স্তালিনগ্রাদ, ঘুরে দাঁড়ানোর মহাকাব্য - শান্তনু দে

আমার বিশ্বাস জানি রক্তকণিকারা

লাল ফৌজের মতো দুর্জয় সুনিশ্চিত

আবার দখল নিয়ে দেবে প্রত্যাঘাত

অমর স্তালিনগ্রাদ

শপথ, সলিল চৌধুরী

১৯৪৫, মে দিনের আগের রাত।

রণাঙ্গন থেকে মার্শাল জুকভের ফোন। স্তালিন তখন মস্কোর অদূরে তাঁর দাচায়। ফোন ধরেন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রধান জেনারেল ভ্লাসিক। জুকভকে জানান: ‘কমরেড স্তালিন এইমাত্র শুতে গিয়েছেন।’

‘ওঁকে এখনই ডাকা দরকার। বিষয়টি এতই জরুরি যে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না।’ এক নিঃশ্বাসে বলেন জুকভ।

মিনিট কয়েকের মধ্যেই স্তালিন ফোন ধরেন। জুকভ তখন তাঁকে হিটলারের আত্মহত্যার খবর জানান।

‘শেষে এসে লোকটা এমনটা করে বসল!’ সখেদে বলে স্তালিন। ‘বড়ই আফশোসের কথা, ওকে আমরা জীবন্ত ধরতে পারলাম না! যাইহোক, হিটলারের মৃতদেহ এখন কোথায়?’

‘জেনারেল ক্রেবস (জার্মান স্থলবাহিনীর প্রধান) জানিয়েছেন, তার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।’ বলেন জুকভ।

স্তালিনের নির্দেশ: ‘সোকোলভস্কিকে (জুকভের ডেপুটি কামন্ডার) বলুন, কেবলমাত্র নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ছাড়া কোনওরকম সমঝোতা আলোচনা ক্রেবস বা হিটলারের কারো সঙ্গে করা যাবে না।’

অল্প থেমে ঝুকভকে স্তালিন বলেন, ‘তেমন জরুরি না হলে সকাল পর্যন্ত আমাকে আর ফোন করবেন না। আমি প্যারেডের আগে কিছুটা বিশ্রাম নিতে চাই।’ (পৃষ্ঠা ৩৬৮, দ্য ফল অব বার্লিন, অ্যান্টনি বিভোর)।

নির্বিকার নিরুত্তাপ স্তালিন শুতে চলে যান। জুকভ একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন রাত পোহালেই মে দিনের প্যারেড রেড স্কোয়ারে। আর তার জন্য বেরিয়া মস্কো থেকে কারফিউ পর্যন্ত তুলে নিয়েছেন।

ক’দিন বাদেই নাৎসি জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। চুক্তি সই। বার্লিনে ৮ মে সন্ধ্যায়, মস্কোর সময়ে ৯ মে। সেই থেকে দিনটি এই গ্রহের ‘বিজয় দিবস’। এই দিন নাৎসি-ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জয়ের দিন। এই দিন হিটলারের ‘নয়া ব্যবস্থা’কে পরাস্ত করার দিন। এই দিন মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম গণহত্যার অবসানের দিন। এই দিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির দিন।

Image : Google

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ– ইতিহাসের কোনও ‘দুর্ঘটনা’ ছিল না। এটা ছিল ১৯২৯ সালে শুরু হওয়া পুঁজিবাদী মন্দা থেকে ‘বেরনোর পথ’। লক্ষ্য ছিল শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের আন্দোলনের বিকাশ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্র নির্মাণের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করা। ফিনান্স পুঁজির সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ও আগ্রাসী বৃত্তের সন্ত্রাসবাদী একনায়কতন্ত্র হলো ফ্যাসিবাদ।

যে যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে ৫ কোটি মানুষের জীবন। যার মধ্যে ২ কোটি ৬৬ লক্ষই এক সোভিয়েত ইউনিয়নের। ১ কোটি ১০ লক্ষ সোভিয়েত সেনা জীবন দিয়েছেন এই যুদ্ধে, যেখানে নিহত মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনার মিলিত সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ। যখন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ৬০ লক্ষ ইহুদী হত্যার কথা বলা হয়, তখন মনে রাখা উচিত, জার্মানিতে আটক ৫৭ লক্ষ রুশ যুদ্ধবন্দির ৩৩ লক্ষেরই মৃত্যু হয়। জার্মানরা গুঁড়িয়ে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়নের ১,৭১০টি শহর মফস্বল জনপদ। ৭০,০০০ গ্রাম, ৩২,০০০ শিল্পোদ্যোগ, ৬৫,০০০ কিলোমিটার রেলপথ। অর্থের অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৬,০০,০০০ রুবল। ইতিহাসের কোনও যুদ্ধে কোনও দেশ এত ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়নি।

আজকের দিন একমাত্র কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধীরাই কেবল ফ্যাসিবাদের পরাজয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি ও জোশেফ স্তালিনের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত জনগণের ভূমিকাকে অস্বীকার করতে পারেন। সেই মহাযুদ্ধের সময় প্রতিটি মিনিটে সোভিয়েত রাশিয়াকে হারাতে হয়েছে ৯টি করে জীবন। প্রত্যেক ঘণ্টায় ৮৫৭। আর প্রতিদিন ১৪,০০০। একজন ব্রিটিশ, একজন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুপিছু প্রাণ দেন ৮৫ জন সোভিয়েত নাগরিক।

তবু জয় তাদেরই হয়েছিল। আমেরিকার পতাকা নয়, হিটলারের রাজধানীতে শেষ পর্যন্ত উড়েছিল সোভিয়েতের কাস্তে-হাতুড়ি খচিত লালঝাণ্ডা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কিংবা ব্রিটেন নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নই নামিয়েছিল ফ্যাসিস্ত পতাকা।

সোভিয়েত ইউনিয়ন যে এই বিরাট অভূতপূর্ব লড়াই জিততে সক্ষম হয়েছিল, তা সমাজতন্ত্র ও শ্রমিকশ্রেণির চূড়ান্ত শক্তিকেই প্রমাণ করে। সাম্রাজ্যবাদী সহযোগী দেশগুলির প্রাথমিক বেইমানি সত্ত্বেও তারা পিছু হটতে বাধ্য করেছিল ফ্যাসিবাদকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন ও ফরাসি বাহিনীর ‘দ্বিতীয় ফ্রন্ট’ তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৯৪২ সালে যুদ্ধে নামেনি। লড়াইয়ে নামে ২ বছর দেরি করে, ১৯৪৪ সালে।

প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুমানের মূল্যায়ন এ প্রশ্নে সমান প্রাসঙ্গিক– ‘আমরা যদি দেখি জার্মানি জিতছে, তাহলে আমাদের উচিত রাশিয়াকে সাহায্য করা। আর যদি দেখি রাশিয়া জিতছে, তাহলে আমাদের উচিত জার্মানিকে সাহায্য করা। এইভাবেই দুই পক্ষের যত খুশি নিহত হোক’ (নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৪ জুন, ১৯৪১)। চার্চিলের যুদ্ধের স্মৃতিকথাতেও একই প্রতিধ্বনি: ‘প্রায় সমস্ত দায়িত্বশীল সমর-বিশেষজ্ঞদেরই অভিমত ছিল, রুশ সেনারা খুব শীঘ্রই পরাস্ত হবে এবং প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।’

সাম্রাজ্যবাদীদের বোঝাপড়া ছিল স্পষ্ট। আগে সমাজতন্ত্র ধ্বংস হোক, তারপর যুদ্ধবিধ্বস্ত ফ্যাসিবাদকে অনায়াসে পরাস্ত করা যাবে। তারই পরিণতিতে সাম্রাজ্যবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

হিটলার ও তার ফ্যাসিস্ত সঙ্গীরা মার্কিন শিবির-সহ পশ্চিমের মনের কথা বিলক্ষণ জানতেন, বুঝতেন। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতকেই পয়লা-নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন হিটলার। এবং সঠিকভাবেই তা করেছিলেন। একেবারে শেষপর্বে লালফৌজ যখন বার্লিন ঘিরে ফেলেছে, তখন হিটলার তাই বলেছিলেন, ‘রুশদের ঢুকতে দিও না, বরং মার্কিনী ও ব্রিটিশদের কাছে বার্লিনকে সমর্পণ কর।’ নাৎসিদের উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন বাহিনী না পৌঁছনো পর্যন্ত বার্লিনের পতনকে ঠেকিয়ে রাখা। তারপর সোভিয়েতকে এড়িয়ে ব্রিটেন বা আমেরিকার সঙ্গে পৃথক বোঝাপড়ায় পৌঁছনো।

লালফৌজ তা হতে দেয়নি। লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট। লক্ষ্যে ছিল অবিচল।

১৮ ডিসেম্বর, ১৯৪০। হিটলার সই করেন নির্দেশিকা-২১’এ, যা ‘অপারেশান বারবারোসা’ সাংকেতিক-নামে পরিচিত। এই নির্দেশিকার মাত্র ন’টি কপি তৈরি করা হয়েছিল। ইউরোপে দুরন্ত সাফল্যের পর ফ্যাসিস্তরা এই পরিকল্পনার সাফল্য নিয়ে এতটাই নিশ্চিত ছিল যে মনে করেছিল সোভিয়েতের পতন ঘটাতে লাগবে না ছ’-সপ্তাহও। নির্দেশিকা-৩২’এ, ‘প্রাচ্য’ সাংকেতিক-নামে ছিল আফগানিস্তান ও ভারত দখলের কথা।

২১ জুন, ১৯৪১। অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করেন হিটলার। আচমকা হামলা চালান সোভিয়েত ইউনিয়নে। ‘আমাদের লক্ষ্য হলো রুশ বাহিনীকে পরাস্ত করা এবং রাষ্ট্রকে চূর্ণ করা, আর এটি হবে একটি গণহত্যার যুদ্ধ।’ ঘোষণা করেন হিটলার। এবং এটি আদৌ অতিশয়োক্তি ছিল না। সশস্ত্র বাহিনীর ৭৭ শতাংশকেই তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পুরো সীমান্ত ববারব জড়ো করেন। মনে করেছিলেন অনায়াসে দখলে আসবে রাশিয়া। গোটা বিশ্ব নিশ্চিত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংস কেবল সময়ের অপেক্ষা।

ফ্যাসিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে জীবন-মরণ সংগ্রামের সেই শুরু। মাতৃভূমির রক্ষায় প্রতি ইঞ্চি জমির জন্য লড়াই।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মস্কোর অদূরে পৌঁছে যায় নাৎসি সেনা। জার্মানরা প্রথম কয়েক সপ্তাহে উত্তরে লেনিনগ্রাদ, কেন্দ্রে মস্কো এবং কিয়েভ হয়ে স্তালিনগ্রাদের দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু জার্মান ঝটিকা আক্রমণ রাশিয়ার মধ্যে কাজ করেনি। হিটলারের হতাশা বাড়তে থাকে। মস্কোয় তুমুল প্রতিরোধের মুখে পড়ে নাৎসি বাহিনী। গোটা বিশ্ব তখন অভিভূত! আর মস্কো যখন স্বীকার করে নয়-সপ্তাহের যুদ্ধে তারা হারিয়েছে ৭,৫০০ বন্দুক, ৪,৫০০ বিমান আর ৫,০০০ ট্যাঙ্ক– তখন তামাম দুনিয়া হতবাক! একজন ব্রিটিশ সাংবাদিকের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘যে সেনাবাহিনী এখনও যুদ্ধ করতে পারে, তাদের কাছে তাহলে অবধারিতভাবেই রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম, অথবা দ্বিতীয় বৃহত্তম (সমরাস্ত্রের) সরবরাহ।’

রুশদের বীরোচিত লড়াই সত্ত্বেও বিয়াল্লিশের গ্রীষ্মে জার্মানরা পৌছে যায় স্তালিনগ্রাদের তিরিশ মাইলের মধ্যে। হিটলারের স্লোগান ছিল: ‘যে কোনও মূল্যে স্তালিনগ্রাদ দখল’। বিপরীতে স্তালিনগ্রাদের শপথ ছিল, শহর-সীমান্তে ‘ভোলগার পরে আর কোনও জমি নেই!’ রুখতে হবে এখানেই।

Image: Google

মস্কো থেকে কমিউনিস্ট পার্টি আর জেনারেলিজিমো স্তালিনের অমোঘ নির্দেশ: ‘পিতৃভূমি রাশিয়া স্তালিনগ্রাদ-রক্ষাকারীদের কখনও নিজের সন্তান হিসেবে স্বীকার করবে না, যদি তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে না পারে।’ স্তালিনের স্লোগান: ‘ভোলগার পরে আর এক ইঞ্চি জমিও নয়!’ যুদ্ধে এগিয়ে আসেন রাশিয়ার প্রতিটি মানুষ। স্টোভ, ইট, রান্নাঘরের কাঁটা খুন্তি– হাতের কাছে গৃহস্থালির জিনিস যা পেয়েছেন, তাই নিয়েই নেমে পড়েন। সে এক মরনপণ যুদ্ধ। লালফৌজের পালটা অভিযান।

যুদ্ধ চলে ১৮২ দিন। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৩। জার্মান বাহিনীর আত্মসমর্পণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে বীরোচিত যুদ্ধ, যার ফলাফল ছিল সবচেয়ে বেশি নির্ণায়ক! এই প্রথম পরাস্ত হয় হিটলারের বাহিনী। স্তালিনগ্রাদ ঘুরিয়ে দেয় যুদ্ধের স্রোতকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক নির্ণায়ক দিক পরিবর্তনের সূচনা করে।

প্রবল বাধায় হতভম্ব, বিহ্বল পরাজিত হিটলারের বাহিনী পিছু হটার সময় মস্কোর কাছে ইস্ত্রার দেওয়ালে লিখে যায়, ‘বিদায় মস্কো, আমরা ফিরে যাচ্ছি বার্লিনে।’ লালফৌজ ওই দেওয়াল লিখনের নিচে লেখে, ‘বার্লিনে গিয়েই আমরা তোমাদের ধরব।’

এবং করেও দেখায়। ১৯৪৩’র গ্রীষ্ম। লালফৌজ কুর্ক্স যুদ্ধ জয় করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। জুন, ১৯৪৪। পুবের ফ্রন্টে তখন জার্মানদের ১৫০ ডিভিশান সেনা। যেখানে পশ্চিমের ফ্রন্টে সাকুল্যে ৬০টি ডিভিসন। অন্যদিকে লাল ফৌজ অপ্রতিরোধ্য। শেষে পৌঁছয় বার্লিনে। হিটলারের রাজধানী রাইখস্ট্যাগে লালঝাণ্ডা।

নাৎসি যুদ্ধ মেশিনকে পরাস্ত করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই মহান অবদান আসে তার অর্থনীতি ও সমাজের চড়া মূল্যের বিনিময়ে। নিহতের সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ। তাবৎ তরুণ প্রজন্মের আত্মত্যাগ। চূর্ণবিচূর্ণ অধিকাংশ শিল্পকেন্দ্র, পরিকাঠামো। যুদ্ধের পরবর্তী বছরগুলিতে পুনর্গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজের জায়গা পুনরুদ্ধার করলেও, নির্মম বাস্তব হলো প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে পোহাতে হয় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির দুর্ভোগ।

বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জমিতে দেখেনি কোনও যুদ্ধ। যুদ্ধের পর বিশ্বের শক্তিশালী পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে তার অবস্থানকে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দেখে পুঁজিবাদের সোনালী যুগের সঙ্গে এক পুনরুত্থান, যার মেয়াদ ছিল প্রায় আড়াই দশক (১৯৪৭-৭৯)।

এটা ঠিক, মতাদর্শের বিচ্যুতি, রাজনৈতিক ও তার অর্থনৈতিক কাঠামো– নিশ্চিতভাবেই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তবে যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাব এবং তার পরিণামকেও ধরতে হবে এই কারণগুলির মধ্যে।

লেনিনগ্রাদ থেকে স্তালিনগ্রাদ। মার্শাল জুকভ থেকে কমরেড স্তালিন। রাশিয়ার জনগণের ভূমিকা। ইতিহাসের এক মহাকাব্য।

পিছিয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। হেরেও না হারার মানসিকতা। এবং শেষে জয়। একঘরে অবস্থান থেকে কমান্ড আর সম্মানের অবস্থানে।

সেসময়ের একটি জনপ্রিয় কৌতুক: রাষ্ট্রসঙ্ঘের ঘোষণাপত্রে সই করার জন্য বিশ্বের তিন নেতা জড়ো হয়েছেন প্রাতরাশের টেবিলে। চার্চিল, রুজভেল্ট এবং স্তালিন। চায়ের কাপে ঠোঁট রেখে চার্চিল বলেন, গত রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম একটি বিশ্ব-সরকার তৈরি হয়েছে এবং আমি তার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছি। শুনে রুজভেল্ট বলেন, কী আশ্চর্য মিস্টার চার্চিল, আমিও এই একই স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু আমি দেখলাম আমি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছি। চুপ করে শুনছিলেন স্তালিন। সবেশেষে মুচকি হেসে বলেন, আমিও এই একই স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু মনে করতে পারছি না আপনাদের মধ্যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছি কি না!


শেয়ার করুন

উত্তর দিন