১৫-১৭ মার্চ, কলকাতায় হতে চলেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র ২৬তম রাজ্য সম্মেলন। ব্রিটিশ শাসনে থাকা ভারতের অবিভক্ত বাংলায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম রাজ্য সম্মেলন হয় ১৯৩৪ সালে। মেটিয়াবুরুজে। সর্বহারা-কৃষক মেহনতি মানুষের স্বার্থে শ্রেণিসংগ্রাম, গণআন্দোলন পরিচালনায় এই রাজ্যে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উজ্জ্বল। রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য নজির। মেটিয়াবুরুজ থেকে কলকাতা। প্রথম থেকে ২৬তম সম্মেলন। সেই ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য রাজ্য ওয়েবডেস্কের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হবে চারটি পর্বে। আজ তার প্রথম পর্ব।
১ম State সম্মেলন (১৯৩৪)
এই সম্মেলনের সন, তারিখ এবং সময় সম্বন্ধে দ্বিমত রয়েছে। একটি মতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে, মেটিয়াবুরুজে, আরেকটি মত অনুসারে সম্মেলন হয় ১৯৩৬ সালে বেহালার বুড়ো শিবতলায়। ব্রিটিশ শাসনে নিষিদ্ধ ছিল কমিউনিস্ট রাজনীতি, ১৯৩১ সালে আবদুল হালিম’কে সম্পাদক নির্বাচিত করে পার্টির কলকাতা কমিটি কাজ শুরু করে। পার্টির শক্তি বৃদ্ধি পেলে সেই কমিটিকেই বাংলা কমিটি (প্রথম প্রাদেশিক কমিটি) বলা হয়। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রস্তাব উত্থাপিত করে গোপনে আয়োজিত প্রথম সম্মেলন আন্দোলন-সংগ্রামের আহ্বান জানায়, আবদুল হালিম জেলে থাকায় সম্পাদক নির্বাচিত হন মণি চট্টোপাধ্যায়। তার পরে ১৯৩৬ সাল থেকে পার্টির দ্বিতীয় সম্মেলন অবধি সম্পাদকের দায়িত্ব সামলান গোপেন চক্রবর্তী।
২য় State সম্মেলন (১৯৩৮–৩৯)
এবারের সম্মেলন আয়োজিত হয় চন্দননগরে, ৮৭ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দ্বিতীয় সম্মেলনও গোপনেই করতে হয় – পার্টির কাজ প্রকাশ্যে করায় আইনি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। এই সময় পার্টির সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০। প্রথম সম্মেলনের পরে পার্টির ভিতরে অনেকগুলি গোষ্ঠী সক্রিয় থাকায় অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং লেবর পার্টি সম্পর্কে বিতর্কের সমাধায় দ্বিতীয় সম্মেলনে আলোচনা হয়। অভ্যন্তরীণ বিতর্ক মেটাতে সোশ্যালিস্ট ঐক্য গড়ে তোলায় জোর দেওয়া হয়। এই সম্মেলন থেকেই পার্টির ইতিহাস রচনার জন্য একটি কমিশন গঠিত হয়। দ্বিতীয় সম্মেলন থেকে সম্পাদক নির্বাচিত হন নৃপেন চক্রবর্তী।
৩য় State সম্মেলন (১৮–২১ মার্চ, ১৯৪৩)
১৯৪২ সালের ২৩ জুলাই পার্টির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। তখন পার্টির সদস্য ৯০০। ১৯৪১ সালে হিটলারের বাহিনীর সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ, কলকাতা এবং চট্টগ্রামের উপরে ৪২ সালে জাপানিদের বোমাবর্ষণ এবং পার্টির তরফে জনযুদ্ধের আহ্বান – এক বিশেষ পরিস্থিতিতে কলকাতার ভারত সভা হলে তৃতীয় সম্মেলন আয়োজিত হয়। দ্বিতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সম্মেলন বাংলায় পার্টি গঠনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রকাশ করে, স্লোগান ওঠে ‘গণপার্টি গঠন কর’। সম্পাদক নির্বাচিত হন ভবানী সেন।
৪র্থ State সম্মেলন (৪–৬ অক্টোবর, ১৯৪৭)
এই রাজ্য সম্মেলন আয়োজিত হয় কলকাতায়, ডেকার্স লেন। তৃতীয় সম্মেলনের পর থেকেই পার্টির অভ্যন্তরে দুটি প্রবণতা তৈরি হয়, প্রথম দলে শ্রেণিসংগ্রামের নাম করে আন্দোলনে বাড়তি ঝোঁক দেখা যায় এবং আরেকটিদল যেনতেন প্রকারে গনতান্ত্রিক মধ্যবিত্তদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে ব্যাস্ত থাকেন। পার্টির তৃতীয় সম্মেলন এই দুটি প্রবণতাকেই বিচ্যুতি হিসাবে চিহ্নিত করে। এই সময় পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল ১৯,২৫০। ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সারা বাংলায় যুক্তফ্রন্ট চাই’ এবং ‘ বাংলার দুটি মন্ত্রীসভাতেই প্রগতিশীল মন্ত্রীসভা গঠন কর’ স্লোগান ওঠে এই সম্মেলন থেকে। সম্পাদক নির্বাচিত হন রণেন সেন।
৫ম State সম্মেলন (৫–৯ অক্টোবর, ১৯৫১)
৪র্থ সম্মেলনের পরেই পার্টির উপরে নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে। ১৯৫১ সালের ৫ই জানুয়ারি সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয়। ততদিনে পার্টির সদস্যসংখ্যা প্রায় ৯০০০। অতীতের বাম হঠকারী পার্টি লাইন পরিত্যাগ করে জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকেই লক্ষ্য হিসাবে স্থির করা হয়, পার্টি কর্মসূচি গৃহীত হয় এবং নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। সম্পাদক নির্বাচিত হন মুজফ্ফর আহ্মদ।
৬ষ্ঠ State সম্মেলন (১৭–২১ ডিসেম্বর, ১৯৫৩)
পঞ্চম সম্মেলনের পরে পার্টির কাজ নতুন করে গতি আসে। গন আন্দোলনে পার্টির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় পার্টির সদস্য সংখ্যা ৮১৯৮। ২৫০ জন প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ষষ্ঠ সম্মেলন আয়োজিত হয় কলকাতার মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে। রাজ্যে গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের উপরে ভিত্তি করে বিকল্প সরকার গড়ার আহ্বান জানানো হয়। সম্পাদক নির্বাচিত হন জ্যোতি বসু।
ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া, গনশক্তি – লেখার সাথে সদৃশতা বজায় রেখে ছবি যুক্ত হয়েছে, সবক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছবি পাওয়া যায় নি
তথ্যসুত্রঃ গনশক্তি
*********************