মানুষের মন পরাজয় জানেনা
আমাদের পাহাড়গুলি চিরকাল_থাকবে
আমাদের নদীগুলি চিরকাল_থাকবে
আমাদের জনগণ চিরকাল_থাকবে
মার্কিন হানাদার পরাজিত হবে
আবার আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলবো
দশগুণ সুন্দর করে
হো চি মিনের শেষ ইচ্ছাপত্র, ১৯৬৯
বিগত শতাব্দীর বা বর্তমান সময় পর্যন্ত শ্রেষ্ঠতম আন্তর্জাতিক মহান কমিউনিস্ট নেতাদের মধ্যে বিপ্লবী হো চি মিন ছিলেন অন্যতম। যার জীবনে অসম্ভব বলে কোনো শব্দ ছিল না, অনায়াসে বলতে পারতেন দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে একজন কমিউনিস্ট পাহাড় ভেঙ্গে ফেলতে পারে।
কম: লেনিন লিখিত ‘COLONIAL THESIS’ প্রকাশিত হয়েছিল ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘Lumani’তে। এই থিসিস্ এ অনেক রাজনৈতিক বাক্য ছিল যা হো চি মিন প্রাথমিক পর্যায়ে উপলব্ধি করতে পারেন নি। বারবার পড়ার পর এই থিসিস্ তাঁকে অনুপ্রেরণা দেয়। বুঝতে পারেন ভিয়েতনামের মুক্তি আন্দোলনের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পথ। তিনি এতটাই আপ্লুত হয়েছিলেন লাইব্রেরীর কক্ষে বসে Colonial Thesis পড়তে পড়তে আনন্দাশ্রুতে ভিজিয়ে ফেলতেন সেই বইকে। ১৯২৪ সালের ২১শে জানুয়ারী মহামতি লেনিনের মৃত্যুর খবর হো চি মিনের কাছে যখন পৌঁছায় প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বিহ্বল হয়ে পড়েন। বিশ্বাস করতে পারেন নি এমন একটি কঠিন সংবাদ। কিন্তু সমগ্ৰ সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্ধনমিত লাল পতাকা যেন সোচ্চারে আঘাত করে হো চি মিনের হৃদয়কে। হো চি মিন নিজে মুখেই বলেছিলেন, “লেনিন যখন জীবিত ছিলেন তখন তার সাথে দেখা করার সুযোগ হয়নি। সেটা আমাকে সারাজীবন দু:খ দেবে”।
হো চি মিন ছিলেন ব্যতিক্রমী কমিউনিস্ট। তত্ত্বকে সহজেই জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারতেন, ভাষা বুঝতেন জনগণের। কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে জনগণের ভালোবাসা পেতে গেলে তুমি বয়স্কদের শ্রদ্ধা করবে, মহিলাদের সম্মান দেখাবে এবং শিশুদের সঙ্গে পিতার মতো ব্যবহার করবে। সবচেয়ে বড় কথা তিনি বলতেন স্থানীয় রীতিনীতিকে তোমাকে সবসময় সম্মান জানাতে হবে, সেই রীতিনীতি যতই অদ্ভুত ঠেকুক না কেন!
কর্মীদের তিনি তিনভাগে ভাগ করেছিলেন।
১) একদল যে কোনো সংগ্ৰামে বিশ্বস্ত থাকে।
২) আর একদল ঝাঁপায় কিন্তু পুলিশ দেখলেই শামুকের খোলে গুটিয়ে যায়।
৩) আর একদল স্বেচ্ছা বিপ্লবী শেষপর্যন্ত সবাইকে রক্ষা করতে পারে না।
আসল কথা যত বেশী সম্ভব মানুষকে বোঝাতে হবে বিপ্লব অনিবার্য।
হো চি মিন বলতেন,
১) কঠিন শব্দ পরিহার করো
২) জনগণের ভাষায় কথা বলতে শেখ
৩) গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্ন বোঝানোর আগে তাদের পরিবার সম্পর্কে সচেতন থাকো, তাহলেই দেখবে তোমাদের কথা তারা মন দিয়ে শুনছে।
তিনি মনে করতেন যতই মেধাসম্পন্ন তুমি হও না কেন, এই গুণ রপ্ত করা ব্যতিরেকে একজন কর্মী হয়ে উঠতে পারবে না।
হো চি মিন বিশ্বাস করতেন, “আটাত্তর বছর আর কি এমন বয়স, সে তো শক্ত হাতে দেশের দায়িত্ব নিতে পারে”।
হো চি মিনের লেখা কবিতা আশাবাদের কবিতা।
জীবনের জন্য, ভালোবাসার জন্য গান বা কবিতা লিখতে হলেও বুকে কিছু দম লাগে।
তাই তিনি লিখেছিলেন,
“গম পিষছে এক পাড়াগেঁয়ে মেয়ে
সামনে তার জ্বলছে
গনগনে এক উনুন
মানুষের মন পরাজয় জানে না”।