Site icon CPI(M)

27th WB State Conference: The Record

২২ ফেব্রুয়ারী ২৫, হুগলী জেলার ডানকুনিতে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্য নগর, কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি মঞ্চে সম্মেলনের সূচনা হল ঠিক বেলা ১২ টায় রক্তপতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে।

পতাকা উত্তোলন করলেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা কমরেড বিমান বসু। এরপর শহীদ বেদীতে মাল্যদান করা হয়। একদিকে ভারতীয় গণনাট্য শিল্পীদের গান অন্য দিকে স্লোগান, শহীদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ।

ঘোষণা করছেন কমরেদ সম্পাদক মহাম্মদ সেলিম শহীদ মঞ্চে মাল্যদানের জন্য। মাল্যদান করলেন বিমান বসু, প্রকাশ কারাত, মানিক সরকার, বৃন্দা কারাত, সূর্যকান্ত মিশ্র, এম. এ. বেবি, তপন সেন, অশোক ধাওয়ালে, নীলোৎপল বসু, হান্নান মোল্লা, অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি মিতালি কুমার ও সম্মেলনের প্রতিনিধি, দর্শক ও আমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের তরফে সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এরপর হুগলী জেলার স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া রক্ত গোলাপ ও লাল সেলাম স্লোগানে এর মাধ্যমে প্রতিনিধি, দর্শক ও আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা সম্মেলন হলে প্রবেশ করেন।


রামচন্দ্র ডোমকে সভাপতি মন্ডলীর সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের সভাপতি মন্ডলী যথা অমিয় পাত্র,সমর পাঠক, নিরাপদ সর্দার ও জাহানারা খানকে নিয়ে সভাপতি মন্ডলী গঠনের প্রস্তাব রাখেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সমর্থন করেন, পার্টির নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচাৰ্য।

এরপর সভাপতি মন্ডলীর পক্ষ থেকে শোক প্রস্তাব নেওয়া হয়। শহীদ স্মরণে প্রস্তাব, কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি স্মরণে প্রস্তাব, কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্য স্মরণে প্রস্তাব ও নিরাবতা পালন হয়।

এছাড়াও কমরেড এন শঙ্করাইয়া, কমরেড কোড়িয়েরি বাল কৃষ্ণান, কমরেড বাসুদেব আচারিয়া, কমরেড মদন ঘোষ, কমরেড মৃদুল দে, কমরেড মানব মুখার্জী, কমরেড নারায়ণ বিশ্বাস, কমরেড লি কেকীয়াঙ, কমরেড জিয়াঙ জেমিন, কমরেড নগুয়েন ফু ত্রঙ, কমরেড হায়দার আকবর খান রনো সহ দেশ, বিদেশ, জেলার লড়াইয়ের আন্দোনের সাথীদের উদ্দেশ্যে শোক প্রস্তাব নেওয়া হয়।

শোক প্রস্তাব নেওয়া হয়, ৮ আগস্ট ২৪, রাজ্যে তৃণমূল রাজত্ব- এ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুষ্কৃতী – দুর্নীতি নেক্সাসের বলি হওয়া পিজিটি ছাত্রীর উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে। স্মরণ করা হয় এযাবৎ কালে প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দের উদ্দেশ্যে। প্যালেস্তাইনের গাজায় সাম্রাজ্যবাদের মদতে ইজরায়েলী গণহত্যায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষের প্রানহানিতে এ সম্মেলন গভীর শোক প্রকাশ করছে, নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে।

এরপর সভাপতি মন্ডলীর পক্ষ থেকে ২৭ তম রাজ্য সম্মেলনকে উদ্বোধন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়, পার্টির পলিট ব্যুরোর কো- অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত’কে।

প্রকাশ কারাতের বক্তব্যটি পড়তে নিচের লিংক ব্যবহার করুন

নয়া ফ্যাসিবাদের মোকাবিলাই আজকে আমাদের চ্যালেঞ্জ

এরপর সম্মেলনের সময়সূচি পেশ ও প্রতিনিধিদের পরিচয় পত্রের রিপোর্ট পেশ করেন কমরেড পলাশ দাশ।

সিপিআই(এম) ২৭ তম রাজ্য সম্মেলনে অংশ নেওয়া ৫২১ জন প্রতিনিধি ও দর্শক ৫৯ জন। প্রতিনিধিদের মধ্যে বয়সে সর্ব কনিষ্ঠ সৌভিক দাস বক্সী। দর্শকদের মধ্যে সবার ছোট মধুশ্রী মজুমদার। প্রতিনিধি ও দর্শকদের মধ্যে পুরুষ ৪২৮ জন এবং মহিলা ৯৩ জন। প্রবীণ পার্টি নেতা হিসাবে মনোনীত হন কান্তি গাঙ্গুলি। তার বয়েস ৮১ বছর।

রাজ্য সম্মেলনে সব থেকে বেশি বার এসেছেন, কান্তি গাঙ্গুলি ও অমল হালদার ১৬ বার। দর্শকদের মধ্যে বয়েসে সব থেকে বড় কাঞ্চন মুখার্জী বয়স ৭৪ বছর। দর্শক দের মধ্যে সবথেকে বেশি পার্টি জীবন জয়দেব দাসগুপ্তর। প্রতিনিধি ও দর্শক মিলিয়ে সম্মেলনে সর্বক্ষনের কর্মী ৩০০ জন। প্রথমবার রাজ্য সম্মেলনে উপস্থিত ১৩০ জন। শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেত্রমজুর, মধ্যবিত্ত সব অংশের মানুষ এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এরপর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

রাজনৈতিক ও সংগঠনিক খসড়ার উপর আলোচনা করেন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিরা। টানা তিনদিন ধরে ১০ জন মহিলা সহ ৭৭ জন আলোচনা করেন প্রতিবেদনের উপর। তাঁদের মধ্যে ৫০ জন ছিলেন জেলার প্রতিনিধি। মোট ৬৬০ মিনিট আলোচনা হয়েছে সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনের উপর। সম্মেলনে ৩১ টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তার মধ্যে একটি হল আগামী কর্মসূচী সংক্রান্ত প্রস্তাব।

১) সর্বনাশা কৃষক বিরোধী নীতির প্রতিরোধে যৌথ সংগ্রামকে মজবুত করো। প্রস্তাবক – দিলীপ ঘোষ। উত্থাপক – সৈয়দ হোসেন।

২) অবিলম্বে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ চালু করার দাবীতে এমএনরেগা ও আবাসন প্রকল্পে লাগামহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনকে জোরদার করার দাবীতে প্রস্তাব। প্রস্তাবক – দেবলীনা হেমব্রম। উত্থাপক – পরেশ পাল।

৩) বিকল্প ভাষ্য ও বিকল্প সংস্কৃতি গড়ে তোলার আন্দোলনকে শক্তিশালী করুন। প্রস্তাবক শমীক লাহিড়ী। উত্থাপক – সুদীপ সেনগুপ্ত।

৪) সাম্প্রদায়িকতা ও তীব্র বিদ্বেষ বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিহত করতে সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলো। প্রস্তাবক – আনারুল হক। উত্থাপক – রতন বাগচী।

৫) শিশু ও মহিলাদের সুরক্ষা ও মহিলাদের সরক্ষা ও নিরাপত্তার দাবীতে সর্বস্তরের মানুষ গর্জে উঠুন। প্রস্তাবক – কণীনিকা ঘোষ। উত্থাপক – পলাশ দাস।

৬) শ্রমিকশ্রেণীর অর্জিত অধিকার ও শ্রমজীবী মানুষের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তুলুন। প্রস্তাবক – আভাস রায়চৌধুরী। উত্থাপক – গার্গী চ্যাটার্জী।

৭) পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলুন। প্রস্তাবক – সায়নদীপ মিত্র। উত্থাপক – শেখ হাসিনা।

৮) সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রস্তাব। প্রস্তাবক – অনাদি সাহু। উত্থাপক – অমল হালদার।

৯) গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষা বহুত্ববাদী মিডিয়ার পক্ষে প্রস্তাবক দেবাশীষ চক্রবর্তী। সমর্থক – শতরুপ ঘোষ।

১০) আদিবাসীর জল, জঙ্গল, জমির অর্জিত অধিকার আন্দোলন গড়ে তুলুন। প্রস্তাবক – জিয়া উল আলাম। সমর্থক – নিরাপদ সর্দার।

১১) বন্যা নিয়ন্ত্রন ও নদী ভাঙনের বিপদ রোধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলো। প্রস্তাবক – সোমনাথ ভট্টাচার্য। উত্থাপক – অম্বর মিত্র।

১২) খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলো। প্রস্তাবক – পার্থ মুখার্জী। উত্থাপক – তুষার ঘোষ।

১৩) কেন্দ্র রাজ্য সরকারের সম্পর্ক পুর্নবিন্যাসের দাবীতে যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার জন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন। প্রস্তাবক – বিাকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। উত্থাপক – অনন্ত রায়।

১৪) পরিযায়ী শ্রমিক সহ ভিন্য রাজ্যে বসবাসকারী রাজ্যের মানুষের জীবন জীবিকার নিরাপত্তার অধিকার ও মর্যাদার সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে। প্রস্তাবক – জামির মোল্লা। সমর্থক – রাহুল ঘোষ।

১৫) সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

১৬) আদিবাসী, তফসিলি জাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর অংশের মানুষের নিরাপত্তার দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তোলো

১৭) সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রস্তাব

১৮) গরিবের শিক্ষার অধিকার হরণের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ গর্জে ওঠো

১৯) “বেকারীর বিরুদ্ধে, স্বচ্ছ নিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দাবি”

২০) বিভিন্ন মাধ্যমের সরকার পোষিত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পরিকাঠামো বাঁচানোর সংগ্রামকে জোরদার করো।

সম্মেলনের তৃতীয় দিনের অধিবেশনে পলিট ব্যুরোর তরফে বক্তব্য রাখেন সূর্যকান্ত মিশ্র।

সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্যটি পড়তে নিচের লিংক ব্যবহার করুন

আক্রমণ প্রতিরোধে সংগ্রামের ছন্দ গড়ে তুলতে হবে

২১) পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকে গণ-আন্দোলনে পরিণত করো

২২) বন্ধ হোক দেউচা-পাঁচামীর খোলা মুখ কয়লা খনি গঠন করে ধান্ধার পুঁজির আগ্রাসন

২৩) ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে আমাদের

২৪) সরকারি মদতে আরএসএস পরিকল্পিত ইতিহাসবিকৃতি ও পশ্চাদমুখী বিজ্ঞানচেতনা প্রসারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব

২৫) মতাদর্শগত সংগ্রামকে শক্তিশালী করো

২৬) শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর ও বস্তিবাসীদের সংগঠনের ডাকে রাজ্যব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা আদায়সহ সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ বন্ধের লড়াইয়ের পথে ২০ এপ্রিল ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশ সফল করুন

২৭) অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবিতে প্রস্তাব

২৮)লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বিরোধী সমানাধিকারের দাবিতে সংগ্রামের স্বপক্ষে প্রস্তাব।

২৯)লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বিরোধী সমানাধিকারের দাবিতে সংগ্রামের সপক্ষে প্রস্তাব।

প্রস্তাব পেশ করা শেষে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন, প্রস্তাব ও বিভিন্ন শ্রেণীফ্রন্ট, গণফ্রন্টের প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিনিধি ও দর্শকরা যে সকল সংযোজন, সংশোধনের প্রস্তাব জমা দেন সে সম্পর্কে আলোচনা করেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। সম্মেলনে গৃহীত সংযোজন, সংশোধন সমেত খসড়া প্রতিবেদনের চূড়ান্ত রূপ প্রকাশের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

সম্মেলনের আলোচনায় জবাবী ভাষণ পেশ করেন মহম্মদ সেলিম।

মহম্মদ সেলিমের বক্তব্যটি পড়তে নিচের লিংক ব্যবহার করুন

জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে , ভুমিস্তরেই শুনতে হবে তাঁদের কথা

নতুন রাজ্য কমিটি সদস্যদের নামের প্রস্তাব দেওয়া হয়, সম্মেলন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মঞ্চেই নবনির্বাচিত রাজ্য কমিটির প্রথম সভায় রাজ্য সম্পাদক হিসাবে মহম্মদ সেলিম’কে নির্বাচন করেন।

সম্মেলন শেষ হয় ডানকুনি ফুটবল গ্রাউন্ডে আয়োজিত প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্যে দিয়ে।

শেয়ার করুন