Site icon CPI(M)

অবসান চাই অঘোষিত জরুরী অবস্থার – শমীক লাহিড়ী

২৫ জুন,২০২৩ (রবিবার)

প্রথম পর্ব


সংবিধানের ১৮নং অনুচ্ছেদে ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতিকে ‘জরুরী অবস্থা’ জারী করার অধিকার দিয়েছে। যদি সরকার মনে করে দেশের আভ্যন্তরীন স্থিতি, দেশের অথবা বাইরের শত্রু দ্বারা অথবা অর্থনৈতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পার্‌ তাহলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা রাষ্ট্রপতিকে জরুরী অবস্থা জারি করার পরামর্শ দিতে পারে। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৩৫২নং ধারা অনুযায়ী সমগ্র দেশের জন্য জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন। এর ফলে সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিকদের অনেক মৌলিক অধিকার এই সময় কার্যকর হয় না, এমনকি রাজ্যগুলির ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যায়।
আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত ৩বার জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে। প্রথম জরুরী অবস্থা জারী করা হয় ১৯৬২ সালের ২৬শে অক্টোবর, যা কার্যকরী ছিল ১০ই জানুয়ারী ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত। চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রমণের কারণ দেখিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ বছর জারি ছিল জরুরী অবস্থা। এই অবস্থায় যারাই যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ ভাবে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছিল, তাদের প্রায় সকলকেই জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
দ্বিতীয় বার জরুরী অবস্থা জারি হয়েছিল মাত্র ১৪ দিনের জন্য ১৯৭১ সালে ৩-১৭ই ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন। দ্বিতীয়বার জরুরী অবস্থার স্থায়িত্ব যেহেতু মাত্র ১৪ দিনের ছিল, তাই এই সময় খুব বেশি সরকারের বাড়াবাড়ি বা হৈচৈ হয়নি দেশ জুড়ে।
তৃতীয়বার জরুরী অবস্থা জারী হয় ২৫শে জুন ১৯৭৫ এবং ১৯৭৭ সালের ২১শে মার্চ পর্যন্ত তার স্থায়িত্ব ছিল। আভ্যন্তরীন গোলোযোগ এবং আভ্যন্তরীন ও বাইরের শত্রুদের দ্বারা দেশের ঐক্য ও স্থায়িত্ব বিপন্ন হচ্ছে, এই কারণ দেখিয়ে জরুরী অবস্থা জারির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার সুপারিশে।

কেন জরুরী অবস্থা?


১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি কেন্দ্র থেকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ নারায়নকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। রাজ নারায়ন এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেন। রাজ নারায়নের মূল অভিযোগ ছিল যশপাল কাপুর নামে এক সরকারি আধিকারিককে শ্রীমতী গান্ধী নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করেছিলেন এবং তার মারফৎ অন্যান্য সরকারি ব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগানো হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে ১২ই জুন এলাহাবাদ হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি জগমোহন লাল সিনহা এই ঐতিহাসিক মামলার রায় দান করেন। রায়ে বলা হয় – শ্রীমতি গান্ধী নির্বাচনে অন্যায় পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, তাই তাঁর সাংসদ পদ বাতিল করা হয় এবং ৬ বছরের জন্য তিনি কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রতে পারবেন না।
এর পরেই ২৫শে জুন ইন্দিরা গান্ধী আভ্যন্তরীন অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে দেশজুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করেন। কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে অনেক নেতাই এর বিরোধিতা করলেও তাঁদের কথায় কান দেননি শ্রীমতি গন্ধী। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় এই সময় হয়েছিলেন শ্রীমতি গান্ধীর মুখ্য পরামর্শদাতা। ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধী এই সময় হয়ে উঠেছিলেন সংবিধান বর্হিভূত ক্ষমতার আধার। ২১ মাসের জরুরি অবস্থা চলাকালীন দেশের মানুষের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। জারি হয়েছিল সংবাদ পত্রের ওপর সেন্সারশিপ। বহু বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকে জেলবন্দী করা হয়েছিল।

কি হয়েছিল?


দেশজুড়ে এই জরুরী অবস্থা জারির তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বেশিরভাগ সংবাদপত্র জরুরী অবস্থা জারি ও সংবাদপত্রের ওপর সেন্সারশিপের তীব্র বিরোধিতা করে। সরকারের বিরোধিতাকেই দেশের বিরোধিতা বলে ভাবতে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধীর প্রশাসন। এই সময় সংবিধান বর্হিভূত ক্ষমতার আধার সঞ্জয় গান্ধী ও তৎকালীন যুব কংগ্রেস বাহিনীর বাড়াবাড়ি রকম অত্যাচারের মুখোমুখি হয় দিল্লী সহ দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষ। গায়ক-শিল্পীরা অনেকেই সেন্সারশিপের আওতায় পড়েন। পশ্চিমবাংলায় তখন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন সুব্রত মুখার্জী। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যে একদিকে সেন্সারশিপের কড়াকড়ি শুরু হয়, অপরদিকে বিরোধিদের ওপর তীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনে সিদ্ধার্থ রায় সরকারের পুলিশ প্রশাসন।
অবশেষে ১৯৭৭ সালের ১৬-২০শে মার্চ ষষ্ঠ লোকসভা গঠনের জন্য নির্বাচন ঘোষণা করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার, কারণ ২১শে মার্চ পঞ্চম লোকসভার মেয়াদ ছিল। জরুরী অবস্থার মধ্যেই দেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই ঐতিহাসিক সাধারন নির্বাচনে স্বাধীনতার পর প্রথম কংগ্রেস দল পরাজিত হয়। শ্রীমতি গান্ধী ও তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীও পরাজিত হন। পঞ্চম লোকসভার তুলনায় ১৯৮টি আসন কম পেয়ে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা দাঁড়াও ১৫৪টি। গঠিত হয় মোরারজী দেশাইয়ের নেতৃত্বে জনতা দলের সরকার।
সরকারে এসে ১৯৭৮ সালে সংবিধানের ৪৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন আইন অনুযায়ী জাতীয় স্তরে জরুরী অবস্থা জারি করার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বাইরের শত্রুর আক্রমণ অথবা আভ্যন্তরীন সশস্ত্র বিদ্রোহ জনিত পরিস্থিতিকেই একমাত্র ব্যবহারযোগ্য বলে ৩৫২নং ধারা সংশোধিত হয়। আরও কিছু সংশোধনী আনা হলেও, বিতর্কের অবসান না হওয়ায় সেগুলিকে আইনে রূপান্তরিত করা যায়নি।

৪৮ বছর বাদেও কেন?


১৯৭৫ সালের জরুরী অবস্থা জারি করার ৪৮ বছর বাদেও এই দিনটি কেন বারবার আলোচনায় আসে তা বিবেচনা করা জরুরী। সত্যিই যদি আভ্যন্তরীন কোনও শত্রু দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরী করার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে শ্রীমতি গান্ধী তা নিয়ে সংসদে অথবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলোচনা করলেন না কেন? দেশের অন্য সব রাজনৈতিক দল তো আর দেশবিরোধী ছিল না, হয়ত সরকার বিরোধী ছিল। মানুষের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার কি যৌক্তিকতা ছিল? সঞ্জয় গান্ধী সহ বেশ কিছু ব্যক্তি সংবিধান বর্হিভূত ক্ষমতার আধার হয়ে উঠেছিল। সংবাদমাধ্যমের ও সাংবাদিকদের ওপর সেন্সারশিপ জারি ও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কেবলমাত্র সরকারের বিরোধীতা করবার জন্য। শ্রীমতি গান্ধীর নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার পরেই কেন তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ওপর আঘাত হেনেছিলেন কেবলমাত্র নিজের হাতে ক্ষমতা রাখার জন্য?
ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করেছিল স্বাধীনতার পর। গণতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতা-সার্বভৌমত্ব এগুলোই ভারতবর্ষের সংবিধানের আধার। সংবিধান মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অনেকগুলি অধিকারকে নিশ্চিত করে। এর ওপর আক্রমণ যাতে নতুন করে কোনও শক্তি না আনতে পারে, তার জন্যই ৪৮ বছর বাদেও এই ঘটনাকে দেশবাসী স্মরণ করে।

আজকের বিপদ

আজকের ভারতবর্ষে এক অঘোষিত জরুরী অবস্থা জারি করেছে বিজেপি সরকার। সংবিধানের ৩৫২নং ধারা প্রয়োগ না করেও কার্যত নানাবিধ আইন এনে বিরোধী কন্ঠ স্তব্ধ করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। প্রতিবাদ করলেই দেশদ্রোহীর তকমা লাগিয়ে মিথ্যা মামলা অথবা হামলা, এমনকি খুনও করা হচ্ছে। সরকারের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধীতাকে দেশের বিরোধীতা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলো কার্যত বিজেপি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। মিথ্যা অভিযোগে সাংবাদিক-সমাজকর্মী সহ বিরোধীদের গ্রেপ্তার করে জেলবন্দী রাখা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদী এখন মার্কিন সফরে আছেন, সংসদের যৌথ অধিবেশনে তাঁর ভাষণ চলাকালীন বাইরে বহু অনাবাসী ভারতীয় ও মার্কিন নাগরিক তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। ভারতবর্ষের মানুষের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে – এই ধরণের অভিযোগ নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এমনকি বেশ কিছু মার্কিন সেনেট সদস্যও প্রতিবাদে তাঁর ভাষণ বয়কট করেছেন।

বিশ্বের চোখে ভারত

২০২১ সালের মার্চ মাসে আমেরিকার ‘ফ্রিডম হাউস’তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে – যার বিষয় ছিল বিশ্বজুড়ে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বাধীনতা। এই রিপোর্টে ভারতবর্ষকে মুক্ত গণতন্ত্রের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে আংশিক মুক্ত গণতন্ত্রের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। এই সময়েই সুইডেনস্থিত ‘ভি-ডেম ইনসস্টিউট’ গণতন্ত্র বিষয় তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করে – ভারতবর্ষ একটি নির্বাচন ভিত্তিক স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এই একই সময়ে ‘ইকোনমিক ইন্টালিজেন্স ইউনিট’ প্রকাশিত আর একটি রিপোর্টে ভারতকে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ রূপে বর্ণনা করে, গণতান্ত্রিক সূচকে বিগত বছরের তুলনায় দুই ধাপ আরও নামিয়ে ৫৩ নং স্থানে আনা হয়। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে ভারতে রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতা, বাংলাদেশ ও নেপালের চাইতেও কম।
ভারতবর্ষের বিদেশমন্ত্রক খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই রিপোর্টগুলিকে অস্বীকার করেছে। রাজ্যসভায় এই রিপোর্টগুলি নিয়ে বিরোধীরা আলোচনার দাবী করলে, রাজ্যসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু তা নাকচ করে দেন। সংসদে বিতর্ক হলে সরকার তো তার জবাব দিতেই পারত। কিন্তু আলোচনায় এত ভয় কিসের যে, সাংসদদের বক্তব্য রাখার অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। ‘ফ্রিডম হাউস’এর এই রিপোর্টটিতে ১৯৫টি দেশ ও ১৫টি স্বশাষিত অঞ্চলের তথ্য তুলে ধরে আমাদের দেশ সম্পর্কে কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়েছে – ভারতে সংখ্যালঘু গোষ্ঠিগুলির প্রতি বৈষম্য এবং বিরোধী কন্ঠকে স্তব্ধ করার অভিযোগ গুরুতরভাবে বেড়েছে। ‘ভি-ডেম ইনসস্টিউট’ এর সংগ্রহে ১৭৮৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২০২টি দেশের তথ্যাবলী রয়েছে। ‘ইকোনমিক ইন্টালিজেন্স ইউনিট’ ১৬৫টি দেশ ও ২টি স্বশাষিত অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই তাদের রিপোর্ট তৈরী করেছে। এই ধরণের বিশ্ব স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির রিপোর্টকে কখনই অস্বীকার করা যায় না।
তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও দেশের বাস্তব অবস্থার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় মোদী সরকারের আমলে কিভাবে বিরোধী কন্ঠকে স্তব্ধ করার ভয়ংকর প্রয়াস চালানো হচ্ছে।

UAPA আইন

আমাদের দেশের একটি দানবীয় আইন The Unlawful Activities (Prevension ) Act – 1967| এই আইনের অপব্যবহার কিভাবে করা হয়েছে বিজেপি,র আমলে তা সরকারী তথ্য থেকেই বোঝা যায়। ২০২১ সালে রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছিলেন ৪,৬৯০ জনকে এই আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০১৮-২০২০ সালের মধ্যে। এর মধ্যে মাত্র ১৪৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করে সাজা দিতে পেরেছে সরকার। গৌতম দোশি, ‘ফ্যাক্টচেকার ওয়েব সাইট’-র অন্যতম পরিচালক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন ২০১৪-২০২১ এই সময়কালে ১০,৫৫২ জনকে এই আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু মাত্র ২৪৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছে সরকার।

রাষ্ট্রদ্রোহ আইন


ব্রিটিশ আমলে ১৮৭০ সালে জেমস স্টিফেন রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত একটি আইন ভারতীয় দন্ডবিধিতে যুক্ত করেন – Sedition Act – 1870। মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধেই ব্রিটিশরা এই আইনকে ব্যবহার করত। ২০১৪-২০১৯ এই সময়কালে ৩২৬ জন ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে এই ধারায় মামলা করে জেলে পাঠানো হয়। মামলার অভিযোগগুলি ছিল মূলত নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনা করা। National Crime Bureau-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬-২০১৯ এই সময়কালে দেশদ্রোহী মামলার সংখ্যা অতীতের তুলনায় ১৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ আদালতে মাত্র ৩.৩% অভিযোগ সরকার প্রমান করতে পেরেছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে ৮১৬টি দেশদ্রোহের অভিযোগ আনে সরকার। এর মধ্যে ৬৫% ছিল মোদী সরকারের আমলে। এই আইনে মোদী সরকারের আমলে জেলবন্দী করে রাখা হয় যাদের, তাদের ৯৫% বিরুদ্ধেই সরকার এবং শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনার অভিযোগ আনা হয়।
এই আইনের চুড়ান্ত অপব্যবহারের উদাহরণ আসামের সার্জিল ইমাম নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্রকে গ্রেপ্তারের ঘটনা। সার্জিলের অপরাধ ছিল আসামের বিজেপি সরকারের একের পর এক সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে আয়োজিত একটি সভায় রেল ও রাস্তা অবরোধের আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা করা। বিজেপি ইমামকে ‘দেশ বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসাবে চিহ্নিত করে তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার প্রচার চালায়। তাকে গুলি করার জন্য বক্তৃতা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, কিন্তু আন্দোলনের আহ্বান জানানো ‘দেশবিরোধী কাজ’ হয় বিজেপির বিচারে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন বিজেপির আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন – সরকার বিরোধীদের চুপ করিয়ে রাখার জন্য দেশদ্রোহী আইন প্রয়োগ করা অন্যায় নয়।
জেএনইউ’র ছাত্রী ও রাজনৈতিক কর্মী শেহেলা রশিদকেও এই আইনে গ্রেপ্তার করে দিল্লী পুলিশ। তার অপরাধ ছিল মোদী সরকারের কাশ্মীরী মানুষের ওপর সেনা নামিয়ে অকথ্য অত্যাচার চালানোর অভিযোগ আনার। একইভাবে উমর খালিদের বিরুদ্ধেও ইউএপিএ ও রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অভিযোগ এনে জেলবন্দী করে বিজেপি সরকার। জেএনইউ’র ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তৎকালীন ছাত্র নেতা কানাইয়া কুমারকেও গ্রেপ্তার করা হয় একইভাবে।

সম্পূর্ণ লেখাটি দুটি পর্বে প্রকাশিত…

Spread the word