Site icon CPI(M)

Georgi Dimitrov and Present Day India

গৌতম গাঙ্গুলী 

ভারতবর্ষের  অষ্টাদশ  নির্বাচন সদ্য শেষ। মন্ত্রীসভা গঠিত।বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এর পাশাপাশি এই নির্বাচনে সবচাইতে  গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিজেপি বিরোধী  ২৮ টি রাজনৈতিক দলের ইণ্ডিয়া ব্লকের গঠন ও সংসদে তাদের আসন সংখ্যা। যা সুনিশ্চিত  করেছে আর এস এসের রাজনৈতিক দল হিসাবে বি জে পির হিন্দু রাষ্ট্র গঠন,দেশের সংবিধানকে অপ্রাসঙ্গিক করার ফ্যাসিস্টিক/ফ্যাসিস্ট পরিকল্পনা সাময়িকভাবে ধাক্কা খেয়েছে ।শঙ্কা কি চলে গেলো? উত্তর, একেবারেই, ‘না’। কর্পোরেট -সাম্প্রদায়িক চক্রের চলন স্তব্ধ হয়ে গেলো? না। নতুন পরিকল্পনা আসবে। তাকে রুখে দেবার প্রস্তুতি,  সাংগনিক,রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরো জরুরী  হয়ে উঠলো। ঠিক এইখানেই জর্জি ডিমিট্রভকে স্মরণ এবং মার্কসবাদী আন্দোলন ও সাহিত্যে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান নিয়ে চর্চা করা আবশ্যিক। 

১৯৪৫ পরবর্তীতে  বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ১৯১৯ এ বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হলেও ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে মূলতঃ ১৯৩৫-১৯৪৩ সাল অবধি কমিন্টার্নের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে। পেশায় টাইপ সেটার,রাজনীতিতে ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী,বুলগেরিয়ার সংসদে বিরোধী সমাজতন্ত্রীদের অন্যতম প্রধান মুখ জর্জি ডিমিট্রভের জন্ম ১৮ জুন ১৮৮২। জীবনাবসান ২ জুলাই, ১৯৪৯। রাইখস্টাগে আগুন ধরানোর মিথ্যা অভিযোগে সমাজতন্ত্রী,কমিউনিস্ট  কর্মী ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে  যে অভিযোগ তার বিচার হয় লিপজিগে।আইনজীবী  ছাড়াই ডিমিট্রভ আত্মপক্ষ সমর্থনে যে ভাষণ দেন ও কমিউনিস্টদের স্বপক্ষে  যে যুক্তি হাজির করেন,আদালত বাধ্য হয় তাঁকে  মুক্তি দিতে।ডিমিট্রভের এই ভাষণ বিখ্যাত। এই মামলার পর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে আসেন কমিউনিস্ট ইন্ট্যারন্যাশনালের নির্দেশে। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৩ অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগের থেকে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার দুবছর আগে,কমিউনিস্ট  ইন্টারন্যাশনাল ভেঙ্গে দেওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন তার সাধারণ সম্পাদক।

Source:Google

কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সপ্তম কংগ্রেসে ১৯৩৫ সালের ২রা আগস্ট জর্জি ডিমিট্রভ যে বক্তৃতা করেন তার জন্য বিশ্ব কমিউনিস্ট  আন্দোলন ৮৯ বছর পরেও তাঁর কাছে শ্রদ্ধাবনত। বক্তৃতার শিরোনাম -The Fascist Offensive and the Tasks of the  Communist International in the Struggle of the Working Class against Fascism.

লেখাটির তিনটি অংশ ক)ফ্যাসিজম ও শ্রমিক শ্রেণি; খ)ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির যুক্তফ্রন্ট; গ)কমিউনিস্ট পার্টিগুলির সংহতি এবং সর্বহারার রাজনৈতিক  ঐক্যের জন্য সংগ্রাম।

বর্তমান লেখার উদ্দেশ্য ডিমিট্রভের সূত্রায়ন ও নির্দেশ বর্তমান ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে কতটা প্রযোজ্য তা ভাবতে পাঠকদের উৎসাহিত করা। ৮৯ বছর পার হয়ে গেছে। ডিমিট্রভ লেনিনের লগ্নি পুঁজি সংক্রান্ত সংজ্ঞা ও তার বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করেই তাঁর সূত্রায়ন ও নির্দেশাবলী সাজিয়েছেন। বিবেচনা করা দরকার ভারতবর্ষের  ক্ষেত্রে তো বটেই, গোটা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই এতো বছর পরে তা কতটা প্রাসঙ্গিক।

(ক)

ডিমিট্রভ  তাঁর লেখার প্রথম অংশে ফ্যাসিজমের শ্রেণি চরিত্র,ফ্যাসিজমের বিজয় জনগণকে কোন বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়,ফ্যাসিজমের বিজয় অবশ্যম্ভাবী কিনা ও ক্ষমতা হিসাবে তার ভয়ংকর রূপ ও অস্থায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ফ্যাসিজমের প্রয়োজন হয় কেন?

সাম্রাজ্যবাদ তার সংকটের গোটা বোঝা শ্রমজীবি মানুষের কাঁধে চাপাতে চায়। বাজারের সংকট সমাধানে দুর্বল জাতিগুলিকে তার ভৃত্যে পরিণত করে ঔপনিবেশিক নিপীড়ন জোরদার করে ও গোটা বিশ্বকে পুনরায় ভাগ করতে চায়। এ ক্ষেত্রে তার মূল অস্ত্র যুদ্ধ। মনে রাখা উচিত ১৯৩০ এর দশকের অর্থনৈতিক সংকট ও আসন্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে  ডিমিট্রভের এই অবস্থান। অর্থনীতিবিদদের মতামত সেই সংকটের থেকেও বর্তমান সময়ে ২০০৮ এ তৈরী  সংকট আরো প্রবল যার জের আমাদের দেশের মধ্যে প্রবল ভাবে বিদ্যমান। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ বা পাশ্ববর্তী দেশের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। কারণ এখন পুঁজিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ যুদ্ধ না করেও একটা দেশকে পদানত করার ও তার সম্পদ লুঠ করার নানান নতুন নতুন কৃতকৌশল রপ্ত করেছে। ফলে ডিমিট্রভের এই সূত্রায়নটি বাতিল না করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।

বর্তমান বিশ্বে একবিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্রের চেহারা কেমন হবে, তা এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট না। ফলে ফ্যাসিজমের প্রয়োজন সমাজতন্ত্রের মূল শিকড় সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামরিক ভাবে আক্রমণ করে ধ্বংস করা–ডিমিট্রভের এই সূত্রায়নও এই সময়কালে আক্ষরিক অর্থে খুব প্রযোজ্য এমনটা বলা যায় না। বরং যুদ্ধটা এখন অনেক বেশি মতাদর্শগত। যা কোন ভাবেই সামরিক আক্রমণের থেকে কম ভয়াবহ না। আমাদের দেশের শিক্ষা,সংস্কৃতির দিকে চোখ রাখলেই তা বোঝা সম্ভব। ফ্যাসিজমের লক্ষ্য সর্বহারার পরাজয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ফ্যাসিস্ট একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্টা। এ কথা ১৯৩৫ থেকে আজ ২০২৪ পর্যন্ত সত্য। লাল কৃষ্ণ আদবানীর রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রিক সরকারের প্রস্তাব থেকে, মনু সংহিতাকে দেশের রাজনীতি, সমাজনীতির নির্দেশক করার বাসনা,মোদির সংসদে ৪০০ র বেশি আসনের চাহিদা(যাতে দেশের সংবিধানকে  সংশোধন  করে ফ্যাসিস্ট অ্যাজেণ্ডাকে চালু করা যায়) অবধি প্রতিভাত।

(খ)

কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ত্রয়োদশ প্লেনামে ফ্যাসিজমকে বর্ণনা করা হয়েছে লগ্নী পুঁজির সবচাইতে প্রতিক্রিয়াশীল, অরাজক ও সাম্রাজ্যবাদী উপাদনের উন্মুক্ত সন্ত্রাসবাদী একনায়কতন্ত্র হিসাবে।এ কথা আজকের সময়েও সত্য। ফ্যাসিজম লগ্নি পুঁজির নিজস্ব ক্ষমতা।(এইখানেই একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ রূপ- বইতে লেনিনের বর্ণিত লগ্নি পুঁজির বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ডিমিট্রভ এই কথা বলছেন। মার্কসের শিক্ষানুযায়ী পুঁজিবাদ বারংবার তার সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে নেয়।ডিমিট্রভের বক্তৃতার ৮৯ বছর পার হয়েছে। সি পি আই(এম) এর শেষ মতাদর্শগত দলিলে লগ্নি পুঁজির লেনিন বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের সাথে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে যা অত্যন্ত স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। তাতে ডিমিট্রভের এই সূত্রায়ন খাটো তো হয়ইনি বরং তা আরো ভয়ংকর চেহারা উপলব্ধির কাজকে আরও স্পষ্ট করেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কল্যাণকামী রাষ্ট্রের  যে চেহারা দেখা গিয়েছিলো,সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগেই সাতের দশকের শেষ ভাগে নয়া অর্থনৈতিক নীতি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তাকে প্রতিস্থাপিত করে। আমাদের দেশে ৯’ এর দশকের শুরুতে তার পথ চলা শুরু হয়। যার মূল কথা রাষ্ট্রকে অর্থনীতির উপর থেকে হাত তুলে নিতে হবে। মুক্ত অর্থনীতি, বেসরকারীকরণ,বিশ্বায়ন। ফলে লগ্নি পুঁজিও তার বিকৃতরূপ আরো বিকৃত করেছে। ২০০৮ সালে বুদ্বুদ বিস্ফোরণের মাধ্যমে পুঁজিবাদ আরো বেশি করে যে সংকটে পড়েছে তার উদ্ধার  এখনো হয়নি। লগ্নি পু্ঁজি তার অর্থায়নের( Financialisation of finance Capital) মাধ্যমে তার মুনাফা রক্ষা ও বাড়ানোরর চেষ্টায় রত। অর্থাৎ ফ্যাসিজম পুঁজিবাদ ও লগ্নিপুঁজির যে প্রয়োজনে তৈরি হয়,ভারতবর্ষে সেই প্রয়োজন তৈরি হয়েছে।)

ডিমিট্রভ বলছেন, ফ্যাসিজম সর্বহারা শ্রেণী ও কৃষকদের বিপ্লবী অংশ ও বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে এক সংগঠিত প্রতিশোধপরায়ণ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। আমাদের দেশে চারটি শ্রম কোড দ্বারা শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার লুট,কৃষক বিরোধী  আইন ও প্রবীর পুরকায়স্থ সহ বাকিদের উপর আক্রমণ এই সূত্রায়নের সামন্য উদাহরণ মাত্র।

তার কথানুযায়ী ফ্যাসিজম বিদেশনীতির ক্ষেত্রে উগ্র জাতীয়তাবাদী। যার উদাহরণ  গত লোকসভা নির্বাচনের(২০১৯)  আগে পুলওয়ামার ঘটনায় পাওয়া গেছে।

ফ্যাসিস্ট একনায়কতন্ত্রের ও ফ্যাসিজমের বিকাশ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের হয়। ধরণ নির্ভর করে নির্দিষ্ট  দেশের ঐতিহাসিক,সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর। নির্ভর করে জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও আন্তর্জাতিক ভাবে দেশটির রাজনৈতিক ভূগোলের উপর। যে দেশে ফ্যাসিজমের গণভিত্তি বিস্তৃত না ও ফাসিস্ট শিবিরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্দন্ধ আছে, এবং তা যথেষ্ট  পরিমানে, সেখানে ফ্যাসিজম সংসদ অবিলম্বে বাতিল হোক,তা চায় না। বরং যৎকিঞ্চিত আইনী ব্যবস্থা টিঁকিয়ে রাখে, অন্যান্য বুর্জোয়া পার্টিকে ছাড় দেয়। অষ্টাদশ  নির্বাচনের পর ভারতে এন ডি এ জোটের দিকে তাকালে এ কথা বোঝা যাবে।

ফ্যাসিজমের ক্ষমতায় আরোহণ,এক বুর্জোয়া দলের বদলে আর এক বুর্জোয়া দলের সরকার গঠন না। এটা হোল রাষ্ট্রের উপর এক ধরণের বুর্জোয়া শ্রেনী আাধিপত্যর বদলে আর এক ধরনের শ্রেনী আধিপত্য, উন্মুক্ত সন্ত্রাসবাদী একনায়কতন্ত্র। এটা না বুঝলে বড়ো ভুল হয়ে যেতে পারে। সম্ভব হবে না বিপ্লবী সর্বহারার পক্ষে বিস্তৃততম শ্রমজীবী মানুষকে ফ্যাসিস্টদের ক্ষমতা দখলের ভয়ংকর ঘটনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে টেনে আনা। সম্ভব হবে না বুর্জোয়া  শিবিরের  মধ্যেকার দ্বন্দ্বের সুবিধা গ্রহণ। এর থেকে কম বিপদ এটাও না,যদি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দেশে বুর্জোয়ারা যে নীতিসমূহের দ্বারা শ্রমজীবী মানুষের গণতান্ত্রিক  অধিকার খর্ব করছে,সংসদের অধিকার খাটো করছে( ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে গত সংসদে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ঠিক এই কাজটিি করেছেন) ও বিপ্লবী আন্দোলনের উপর নিপীড়ন করছে,তাকে ছোট করে দেখা। এই কাজগুলিও ভারতবর্ষে বিগত সরকার করেছে।

ফ্যাসিস্ট একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্টার প্রাথমিক পদক্ষেপ হোল আগের বুর্জোয়া সরকার/সরকারগুলি এমন একগুচ্ছ প্রতিক্রিয়াশীল পথ নেয় যা সরাসরি ফ্যাসিজমকে আমন্ত্রণ জানায়(আমাদের দেশে নয়া উদারনীতি চালু ও রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির বোঝাপড়া,রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর অতীতে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারে অংশগ্রহণ,সংসদে জনবিরোধী বিল পাস করার সময় তৃনমূল সাংসদদের অনুপস্থিতি এর উদাহরণ)।

জনগণের উপর ফ্যাসিজমের প্রভাবের কারণ,তা জনগণের সবচাইতে প্রয়োজনীয় দাবি পেশ করতে সক্ষম। জনগণের মনের গভীরে প্রবিষ্ট সংস্কারকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম। ফ্যাসিজম চরম সাম্রাজ্যবাদীদের হয়ে কাজ করলেও জনগণের সামনে ভান করে দুঃখী জাতিসত্ত্বার অগ্রণী প্রচারক হিসাবে।(ভারতবর্ষে ধর্মাচারণে সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু জনগণের কাছে, হিন্দু ধর্মের ধ্বজাধারী রূপে)।আরো নানান কৌশল ফ্যাসিজম গ্রহণ করে দেশ ভেদে যা ডিমিট্রভ আলোচনা করেছেন।

ফ্যাসিজমের বিজয়ে জনগণের কি লাভ হয়? এককথায় বলা যায় কিছু না। যে প্রতিশ্রুতি  ও প্রলোভন ফ্যাসিজম জনগণের সামনে হাজির করে,তা পূরণ তো হয়ই না,বরং একনায়কতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রকৃতি অনুযায়ী নেমে আসে শোষন,নিপীড়ন,অত্যাচার, অগণিত মৃত্যু আর হাহাকার।

Source:Google

(গ)

যে প্রশ্ন ডিমিট্রভ তাঁর বক্তৃতায় আলোচনা করেছেন, তার প্রতি নজর ফেরানো দরকার। ফ্যাসিজমের বিজয় কি আটকানো সম্ভব,সম্ভব হলে কি ভাবে?

এটা নির্ভর করে,ডিমিট্রভের মতে, প্রথমতঃ ও মূলতঃ শ্রমিক শ্রেণির দৃঢ় নির্ভীক নিজস্ব কর্মকাণ্ডের উপর। যা নিজের শক্তিকে একটি সামগ্রিক নির্ভীক সৈন্যদলে পরিণত করবে ও পুঁজিবাদ ও ফ্যাসিজমের আক্রমণকে প্রতিহত করবে। এর লড়াই,এর ঐক্য সর্বহারা,কৃষক,শহুরে পাতি বুর্জোয়া,যুব ও বুদ্ধিজীবীদের উপর ফ্যাসিজমের প্রভাবকে প্রতিহত ও পঙ্গু করবে এবং সক্ষম হবে এদের এক অংশকে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করাতে ও আর এক অংশকে নিজের পক্ষে জয় করে নিতে।

দ্বিতীয়তঃ নির্ভর করে এক শক্তিশালী বিপ্লবী পার্টির অস্তিত্বের উপর যা সঠিকভাবে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের লড়াইকে নেতৃত্ব দেবে।

তৃতীয়তঃ এটা নির্ভর করে  কৃষক সমাজ ও শহুরে পাতি বুর্জোয়াদের প্রতি শ্রমিক শ্রেণির সঠিক নীতির উপর। এদের সঙ্গে নিতে হবে,এরা যেমন আছে তেমন ভাবে। যেমন আমরা পছন্দ করি তেমন হলে নেওয়া যাবে, এমনটা না। সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় এদের সন্দেহ ও দোদ্যুলমানতা কাটবে। সর্বহারার রাজনৈতিক সাহায্যে এরা বিপ্লবী চেতনা ও কর্মকাণ্ডের উচ্চতর স্তরে পৌঁছবে।

চতুর্থতঃ বিপ্লবী সর্বহারার সতর্ক নজরদারি ও সময়মত প্রতিক্রিয়ার উপর এটি নির্ভরশীল।

(ঘ)

যে প্রশ্ন ডিমিট্রভের সময় থেকে এখন অবধি বারবার উচ্চারিত হয়েছে,ফ্যাসিজমকে ক্ষমতায় আসা থেকে কি ভাবে আটকানো যায়? ক্ষমতায় এসে গেলে কি ভাবে তাকে উৎখাত করা যায়। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে দুটো প্রশ্নই প্রাসঙ্গিক। কমিউনিস্ট  আন্তর্জাতিকের উত্তর এইরকম – প্রথম কাজ  যা থেকে শুরু করতে হবেঃ যুক্ত ফ্রন্ট  গঠন করতে হবে। প্রত্যেক কারখানা,জেলা,প্রদেশে,দেশে,গোটা বিশ্বে শ্রমিকদের কাজের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সর্বহারার এই কাজের ঐক্য এক শক্তিশালী  অস্ত্র যা শুধুমাত্র সফল ভাবে আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করবে তাই না,সাহায্য করবে শ্রেণি শত্রুকে ও ফ্যাসিজমকে সফল ভাবে প্রতিআক্রমণ করতে। 

এ প্রশ্ন ছিলো নির্দিষ্ট কোন দেশে বা গোটা বিশ্ব জুড়ে সর্বহারার এই কর্মের ঐক্য কি সম্ভব? ডিমিট্রভ বলছেন হ্যাঁ সম্ভব। কমিউনিস্ট  আন্তর্জাতিক  এই কাজে একটি বাদে কোন শর্ত আরোপ করেনি। সেই শর্তটিও খুবই মৌলিক যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। শর্তটি হোল কাজের এই ঐক্য ধাবিত হবে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে,পুঁজির বিরুদ্ধে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শ্রেণী শত্রুর বিরুদ্ধে। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে যুদ্ধ বাদে সব শত্রুই এখন বিদ্যমান।

যুক্ত ফ্রন্টের  বিষয় ও আধার সম্পর্কে ডিমিট্রভের বক্তব্যের দিকে নজর ঘোরান যাক। যুক্ত ফ্রন্টের মূল বিষয় হতে হবে শ্রমিক শ্রেনির সেই মূহুর্তের জরুরী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ।(এই প্রসঙ্গে আগ্রহী পাঠক শেষ লোকসভা নির্বাচনে সি পি আই(এম) ‘এর নির্বাচনী ইস্তাহার দেখে নিতে পারেন)সমস্ত পুঁজিবাদী দেশে যুক্ত ফ্রন্টের মূল কথা  ও যাত্রার প্রাথমিক ধাপ হবে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণিকে রক্ষা করা।

সর্বহারার একনায়কতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের জন্য আবেদন করায় নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে এই স্লোগান ও সংগ্রামকে খুঁজে বার করে অগ্রসর করাটাই কাজ। যে স্লোগান ও সংগ্রাম জনগণের জরুরি প্রয়োজন থেকে উত্থাপিত। বিকাশের বর্তমান স্তরে তাদের লড়াই এর ক্ষমতার সাথে যে স্লোগানগুলি সাযুজ্যপূর্ণ তা খুঁজে বার করতে হবে। পুঁজিবাদী জালিয়াতি ও ফ্যাসিস্ট আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য কি করণীয় তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।

শ্রমজীবী জনগণের জরুরি স্বার্থরক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রবণতা বিশিষ্ট শ্রমিকদের সংগঠনগুলির যৌথ কার্যধারার মাধ্যমে প্রচেষ্টা গ্রহণ করতেই হবে বিস্তৃততম যুক্ত ফ্রন্ট গড়ে তোলার। পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে শ্রমিক শ্রেণিকে সংগ্রামের ধরণ ও পদ্ধতির পরিবর্তন দ্রুত কি ভাবে করতে হয় সে জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

এর পাশাপাশি কমিউনিস্টদের নিজস্ব স্বাধীন কাজ যেমন কমিউনিস্ট শিক্ষা,সংগঠন,সমাবেশের কাজ এক মূহুর্তের জন্য থামিয়ে রাখা যাবে না। শ্রমিকরা যাতে কাজের ঐক্যের রাস্তা খুঁজে পায় তা সুনিশ্চিত করার জন্য একই সাথে স্বল্প ও দীর্ঘ সময়ের জন্য সহমত হবার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যা সর্বহারার শ্রেনি শত্রুর বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রী গণতান্ত্রিক দলসমূহ,সংশোধনবাদী ট্রেড ইউনিয়নগুলি ও শ্রমজীবী মানুষের অন্যান্য সংগঠনের সাথে যুক্ত কর্মধারা গড়ে তোলা যায়। সবচাইতে জোর দিতে হবে আঞ্চলিক সংগঠনগুলির সাথে মৈত্রীর ভিত্তিতে আঞ্চলিক ভাবে গণ আন্দোলন গড়ে তোলায়। ভিন্ন ভিন্ন দেশে এর বাস্তবিক রূপায়ন ভিন্ন ভিন্ন হবে,তা বলাই বাহুল্য। এর ধরণ কী হতে পারে তার বেশ কিছু উদাহরণ ডিমিট্রভ তার বক্তৃতায় উপস্থিত করেছেন। তার মধ্যে যেমন শ্রমিদের দাবি নিয়ে আন্দোলন আছে আবার খেলাধূলা,সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ঘিরে যৌথ কর্মধারাও আছে। এর সাংগঠনিক চেহারা সম্পর্কে ডিমিট্রভের পরামর্শ, কমিউনিস্ট ও সমস্ত বিপ্লবী শ্রমিকদের চেষ্টা করতে হবে যুক্ত ফ্রন্টের পার্টির বাইরে কিন্তু শ্রেণি কাঠামো গড়ে তোলার। তা কারখানায় হতে পারে,বেকারদের মধ্যে হতে পারে,শ্রমিক শ্রেণি অধ্যুষিত জেলায় হতে পারে,ছোট শহুরে জনগণের মধ্যে হতে পারে বা গ্রামে হতে পারে। কেবলমাত্র এই কাঠামোগুলিই পারে অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষকে যুক্ত ফ্রন্টের আন্দোলনে বিশাল অংশের মানুষকে যুক্ত করতে। পুঁজিবাদী আক্রমণ,ফ্যাসিজম প্রতিক্রিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জনগণের উদ্যোগের সূচনা করতে পারে। যুক্ত ফ্রন্টের নীচুতলা অবধি প্রয়োজনীয় বিস্তৃত কর্মী তৈরী করতে পারে। পু্ঁজিবাদী দেশসমূহে পার্টির বাইরে হাজার হাজার বলশেভিকদের  প্রশিক্ষণ দিতে পারে। সংগঠিত শ্রমিকরা ভিত্তি বা শুরুর কাজ করতে পারে,কিন্তু জোর দিতেই হবে অসংগঠিত শ্রমিকদের উপর যারা সংখ্যায় অনেক বেশি। এর উদাহরণ ডিমিট্রভ তার বক্তৃতায় দিয়েছেন।

জনগণের মধ্যে নীচুতলা অবধি যুক্ত ফ্রন্টকে শক্তিশালী  করার জন্য পার্টি বহির্ভূত সংস্থাগুলির সৃষ্টি  সবচাইতে ভালো বলে ডিমিট্রভের  পরামর্শ। যুক্ত ফ্রন্টের  বিরোধী  ও এই ঐক্যকে ভেঙ্গে দেবার প্রচেষ্টাকে এই সংস্থাগুলিই আটকাতে সক্ষম।

(ঙ)

ডিমিট্রভ তার আলোচনায় আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা করেছেন। যা ভারতবর্ষ  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রত্যক্ষ করেছে। বাংলায় তার হাতে কলমে প্রয়োগ হয়েছিলো। ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শ্রমজীবী মানুষের বড়ো অংশকে সমবেত করার জন্য ডিমিট্রভের পরামর্শ বিস্তৃততম ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণের ফ্রন্ট গঠন করা যার ভিত্তি হবে সর্বহারার যুক্ত ফ্রন্ট। একদিকে সর্বহারা অন্যদিকে শ্রমজীবী কৃষক ও শহুরে পাতি বুর্জোয়ার মূল অংশ-এই মোর্চা উন্নত শিল্পোন্নত দেশে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। এই ফ্রন্ট গঠনে মূল নির্ধারক কাজ হলো এই অংশের মানুষের দাবির স্বপক্ষে, বিশেষ করে কর্মরত কৃষকের স্বার্থে সরর্বহারাকে দৃঢ় সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে, যে দাবিগুলি সর্বহারার মূল দাবিগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংগ্রাম চলাকালীন  শ্রমিক শ্রেণির দাবিগুলিকে এই দাবির সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

Source: Google

(চ)

ডিমিট্রভ তার বক্তৃতায় যুক্ত ফ্রন্ট গঠনে বিভিন্ন দেশের মূল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন।আলোচনা করেছেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যুক্ত ফ্রন্ট নিয়ে।একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ডিমিট্রভ মত দিয়েছেন,যা ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দাবি রাখে।

কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সম্পাদক হিসাবে ডিমিট্রভ বলছেন, এমন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যে সর্বহারার যুক্ত ফ্রন্ট বা ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণের ফ্রন্টের সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হলো। ডিমিট্রভ বলছেন এটি কেবল সম্ভাবনা না এটি আবশ্যিক। এই ক্ষেত্রে তার পরামর্শ সামান্যতম ইতস্তত ভাব না রেখে সেই সরকার গঠন করা উচিত। বিপ্লব পরবর্তী  সরকারের কথা যে উনি বলছেন না,তা তার বক্তব্যে তিনি পরিস্কার করেছেন। প্রাক বিপ্লব সময়ের কথা বলছেন।

কোন ধরণের সরকার এটা হবে?কোন পরিস্থিতিতে এই ধরণের সরকার গঠনের প্রশ্ন আসতে পারে?

এটা প্রাথমিক ভাবে ফ্যাসিজম ও প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামের সরকার। যুক্ত ফ্রন্ট আন্দোলনের ফলাফল। কোন ভাবেই এই সরকার কমিউনিস্ট পার্টি ও গণসংগঠনের কোন কাজকে বাঁধা তো দেবেই না বরং পুঁজিবাদীদের ও তাদের ফ্যাসিস্ট দালালদের শক্ত হাতে মোকাবিলা  করবে। এই ধরণের সরকার গঠনের পূর্বশর্ত হলো-

প্রথমতঃ বুর্জোয়া রাষ্ট্র যন্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে ছত্রভঙ্গ ও পঙ্গু। যাতে বুর্জোয়ারা প্রতিক্রিয়া ও ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য এই সরকার গঠনে বাঁধা দিতে না পারে।

দ্বিতীয়তঃ শ্রমজীবী জনগণ বিশেষ করে জন ভিত্তি সম্পন্ন  ট্রেড ইউনিয়ন ফ্যাসিজম ও প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে উত্তাল,কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের জন্য সংগ্রাম করে এক সম্পূর্ণ সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনে এখনো প্রস্তুত না।

তৃতীয়তঃ সমাজতন্ত্রী গণতান্ত্রিক ও অন্যান্য পার্টিগুলি যারা যুক্ত ফ্রন্টে অংশগ্রহণকারী,তাদের মধ্যেকার যৌক্তিক এক মতভেদ উপস্থিত। তাদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ফ্যাসিস্ট ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়ার অংশের বিরুদ্ধে নির্মম অবস্থান গ্রহণের দাবি করছ। কমিউনিস্টদের সাথে এক সাথে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে রাজি আছে। প্রকাশ্যে নিজের পার্টির সেই প্রতিক্রিয়াশীল অংশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করছে যারা কমিউনিস্ট বিরোধী। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি আছে কিনা তা সি পি আই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করে ঠিক করবে।এই লেখার তা বিষয় না।

ডিমিট্রভ  একইসাথে আলোচনা করেছেন এই পরিস্থিতি বিবেচনা করার ক্ষেত্রে তিন ধরণের সম্ভাব্য ত্রুটির কথা। দেখে নেওয়ার কথা,এই ত্রুটিগুলির শিকার যাতে না হতে হয়।

(ছ)

তার বক্তৃতার শেষ অংশে ডিমিট্রভ ফ্যাসিবাদের মতাদর্শগত আক্রমণ ও তার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্যাসিস্টদের ইতিহাস বিকৃতি,অতীতের বিকৃত উপস্থাপন,নিজেদের অতীতের আবেগ ও বীরত্বের ধারক হিসাবে উপস্থাপনা ইত্যাদি মতাদর্শগত আক্রমণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ইতালিতে মুসোলিনি যেমন গ্যারিবল্ডির উত্তরাধিকার বহন করতেন বলে দাবি করতেন। জার্মানীতে হিটলার বিশুদ্ধ আর্য রক্তের প্রবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইহুদী খুনে মেতেছিলেন। আমাদের দেশে পৌরাণিক চরিত্র রামকে সামনে রেখে আর এস এস ও বিজেপির হুংকার।নরেন্দ্র মোদির দাবি বায়োলজিকাল মানুষ তিনি নন। ফলে ডিমিট্রভ কমিউনিস্টদের সব প্রশ্নে মতাদর্শভিত্তিক নির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মার্কসবাদ লেনিনবাদ এর মতাদর্শের আলোকে নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

ডিমিট্রভ তার বক্তৃতার শেষ অংশে দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টিগুলির সংহতি,ঐক্যের কথা বলেছেন।সতর্ক করেছেন সংকীর্ণতাবাদী অবস্থানের বিষয়ে। মূল লক্ষ্য পুঁজিবাদ ও তার বিকৃত রূপ ফ্যাসিজমকে পরাস্ত করার ক্ষেত্রে যা বাঁধা। কিন্তু এই সংহতি বা ঐক্য নির্ভর করে শ্রমিক শ্রেনির রাজনৈতিক ঐক্যের উপর। পাঁচটি শর্তের কথা ডিমিট্রভ তাঁর বক্তৃতায়  উল্লেখ করেছেন  এই ঐক্যসাধনের জন্য।।যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডিমিট্রভের জন্মদিনে, ভারতবর্ষে ফ্যাসিজম কায়েম হবার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে,তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ডিমিট্রভের যুক্ত ফ্রন্ট সংক্রান্ত এই বক্তৃতা পুনরায় চর্চা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। এ কথা ঠিক ৮৯ বছর অতিক্রান্ত। অর্থনৈতিক জগতে,রাজনৈতিক জগতে,শিক্ষা-সংস্কৃতির জগতে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। শক্তির ভারসাম্য সুনিশ্চিত  ভাবে দক্ষিণ পন্থার দিকে হেলে আছে। তা সত্ত্বেও ডিমিট্রভের ফ্যাসিজম বিরোধী যুক্তফ্রন্টের তত্ত্ব ও সেই সংক্রান্ত করণীয় কর্তব্যের দিকনির্দেশ এখনো মূলগতভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। ভারতবর্ষে  তো পারেই। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই ডিমিট্রভের প্রতি এই শ্রদ্ধা নিবেদন।

Spread the word