অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এবং সামরিক-স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকেও সবচেয়ে প্রভাবশালী ও শক্তিশালী কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে গলাগলি-কোলাকুলিতে নরেন্দ্র মোদীর ভীষণ উৎসাহ। মন্দীভূত অর্থনীতির কল্যাণে ক্রমহ্রাসমান আয় থেকে দেওয়া ভারতীয় জনগণের করের টাকায় প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম দফায় বিশ্বের প্রায় সব দেশই বেড়িয়ে এসেছেন। নানা দেশ ঘুরে ঘুরে এখন তিনি বাছাই করা কয়েকটি দেশকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন।
সন্দেহের অবকাশ নেই এই বাছাই করা দেশগুলির মধ্যে সামনে আছে ট্রাম্পের আমেরিকা। অর্থসম্পদ, সমর শক্তি, অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাব ছাড়াও মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প অন্য কারণে মোদীর একটু বেশি পছন্দ। গণতন্ত্রের আধারে দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকে আরও উগ্র ও কট্টর পথে টেনে নেবার আদর্শগত অভিযানের পথে মোদীদের সঙ্গে ট্রাম্পের অনেক মিল। ট্রাম্পকে তাই মোদীদের একটু বেশি পছন্দ।
বিদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রশ্নে ট্রাম্পের কড়া অবস্থান যেমন মোদীকে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হবার উৎসাহ জুগিয়েছে তেমনি কমিউনিস্ট চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আমেরিকার জেহাদ ও তাতে ভারতকে ঘনিষ্ঠ অনুচরের সুযোগ দেবার ফলে ট্রাম্পের কাছে মোদীদের কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। মোদীর উপলব্ধি হলো বন্ধুত্ব যদি পাতাতে হয়, ঘনিষ্ঠ যদি হতে হয় তবে সবচেয়ে শক্তিশালীর সঙ্গেই হওয়া ভালো। তাই গোড়া থেকেই তিনি ভারতকে আমেরিকার লেজুড়ে পরিণত করে ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ হবার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। গত সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে ট্রাম্পকে হাজির করে আপন ‘গরিমা’ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত সফল হননি। অবশেষে ট্রাম্পেরই অনুগত ব্রাজিলের স্বঘোষিত ফ্যাসিবাদের সমর্থক রাষ্ট্রপতিকে হাজির করে হিন্দুত্ববাদী উগ্র দক্ষিণপন্থার ‘মর্যাদা’ রক্ষা করেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসে না এলেও একমাস পর ভারত সফরে আসতে রাজি হয়েছেন ট্রাম্প। আর তাকে নজরকাড়া সফরে রূপ দিতে মোদীর বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমেরিকায় ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানের অনুকরণে নিজের রাজ্যে ট্রাম্পের জন্য প্রথমে “কেমছো ট্রাম্প” নাম দিয়ে অনুষ্ঠান সাজাতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পরে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানের এলাহি আয়োজন করছেন মোদী।
ট্রাম্পের জয়ধ্বনি দিয়ে মোদীর ট্রাম্পপ্রীতি নতুন উচ্চতায় তুলতে লক্ষাধিক মানুষকে হাজির করানো হবে মোতেরা স্টেডিয়ামে। সেই মতো সাজানো হচ্ছে স্টেডিয়াম। যাতে কোনও দৈন্যের ছাপ না থাকে, এতটুকুও বোঝা না যায় প্রাচুর্যে আমেরিকার থেকে মোদী কম যান না। কিন্তু বাধ সাধছে নির্মম বাস্তবতা।
যে দেশের অর্থনীতির বহর আমেরিকার ৮ ভাগের একভাগ, মাথাপিছু আয় ৩০ ভাগের এক ভাগ সে দেশের দারিদ্র, অসচ্ছলতা, পশ্চাৎপদতা কি জোর করে আড়াল করা যায়? যেমন বেকারির পরিসংখ্যান প্রকাশ না করে ভয়াবহ বেকারিত্বকে আড়াল করা যায় না, ক্রয়ক্ষমতার পরিসংখ্যান প্রকাশ না করে মানুষের অসচ্ছলতা আড়াল করা যায় না তেমনি হাজার চেষ্টা করেও অনুন্নত ভারতকে আড়াল করা যাবে না। স্টেডিয়ামে জলুস পথের দুধারের অন্ধকারকে লুকোতে পারবে না।
রাস্তার ধারে বস্তির দারিদ্র চাপা দিতে উঁচু পাঁচিল তোলা যায়। ট্রাম্পকে দেখাতে বিমানবন্দর থেকে স্টেডিয়ামের পুরো রাস্তা আমেরিকার মতো সাজানো যায় আত্মপ্রবঞ্চনা আড়াল করা যায় না।
ট্রাম্পকে মোদীর সাফল্য দেখাতে রাস্তা-স্টেডিয়াম সাজাতে ৮০ কোটি টাকা খরচ করা যায় তাতে মানুষের কোনও উপকার হয় না। সত্য ও বাস্তবকে লুকিয়ে এগোনো যায় না। তাকে স্বীকার করে এগোবার পথে পা বাড়াতে হয়।