করোনা অতিমারির আগেই ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের রেকর্ড ভারত ছুঁয়ে ফেলেছে। অপরিকল্পিত লকডাউনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। সি.এম.আই.ই এর দাবি অনুযায়ী এই সময় পর্বে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে বেকারি ২৩.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭.১ শতাংশ হয়েছে। শহরে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশের সীমারেখা অতিক্রম করে গেছে। ভারত সরকারের লেবার ব্যুরো যে তথ্য দিয়েছে তা রীতিমতো চমকে ওঠার মতো।
আমাদের দেশে ৫৮.৩ শতাংশ স্নাতক এবং ৬২.৪ শতাংশ স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ যুবকের কার্যত কোন কাজ নেই। নির্ভেজাল বেকার।সি.এম.আই.ই-র তথ্যনুযায়ী লকডাউনের এই কয়েক মাসে জুলাই পর্যন্ত ১ কোটি ৮৯ লক্ষ ভারতীয়, যারা নিয়মিত বেতন পান তাদের কাজ চলে গেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের চিত্রটা আরও ভয়ঙ্কর। ২০১৯-২০২০ সালে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের, ছোট ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২.৮ কোটি। এপ্রিল মাসের মধ্যে সংখ্যাটা পৌঁছেছে ৩.৭ কোটিতে।অর্থাৎ প্রায় ৯ কোটি মানুষের জীবিকা সর্বস্বান্ত। এদের মধ্যে ১.৭ কোটি মহিলা। ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবদের মধ্যে ২.৭ কোটি যুব কর্মহীন হয়েছে এই সময়কালে। ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যাটা ৩.৩ কোটি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের মর্মান্তিক পরিণতি সারা দেশ প্রত্যক্ষ করেছিল চার ঘন্টার অপরিকল্পিত লকডাউনে। সারা দেশ কয়েকদিন ধরে দেখেছিল ক্ষুধার্ত মানুষের লংমার্চ। ক্লান্তির সাথে যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে অনেকের নিস্প্রাণ দেহ রাস্তায় পড়েছিল। ক্লান্তির কাছে বশ্যতা স্বীকার করে রেল লাইনে শুয়ে থাকার অপরাধে ট্রেনের চাকায় টুকরো টুকরো হয়ে গেছিল ১৬টি দেহ। যারা যুদ্ধজয় করে ঘরে ফিরলেন তাদের সামনেও অসীম শূন্যতা। কাজ নেই। রোজগার নেই। রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল ২,৪৬,০০০ কোটি টাকা। হয়েছে মাত্র ৯০,০০০কোটি টাকা।১.৮কোটি মানুষ কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কৃষিতে ও সংকটের ছায়া দীর্ঘ হওয়ার পরিণতিতে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা বন্ধ। তলানিতে এসে ঠেকা ফসলের দাম আর মহাজনী ঋণের সাঁড়াশি আক্রমণে কৃষক বিদ্ধস্ত। অর্থনীতির এহেন বেআব্রু অবস্থার জন্য শুধু অতিমারি একমাত্র দায়ী নয়। অপরিকল্পিত লকডাউন,নোট বাতিল, পণ্য-পরিষেবা কর চাপিয়ে দেওয়া-সব মিলিয়ে এই ধ্বংসাত্মক পরিণতি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতিকে গভীর খাদ থেকে তুলে আনতে প্রয়োজন ছিল অনেক বেশি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ। হস্তক্ষেপ তো দূরস্থ। কার্যত দেশ বিক্রির ব্লুপ্রিন্ট তৈরী। ৪৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা,২৩টি বিমান বন্দর,৫১টি ট্রেনের মালিকানা ইতিমধ্যেই বাজারে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি হয়ে গেছে। জাতীয় সম্পদ রেল এখন আম্বানি-আদানির সম্পত্তি হবে। অথচ রেলের ৩ লক্ষ শূন্য পদে নিয়োগ এখন বিশ বাঁও জলে। ৫০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ফতোয়া দিয়েছে রেল মন্ত্রক। কয়লা শিল্পে লাল কার্পেট পেতে আমন্ত্রণ করা হবে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের। আত্মনির্ভরতার স্লোগান তুলে আত্মসমর্পণের রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশকে। বামপন্থীদের দাবি মেনে আয়করবৃত্তের বাইরে থাকা মানুষকে মাসে ৭৫০০ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হলে দেশ এবং দেশের মানুষ আত্মনির্ভরতার পথে হাঁটতে পারত। অর্থনীতির অধোগতিকে লাগাম পড়ানো সম্ভব হত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। বিদেশ থেকে ভাড়া করে আনা রাফাল বিমান দেখিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ কে আত্মনির্ভরতার পাঠ পড়ানো যায় না। জীবন এবং জীবিকার এই কঠিন যুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই নিউ নর্ম্যাল জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মন্দির-মসজিদ বানানোর প্রতিযোগিতায় ওরা জীবন-জীবিকার লড়াই কে হারাতে চায়। আর কাজ- মজুরি-বেতনের দাবিতে এই লড়াইকে তীব্র করার শপথে প্রতিদিন রাস্তার দখল নিয়েছি আমরা। ১৫ সেপ্টেম্বর সেই লড়াই কে আরেকবার ধারালো করার দিন। লড়াই যত তীব্র হবে তার অভিঘাতে রাজনৈতিক ময়দানে পটপরিবর্তন অনেক দ্রুত হবে। শাসকের রং বদল হবে। ফুল বদল হবে। দেশ ও রাজ্যের শাসক মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। বিপরীতে আমাদের লড়াই দেশ-দুনিয়াকে বদলানোর। এই রাজ্যটাকে বদলানোর। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা ও কাজের দাবি দিবসে রাজ্যের জেলায় জেলায় আছড়ে পরবে যৌবনের স্রোত।
ছবি :CPI(M) west bengal face book page. DYFI west bengal face book page.
শেয়ার করুন