Site icon CPI(M)

Siva-Yakub’s Are To Remove Identities

Family members of Rahul Solanki, who was killed during clashes between Hindu mobs and Muslims protesting a contentious new citizenship law, weep outside a mortuary in New Delhi, India, Wednesday, Feb. 26, 2020. At least 20 people were killed in three days of clashes in New Delhi, with the death toll expected to rise as hospitals were overflowed with dozens of injured people, authorities said Wednesday. The clashes between Hindu mobs and Muslims protesting a contentious new citizenship law that fast-tracks naturalization for foreign-born religious minorities of all major faiths in South Asia except Islam escalated Tuesday. (AP Photo/Altaf Qadri)

নয়াদিল্লি, ৩ মার্চ— নামেই বাড়ছে বিপদ। মানুষ হোক বা দোকান, কিংবা রাস্তাঘাট নামেই পরিচিতি। কিন্তু সেই নামই যখন বিপদ ডেকে আনে, তখন তা মুছে ফেলা ছাড়া আর কোনও উপায় বেঁচে থাকে না। আর সেটাই এখন দিল্লির দাঙ্গায় বিপর্যস্ত এলাকাগুলির ‘ঘর ঘর কি কাহানি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ বাড়ির সামনের নেমপ্লেট লুকিয়ে ফেলছেন, কেউ দোকানের সাইনবোর্ড খুলে নিচ্ছেন, পুড়িয়ে দিচ্ছেন, প্রাণের দায়ে। কেউ আবার দোকানের গায়ে আঁকা ‘ওম’ চিহ্নটাও ঘষে ঘষে তুলে দিচ্ছেন। হিন্দু-মুসলিম নন, ওঁরা প্রত্যেকে মানুষ। হিংসায় দীর্ণ উত্তর পশ্চিম দিল্লির একদল মানুষ ঘর ছাড়ার আগে নিজেদের পরিচয়ের চিহ্নই রাখতে চাননি।

একগুচ্ছ সরু সরু অন্ধকার গলি। ঘিঞ্জি বাড়িঘর। প্রায় সবকটিই ফাঁকা। বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে হিন্দু পরিবারগুলিও এলাকা ছেড়েছেন। শিব বিহারের বাসিন্দা বছর ৩২’র দীপ রাজোরা বললেন, ‘‘যখন দাঙ্গা শুরু হলো, আমি ভয়ে পালিয়ে যাই গাজিয়াবাদে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু ওইদিনই আবার ফিরে আসি। বাবার নামে নেমপ্লেট ছিল বাড়ির বাইরে, ওটা খুলে নিতে।’’ দীপকদের গলির একেবারে কোণার দিকে সব বাড়িই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কোনোক্রমে বাড়িটা বাঁচাতে নেমপ্লেট খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন দীপক। ‘‘আমাদের এলাকার অনেকেই একই পথ বেছে নিয়েছেন, বললেন দীপক। 

শিববিহারে কাপড়ের দোকান ইয়াকুব মালিকের। ২৪ তারিখ রাতটা ভয়ে ভয়ে কাটিয়ে পরের দিনই ‘মালিক ক্লোথ হাউজ’ লেখা হোর্ডিংটা ভেঙে ফেলেন নিজে হাতেই। ইয়াকুবের পাশের বাড়িতেই থাকতেন ওঁর শিবা ভাই। তাঁর ওষুধের দোকান। ‘‘শিবা ভাইয়ের দোকানের কাচে আঁকা ছিল ওম চিহ্ন। ঘষে ঘষে তুলে দেন ওটা। আমরা খুব বেশি আক্রমণের মধ্যে পড়িনি’’, বললেন ইয়াকুব। বিভাজনের দাঙ্গা থেকে এভাবেই একসঙ্গে বাঁচার রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন ইয়াকুব, শিবা। 

শাহ-এ-আলমের কাচের জিনিসের দোকানে কাজ করেন ইউনুস। ভজনপুরার এই দোকানের বাইরে বড় হোর্ডিং ছিল, ‘‘ইরফান ক্রকারি অ্যান্ড প্লাস্টিক হাউজ’। নিজের রুজি-রুটির মাধ্যম সেই দোকানের পরিচিতিও লুকিয়ে ফেলেন আলম। ইউনুসকে সঙ্গে নিয়ে দোকানের মেন সুইচ বন্ধ করে সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে হোর্ডিং খুলে দোকানের ভিতরেই আড়াল করে রাখেন তাঁরা। মঙ্গলবার আলম বলেন, ‘‘আগের থেকে পরিস্থিতি একটু শান্ত হয়েছে। কিন্তু কেউই দোকান বেশিক্ষণ খোলা রাখছেন না।’’ উত্তর-পূর্ব দিল্লির খাস খাজুরি গলির বিএসএফ জওয়ান মহম্মদ অনিশের বাড়িও রক্ষা পায়নি দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে। নেমপ্লেট দেখেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়িটি।  

মৌজপুর, মুস্তাফাবাদ— সব জায়গাতেই তাই পরিচিতি গোপন করে প্রাণে বাঁচতে চাইছেন সাধারণ মানুষ। নেমপ্লেট, সাইনবোর্ড খুলে নিলে মাথা গোঁজার নিশ্চিন্ত ঠাঁইটি রক্ষা করা সম্ভব হবে বলেই মনে করেছেন তাঁরা। হিংসার কবলিত এলাকা থেকে সামান্য দূরে বুরারি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানালেন, ‘‘এখানে মুসলিমদের দোকান বলতে একটাই। ইকবাল ফার্নিচার হাউজ। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে মালিক সাইনবোর্ড নামিয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে।’’ স্বাভাবিকভাবেই হিংসাদীর্ণ এলাকা, সংলগ্ন এলাকাগুলিতে আর্থিক ক্ষতি চরমে পৌঁছেছে। কিছু সবজির দোকান খোলা থাকলেও বিকিকিনি হচ্ছে না বললেই চলে। স্থানীয় মানুষজনই ঘরছাড়া। কিনবে কে? মৌজপুরের আবদুল আজিজের গলায় ঝরে পড়ে ক্ষোভ, ‘‘এটা একটা পরিকল্পিত হামলা। বাইরের লোক এসে গোটা এলাকা তছনছ করে দিয়েছে। ওরা জানত কোন দোকানটা কার।’’ 

চারদিকে নিরাপত্তা বাহিনী। বন্দুকের নলের সামনে দিয়েই পরীক্ষা দিতে ঢুকতে হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের। সিবিএসই সোমবারই জানায়, ৯৮ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে। কী মানসিক চাপ নিয়ে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়েছে ছেলেমেয়েরা, প্রকাশ পেল তাদের কথাতেই। জাফরাবাদের জাকির হুসেন মেমোরিয়াল স্কুলের ছাত্র বলল, ‘‘সারাজীবন মনে থাকবে, আমি যখন দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছি তখন দিল্লিতে কী অবস্থা। পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য যে ইতিহাস আমায় জানতে হয়েছে পড়তে হয়েছে তা এখন আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক। দাঙ্গা বা হিংসার নয়, আমি চাই, আগামী দিনে দিল্লির ইতিহাসে, দেশের ইতিহাসের পাতায় যেন ভালো কিছু লেখা থাকে।’’ নিউ জাফরাবাদের ছাত্রী সীমা যাদবের কথায়, ‘‘আমি, আমার বন্ধুরা কেউই মন দিতে পারছি পড়াশোনায়, পরীক্ষায়। যখন আমরা বড় হব তখন যেন এক নিরাপদ দিল্লি দেখতে পাই।’’ ছেলেমেয়েদের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন মা-বাবা। ‘‘আমরাই ভয়ে কাটাতে পারছি না, ওদের আর কী মনের জোর দেব’’, বললেন এক অভিভাবক। 

শেয়ার করুন