Site icon CPI(M)

Our Constitution: Carnel Values Of The Freedom Struggle

রামচন্দ্র ডোম

ডঃ বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকর প্রনীত আমাদের দেশের সংবিধান -র পঁচাত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সারাদেশে নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে সরকারী ও অসরকারী উদ্যোগে। সম্প্রতি ভারতীয় সংসদেও এই ঐতিহাসিক মূহুর্তকে স্মরণ করে বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সরকার ও বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করেছেন। আলোচনার প্রেক্ষিতে একদিকে যেমন দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের সংবিধানের বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা অনেক সদস্যই উল্লেখ করেছেন, তেমনি  গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক চরিত্রের এই সংবিধানের অন্যতম স্রষ্টা ডঃ বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের নামও বিভিন্ন বক্তার বক্তৃতায় স্বাভাবিক নিয়মেই বার বার উল্লেখিত হয়েছে। 

এই আলোচনায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ্ তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই অযাচিতভাবে সংবিধানের জনক ডঃ আম্বেদকরের বিরুদ্ধে অত্যন্ত হীন অপমাননাকর তীর্যক মন্তব্য করেছেন যা আলোচনার তাল কেটেছে এবং সংসদের ভিতরে ও বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে সংগত ভাবেই। যদিও এই সর্বব্যাপী নিন্দা সমালোচনার মুখে চাপে পড়ে তিনি কিছুটা ঢোক গিলতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকই কিন্তু, কোন অনুতাপ বা দুঃখ প্রকাশ করেন নি।  যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ এটা বোঝেন যে শ্রী অমিত শাহ্ র আম্বেদকরের বিরুদ্ধে করা তীর্যক মন্তব্য নেহাত কোন আল টপকানো মন্তব্য নয়।  আর,এস,এস -র একজন একনিষ্ঠ সেবক ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের অগ্রনী প্রচারক হিসাবেই এ ছিল তার জাত ও সম্প্রদায় বিদ্বেষী মানসিকতার প্রতিফলন । সংঘ পরিবার / বি,জে, পি র  আম্বেদকর প্রনীত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ও সামাজিক ন্যায় ভাবনার চির বিরোধী অবস্থানের নির্লজ্জ প্রতিফলন।                             

ফিরে দেখা- স্বাধীন ভারতে স্বদেশী সরকার পরিচালনার জন্য সংবিধান রচনার প্রয়োজনে ১৯৪৬সালেই সংবিধান পরিষদ বা, (Constituent Assembly) গঠন করা হয়। এই সংবিধান পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সামাজিক ন্যায় আন্দোলনের নেতৃ ডঃ বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকর। তিন বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর ১৯৪৯ র ২৬শে নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৯৫০র ২৬শে জানুয়ারী থেকে ভারতীয় সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা হয়। এত বিশাল একদেশ পরিচালনার জন্য এই সংবিধান, নানান বৈচিত্র, বহু ধর্ম ভাষা সংস্কৃতির বৈচিত্র্যে ভরা। এই বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে ধারন করার লক্ষ্যে এই বহুত্ববাদী আদর্শের ভিত্তিতে রচিত আমাদের সংবিধান বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থায় এক শক্তিশালী ও আপেক্ষিক প্রগতিশীল হাতিয়ার যা বর্তমান সংঘ পরিবার/বি,জে,পি শাসকের দ্বারা বারবার আক্রান্ত হচ্ছে।

হিন্দুত্ব রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম নিরপেক্ষতা, নাগরিকত্ব, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, জম্মু -কাশ্মীর সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিশেষ সুবিধা ও অধিকার, অভিন্ন দেওয়ানী বিধি, ধর্ম,জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে সমানাধিকার প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়ে সংবিধান সভায় বিশদভাবে আলোচনা হয়। এই সংবিধানকে  আধার করে ২২টি অংশ এবং ৩৯৫ টি ধারা মূলগত ভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রয়োজনে/অপ্রয়োজনে স্বাধীনোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন সরকারের দ্বারা ১০৬ বার সংবিধান   সংশোধিত হয়েছে সংসদে।

বর্তমান আর,এস, এস পৃষ্ঠপোষিত বি,জে,পি তথা এন, ডি, এ জোট সরকার শ্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান মন্ত্রীত্বে তথাকথিত হিন্দুত্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে ধ্বংস করে ‘ মনুসংহিতা ‘ কে সংবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পিত অভিযান চালাচ্ছে।

চলতি ভারতীয় সংবিধানের মূল তিনটি স্তম্ভই আক্রান্তঃ

আইন সভা( Legislatures),  প্রশাসন (Executives), ও বিচার বিভাগ(Judiciary)  – সংবিধানের এই তিনটি মূল স্তম্ভই আজ মোদী সরকারের কুক্ষিগত হয়েছে । ফলতঃ এই প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষমতা খর্বিত হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এছাড়াও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিও পরিকল্পিতভাবে শাসকের কুক্ষিগত হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন শিক্ষা -সংস্কৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের প্রচার প্রসারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

মোদী সরকারের কর্পোরেট-সাম্প্রদায়ীক হিন্দুত্বের সহযোগ দেশের ঐক্য সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিপন্ন করে তুলেছে।

সংবিধান স্বীকৃত মানুষের নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা তথা মুক্তচিন্তা আজ আক্রান্ত। আক্রান্ত মানুষের রুজি রুটির অধিকার।

তাই, এইরকম একটি প্রেক্ষিতে সংঘ পরিবার ও বি,জে,পি  র নেতা মন্ত্রীদের যখন তখন ডঃ আম্বেদকরের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য শুধুমাত্র ব্যক্তি আম্বেদকরকে নয়, আসলে তা তাঁর প্রনীত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক এই সংবিধানকেই নস্যাৎ করার নির্লজ্জ প্রয়াস।

৭৬তম সাধারণ তন্ত্র দিবসের গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তে তাই প্রতিটি গনতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক ভারতীয় নাগরিকদের শপথ  হোক  ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ – প্রতিরোধ গড়ে তুলেই আমাদের সংবিধানকে আমরা রক্ষা করবো।       

শেয়ার করুন