Site icon CPI(M)

Make Sanjukta Morcha Victorious to ‘Unlock’ Life and Livelihood

ভয়াবহ একটা বছর আমরা কাটিয়ে এলাম। বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর প্রকোপ ঠেকাতে শুরুতে কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার গড়িমসি করার পরে শুরু হয় বিশ্বের ‘কঠোরতম’ লকডাউন। কোভিড ও লকডাউনের যুগপত আক্রমণের মধ্যে কেরালার এলডিএফ সরকার ও এ রাজ্যের বামপন্থীরা এক বিকল্প নিয়ে মানুষের দরজায় হাজির হয়। ‘দুয়ারে সরকার’ এর মতো ঢাকঢোল পিটিয়েও নয় বা ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ বলেও নয়। লাখ লাখ পরিযায়ি শ্রমিক তাদের পরিবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লে তাদের ন্যূনতম বেঁচে থাকার সামগ্রী তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল বামপন্থীরাই। যখন কেন্দ্র বা রাজ্য কেউই পশ্চিমবঙ্গে কতজন পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন বা ফিরতে চান জানাতে পারছিল না তখন বাম শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কয়েক লক্ষ পরিযায়ি শ্রমিকের বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত নথি তুলে দেওয়া হয়েছিল নবান্নের “খেলা হবে” টিমের ক্যাপ্টেন মমতা ব্যানার্জীর হাতে- বলা বাহুল্য সেই তথ্য নিয়েও রাজ্য সরকার কোন কাজ করেনি। “সোনার বাংলার” ভোট পাখি তখন দিল্লির ঘর থেকে বেড়োনোর প্রয়োজনও বোধ করেননি।

ভোট বড় বালাই , এ রাজ্য সহ মোট পাঁচটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভোটের নির্ঘন্ট নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাই ভোট পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছোটানো হচ্ছে। ২০১১ অবধি মমতার বিশ্বস্ত ডেপুটি মুকুল রায় থেকে গত বছর অবধি ‘ছোট ভাই’ শুভেন্দু অধিকারী এখন জোড়া থেকে পদ্ম ফুলে গেছে। কিন্তু বাংলার বেকার সমস্যার সমাধান হয়নি। কর্মসংস্থান মানে এরাজ্যের যুব সমাজ এখন বোঝে ক্লাবের সরকারি অনুদান নিয়ে লুম্পেনে পরিণত হওয়া বা কিছু অর্থের বিনিময়ে “জয় শ্রী রাম” হুঙ্কার দিয়ে দাঙ্গাবাজ হওয়া। সর্বত্র হতাশা ও ক্রোধ। কিন্তু এরাজ্যে শিল্পায়নের যে প্রতিশ্রুতি বাম আমলে দেওয়া হয়েছিল তাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বিগত একদশকে। সিঙ্গুরের কঙ্কালসার দশা এ রাজ্যের শিল্পের চিত্রটা বুঝিয়ে দেয়। আর কেন্দ্রের সরকার তো বেচুবাবু। সাড়ে সাত দশক ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আদানি,আম্বানির হাতে তুলে না দেওয়া অবধি তাদের শান্তি নেই । CMIE এর সাম্প্রতিকতম বেকারত্বের তথ্য (১৭ মার্চ,২০২১) অনুসারে এ দেশে বেকারত্বের হার ৬.৫%, বাংলায় ৬.২%,যেখানে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের বেকারত্বের হার বিশ্বব্যাঙ্কের ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী ৫.৩%।

সংযুক্ত মোর্চার তাই স্পষ্ট দাবি শিল্পায়ন করতে হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, চাকরির সুযোগ বাড়াতে হবে। টেট,এসএসসি,পিএসসি কে ২০১১ এর আগে যেমন নিয়মিত কর্মসংস্থানের সুযোগ হিসাবে এ রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবক যুবকী ভরসা করতেন সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। দাদা বনাম দিদি, সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যা লঘু , এরাজ্যের লড়াইটা এইরকম কোন ‘বাইনারি’ তে বাঁধলে চলবে না। বামফ্রন্টের খসড়া ইশতেহারে তাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে – ” শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিনে ৪০০ নয়। ৭০০ টাকা। মাসে ২১,০০০ টাকা। প্রবাসী বা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা দপ্তর। বিশেষ সুরক্ষা প্রকল্প। বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মাসে ২,৫০০ টাকা ভাতা ও সস্তায় রেশন—বন্ধ চটকল, চাবাগান ও অন্যান্য বন্ধ শিল্পের শ্রমিকদের জন্যও এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সমস্ত ধরনের অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত ও সম্প্রসারিত করা হবে। সরকারি প্রকল্পে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিকদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা হবে।”
বলা হয়েছে “এরাজ্যে বিপুল পরিমাণ তরুণ-তরুণীর কাজ নেই। শিল্প, কৃষিসহ পরিষেবা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারের কার্যধারার মূল লক্ষ্য হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। সমস্ত সরকারী শূন্যপদ পূরণ করা হবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়মিত হবে। মেধা তালিকা টাঙিয়ে দেওয়াসহ স্বচ্ছ পদ্ধতি গ্যারান্টি করা হবে। সরকারি ক্ষেত্রের সাথে সাথে বেসরকারি ক্ষেত্রেও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে নিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হবে। কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র গড়ে তোলার চেষ্টা চলবে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলেও প্রসারিত করা হবে। ১০০ দিনের পরিবর্তে ১৫০ দিনের কাজ ও মজুরির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। স্বনিযুক্তি প্রকল্প সরকারী বিনিয়োগ ও উদ্যোগ বৃদ্ধি করা হবে। ছোট ব্যবসায়ীদের জিএসটি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকারের বিশেষ সেল তৈরি করা হবে। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ঋণের ব্যবস্থা করে, উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কাজের ভিত্তিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পরিণত করা হবে। কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্রর সম্ভাবনাকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করার লক্ষ্যে দু’চাকার অ্যাপ ক্যাব ও ডেলিভারির জন্য কমার্শিয়াল লাইসেন্স দেওয়া হবে।”

দুই দলের কাজিয়া নয়, মানুষের দাবি কাজ, তার গ্যারান্টি করবে সংযুক্ত মোর্চা। তাই, লকডাউন শেষ,এবারে বাংলা ‘আনলক’ হবে সংযুক্ত মোর্চার হাত ধরেই।

Spread the word