আজ ৮ই মার্চ । আন্তর্জাতিক নারী দিবস মহিলাদের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি । এই স্বীকৃতি আদায়ের কৃতিত্ব সম্পুর্ণ ভাবে কমিউনিস্টদের । বর্তমানে আমাদের রাজ্যে সামনে যখন লড়াই ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদ সহযোগী শক্তি অর্থাৎ আর-এস-এস বিজেপি ও তৃণমুল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে , তখন গত দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গে মহিলারা কেমন আছেন বা ২০১১ সাল থেকে সরাসরি তৃণমুল কংগ্রেস শাসনে এবং ২০১৪ সাল থেকে কেন্দ্রে বিজেপি যুক্ত হয়ে মহিলাদের সম্পর্কে কি দৃষ্টিভঙ্গী নেওয়া হয়েছে তার হিসেব তো নিতেই হবে আজকে ।

এ রাজ্যে মহিলারা কাজ হারিয়েছে সবচেয়ে বেশি । এ রাজ্যে মজুরি পেয়েছেন শ্রমজীবী মহিলা সবচেয়ে অনিয়মিত এবং কম । পিরিয়ডিক লেবার সমীক্ষা অনুযায়ী দশ বছরে গ্রামীন বাংলায় ৯.৩ লক্ষ মহিলা কাজ হারিয়েছেন । এই মহিলারা রেগার কাজ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন, নাম লেখানো থাকলেও কাজ পাননি অনেকে । এই কাজ হারানো বঞ্চিত মহিলাদের কাজ দেওয়ার ভরসা দিয়ে দলীয় আনুগত্য আদায় করলেও তা শোষণ ছাড়া আর কিছু নয় । ১০০ দিনের কাজ জোটে নি, জোটে নি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজও । দুর্যোগ ফণী বা বুল্বুলের পর এই মহিলারা সব হারিয়ে বাধ্য হয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকের খাতায় নাম লেখাতে । আজ করোনা অতিমারির পর তারা যখন ঘরে ফিরলেন অবাক হয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করলেন –এরা গেলেন কেন? এখানেই তো কাজ আছে । কোথায় কাজ? থাকলে ভিটে মাটি ছেড়ে কোন মহিলা অজানা কাজের খোঁজে বেড়িয়ে পড়ে? এই কাজ না পাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে যারা পুরুষ তাদের ৬৭%এর কাজ এখন হলেও, মহিলাদের কাজ হয়েছে মাত্র ৬% -এই তথ্য দিচ্ছে সিএম আই ই ।২০১৮ সালের বিশ্ব ব্যাঙ্কের এক রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে যা কাজ হয়েছিল সব হয়েছিল ২০১১-১২ সালের আগে , তার পরে কাজ আর হয় নি । যে মহিলারা ঋণ নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তাদের উপর এই সময়ে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত চলে এল ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের ঋণ আদায়ের চাপ । তথ্য চাপা দেওয়া হল , কিন্তু এই কারণে শ্লীলতা হানি, এমন কি আত্মহত্যাও ঘটল । এই অংশের খেটে খাওয়া গরিব মহিলারাই শোষিত হয়েছিলেন সারদা কেলেঙ্কারিতে । টেট কেলেঙ্কারিতে বলি হলেন হবু শিক্ষিকারা । সব ক্ষেত্রেই আড়াল করেছে অপরাধীদের প্রশাসন ।

মহিলার মুখ থাকলেই তা পিতৃতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানায় না । পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই আসলে ক্ষমতাবানের বিরুদ্ধে ক্ষমতাহীনের লড়াই । এই ৮ই মার্চ সেই ডাকই দিচ্ছে আগামী নির্বাচনে ।