Site icon CPI(M)

‘Youth struggle for Secular India and right to employment’ – An Introspect

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় যুব আন্দোলন

তাপস সিনহা

(১)

পৃথিবীর যে কোন দেশে যুব সমাজ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত, পৃথিবীর যে কোন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের আন্দোলনে যুবরাও এক উজ্জ্বল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যুবদের সঠিক পথে পরিচালনা এবং তাদের গঠনমূলক কাজে লড়াই সংগ্রামে সামিল করার লক্ষ্যে পৃথিবীর দেশে দেশে গড়ে উঠেছে যুব সংগঠন। বিশ্ব যুব আন্দোলনের এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

বিশ্বে গণতান্ত্রিক যুব আন্দোলন গড়ে তুলতে ও তাকে শক্তিশালী করতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আদর্শকে অনুসরণ করেই বিশ্বের গণতান্ত্রিক যুব আন্দোলন যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির সপক্ষে, উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে, সামাজিক পরিবর্তনের পক্ষে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র প্রসারে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়।

১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে বিপ্লবের পর যুবশক্তি প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও দীর্ঘকাল কোন যুব সংগঠন গড়ে ওঠেনি। ১৮৮৬ সাল, কার্ল মার্কসের মৃত্যু হয়েছে ৩ বছর। এই সময়ে বেলজিয়ামে প্রথম সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত ‘দ্য ইয়ং গার্ডস্’ নামে একটি যুব সংগঠন গড়ে ওঠে। এরা সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছিল এবং আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত তরুণ সৈনিকদের মধ্যেও তাদের প্রচার পৌঁছে দিয়েছিল। এরপর দ্রুতগতিতে এই প্রবণতা প্রতিবেশী দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।

(২)

১৯০০ সালে সমরবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের কংগ্রেসে Youth International গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই কংগ্রেসে রোজা লুক্সেমবার্গ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ১৯০০ সাল থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে সুইজারল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, নরওয়ে, ডেনমার্ক, স্পেন, ফিনল্যান্ড ও জার্মানী-এই ন’টি দেশে যুব সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সংগঠনগুলি অনেক সময় নির্দিষ্টভাবে কমিউনিষ্ট নেতৃত্বে পরিচালিত না হলেও শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে এদের প্রায় সবারই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বিশেষ করে জার্মানীর যুব সংগঠন শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও শিক্ষানবিশির শর্তাবলীর প্রশ্নে আন্দোলন গড়ে তোলে। এদের প্রায় সবারই রাজনৈতিক শ্লোগান ছিল।

১৯০৭ সালের ২৪-২৬ শে আগষ্ট ১৪টি দেশের ৬০,০০০ সদস্যের ২০ জন্য প্রতিনিধি নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানীর স্টুগার্টে। এই সম্মেলন থেকে International Union of the Socielist Youth Organisation (IUSYO) গঠিত হয়। এই সংগঠনের ইস্তেহারে সমাজবাদের মূল নীতির কথা ছিল। সম্মেলনে কার্ল লিবনেখটকে চেয়ারম্যান করে একটি ব্যুরো তৈরী হয়। এই সম্মেলন থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত অবৈতনিক সার্বজনীন শিক্ষা, ছ’ঘণ্টা শ্রম, শিশু শ্রমিক নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি দাবি আদায়ের কর্মসূচী গৃহীত হয়। এই সংগঠনের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে। ১৯১২ সালে বামূল সম্মেলনে যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে সামিল করার আহ্বান জানানো হয়। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে যুব সংগঠনের ভেতরে শুরু হয়ে যায় তীব্র মতাদর্শগত বিতর্ক। একদিকে যুবসমাজকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস, অন্যদিকে উগ্রজাত্যাভিমানের স্রোতে যুবসমাজকে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। এই বিরোধের পরিণতিতে আন্তর্জাতিক যুব সংগঠনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

যুদ্ধ চলাকালীন ১৯১৫ সালের ৪-৫ই এপ্রিল ১০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সুইজারল্যান্ডের বার্নেতে সম্মেলন হয়। সম্মেলনে এই যুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এখান থেকে একটি নির্দিষ্ট লাইনের ভিত্তিতে JYSYO গড়ে ওঠে। এই নতুন সংগঠনের দ্রুত বিস্তার ঘটে। জার্মানী, ফ্রান্স ও হল্যান্ড ছাড়া ইউরোপের আর সব দেশের যুব সংগঠন এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংগঠনে মধ্যপন্থীদের প্রভাব থাকলেও ক্রমাগত রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে বামপন্থীরা প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হয়। লেনিন, বিনেট, ক্লারা জেটকিনের বিশেষ উদ্যোগে প্রকাশিত হয় Young International পত্রিকা। তিনটি ভাষায় প্রকাশিত এই পত্রিকা ৫০,০০০ কপি পর্যন্ত প্রচারিত হয়।

Youth International Bureau স্থানান্তরিত হয় সুইজারল্যান্ডে। দুবছরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশগুলির যুব সংগঠন Young International-এ যোগ দেয়। এতদসত্ত্বেও যুদ্ধ ঠেকানো যায় না। তার ফলে কিছু হতাশা থাকলেও ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্য এই সংগঠনকে উজ্জীবিত করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব বিশ্ব যুব আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর থেকে বিশ্বের যুব আন্দোলনে যুদ্ধ বিরোধীতার প্রশ্নটিই প্রাথমিক হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক যুব আন্দোলনে ফাটল ধরে এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই। রাশিয়া এবং ইতালীর যুব সংগঠনগুলি ছাড়া অন্য সব যুদ্ধরত দেশে যুব সংগঠনগুলি দক্ষিণপন্থী নেতৃত্বে যুদ্ধকে সমর্থন করে ও জাতীয় যুদ্ধে অংশীদার হয়। অন্যদিকে রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে লেনিনের নেতৃত্বে বিশ্বযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করার কাজ শুরু হয়। যার পরিণতিতে রাশিয়ায় সফল বিপ্লব সংগঠিত হয়।

যুদ্ধের প্রশ্নে জার্মানীর সমাজবাদী যুব সংগঠন (SYOG) আন্তর্জাতিক যুব আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ফরাসী যুব সংগঠন প্রথমে যুদ্ধের পক্ষে দাঁড়ালেও পরে যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। এই প্রসঙ্গে সুইজারল্যান্ডের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক যুব সংগঠনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এর নেতা উইলি মুনজেনবার্গ কঠোরভাবে যুদ্ধের বিরোধীতা করেন। তিনি (উইলি) লেনিন, জিনোভিয়েড, রাদেক প্রমুখ বলশেভিক নেতার সান্নিধ্যে এসেছিলেন। ১৯১৮-তে জার্মানীতে স্পার্টাকিয়ান আন্দোলন শুরু হয়। মুনজেনবার্গ এতে যুক্ত হয়ে পড়েন। কমিউনিষ্ট যুব আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের ২০-২৬শে নভেম্বর বার্লিন কংগ্রেসে Young Communist International গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। এরপর সংগঠন সংখ্যা ও সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকে। বহুদেশে যুব সংগঠন গড়ে ওঠে। ১৯৩৫ সালে Young Communist International এর ষষ্ঠ কংগ্রেসে ফ্যাসিবাদের বিপদকে মোকাবিলা করার জন্য ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিকে তীব্র মতাদর্শগত বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। এই মতাদর্শগত বিতর্কের পরিণতিতে ১৯৪৩ সালের ১৫ই মে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সিদ্ধান্ত অনুসারে Young Communist International ভেঙ্গে দেওয়া হয়।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপের ঝোড়ো রাজনীতির যুগে যুব আন্দোলন ক্রমশ বিপ্লবী চরিত্র অর্জন করে। পাশাপাশি প্রতিক্রিয়াশীল ফ্যাসিস্তরাও তাদের শক্তি সংগ্রহ করার চেষ্টা করে যুব সমাজের মধ্যে থেকে।

প্রতিক্রিয়া না প্রগতি–যুব সমাজ কার দিকে যাবে—এই প্রশ্নই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়।

(৩)

সংশোধনবাদীরা সব সময় চেয়েছে যুব আন্দোলনকে রাজনৈতিক নির্মম ভাবে আঘাত করতে ও অক্ষম জনসমষ্টিতে পরিণত করতে এবং বিপ্লবী অংশ চেয়েছে যুব সংগঠনগুলিকে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত বৃহত্তর যুব সমাজের একটি সংগ্রামী মঞ্চ হিসাবে গড়ে তুলতে। তাই শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি যুব সংগঠনের ভিত্তি কেবলমাত্র যুব সমাবেশের সংখ্যা দিয়ে বিচার্য নয়, বিচার্য কোন শ্লোগানের ভিত্তিতে তা করা হচ্ছে সেটি।

কিউবার রাজপথে যুবরা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘটল, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের মাথা উঁচু হলো, ইউরোপের আরও ৭টি দেশ সমাজতন্ত্রের পথে পা বাড়াল, দুনিয়ায় শক্তির ভারসাম্য সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ল। বিশ্বযুদ্ধের পর শতাধিক দেশ স্বাধীন হলো, যার মধ্যে অন্যতম আমাদের দেশ ভারত। ফ্যাসিবাদের হিংস্র চেহারা, যুদ্ধের বিভীষিকা শুধু ইউরোপে নয়, সারা পৃথিবীর ছাত্র ও যুবসমাজকে বিচলিত করে তোলে, তাদের আরও সচেতন ও সক্রিয় করে তোলে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হতে চায়। তারা দাঁড়াতে চায়। স্বাধীনতার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, শান্তির পক্ষে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই পৃথিবীর ৬৩টি দেশের ৩ কোটির বেশি যুবক-যুবতীর পক্ষ থেকে ৪৩৭ জন প্রতিনিধি ও ১৪৮ জন দর্শক ১৯৪৫ সালের ২৯শে অক্টোবর থেকে ১০ই নভেম্বর লণ্ডনের রয়্যাল আলবার্ট হলে এক সম্মেলনে মিলিত হন, গঠন করেন বিশ্ব গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ডেমোক্রেটিক ইউথ) এবং রচনা করেন তার ‘স্বাধীনতা সঙ্গীত’। এখানে শপথ নেওয়া হয় যে, “আমরা সমস্ত যুবরা ঐক্য করতে এসেছি। আমাদের যে সব সহযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের অভিবাদন জানাই। আমরা অঙ্গীকার করছি যে দক্ষ হাত, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও যৌবনদীপ্ত উৎসাহ যুদ্ধে আর কখনই অপচয় হবে না। ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে চল।” ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে ঘোষণা করা হয়, “এই বিশ্বফেডারেশন বর্তমান ও পরবর্তী সম্মেলনগুলিতে ঘোষিত নীতি কার্যকরী করতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই ফেডারেশন হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ দৃঢ় মানসিকতার যুবাদের বিশ্বজুড়ে শান্তি, স্বাধীনতা গণতন্ত্রর সার্বভৌমত্ব ও সমতার জন্য কাজ করার একটি সংগঠন।”

(৪)

বিশ্বের যৌবন তখন পথ খুঁজছে। এগোনোর পথ। এগোনোর পথের বাধা যুদ্ধ—যৌবন দাবী তুলল শান্তির। বিভেদের প্রাচীর ভাঙ্গতে—যৌবন দাবী তুললো সৌভ্রাতৃত্বের। শান্তি আর সৌভ্রাতৃত্বের অনিবার্য শর্ত সম্মীলন। চাই অংশগ্রহণ সকলের। “বিশ্বযুব উৎসব” সংগঠিত করার ডাক দিল বিশ্ব গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (WFDY) মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছিল প্রামা শহর। ফ্যাসিবাদের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত চেকোশ্লাভাকিয়ার রাজধানী। সাম্রাজ্যবাদের ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে দু’পায়ে দলে বিশ্বের যৌবন শপথ নিয়েছিল—শান্তি, সৌভ্রাতৃত্ব আর অংশগ্রহণের প্রথম বিশ্ব যুব উৎসবের মঞ্চে। শত্রু চিহ্নিত হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদ। আর ঠিক ঐ বছরেই ১৯০ বছরের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের ঐতিহ্য গায়ে মেখে স্বাধীন হয়েছিলাম আমরা।

ব্রিগেড সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জননেতা জ্যোতি বসু

বহু উত্থান-পতন, বহু আঁকা-বাঁকা পথ পরিক্রমা করে বিশ্বে গণতান্ত্রিক যুব আন্দোলন বিকশিত হয়। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যুব আন্দোলনকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে, সমাজ পরিবর্তন ও প্রগতির পক্ষে পরিচালনা করতে যে মতাদর্শ দিশা যুগিয়েছে তা হল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।

মতাদর্শকে সামনে রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যুব আন্দোলনের বিকাশ অব্যাহত। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে এই সংগঠনগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় এখন বিশ্বের বৃহত্তম যুব সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত দ্যা অল চায়না ইউথ ফেডারেশান বা ACYF এই সংগঠনের অনুমোদিত আরো ৩৬টি যুব সংগঠন কাজ করছে চায়নায় সমাজের বিভিন্ন অংশে। যেমন যুব সাংবাদিক, যুব আইনজীবি, যুব কৃষক, যুব শ্রমিক, যুব ক্রীড়াবিদ ইত্যাদি সংগঠনগুলি গোটা দেশে ACYF এর অনুমোদনে এবং তত্ত্বাবধানে কাজ করছে।

তেমনি ভিয়েতনাম ইউথ ফেডারেশনের অনুমোদিত হো-চি-মিন কমিউনিষ্ট ইউথ সহ সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত প্রায় ১৪টি সংগঠন করছে VYF এর তত্ত্বাবধানে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সাথে সমাজ গঠনের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই সংগঠন। কিউবা কমিউনিষ্ট ইউথ অফ কিউবা, ইউথ লীগ অফ কিউবা এরা বিভিন্ন অংশের যুবদের সংগঠিত করছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে। এই সংগঠন যেমন তৎপর তেমনি সমাজতান্ত্রিক নির্মাণে এবং বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্ব স্থাপনে তৎপর।

গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়াতেও ইউথ ইউনিয়ন খুবই তৎপর, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইএর সাথে সাথে সমাজ গঠনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে এবং বিশ্বজুড়ে সৌভ্রাতৃত্ব গঠনে এরা তৎপর। শুধু সমাজতান্ত্রিক দেশেই নয় পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই, কমিউনিষ্ট, প্রগতিশীল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাবাপন্ন যুব সংগঠনগুলি রাজনৈতিক সংগ্রামে ভূমিকা পালন করছে।

যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়ং কমিউনিষ্ট লীগ বা YCL শক্তিশালী সংগঠনে না হলেও সীমিত শক্তি নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে তৎপর লাল ঝাণ্ডা উড়িয়ে ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ দেখাতে বা মিছিল সমাবেশ করতে পিছপা হয়না।

(৫)

DYFI এর সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক থাকার সময়ে WFDY এর একটি কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে ভেনেজুয়েলাতে দ্বিপাক্ষিক দীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম কমিউনিষ্ট ইউথ অফ গ্রেট বৃটেনের কমরেডদের সাথে । ওরাও কমিউনিষ্ট ভাবধারায় সংগঠনকে যেমন মজবুত করছে তেমনি সাম্রাজ্যবাদ সন্ত্রাসবাদ বেকারী বিরোধী লড়াইয়ে সামিল হচ্ছে। চেক রিপাবলিকে আত্মপ্রকাশ করেছে কমিউনিষ্ট ইউথ অফ চেক রিপাবলিক, এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শাসক শ্রেণীর পক্ষ থেকে, ফতোয়া জারি করা হয়েছে সংগঠনের নামে কমিউনিষ্ট শব্দটি এবং গঠনতন্ত্রে সমাজতন্ত্রের বিষয়ের প্যারাটি বাতিল করতে হবে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্বের প্রায় সব কটি যুব সংগঠন।।

কলকাতা

শাসক শ্রেণীর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কমিউনিস্ট ইউথ, ইউথ ফেডারেশন, ইউথ ইউনিয়ন নামের যুব সংগঠন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী তীব্র মনোভাব নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, আর্জেন্টিনা, আউলিয়া, বেলরুশ, বলিভিয়া, বসনিয়া, ব্রাজিল, চিলি, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, এলসালভাডোর, ইথিওপিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রীস, গুয়াতেমালা, হাঙ্গেরী, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, লেবানন, পর্তুগাল, লিবিয়া, ইটালি, জাপান, কেনিয়া, মেক্সিকো, নামিবিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেপাল, বাংলাদেশ, নিকারাগুয়া, লিবিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পেরু, ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড, রাশিয়া, আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, সুইডেন, সিরিয়া, ইউক্রেন, উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা, প্রভৃতি দেশে। এসব দেশের যুব সংগঠনগুলি ক্রমবিকাশমান এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

(৬)

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছাত্র ও যুব সংগঠন গড়ে তোলার যখন উদ্যোগ চলছিল, যুব উৎসবের ভাবনা যখন দানা বাঁধছিল, তখন আমাদের দেশ, ভারতে চলছিল ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য স্বাধীনতার সংগ্রাম। ছাত্র ও যুব সমাজ জীবনকে বাজি রেখে সেই সংগ্রামে ছিল শরিক।

আমাদের দেশের যুব সমাজ দলমত নির্বিশেষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য, ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসানের জন্য, গণতান্ত্রিক ও সুলভ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য, যুবজীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশের পথে আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাধা অপসারণের জন্য, যুব সমাজের গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের জন্য, দেশের মানুষের জীবনযাত্রার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে বহু ঐতিহাসিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে সামিল হয়েছিলেন।

ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, প্রফুল্ল চাকী, উধম সিং, মদন লাল ধিংড়া, ভগত সিং, সুকদেব, রাজগুরু, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ যুব সমাজের মনে স্বদেশ প্রেমের প্রেরণা যুগিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় মুক্তির এই উত্তাল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কোন যুব সংগঠন গড়ে ওঠে নি।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আদর্শে অনুপ্রাণিত বিশ্বের গণতান্ত্রিক যুব আন্দোলনের প্রভাব আমাদের দেশের সমাজকে প্রভাবিত করে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ই আমাদের দেশের ছাত্র-যুব আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা হয়। ছাত্র আন্দোলন ও সংগঠন পরিচালনার জন্য রাজ্যে রাজ্যে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু হলেও সেসময় পৃথক যুব সংগঠন গড়ে ওঠেনি। ১৯২২ সালে গয়া কংগ্রেসে এবং ১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেসে ছাত্র-যুব আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু কোন যুব সংগঠন গড়ে ওঠেনি।

১৯২৫ সালে ভগৎ সিং-এর নেতৃত্বে গড়ে ‘নওজোয়ান ভারতসভা’ নামে একটি যুব সংগঠন গড়ে ওঠে।স্বাধীনতা আন্দোলনে এই সংগঠনের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সংগঠনের নেতৃত্বেই আমাদের দেশে সংগঠিত যুব আন্দোলন তার পথপরিক্রমা শুরু করে।

(৭)

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাথে সাথে আমাদের দেশের যুব আন্দোলনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই নতুন অধ্যায়ে যুব সমাজের সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়েছিল সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ ও সমাজ গঠনের স্বপ্ন। যুব সমাজ আশা করেছিল স্বাধীন ভারতে শিক্ষা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার সুযোগ প্রসারিত হওয়ার পথে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা হবে অপসারিত। জনগণসহ যুব সমাজের গণতান্ত্রিক অধিকার হবে সুনিশ্চিত ও দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং শোষণ নির্যাতনের ও অসাম্যের হবে চির অবসান, প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, একমাত্র যে সমাজব্যবস্থার মাধ্যমেই যুব সমাজের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সম্ভব।

স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে প্রথম সর্বভারতীয় যুব সংগঠন AIYF। ১৯৪৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরে অনুষ্ঠিত AISF-এর সম্মেলনে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে এই সংগঠন তৈরি হয়।

১৯৬৮ সালের ৭-৯ই জুন কলকাতা ত্যাগরাজ হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলন থেকে গড়ে উঠল সংশোধনবাদ মুক্ত, সংগ্রামী, সঠিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্মিলিত যুব সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যকে সামনে রেখে পথ পরিক্রমা শুরু করে গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন। আমাদের রাজ্যে গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন গড়ে ওঠার পাশাপাশি নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজ্যে রাজ্যে গড়ে ওঠে যুব সংগঠন। যেমন কেরালা সোসালিস্ট ইয়ুথ ফেডারেশন (১৯৬৮), ত্রিপুরায় ডি.ওয়াই. এফ (১৯৬৮), অন্ধ্রে (১৯৬৮), উত্তরপ্রদেশে জনবাদী নও জোয়ানসভা (১৯৬৮), আসামে ডি.ওয়াই.এফ (১৯৭৮), পাঞ্জাবে (নতুন করে) নও জোয়ান সভা (১৯৭৪), বিহার (১৯৭২), রাজস্থানে (১৯৭৭), কর্ণাটকে (১৯৭৭) ইত্যাদি।

১৯৮০ সালে ১-৩ নভেম্বর পাঞ্জাবের লুধিয়ানার প্রথম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী বিচ্ছিনতাবাদ বা উগ্রআঞ্চলিকতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ক্রমবর্ধমান বিপদের পটভূমিকায় ঐ একই আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গীকে সামনে রেখে গড়ে ওঠে আমাদের সর্বভারতীয় সংগঠন DYFI।

দেশের ক্রমবর্ধমান সংকটের বিরুদ্ধে বিকাশমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শরিক হিসাবে DYFI-কে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে অনেক রক্তাক্ত পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে। দেশের যুব সমাজের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সমাধানের লক্ষ্যে ব্যাপক আন্দোলন, পাশাপাশি দেশের সংকটের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিরবিচ্ছিন্ন অংশগ্রহণ এবং ধারাবাহিক সাংগঠনিক তৎপরতা DYFI-কে আজ দেশের প্রধান যুব সংগঠনে পরিণত করেছে।

(৮)

১২-১৫ মে ২০২২, কলকাতার শহীদ মঞ্চ (EZCC auditorium ) দিয়াগো মারাদোনা নগরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে DYFI এর একাদশ সর্বভারতীয় সম্মেলন।দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিনিধিরা আসবেন। বর্তমান যুব সমাজের সামনে সাম্রাজ্যবাদ ও আধা ফ্যাদিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ । সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা র সুনির্দিষ্ট লড়াই সংগ্রামের রূপরেখা তৈরি করবে DYFI…

২৬ বছর আগে ১৯৯৫ সালের ১৪-১৮ নভেম্বর কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৫ম সর্বভারতীয় সম্মেলন। বিশ্বজোড়া উথাল পাতাল পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের পরে যুব সম্মেলন স্লোগান নির্ধারণ করেছিল,’সমাজতন্ত্রই ভবিষ্যৎ -ভবিষ্যৎ আমাদেরই’। এই স্লোগান বিশ্বের সমাজতন্ত্র প্রিয় মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল যা আজও প্রাসঙ্গিক। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণেরর সামনে দাঁড়িয়ে আমরা আজও বিশ্বাস করি তামাম দুনিয়ার মানুষের মুক্তির পথ সমাজতন্ত্র।

বর্তমানে ভারতবর্ষের বেকার যুব সমাজের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। বিশেষ করে অতিমারীর সময়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুব কর্মচ্যুত হয়েছেন । দেশের মধ্যে কোন ভারী শিল্প তৈরি করবার সদিচ্ছা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিয়ে আগামী দিনে বেকার যুবদের কাজের নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত করছে। দেশের অভ্যন্তরে ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে বেকার যুবদের বিভক্ত করছে যেন তারা একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত না করতে পারে।ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করে ভারতবর্ষকে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতি , নয়াকৃষি নীতি দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে মারাত্মক হয়ে উঠবে। তাই এই সর্বনাশা নীতির বিরুদ্ধে সমাজের অগ্রণী অংশ যুবদের এগিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে।আর তাই বর্তমান পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে একাদশ সম্মেলনের স্লোগান ‘Youth struggle for Secular India and right to employment’ ….

আজ, এক মর্মান্তিক বিপর্যয় সমাজের শিকড়ে আঘাত করে ক্রমশ তার জীবনীশক্তি নিঙড়ে নিচ্ছে। নিভিয়ে দিতে চাইছে একটা একটা করে সমস্ত আলোর রক্তিম নিশান। যৌবনকে হত্যা করতে চাইছে। ঠিক যেন নতুন যুগের নতুন যক্ষপুরী। যা শুধু শরীরকে আঘাত করে না। তার অস্থি মজ্জা মন প্রাণ সব শুষে নেয়। এই ক্রান্তির ক্ষণে আবার বেজে উঠুক পাঞ্চজন্য। পিনাকীর ডম্বরুকেও স্তব্ধ করে নিক্ষিপ্ত হোক শ্লোগান। সমস্ত সর্দার আর রাজাদের ভ্রুকুটিকুটিল ক্রুরতার চোখে চোখ রেখে নন্দিনীর নিনাদ উঠুক আরেক বার। ইতিহাস সাক্ষী থাকুক। বর্তমানের অঙ্গীকার হোক পাথেয়। আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন হোক অক্ষয়। সময়ের ডাক শুনে ঘর ছেড়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে আসা যে কিশোর আজ উত্তীর্ণ হল যৌবনে, সে নতুন করে জীবনের গান বাঁধে। বাঁধতে শিখিয়ে যায় আগামীর কুঁড়িদের। আজ তাই শুধু আমাদের শ্রান্তিহীন শাশ্বত সাম্যের শপথ দিয়ে গেলাম যৌবনকে।

Spread the word