Site icon CPI(M)

The Context Of 26th WB State Conference: Surjya Kanta Mishra

26CPIMWB SKM

২৬তম রাজ্য সম্মেলনের প্রেক্ষিত

রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র ২৬তম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন হতে চলেছে আগামী ১৫-১৭ মার্চ, কলকাতায়।

এই সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিত নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীজুড়ে একটা বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ১৫০ বছরের সমস্ত নজির ভেঙে গভীরতর হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের মহাসচিব নিজেই সেকথা জানিয়েছেন। দীর্ঘস্থায়ী মহামন্দার স্তরকেও এবারের সংকট অতিক্রম করেছে। এহেন সংকটের মধ্যেই করোনা মহামারীর উদ্ভব ঘটেছে, যা সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এক শতাব্দী আগে দেখা দিয়েছিল এমনই আরেক মহামারী। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, বিশ শতকের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব পুঁজিবাদের সংকট থেকেই জন্ম নিয়েছিল ফ্যাসিবাদ।

২০০৮ থেকে শুরু হওয়া এই সময়কালের দীর্ঘতম সংকটে পৃথিবীর নানা প্রান্তে দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলির উত্থান ঘটছে। বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় নির্দিষ্ট বৈশিষ্টগুলিকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।

আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ও তার মোকাবিলায় রাজনৈতিক রণকৌশলগত লাইন নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির খসড়া প্রতিবেদন ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। পার্টির প্রত্যেক সদস্য, ইউনিট, এমনকি পার্টির বাইরে অন্যরাও এই প্রতিবেদনে তাঁদের মতামত, সংযোজনী ও সংশোধনী পাঠাচ্ছেন। সেইসব মতামত নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পার্টি কংগ্রেসে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে এবং আগামী লড়াইয়ের পথ চূড়ান্ত করা হবে। রণকৌশল নির্ধারণ এবং পার্টি পরিচালনায় এহেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ঐতিহ্য অন্য কোনো পার্টিতে নেই।

উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে রাজ্য পরিস্থিতির বিশ্লেষণ এবং বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী সমস্ত শক্তিকে ব্যাপকতম সংগ্রামের মঞ্চে সমবেত করার লক্ষ্যে পার্টির নিজস্ব শক্তির বৃদ্ধি করা, বামফ্রন্টকে আরও সংহত করা এবং তার বাইরে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির সমাবেশ ঘটানোর কাজে আমাদের সাফল্য ও দুর্বলতাসমূহকে চিহ্নিত করার বিষয়ে আলোচনা হবে ২৬তম রাজ্য সম্মেলনে।

আমাদের স্থির করতে হবে ভবিষ্যত আন্দোলন সংগ্রামের রূপরেখা। সেগুলিকে তীব্রতর করা এবং তার মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করাই মূল লক্ষ্য। পার্টিকে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। পার্টি সংগঠন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য প্লেনামের নির্দেশ সমূহের পর্যালোচনা করেই আজকের দিনে আমাদের সাফল্য, সমস্যা ও দুর্বলতাকে চিহ্নিত করতে হবে। পার্টির গণভিত্তির ক্ষয় রোধ করে তাকে আরও প্রসারিত করতে হবে।

২০১৯ সালে লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বিপর্যয়কর ফলাফলের পরেও মহামারী মোকাবিলায় মানুষের পাশে থাকার কর্মসূচি একদিনের জন্যেও থেমে থাকেনি। সাম্প্রতিক উপনির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপিকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে আনার কাজ কিছুটা সফল হলেও মোটেই যথেষ্ট নয়। শ্রেণি ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের নির্ধারক পরিবর্তনের লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের বহুদূর এগিয়ে যেতে হবে।

শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, বস্তিবাসীদের মধ্যে থেকে পার্টিতে অন্তর্ভুক্তি প্রাধান্য পাবে। নিষ্ক্রিয়তা-মুক্ত গণ বিপ্লবী পার্টি গড়ে তুলতে গেলে শ্রেণি ও গণসংগ্রামের ময়দান থেকে জঙ্গী, তরুণ কমরেডদের নিয়ে আসতে হবে পার্টির ভিতরে। ৩১-বছরের কম বয়সীদের পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত করার কাজে গুরুত্ব দিতে হবে, পার্টির ভিতরে তাঁদের অংশকে ২০ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সঙ্গে সমস্ত রকমের সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে একীভূত করতে পার্টিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতেই হবে— পার্টি সদস্যের অন্তত ২৫ শতাংশে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসী, তফসিলী ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষসহ, ধর্মীয় এবং ভাষাগত সংখ্যালঘু মানুষদের থেকে পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি জনসংখ্যায় তাঁদের অনুপাতের সঙ্গে সমানুপাতে হতে হবে।

মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংগ্রাম ও সাংগঠনিক কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নে কমরেডদের সক্ষম করে তুলতে পার্টি স্কুল ছাড়াও অসংখ্য পাঠচক্র গড়ে তুলতে হবে। সমষ্টিগত আলোচনার মধ্যে দিয়ে কমরেডরা একইসঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ভূমিকা পালন করবেন। পার্টিতে বিভিন্ন স্তরে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত বয়সসীমার কারণে যারা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না তাঁদের নির্দিষ্ট কাজে যুক্ত করতে হবে। এমন কাজ যাতে তাঁদের আগ্রহ, কর্মনৈপুণ্য এবং সক্ষমতা থাকবে। পার্টিতে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যাতে কমিটি সদস্যেরা সময় দিতে পারেন না। গণউদ্যোগের উপরে ভিত্তি করে আন্দোলন-সংগ্রাম ও দৈনন্দিন সাংগঠনিক কাজ ছাড়াও বাম বিকল্পের জন্য সংগ্রামকে যতখানি পারা যায় এলাকায় এলাকায় বাস্তবে রূপায়িত করতে হবে। রেড ভলান্টিয়াররা যা করেছেন সেটা একটা উদাহরণ, এই কাজকে আরও প্রসারিত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ— জীবন জীবিকার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজকেও আন্দোলনের সাথে যুক্ত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, মানুষের সৃজনশীল ক্ষমতা অফুরন্ত। তাঁদের উদ্যোগই আমাদের প্রধান সম্পদ। তাঁদের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষাই আমাদের জ্ঞানলাভের প্রধান উৎস।

শেষ বিচারে মানুষই ইতিহাস রচনা করেন। মানুষের উপরে নির্ভর করেই এগিয়ে যেতে হবে।

শেয়ার করুন