অঞ্জন বসু
আজ অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী কল্পনা দত্তের ১১২ তম জন্মদিন, কল্পনা দত্ত মাষ্টারদা সূর্য সেনের অন্যতম সহকর্মী ছিলেন, প্রথমে মাষ্টারদা সূর্য সেনের দলে নারী অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিতে কিছু নিষেধাজ্ঞা ছিলো ,কিন্তু বাংলার নারীদের সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ দেখে মাষ্টারদা সূর্য সেন এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন | তাঁর বিপ্লবী ভূমিকা দেখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অগ্নিকন্যা আখ্যা দিয়েছিলেন |
কল্পনা দত্তের জন্ম হয় ১৯১৩ সালের ২৭ শে জুলাই চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে ,বাবা ছিলেন সরকারী কর্মচারী বিনোদবিহারী দত্তগুপ্ত ,মা ছিলেন শোভনাবালা এবং পিতামহ ছিলেন রায়বাহাদুর দূর্গাদাস |
কল্পনা দত্ত ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে কলকাতায় আসেন এবং বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন ,বেথুন কলেজে পড়াকালীন তিনি নানা বৈপ্লবিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন ,এবং শহিদ ক্ষুদিরাম ও কানাইলাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজে “ছাত্রী সংঘে ” যোগদান করেন |
১৯৩০۔۔ সালে তিনি আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাষ্টারদা সূর্য সেনের “ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির” চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন , এবং ১৯৩০ সালের ১৮ ই এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের পরে অনন্ত সিংহ,অম্বিকা চক্রবর্তী,গণেশ ঘোষ সহ একাধিক বিপ্লবী নেতা গ্রেপ্তার হয়ে যান |
কল্পনা দত্ত এই সময় আবার কলকাতায় আসেন এবং গোপনে কিছু গান কটন তৈরি করেন ,এছাড়াও নেতাদের মুক্তির জন্য বিস্ফোরক নিয়ে আসেন,পরিকল্পনা ছিলো যে বিস্ফোরকের সাহায্যে জেল ভেঙ্গে তাদের মুক্ত করা হবে ,কিন্তু এই পরিকল্পনা সরকারের নজরে এলে আপাতত তার বৈপ্লবিক কার্যকলাপে কিছু সীমাবদ্ধতা আসে |
এরপরে মাষ্টারদা সূর্য সেন ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করেন,আক্রমণের ঠিক এক সপ্তাহ আগে পুরুষ বেশে সমীক্ষা করতে আসেন ,কিন্তু ধরা পড়ে গেলে জেলে বসেই কল্পনা দত্ত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ ও তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর আত্মবলিদানের কাহিনী শোনেন |
১৯৩৩ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি গৈরালা গ্রামে ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়ীতে আত্মগোপন থাকাকালীন পুলিশ হঠাৎ আক্রমণ চালায় ,কল্পনা দত্ত সেখান থেকে কোনোওরকমে পালাতে সক্ষম হলেও মাষ্টারদা সূর্য সেন ধরা পড়েন |
শেষপর্যন্ত ১৯৩৩ সালের ১৭ ই মে গহিরা গ্রামে এক সশস্ত্র সংঘর্ষের পরে কল্পনা দত্ত ও তারকেশ্বর ঘোষ দস্তিদার ধরা পড়েন ,বিচারে তারকেশ্বর ঘোষ দস্তিদার ও মাষ্টারদা সূর্য সেনকে ফাঁসির আদেশ হয় এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় |
এরপরে ১৯৩৯ সালে কল্পনা দত্ত মুক্তি পান এবং অঙ্কে স্নাতক সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক বি এ ডিগ্রি লাভ করেন, ১৯৪৩ সালে কমিউনিষ্ট নেতা পূরণচাঁদ যোশীর সঙ্গে তার বিবাহ হয় ,কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান,পরে চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে দলের মহিলা ও কৃষক শাখাকে শক্তিশালী করেন |
“চট্টগ্রাম অভ্যুথান ” কল্পনা দত্তের লেখা একমাত্র গ্রন্হ,১৯৯৫ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে মহান বিপ্লবী কল্পনা দত্ত প্রয়াত হন |
আজ বিপ্লবী কল্পনা দত্তের ১১২ তম জন্মদিনে তাঁকে জানাই প্রণাম ও শ্রদ্ধাঞ্জলি |