Site icon CPI(M)

Unite Against The Peoples Enemy

রাজনীতি থেকে রাজনীতিকে বিযুক্ত করবার ফ্যাসিস্ট কৌশল

গৌতম রায়

অদ্ভুত পরিস্থিতির ভিতরে এইবারের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, কখনোই এবারের মত এমন অদ্ভুতুড়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি কিন্তু নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয়নি। প্রতিবারই যে কোন বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে রাজনৈতিক ইস্যুগুলি, অর্থনৈতিক ইস্যুগুলি সামনে আসে। একদম যে অ-রাজনৈতিক বিষয়গুলি আসে না তা নয়, তবে অরাজনৈতিক বিষয়গুলি কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে সবথেকে বেশি প্রাধান্য কখনো পায়নি। মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন গুলিই  সব সময় যেকোনো ভোটে সব থেকে বেশি সামনে এসেছে।মানুষের  অধিকারের প্রশ্ন সামনে এসেছে। নারীর স্বাধীকারের প্রশ্ন সামনে এসেছে। সংখ্যালঘুর অধিকারের প্রশ্ন এসেছে। ছাত্র যুবদের নানা ধরনের সমস্যাবলী এসেছে। কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ এসেছে। শিল্পায়নের প্রসঙ্গ এসেছে ।

           কিন্তু এবারের নির্বাচনে এই সমস্ত বিষয়গুলি আজ পর্যন্ত  বামপন্থী এবং তাদের সহযোগী কংগ্রেস ও আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট)  ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল, কোন অবস্থাতেই সামনে তুলে ধরছে না। ঠিক একইভাবে সমস্ত প্রচারমাধ্যম ,সেটি সংবাদমাধ্যম হোক বা  বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম হোক ,তাঁরা কেউই এই মানুষের সাধারণ রুটি-রুজির প্রশ্নগুলি, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার বিষয়গুলিকে একবারের জন্যও সামনে আনছেন না। রাজনীতিকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করার এই অদ্ভুত প্রবণতা ভেতর দিয়ে এবারের নির্বাচনকে সামনে আনার চেষ্টা করছে একটা শক্তি। এই শক্তির মূল লক্ষ্য হলো যে কোন উপায়ে মানুষকে তাঁদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হওয়া থেকে বিরত করা ।মানুষ যাতে নিজের অধিকার না বুঝে উঠতে পারে, মানুষ যাতে কোনো অবস্থাতে নিজের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ,শাসকের কাছে নিজেদের দাবি-দাওয়া গুলিকে তুলে ধরতে না পারে, তেমন একটা জঙ্গম অবস্থা তৈরী করে ,মানুষকে একটা নিশ্চেষ্ট অবস্থার মধ্যে দিয়ে ফেলে, ভোটের  রাজনীতি কে ফ্যাসিস্ট শক্তির করায়ত্ত করবার দিকেই প্রচার মাধ্যম এবং রাজনীতির একটা বড় অংশের লোকেদের বিশেষ রকমের ভূমিকা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। 

                      গত দশ  বছরে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের ক্ষেত্রে এক চুল ও অগ্রগতি হয় নি। যে সমস্ত ছোট ছোট শিল্প গুলি ছিল, তারা ধুঁকছে বা বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ বেকার ।বেকারত্বের জ্বালায় মানুষ ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। সামান্য রুটি-রুজির তাগিদে মানুষ কোন জায়গায় নিজেদেরকে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে তার ভয়াবহ মর্মস্পর্শী ছবি তো আমরা দেখতে পেলাম গত লকডাউনের  সময় কালে। অথচ এ নিয়ে কিন্তু না রাজ্যের শাসক দল ,না কেন্দ্রের শাসক দল, কারো কোনো হেলদোল আছে। রাজ্যে যে সমস্ত সংবাদ মাধ্যমগুলি নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের সংবাদ প্রতিবেদন , সংবাদ বিশ্লেষণ ইত্যাদি তুলে ধরছেন ,সেখানে কিন্তু এই যে কর্মসংস্থানের সমস্যা ,বেকারত্বের সমস্যা, ব্যাপক ছঁটাই ,কর্মহীনতা, মানুষের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট– এসব সম্পর্কে কোনো রকম দৃষ্টি নিক্ষেপ করা হচ্ছে না। মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেবলমাত্র দলবদলে রাজনীতিতে। কেবলমাত্র চটুল কথায়। কেবলমাত্র অ-রাজনীতির নানান ধরনের বিষয়গুলিকে রাজনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে।

                       কোন রাজনৈতিক নেতা সকালে কোন্ দলে থাকলেন,  আর বিকেলে কোন্ দলে গিয়ে এলেন,  দুপুর বেলায় আবার তিনি কোন দলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন, এই গবেষণার উপর ই কিন্তু সমস্ত রাজনীতি কে প্রতিষ্ঠিত করার দিকে যেমন বুর্জোয়া রাজনৈতিক শক্তিগুলোর, তেমনিই  সংবাদমাধ্যম গুলির ও লক্ষ্য। রাজনীতিকে অ রাজনীতিতে যুক্ত করে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা থেকে মানুষকে অন্যদিকে প্রভাবিত করবার এই প্রবণতা এবারের নির্বাচনে এক ভয়াবহ বিপদজনক ভাবে  ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার উপরে চেপে বসছে। 

                এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে কিন্তু আগামী লোকসভা নির্বাচন, যেটা  তিন বছর পরে হতে চলেছে ,এই সময়কালের যেসব রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন গুলির ওপরেও, এই রাজনীতির কে অ রাজনীতিতে পরিণত  করবার  প্রবণতা অত্যন্ত বেশি ভাবে পড়বে। আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি কিন্তু এটাই চাইছে ।আরএসএসের হাজারো রকমের সহযোগী সংগঠন, যাদেরকে আমরা এক কথায় সংঘ পরিবার বলে থাকি ,তাদের মাধ্যমে এই রাজনীতি বিযুক্ত রাজনীতির দিকে সাধারণ মানুষকে পরিচালিত করার লক্ষ্যে নানা ধরনের সামাজিক প্রযুক্তি চলছে। 

                একইভাবে আরএসএস, বিজেপি র ছুপা রুস্তম সহযোগী যেসব  দলগুলি আছে, যেমন ,পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস বা ওড়িশায় বিজু পট্টনায়কের পুত্র নবীন পট্টনায়কের  যে দল ,বিজেডি,  বা তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে — এই সমস্ত দলগুলিও  কিন্তু একই ভাবে মানুষকে রাজনীতির বাইরে রাজনীতি  করানোর দিকে নিজেদের পরিচালিত করে চলছে। সেই লক্ষ্যেই খুব নিবিড়ভাবে নিজেদের পর্যবেক্ষণ কে পরিচালিত করে চলেছে। তারা কোনো অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলি যাতে মানুষের সামনে তুলে ধরা না হয় , তার জন্য যেমন তাদের নিজেদের রাজনৈতিক শক্তিকে  নিয়োগ করছে,  তেমনি ভাবে ই তারা  সংবাদমাধ্যমগুলোকে প্রশাসনের নানান সুযোগ-সুবিধে, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি পাইয়ে দিয়ে ,তাদেরকেও  সেইভাবে পরিচালিত করছে। 

                এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রবণতা হিশেবে উঠে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আমরা আমেরিকার ক্ষেত্রেও গত চার বছরে একই ধরনের প্রবণতা দেখতে পেয়েছি। তাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের  আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনা, রাজনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণের ভেতর দিয়ে এটা আমরা দেখেছি। ঠিক তেমনটাই কিন্তু আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি ।লকডাউনের  সময় কালে যেভাবে থালা বাজানো, নিষ্প্রদীপ করা ,ঘন্টা বাজানো ইত্যাদি অবৈজ্ঞানিক  ভাবনাচিন্তা গুলিকে নরেন্দ্র মোদী সামনে তুলে এনেছিলেন, করোনা  জনিত সমস্যা কে বৈজ্ঞানিকভাবে মোকাবিলা করার ,স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মোকাবিলা করার পরিবর্তে ,তার ভেতর অবৈজ্ঞানিক দিকগুলিকেই  তুলে ধরবার ভিতরে  রাজনীতি থেকে রাজনীতিকে বিযুক্ত করার যে প্রবণতা, সেটাই ছিল মূল লক্ষ্য ।

             কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন উপলক্ষে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি তাদের নিজেদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত করে চলেছে  বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে । পশ্চিমবঙ্গে বিভাজনের  নানা রকমের নিত্য নতুন কৌশলে আরএসএস তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি এবং হাজারো রকমের সহযোগী সংগঠন, যাদেরকে সংঘ পরিবার বলে উল্লেখ করা হয়, তাদের মাধ্যমে করে চলেছে। প্রত্যেকটি কর্মসূচির মূলে ই কিন্তু রয়েছে রাজনীতি থেকে রাজনীতিকে আলাদা করে দেওয়া র প্রবণতা। সাধারণ মানুষের রুটিরুজি ,দৈনন্দিন সমস্যা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সমস্যা- এগুলি থেকে মানুষকে দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। 

                মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে নানা কৌশলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। সচেতন মানুষ, প্রগতিশীল মানুষ, তাঁরা ও অনেক সময় বুঝে উঠতে পারছেন না যে ,সাম্প্রদায়িকতার বিষ, সম্প্রদায়ের মৌলবাদী ধারণা, ধর্মান্ধ  মৌলবাদী শক্তির কি ধরনের পদ্ধতিতে হিসেবনিকেশ করে  তাঁদের মধ্যে সংক্রমিত করছে। এই যে সংক্রামক  ভাইরাস, তা  কিন্তু করোনাভাইরাসের  থেকেও ভয়াবহ মারাত্মক। 

                  সাম্প্রতিককালে বামফ্রন্ট এবং তার সহযোগী কংগ্রেসের সঙ্গে ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল ফ্রন্ট, আই এস এফ এর নির্বাচনী বোঝাপড়া কে ঘিরে এই প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গের বুকে  ধর্মান্ধ মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক শক্তি, নানা ধরনের সংবাদমাধ্যম এবং তাদের সামাজিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। এটিও কিন্তু রাজনীতি থেকে রাজনীতিকে বিযুক্ত করবার একটি প্রবণতা। একটি ভয়াবহ  সাম্প্রদায়িক অপকৌশল। 

                 শাসক শিবির প্রথমে কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া ,বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক বোঝাপড়া ঘিরে নানা ধরনের অপকৌশল নিতে শুরু করে। নানা ধরনের বিভ্রান্তি কে সামনে এনে মানুষের যে ঐক্য গড়ে উঠছে, সেই  ঐক্যকে তারা বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে। রাজনীতিতে কোনো স্থাবর জঙ্গম একটা পরিবেশ নয় ।পরিস্থিতির নয়,  বা কোন বদ্ধ জলাশয় নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার  ধারা নানা ভাবে বিকশিত হতে পারে। সাধারণ মানুষের দাবি দাওয়ার প্রশ্নে,  মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদার  প্রশ্নে, রাজনীতির গতিপথ যে নানাভাবে,  নিত্য নতুন কৌশলে পরিচালিত হতে পারে, সেই দিকে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে,  আরএসএস পরিচালিত বিজেপি এবং তাদের সহযোগী, কিন্তু খাতায়-কলমে নয়, গোপনীয়ভাবে , তৃণমূল কংগ্রেস নানা ধরনের কৌশল চালিয়েছে  বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী সমঝোতাকে ঘিরে। তাদের তাঁবেদার সংবাদপত্রগুলি নানা ধরনের অপকৌশল ছড়িয়েছে। নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। এগুলি করে তারা যখন শেষ পর্যন্ত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের  সঙ্গে এই বামপন্থী ও কংগ্রেসের বোঝাপড়া এবং সর্বোপরি একটি সংযুক্ত মোর্চা  তৈরি করে ,নির্বাচনী সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টিকে সম্প্রদায়িক ভাবে  পরিচালিত করার জন্য নানা ধরনের অপকৌশল তারা নিতে শুরু করেছে।

                এই অপকৌশল নেওয়ার ক্ষেত্রে আরএসএস সরাসরি তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে খুব একটা ব্যবহার করছে না। ব্যবহার করছে তাদের হাজারো রকমের সহযোগী সংগঠন, অর্থাৎ; সঙ্ঘ পরিবারের নানা ধরনের শাখা-প্রশাখা গুলিকে।  ব্যবহার করছে ভয়াবহ সামাজিক প্রযুক্তিকে। 

                 অপরপক্ষে এ সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে একটা নীরবতার অভিনয় করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রকাশ্যে। কিন্তু গোপনে তারা ভয়ঙ্কর রকম সাম্প্রদায়িক প্রচার এই বিষয়টিকে ঘিরে চালাচ্ছে ,যাতে বামপন্থীদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বামপন্থীদের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে শেষ পর্যন্ত লাভ হয় বিজেপির। তার জন্য এই আব্বাস সিদ্দিকীর  রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কে ঘিরে নানা ধরনের সাম্প্রদায়িক বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করেছে। 

             এই বিভ্রান্তির শিকার যে শুধু সাম্প্রদায়িক মানুষরা হচ্ছেন বা  হবেন এটা কিন্তু নয়। এই বিভ্রান্তির শিকার কিন্তু সামগ্রিকভাবে বামপন্থী আন্দোলনের মধ্যে নানা ভাবে রয়েছেন এমন মানুষরাও হতে চলেছেন। এভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর তাই কিন্তু ফ্যাসিস্ট ধর্মান্ধ শক্তির একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই তারা তাদের যাবতীয় কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

                  ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের  সঙ্গে  হুগলির পবিত্র ফুরফুরা শরীফের কিছু মানুষজন আছেন ।তাই কি এই দলটিকে সাম্প্রদায়িক বলে আমরা দাগিয়ে দেব? যে দলে আদিবাসী, তপশিলি জাতি ও উপজাতির মানুষজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এবং তাঁদের বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোকে সংগঠিত করে যেখানে ফ্রন্টটি তৈরি হয়েছে, সেই রকম একটি দলকে কিভাবে আমরা সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করতে পারি? বামপন্থীদের ভেতরে এই বিভ্রান্তি  কে অত্যন্ত সুকৌশলে আরএসএস তার সামাজিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢুকিয়ে দিয়েছে। বহু বামপন্থী মানুষ এই বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন ।

                 বামপন্থীরাও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথে পা বাড়াচ্ছেন–  এই অভিযোগ তারা নিজেদের মধ্যে করতে শুরু করেছেন। কিন্তু একটিবারের জন্য তাঁরা এই প্রশ্নের মুখোমুখি করছেন না প্রশ্নকর্তাদের যে ,আব্বাস সিদ্দিকী কোন জায়গায়  জায়গায় সাম্প্রদায়িক ? আব্বাস সিদ্দিকী ব্রিগেডে বা পরবর্তী যে সমস্ত বক্তৃতাবলী করেছেন, তার কোনো জায়গায় কি কোনো রকম সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা রয়েছে? কোনরকম সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি রয়েছে ? ধর্মীয় শব্দাবলী ,যেগুলি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিটি সভায় প্রায়শই উচ্চারণ করেন,  সে ধরনের একটি শব্দও কি আব্বাস তাঁর কোনো রকম বক্তৃতায় এই পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন? তাহলে কিসের ভিত্তিতে আব্বাস সাম্প্রদায়িক?  আব্বাসের একটি বক্তৃতার মধ্যে কি অন্য  সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি কোন ধরনের বিদ্বেষমূলক কথা ,কোন ধরনের প্রচারণামূলক কথাবার্তা আমরা শুনতে পেয়েছি? তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা তাঁকে সাম্প্রদায়িক বলছি?

                     যে রাজনৈতিক দলটির সব স্তরের  কর্তা ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী সমর্থক  মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন কথা বলছে ,সমস্ত ধরনের মানুষের স্বাধিকারের কথা বলছে, সেটা ধর্মীয় সংখ্যালঘুই হোন,  ভাষাভিত্তিক সংখ্যালঘু এবং লিঙ্গ ভিত্তিক সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী তপশিলি জাতি উপজাতি বা অন্যান্য  অনগ্রসর  জাতি( ওবিসি)  যাঁদের বলা হয়, সমস্ত ধরনের মানুষের অধিকারের কথা বলছে,  সেই দলটি কে, দলের কর্মকর্তাদের কিভাবে আমরা সাম্প্রদায়িক বলছি?  

               ভারতের সংবিধানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নটি কি সাম্প্রদায়িক ? আব্বাস তো ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে বজায় রাখবার জন্য শপথ গ্রহণ করছেন। এই শপথের জন্য কি আমরা তাঁকে সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করব? আব্বাস তো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা,  কর্মসংস্থানের কথা বলছেন। শিল্পের কথা বলছেন। এইজন্য কি তাঁকে আমরা সাম্প্রদায়িক বলে অভিহিত করব?

              এই রকম এক ভয়াবহ প্রবণতা মানুষকে রাজনীতি থেকে  বিযুক্ত করে, এক ধরনের সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক ধারা উপধারা কে প্রবাহিত করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে। এই প্রচেষ্টার সামাজিক প্রযুক্তির ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া র চেষ্টা করা হচ্ছে বামপন্থীদের মধ্যে ।এই প্রচেষ্টাটি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সক্রিয়ভাবে কর্মরত বামপন্থী মানুষজন সহ প্রগতিশীল চিন্তা চেতনায় বিশ্বাস করেন ,এমন মানুষজনদের ভেতরে ।

               অতিবাম বলে যারা নিজেদের পরিচয় রাখেন, বিশেষ করে যে লিবারেল গোষ্ঠী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পান, বিজেপিকে ঠেকানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র সক্ষম ব্যক্তি বলে মনে করেন, সেই সমস্ত ব্যক্তিরা আব্বাস সিদ্দিকী ঘিরে এমন ধরনের প্রচার করছেন যা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। লিবারাল বলে দাবি করা লোকেরা এই প্রচার পর্যন্ত চালাচ্ছে যে ,আব্বাস সিদ্দিকী যতখানি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি আক্রমণাত্মক,  বিন্দুমাত্র তিনি বিজেপি বা তাদের মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের  বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নন। একটা রহস্য কাহিনীর মতো তারা এই ধরনের প্রচার চালাতে শুরু করেছে যে,  আব্বাস সিদ্দিকী নাকি বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের  দ্বারা নানা ধরন ভাবে পরিচিত হচ্ছেন , এই ধরনের সঠিক খবর তাদের কাছে আছে। 

            এইরকম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তারা কিন্তু একটা বড় রকমের সামাজিক মেরুকরণ তৈরি করে বামপন্থীদের ভিতরে ভয়াবহ বিভ্রান্তি র ভিতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিজেপি এবং তার ছুপা রুস্তম সহযোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে সহযোগিতা করবার পথে চলেছেন। আমাদের এই অপচেষ্টা সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করাই এখন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে রক্ষা করবার অন্যতম প্রধান কাজ হিসেবে উঠে আসছে। বিশেষ করে রাজনীতিকে যখন রাজনীতির বাইরে নিয়ে এসে একটা অদ্ভুত ধরনের কৌশলের  ভেতর দিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে নতুন করে একটা কৌশল হিশেবে  প্রতিষ্ঠিত করে,  দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনে সংগ্রামে প্রয়োগ করার চেষ্টা চলছে ,তখন সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের এই প্রবণতা বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। না হলে সার্বিকভাবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

*মতামত লেখকের নিজস্ব

Spread the word