ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কিভাবে? চীনের পক্ষে বা বলা ভালো চীনের কমিউনিস্ট সরকার অর্থাৎ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে প্রচার চালিয়ে।
এটুকু শুনে আজকের ভারতে অপ্রাপ্তবয়স্করাও প্রথম যেটা বলবে তার নাম প্রমাণ।
সেরকম প্রমাণ তো দূর, দায়ের হওয়া অভিযোগের প্রতিলিপি অবধি (এফআইআর’র কপি) দেখানো যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে অনলাইন সংবাদ পরিবেশক সংস্থার প্রধানদের গ্রেফতার করা হয়েছে, চাকরিরত সংবাদ কর্মীদের একের পর এক হয় বাড়ি থেকে থানায় তুলে আনা হয়েছে, রেইড’র পরে পুলিশের দফতরে তালাও ঝুলিয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। এখনও কেউ জানে না কে অভিযোগ করেছে, কিসের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের হয়েছে!
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইউনেস্কো’র তরফে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে সংবাদ সংস্থাগুলির উপরে কিভাবে সরকারী চাপ প্রযোজ্য হয় তাকে ভিত্তি করেই ‘প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স’ নির্ধারিত হয়। ২০২২ সালের সূচকে ভারতের অবস্থান ছিল ১৬১, মোট দেশের সংখ্যা ১৮০। এবছর আমরা রয়েছি ১৫০-এ। এমন অবস্থানের প্রতি মোদী সরকারের উস্মা ছিল বলেই এতদিন শোনা যেত। উচ্চপদস্থ সরকারী আমলাদের দ্বারা একটি টিমও গঠন করা হয় যার লক্ষ্য ছিল দুনিয়াজোড়া অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরা। পি সাইনাথের মতো বিশিষ্ট সাংবাদিককেও সেই টিমে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা তাহলে কি করল? সাইনাথের জবানিতেই জেনে নেওয়া যাক-
‘এই পরিসংখ্যানের বিরুদ্ধে মোদী সরকার নিজেদের জবাব প্রস্তুত করতে জরুরী ভিত্তিতে একটি কমিটি তৈরি করেছিল। ঠিক জানিনা কোন ভাবনা থেকে তারা আমাকেও সেই কমিটিতে রেখেছিলেন। সেই কমিটির গুটিকয়েক সভায় আমি উপস্থিত হই। দেখা গেল, আমি এবং রজত শর্মা ব্যতীত উপস্থিত সকলেই উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা। এদের মনোভাব সম্পর্কে কিছু না বললেও চলে। অনেক জরুরী কথাবার্তার পরে সভায় আমার কিছু বলার সুযোগ হয়, প্রথমে আলোচনা করে পরে লিখিত আকারে কয়েক দফা প্রস্তাব জমা দিই। কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় আমার পেশ করা প্রস্তাবগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ঠিক পরের সভাতেই সে নিয়ে কোন কথাই হয় না। আগামীদিনে আমার প্রস্তাবগুলি সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা হবে বলে দেওয়া হয়। রজত শর্মা প্রথম দিন থেকেই কোনো কথা বলেন নি, কয়েক দিন পরেই ‘কাজের চাপে’ ব্যস্ত থাকায় কমিটি থেকে অব্যাহতি চেয়ে নেন। সেই বিস্তৃত আলোচনা আজও হয়নি, এমনকি ঐ সরকারি কমিটির অফিসিয়াল ইমেইল আই ডি’টুকুও আর কাজ করছে না বলে শুনেছি। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গণমাধ্যম ও তার স্বাধীনতা প্রসঙ্গে এটাই আজকের ভারত।’
‘সংগ্রামী হাতিয়ার’ পত্রিকার ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে ভাষণ
ডাইনি খোঁজের শুরু কিভাবে?
ইংরেজীতে ‘উইচ হান্টিং’ বলে একটা কথা হয়। রাস্ত্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারে যাবতীয় ঐতিহাসিক ফস্কা গেরো’কে চিহ্নিত করতেই এ শব্দের প্রয়োগ করা হয়। বৈদেশিক শাসক, নিপীড়কদের সাথে এদেশের গৈরিক বাহিনীর ‘সুসম্পর্ক’ আজকের বিষয় না, মোদীর শাসনে সেই ঐতিহ্যই অভূতপূর্ব পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। চীনের পক্ষে প্রচার চালানোর এদেশের কারোর মাথায় আসেনি, ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ কাগজে অগাস্ট মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন দাবী করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য “…from a think tank in Massachusetts to an event space in Manhattan, from a political party in South Africa to news organizations in India and Brazil, the Times tracked hundreds of millions of dollars to groups linked to Singham that mix progressive advocacy with Chinese government talking points.” কে এই সিংঘম?
নেভিল রয় সিংঘম আমেরিকান। থটওয়ার্কস নামে একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারও ছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস নিজেদের প্রতিবেদনে অভিযোগের স্বপক্ষে সেই সংস্থায় কর্মরত ছিলেন এমন একজন কর্মীর বয়ানেরও উল্লেখ করেছে। সেই ব্যক্তি জানিয়েছেন চাকরিরত থাকাকালীন তিনি সিংঘম’কে কয়েকবার চে গ্যেভারা সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছিলেন! অসাধারণ প্রমাণ! ব্যবসায়িক সংস্থার কর্ণধার বিপ্লবী চে গ্যেভারা সম্পর্কে কথাবার্তা বললে তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে হবে এমন কথা আমেরিকায় নতুন না। কিন্তু এহেন অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকরা একেবারে সাংবাদিকদের শয়নকক্ষে হানা দেবেন এবং কোনোরকম আইনানুগ পদ্ধতি-প্রকরণ (এফআইআর’র কপি, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট, সিজার লিস্ট ইত্যাদি) না মেনেই গ্রেফতার ইব্ধি করা হবে এসব স্বাধীন দেশে একবারই হয়েছিল। আমরা সে সময়কে জরুরী অবস্থা বলে জানি। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ঐ পর্যায় এক কালো দাগ বৈ আর কিছু না। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা আস্ফালনের হিম্মৎটুকু দেখাতেন, মোদীর শাসন আরেকটু বেশি চালাক- তারা অমন সৌজন্য এড়িয়ে চলতে চান। সরকারের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলেন, সমালোচনা করেন- সকলেই শাসকের চোখে দেশবিরোধী, চক্রান্তকারী।
আরও কিছু কথা জরুরী। তার জন্য ইংরেজি সংবাদপত্রের ভাষার দিকে নজর দিতে হবে। উপরে উল্লেখ করা প্রতিবেদনের শেষ অংশটি দেখা যাক। চীনের প্রসঙ্গ কিভাবে জড়িত তার প্রমাণ দিতে তারা talking points’র উল্লেখ করেছে। এর মানে কি? ধরুন ব্যক্তি ‘ক’ ও ব্যক্তি ‘খ’ পরস্পরের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এমন সময় দুনিয়ার কোনও প্রান্তে ভূমিকম্প ঘটল। ‘খ’ বললেন ‘আটকে পড়া মানুষের সাহায্যে সকলের এগিয়ে আসা উচিত’, এবং এর পরে দেখা গেল দুর্গতদের উদ্ধারকল্পে গঠিত তহবিলে ‘ক’ কিছু সাহায্য পাঠিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের যুক্তি অনুযায়ী ‘ক’ ও ‘খ’-দের গালে গাল ঘষা বন্ধু বলে মেনে নিতে হবে। টকিং পয়েন্টস মিলে যাচ্ছে বলে যদি নিউস ক্লিক’কে চীনের প্রচার যন্ত্র বলে মেনে নিতে হয় তবে কিছুদিন আগে ঐ নিউ ইয়র্ক টাইমস’ই যখন হিন্ডেনবুর্গের প্রতিবেদন সম্পর্কে আলোচনা করেছিল তখন কি তারাও ভারত বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়েছিল? বিজেপি’র মুখপাত্রেরা সেরকমই দাবী করেছিলেন- হিন্ডেনবুর্গ বৈদেশিক সংস্থা, তাদের প্রতিবেদনের উপরে ভরসা করে দেশীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে সন্দেহ করা উচিত না, সেবি’র তদন্ত চেপেচুপে দেওয়ার আগে অবধি এই তো ছিল তাদের যুক্তি। তবে সেই একই যুক্তি এবারে খাটছে না কেন? কারণ খুবই সহজ, আদানি গোষ্ঠী ও মোদী সরকার একে অন্যের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত, নিউস ক্লিক দেশীয় সংবাদমাধ্যমের জগতে বিরুদ্ধস্বর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। আজ সংসদে আলোচনার সময় সরকারের পক্ষে সাফাই পেশ করতে গিয়ে নিশিকান্ত দুবে, অনুরাগ ঠাকুর’রা ইডি’র পেশ করা তথ্যের চাইতেও বেশি কিছু (পড়ুন আকাশকুসম) দাবী করে বসেছেন। বিহার রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত জাতি ভিত্তিক আদম-সুমারির প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় সরকার (যারা ক্ষমতায় আসা থেকে আদমশুমারির কাজই বন্ধ রেখেছে) ও বিজেপি রীতিমত অস্বস্তিতে ছিল, তাই দরকার ছিল নজর ঘোরানোর। অতএব চীন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ। এদের কেউ মনে করায় না যেসকল দেশ থেকে ভারতে পণ্য (জ্বালানির তেল ব্যতীত) আমদানি চলে তার মধ্যে চীনই অন্যতম শীর্ষে রয়েছে!
কেন নিউস ক্লিক?
ভারতে মোদী সরকারের গুণগান করতে সংবাদমাধ্যম কম নেই। মোদী ও তার ক্যারিশ্মা সংকীর্তনের ঠেলায় মূলধারার সংবাদমাধ্যম আজ ‘গোদি মিডিয়া’ বলে পরিচিত হয়েছে। পেইড নিউজ, শাসকের প্রতি নির্লজ্জের ন্যায় পক্ষপাতদুষ্ট ভজনা এসবের পরিসর পেরিয়ে এসব মিডিয়ার নতুন কীর্তি যারাই সরকারের সমালোচনা করবেন তাদের টিভির পর্দায় দেশবিরোধী বলে তুলে ধরা। অনেকেরই মনে থাকবে নোট বাতিলের সময় এমনই এক মিডিয়ার সঞ্চালক দু হাজার টাকার নোটে ‘মাইক্রো চিপ’ থাকার ঘোষণা অবধি করেছিলেন।
সম্প্রতি গোদি মিডিয়ার আওতার বাইরে থাকা এনডিটিভি-কেও আদানি গোষ্ঠী কিনে নিয়েছে। এর জোরে টিভির পর্দায় বিজেপি ও মোদী সরকারের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব অনেকটাই বেড়েছে। তবুও নিউস ক্লিক- কারণ টিভির পর্দার বাইরেও আধুনিক মিডিয়ার বিরাট অংশ সক্রিয়, এরা সেখানেও নিরঙ্কুশ হতে চাইছেন। নিউস ক্লিক মূলত ওয়েবসাইট ভিত্তিক সংবাদসংস্থা, টেকনিক্যাল পরিভাষায় ‘পোর্টাল’, লেখা প্রতিবেদনের পাশাপাশি ইউটিউবের সাহায্যে বিভিন্ন আলোচনা, প্রতিবেদনের ভিডিও বার্তাও এরা প্রচার করে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাদের পরিচিতি অনেকটাই।
এখানেই আরএসএস-বিজেপি’র আতংক। মোবাইলের মিসড কলে পার্টির সদস্যপদ ফেরী করা বিজেপি জানে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বাইরে সক্রিয় বিকল্প মাধ্যমগুলি এবং সোশ্যাল মিডিয়াও আজকের পৃথিবীতে জনমত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সরকারী সহায়তা (পড়ুন নির্লজ্জ ভজনায় প্রাপ্ত প্রসাদ) এমনকি ‘বিগ হাউজ’ বলে চিহ্নিত ব্যবসায়িক–কর্পোরেট সংস্থাগুলির তরফে বিজ্ঞাপন ছাড়াই একটি সংস্থা নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে, ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে- এসব কর্পোরেট পুঁজি ও সাম্প্রদায়িক শক্তি উভয়ের জন্যই বিশেষ মাথাব্যথার কারণ। এই প্রথম নিউস ক্লিক’কে নিশানা করা হয়েছে এমন না। ২০২১ সালে ইডি’র অফিসারেরা নিউস ক্লিকের কর্ণধার প্রবীর পুরকায়স্থের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান, যদিও ফলাফল অজানা রয়ে গেছে। এবার তার সাথে ঐ সংস্থার আরেক প্রমুখ অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে ইউএপিএ ধারায় মামলা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশজন সাংবাদিক ও লেখকের বাড়িতে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে দিল্লী পুলিশের স্পেশাল সেল। বিশিষ্ট সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা’কেও দিনভর জেরা করা হয়েছে। দিল্লী দাঙ্গা ও মণিপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি কি লিখেছেন, কেন লিখেছেন এসবই ছিল জেরার মূল প্রশ্ন। পাঠকদের ভুলে যাওয়া উচিত না, আদানি গোষ্ঠীর বেআইনি সম্পত্তি বিষয়ক প্রতিবেদন সম্প্রচার করার অপরাধে এর আগেও পরঞ্জয়’কে পুলিশি হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না, চীন না- আসলে চিহ্নিত হওয়ার কারণেই এমন ঘটেছে।
নিউস ক্লিক ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে তাদের আয় ও ব্যয়ের সম্পূর্ণ তথ্য আইনানুগ পদ্ধতি মেনেই চলে, সেইসব তথ্য ২০২১ সালে তল্লাশির সময় পুলিশকে যথাযথভাবে দেওয়াও হয়েছে। তারা নেভিল রয় সিংঘমের থেকে কোনরকম অর্থ নেয়নি। তারা এও জানিয়েছে লিখিত ও ভিডিও আকারে তাদের সমস্ত প্রতিবেদনই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, যে কেউ চাইলেই সেগুলি দেখতে পারেন।
সরকারের বিরুদ্ধাচরনে বর্ষীয়ান প্রবীর পুরকায়স্থ এই প্রথম গ্রেফতার হলেন এমন না, এর আগেও ঘোষিত জরুরী অবস্থা’র সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখনকার সময়ের সাথে আজকের অবস্থার ফারাক একটাই, সেবার পুলিশের অভিযোগটুকু জানা গেছিল, এখন সেটুকু জানারও সুযোগ নেই।
টেবিলের চার পা ও দেশের শাসন
প্রত্যক্ষ বিচারবাদ আকর্ষণীয় দর্শন সন্দেহ নেই। তবে তাতে ভেসে গেলে পচা শামুকেই পা কাটে। মোদী সরকারের সেটাই ঘটছে। নিউস ক্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে তাদের প্রকাশিত একটি ভিডিওর কথা উল্লিখিত হয়েছে, সেই ভিডিওয় বলা হয়েছে দুনিয়ার সর্বহারা আন্দোলন চীনের বিপ্লব থেকে অনুপ্রেরণা পায়! একেবারে হাতে গরম প্রমাণের মত করে বলা হয়েছে – এই তো, চীনের পক্ষে প্রচার। মুশকিল হল ঐ বার্তায় যদি চীনের প্রচার হচ্ছে বলে মেনে নিতে হয় তাহলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস, অর্থনীতি, ও সমাজবিদ্যা বিষয়ক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমটাই বোধহয় সবার আগে দেশবিরোধী বলে চিহ্নিত হতে হয়। সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে চীনের মুক্তিকামী জনসাধারণের লড়াই শুধু সর্বহারা কেন অন্যদের জন্যেও জানার বিষয়। সমাজতন্ত্রের ঘোরতর বিরোধী পণ্ডিত হিসাবে চিহ্নিত হতে গেলেও ব্যপারটা আগে জানতে হয়, না জেনে বিরোধীতা করা যায় না।
ঠিক কি অভিযোগ সেটুকু জানার অধিকার এদেশে অভিযুক্ত এমনকি অপরাধীদেরও সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। আর সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন যে বৈধ অভিযোগ না, তারা জন্য আইনানুগ বন্দোবস্ত রয়েছে একথাও জানা। গোদি মিডিয়ার অন্যতম প্রখ্যাত সঞ্চালক সন্ধ্যা হলেই নিজেদের চ্যানেলে আলোচকদের ডেকে আন্তেন, যদিও কাউকেই কথা বলতে দিতেন না। নিজেই গলার শিরা ফুলিয়ে ‘দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো’ বলে কান ঝালাপালা করে দিতেন। গতকাল নিউস ক্লিকের বিরুদ্ধে তদন্তে দিল্লী পুলিশের স্পেশাল সেল যা করেছে তাতে প্রথম প্রশ্নটাই অধরা রয়ে যাচ্ছে। তথ্য প্রমাণ কি আছে, কি অভিযোগ রয়েছে, কে অভিযোগ করেছেন? সত্যিই ‘দ্য নেশন নিডস টু নো’।
ঐ ভিডিওর জন্য যদি নিউস ক্লিকের মতো সংস্থাকে বিপদ বলে চিহ্নিত করতে হয় তাহলে তো ঘরে থাকা চেয়ার, টেবিল’কে ঘোড়া বলে মেনে নিতে হবে। ঘোড়ার চার পা, টেবিলেরও চার পা। ঘোড়া দৌড়ে চলে, তবে কি চার পা রয়েছে বলে টেবিলও দৌড়াবে?