Site icon CPI(M)

Comrade Aijaz Ahmad: A Report

Aijaz Ahmad Feature

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

গতকাল,৯ তারিখ আমরা হারালাম এই সময়কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও দার্শনিক আইজাজ আহমদকে।দীর্ঘ রোগভোগের পর গতরাত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজের বাসভবনে তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

১৯৪১ সালে উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে তাঁর জন্ম। দেশভাগের পর তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যান। তাঁর শিক্ষাজীবন শেষে তিনি কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ভারতের সাথে তাঁর আত্মিক যোগাযোগ কখনই বিচ্ছিন্ন হয়নি। তিনি যুক্ত ছিলেন নতুন দিল্লির নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও লাইব্রেরির Centre of Contemporary Studies, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের Centre for Political Studies এর সাথে। সেখানে তিনি নিয়মিত অধ্যাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া,আরভিন এ প্রফেসর হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

Fullstop.net কে ২০১২ সালের পয়লা মে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইজাজ তাঁর বামপন্থী তথা মার্কসবাদী হয়ে ওঠার যুক্তি খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আমার ধারণা হল আপনি যদি শুধুমাত্র একটি ক্রান্তিকালীন ঐতিহাসিক মুহূর্তের উত্তেজনা দ্বারা বামপন্থার প্রতি আকৃষ্ট  হয়ে পরেন— মে ’৬৮, আরব অভ্যুত্থান, চিলির ছাত্র আন্দোলন — অচিরেই আপনার স্থবিরতা আসা এবং নস্টালজিয়ায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যাইহোক, যদি আপনার মূল প্রেরণা হয় নিষ্ঠুরতা এবং অবিচারের প্রতি ক্ষোভের অনুভূতি — ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ মানুষের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে কী করে — তাহলে আপনার নিজেকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সুসংবাদের উদ্দীপনার প্রয়োজন নাও হতে পারে যা তারপরে পরিণত হয়, আপনার জন্য একটি বাধ্যবাধকতায়।”

সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে- গতকাল ৯ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রখ্যাত মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবী, তাত্ত্বিক ও কমরেড – আইজাজ আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)৷ তিনি সিপিআই(এম) এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন এবং দেশ জুড়ে অসংখ্য সেমিনার, সভায় বক্তৃতার কাজে সর্বদা সময় দিতে ইচ্ছাপ্রকাশ করতেন। আইজাজ আহমদ এক অত্যন্ত সম্মানীয় তাত্ত্বিক হিসাবেই সুপরিচিত ছিলেন। মার্কসবাদের সমর্থনে তাঁর রচনাগুলির মর্যাদা ধ্রুপদী সাহিত্যের মতোই যা একের পর এক প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। ভিসা সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা এবং অসুস্থতার কারণে তাকে ভারত ছাড়তে বাধ্য করা হয়। মৃত্যুর আগে অবধি তাঁর দেশে ফেরার ইচ্ছা বজায় ছিল। তিনি দেশে ফিরতে পারেননি, এই ঘটনা দুঃখজনক। সমাজতন্ত্রে আস্থাশীল এবং সেই লক্ষ্যে সংগ্রামরত বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য তার মৃত্যু এক বিশাল ক্ষতি বিশেষ।

দ্য মার্কসিস্ট এবং লেফটওয়ার্ড বুকস’এর জন্য তিনি নিয়মিত লেখা পাঠাতেন। হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতা, ফ্যাসিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বিশ্বায়নের সাথে সারা পৃথিবী ও ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বামপন্থীদের সম্ভাবনা সম্পর্কে তাঁর কর্মকাণ্ড মতাদর্শগত সংগ্রামে আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে।

আইজাজ আহমদের পরিবার, তার সন্তান রাবি, আদিল, অনুরাধা কালহান ও মুনিজা সহ তার বন্ধু ও কমরেডদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে সিপিআই(এম)।

আদ্যন্ত মার্কসবাদী এই মানুষটির ভাষাতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান নিয়ে লেখাগুলো অমূল্য। তাঁর বই “Theory: Classes, Nations, Literatures” এ ফ্রেডরিক জেমসনের  উত্তর আধুনিতা ও মার্কসবাদ নিয়ে বিতর্ক, এবং এডওয়ার্ড সঈদের “Orientalism” সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির যে বিশ্লেষণ ও সমালোচনা তা উত্তর ঔপনিবেশিক চিন্তাধারা ও মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ভারত থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক Frontline পত্রিকা ছাড়াও তিনি New Left Review (NLR) , VERSO মত জগদ্বিখ্যাত বামপন্থী প্রকাশনাগুলোর সাথেও যুক্ত ছিলেন। গতবছর মার্চ মাসে “Bengaluru Collective” এর আলোচনাসভায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন,”আমি মনে করি, সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র পেতে হলে আমাদের সমাজতন্ত্র থাকা দরকার। গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের মধ্যে গভীরভাবে বেমানান কিছু আছে যা শুধুমাত্র গোষ্ঠী (অলিগার্কিক) ক্ষমতাই তৈরি করে।”

এই অসামান্য মার্কসবাদী চিন্তাবিদের প্রয়ানে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

শেয়ার করুন