Site icon CPI(M)

Press Statement of Surjya Kanta Mishra

Surja Mishra

24 January, 2020

বিজেপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনের ক্ষমতা তৃণমূলের নেই। যারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তারা গণতন্ত্রের ওপর ফ্যাসিবাদী আক্রমণ মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ এরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য। শুক্রবার অনিল বিশ্বাস ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার। সূর্য মিশ্র এদিন বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তৃণমূলই এখানে বিজেপি’র উত্থানের জমি তৈরি করে দিয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মিশ্র এদিন বলেন, দ্বিতীয়বারের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর মানুষের ওপর তীব্র আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। মানুষের মধ্যে বিভাজন, ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচেষ্টা চলছে। উত্তর প্রদেশে পুলিশি এবং কার্যত ফ্যাসিস্তসুলভ একটা রাজত্ব কায়েম হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যেও তৈরি হয়েছে। তৃণমূল সরকার আমাদের রাজ্যে এই আক্রমণের মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, তৃণমূল নিজেই এরাজ্যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীশূন্য করতে চেয়েছিল ওরা। আরএসএস-বিজেপি যেমন বিরোধীশূন্য ভারত গড়তে চায়। আর বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত এরাজ্যে করেছেন তিনি। দল ভাঙিয়ে সব দখল করা, গণতন্ত্রকে হত্যা করা, সংবিধানের ধারা বারবার আক্রান্ত হয়েছে পশ্চিমবাংলায়। মানুষের জনজীবনের ওপর নজিরবিহীন আক্রমণ চলছে। সঙ্গে ব্যাপক দুর্নীতি। মিশ্র বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করে জামিনে ছাড়া রাখতে পারে। অথচ সেই একইরকম কেসে মুখ্যমন্ত্রী ও ভাইপো ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। চিদাম্বরম, লালুপ্রসাদের বেলায় যা হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা হতে পারছে না কেন? মিশ্রের প্রশ্ন, দিল্লিতে গেলে কী বৈঠক ও বোঝাপড়া হয়! আর ‘মোদী গো ব্যাক’-এর দিন রাজভবনে তৃতীয়জন না নিয়ে দুইজনের বৈঠক হয়। মিষ্টি-কুর্তা দেওয়া-নেওয়া হয়। তাই তৃণমূল কখনো বিজেপি-কে মোকাবিলা করতে পারবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সূর্য মিশ্র এদিন বলেন, এনআরসি ও সিএএ নিয়ে আমরাই প্রথম থেকে বিরোধিতা করছি। মমতা ব্যানার্জি যখন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তখনই এর সূচনা হয়। যখন মন্ত্রী ছিলেন না তখন তিনি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য কী করেছিলেন তার রেকর্ডও আছে। কীভাবে স্পিকারের চেয়ারের দিকে কাগজ ছুঁড়ে মেরে চোখ মুছেছিলেন, কীভাবে তিনি আরএসএস-কে দেশপ্রেমের ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছিলেন আর কীভাবে আরএসএস তাঁকে ‘দুর্গা’ বলে সম্বোধন করেছিল তাও সবার জানা আছে। এইসব তো রেকর্ড আছে। আর এখন উনি নিজে বলছেন, তিনি এর বিরোধী। উনিই বলেছেন, এনপিআর ও তার সঙ্গে সেনসাস একসঙ্গে চালাতে হবে। সল্টলেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হয়েছিল। পৌরসভা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় এই সমস্ত কাজগুলি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রমাণপত্র দেওয়ার পরে ধরা পড়ে গিয়ে বললেন, এটা স্থগিত থাকবে। ডিটেনশন ক্যাম্পের জন্য জায়গা খোঁজার বিষয়টি নিউটাউন ও বনগাঁতে আমরাই প্রমাণপত্রসহ প্রথমে দাখিল করি। এখন উনি বলছেন, কাউকে জমি দিইনি। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব থাকার কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করা যায় না বলে মিশ্র মন্তব্য করেন।
শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মিশ্র বলেন, নির্বাচন তো যথাসময়ে হবার কথা। কিন্তু হবে কিনা জানা নেই। এই সরকার সংবিধান, আইন-কানুন কিছুই মানে না। তিনি জানান, পৌর কর্পোরেশন, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয়ে এবং পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জেলা নেতৃত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই আমাদের কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে আমাদের নির্বাচনী কৌশল কী হবে সেটা আগেই রাজ্যস্তর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। বামফ্রন্ট এবং বামফ্রন্টের সহযোগীদের নিয়ে কংগ্রেস সহ অন্যান্য দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল, এনসিপি থেকে শুরু করে সবাই মিলে তৃণমূল, বিজেপি বিরোধী ভোটকে সর্বোচ্চ পরিমাণ একত্রিত করাই লক্ষ্য হবে। তার জন্য নির্বাচনী সংগ্রামে ব্যাপকতর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যুক্ত কর্মসূচি বাইরেও হবে, আর নির্বাচনেও যুক্তভাবে লড়াই হবে। যাতে ভোট ভাগ না হয় এটা দেখতে হবে, এটাই হলো আমাদের বোঝাপড়া।
পৌর কর্পোরেশন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মিশ্র বলেন, শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। বঞ্চনা বৈষম্য সত্ত্বেও সেগুলি মোকাবিলা করে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেভাবে পাঁচ বছর সাফল্যের সাথে কর্পোরেশনের কাজ চালিয়েছে বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ড তা প্রশংসনীয়। হাজার চেষ্টা করেও বামপন্থী বোর্ড ভাঙতে পারেনি ওরা। ঘোড়া কেনাবেচা করতে পারেনি। বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কিছু দাবিও আদায় করাও সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আরও বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে দিয়েই বৃহত্তর সাফল্য আসবে এবং সেই সাফল্যকে সংহত করতে হবে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের মেয়র ও বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, বামপন্থীদের দ্বারা পরিচালিত শিলিগুড়িতে কর্পোরশনকে ‘টাইট’ দেবার জন্য এসজেডিএ, পিডব্লিউডি এবং এনবিডিডিকে দিয়ে রাস্তা, ড্রেন, খেলার মাঠ তারা সরাসরি সমান্তরালভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করানো হচ্ছে। পৌর কর্পোরেশনের সাথে আলোচনা ছাড়াই এই সমস্ত কাজ করা হচ্ছে। কারোর কোনও অনুমতি নেবার প্রয়োজন নেই। এয়ারভিউ মোড়কে মহাত্মা গান্ধী মোড় হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারই টাকা দিয়েছে, তাতে শহরের অনেকগুলি জায়গাতে মূর্তি বসানোর কথা। এয়ারভিউ মোড়েও গান্ধী মূর্তি বসানোর কাজ শুরু করা হয়। অনুমতি না নেবার অজুহাত দেখিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর নির্দেশে জোর করে সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। মূর্তি বসানোর কাজ অবশ্যই হবে। ভট্টাচার্য বলেন, ওরা যদি শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনকে উপেক্ষা করে শহরের উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে, তাহলে গান্ধী মূর্তি বসানোর ক্ষেত্রে বাধা কেন? সংবিধান অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত আঞ্চলিক সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা যায় না। মূর্তি বসবেই। বাধা দেবার চেষ্টা হলে শিলিগুড়িবাসী বরদাস্ত করবে না।

শেয়ার করুন