ই আর সুরক্ষিত থাকবে না। এই লক্ষ্যে আগামী ৯ ই জুলাই সারা ভারতকে স্তব্ধ করে দেবার সংগ্রামে সমস্ত শ্রমিক ভাই বোনেরা সামিল হোন। বিজেপির নীতি বাস্তবায়িত করছে তৃণমূল ফলে স্বাভাবিক ভাবে এই আতাতের ফলে প্রমান হয়েছে দুটি দল পরিচালিত হচ্ছে কর্পোরেটের দ্বারা মিল মালিকদের দ্বারা। এবং এই দুই সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে শ্রমজীবীদের নাহলে শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার হারাবে। মালিক যখন বিজেপি তৃণমূলের মত উগ্র দক্ষিণপন্থী দলকে স্পনসর করে তখন নিশ্চিত মালিক চাইবে শ্রমজীবী মানুষকে শোষণ করে নিজের মুনাফা বাড়াতে। যাতে শ্রমিক দের অধিকার হরণ করা যায়। আমাদের ঐক্যবদ্ধ জোটবদ্ধ হয়ে শ্রমিক শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্জিত অধিকার রক্ষার জন্য এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলি। দাসত্বে র বন্ধনে আবদ্ধ করার কেন্দ্রীয় সরকারী নীতি শ্রম কোড যাকে তৃণমূল আমাদের রাজ্যে কার্যকর করছে তার বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। আসন্ন ৯ জুলাই সারা দেশ জুড়ে ঐতিহাসিক সাধারণ ধর্মঘট আমাদের গড়ে তুলতেই হবে। নাহলে শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার সুরক্ষিত থাকবে না। এই দুই সরকারের বিরুদ্ধে কাঁপন ধরাতেই ধর্মঘট হবেই। আসুন সকলে সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আমাদের লড়াইয়ে সামিল হোন। মানুষ ইতিহাস তৈরী করে, সব বাধাকে অতিক্রম করে আমদের রাজ্য সহ গোটা দেশের শ্রমজীবী মানুষ আবার ইতিহাস তৈরী করবে।