বৃটিশ বুঝেছিল - বিপদ কোথায়
১৯২০ সালে জন্ম নেওয়া কমিউনিস্ট পার্টি তখন স্বাভাবিকভাবেই খুবই ছোট। কিন্তু বৃটিশরা প্রথম থেকেই বুঝেছিল যে তাদের কাছে ভবিষ্যতের উৎকন্ঠার কারণ হতে যাচ্ছে কমিউনিস্টরাই। সংগঠিত গণআন্দোলনের ধারার বিস্তার ঘটাচ্ছে কমিউনিস্টরা। গোপন করছে না, বরং ঘোষণা করেই বলছে - আপোষে হবে না। দারিদ্র মুক্তির একমাত্র পথ সমাজতন্ত্র। কমিউনিস্টরাই স্বাভাবিক কারণে নানাবিধ কঠিন আক্রমণের শিকার। পরপর ষড়যন্ত্র মামলা চাপিয়ে দেওয়া হলো বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে। পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২২-২৭)। কানপুর কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৪-২৫)। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯-৩৩) ইত্যাদি। আসামী কারা? মুজাফফর আহমেদ, সওকত উসমানি, এস এ ডাঙ্গে, সিঙ্গারভেলু চেট্টিয়ার, পি সি যোশী, মোহন সিং যোশ - প্রমুখ তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতারা। অভিযোগ কি? সাম্রাজ্যবাদী বৃটেনকে উৎখাত করা এবং বলপূর্বক ভারতকে বৃটেনের তাবেদারী থেকে আলাদা করা। মীরাট মামলার সুযোগ নিয়ে নেতারা বললেন, বৃটিশকে উৎখাত করে ভারতকে তার থেকে পৃথক করাটা কোন ষড়যন্ত্রমূলক কাজ নয়, দেশের স্বাধীনতার জন্য এটি একটি মহান কর্তব্য। এই কাজ করবার প্রচেষ্টায় কমিউনিস্টরা গর্বিত। কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছিল তাঁদের। তাতে তাঁরা গর্ববোধ করেছেন। সংগ্রামের পথেই থেকেছেন। আপোষের পথে কখনো যাননি।
বস্তুত পক্ষে ষড়যন্ত্র মামলার খবর যখন সংবাদমাধ্যমে বাইরে আসছে, মানুষ তা জানছেন। উৎসাহ বোধ করছেন এবং ততই কমিউনিস্টদের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং ভরসা বাড়ছে, যা সংগঠিত আন্দোলনকে বিকশিত করতে সাহায্য করছে।
শতসহস্র সংগ্রামের স্রোতধারায় কমিউনিস্টদের উত্তরন
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র প্রতিষ্ঠা কালে ১৯৬৪ সালে, পার্টির সর্বোচ্চ যে নেতৃত্ববৃন্দ, নবরত্ন, তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক জীবনে দৃঢ় মতাদর্শ এবং সংগ্রামের বিস্তৃত অংশগ্রহণ যেমন আছে, তেমনই আছে পরাধীন ভারতে কঠিন জেল-জীবনের নিদারুন অভিজ্ঞতা।
আন্দামান সেলুলার জেলের কঠিন কারান্তরালে বছরের পর বছর যারা কাটিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই কমিউনিস্ট। কমিউনিস্ট হিসাবেই সেলুলার জেল অথবা জেলে থাকাকালীন মতাদর্শগত তত্ত্ব আলাপ-আলোচনা বা অভিজ্ঞতার বিচারে মার্কসবাদের মতাদর্শকে গ্রহণ করা। গণেশ ঘোষ কিংবা সুবোধ রায়, হরেকৃষ্ণ কোঙার কিংবা সুকুমার সেনগুপ্তরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ের শরিক। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব। বৃটিশের তীব্র রোষানলে শাস্তিপ্রাপ্ত দেশপ্রেমিকেরা, চুড়ান্তভাবে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ এবং স্বাভাবিকভাবেই কমিউনিস্ট। এটা আমাদের গর্ব। আমাদের অহঙ্কার।
স্বাধীনতার লড়াইতে বিভিন্ন ধারার সংগ্রামী এবং দেশপ্রেমিক কর্তব্যবোধের স্বাভাবিক পরিণতি কি কমিউনিস্ট চেতনায়? স্বাধীনতার লড়াইয়ে জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন সময়ের নেতৃত্বদায়ী ভুমিকার বিনয় চৌধুরী, প্রভাষ রায়, সরোজ মুখার্জীরা এ রাজ্যের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠিত নেতা। কংগ্রেস সোশ্যালিষ্ট পার্টির অভিজ্ঞতালব্ধ সংগ্রামী চেতনা সঙ্গে নিয়েই তৎকালীন ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ কিংবা হরকিষান সিং সুরজিতরা স্বাভাবিকভাবেই দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মহানায়কেরা, মাষ্টারদা সূর্য সেনের ছাত্র গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং-দের স্বাভাবিক গন্তব্য কমিউনিস্ট পার্টি। বিপ্লবী ভগৎ সিংদের সহকর্মী শিব বার্মা'রা কমিউনিস্ট। নেতাজীর সহকর্মী আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্মী সায়গল রা - আমাদের গর্ব।
বৃটিশ বিরোধী সংগ্রাম, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেমিক চেতানার ফল্গুধারায়
কমিউনিস্টরা। তাকে দেশপ্রেমের জ্ঞান শেখাতে চায় যারা, তাদের বুরবাক ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?
লেখাটি সম্পূর্ণ ৬ টি পর্বে প্রকাশিত হবে...
আগামী পর্ব চতুর্থ...
ক্রমশ…