১০০ বছরেরও বেশী আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়। সমাজে পুরুষের সমান অধিকার পেতে, নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে, আট ঘন্টা কাজের দাবিতে, উপযুক্ত মজুরির দাবিতে এবং সর্বোপরি ভোটাধিকারের দাবিতে তাদের লড়ই সংগ্রাম শুরু হয়। ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়ার নারীরা “রুটি ও শান্তির” দাবিতে প্রথম রাস্তায় নামে। রাশিয়ার জারের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ততদিনে প্রায় ২০ লক্ষ রাশিয়ান সৈন্য প্রাণ দিয়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করা ও কাজের অধিকার আদায় করার জন্য রাশিয়ার মহিলাদের এই লড়াই ছিল নভেম্বর বিপ্লবের সূচনা। বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়ে নয়া উদারনীতিবাদ এমন একটি অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে যা সমগ্র শ্রমিক শ্রেণীকে বিরাট সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের দেশের বর্তমান আরএসএস-বিজেপি পরিচালিত সরকার এই নীতির সাহায্যে দেশের শ্রমজীবি মানুষকে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে যাতে শ্রমজীবি মানুষের সম কাজে সম বেতন, ন্যূনতম মজুরী, আট ঘন্টা কাজের অধিকার ও নাগরিকত্বের অধিকারএবং মহিলাদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রতিদিন বিঘ্নিত হচ্ছে। মহিলাদের ওপরে অত্যাচার সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ধর্ষকদেরকে বাঁচানোর জন্য সরকারের ভূমিকা কদর্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ধর্ষণের ঘটনাকে ছোট করে দেখানো হচ্ছে। আমাদের রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষিতার অত্যাচারের মাপ বেঁধে দিয়ে তার ক্ষতিপূরণের মূল্য ধার্য করে সমস্ত মহিলাদের নির্লজ্জভাবে অপমান করেছে। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মহিলা বিধায়ককে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে দেশের সরকার শ্রম আইন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবি মহিলাদের জীবন জীবিকার ওপরে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। আজ নতুন করে আট ঘন্টা কাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম মজুরীর অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। সুপ্রীম কোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও সমান কাজে সমান মজুরী প্রদান করা হচ্ছে না। দিনের পর দিন মহিলাদের কাজ কমছে , রোজগার কমছে, অন্যদিকে বিনা মজুরীতে শ্রমদান করা মহিলাদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে দেশের বর্তমান সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন(CAA), এনপিআর ও এনআরসি -র সাহায্যে দেশের শ্রমজীবি মানুষ সহ দেশের সমস্ত জনগণের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। এই সবকিছুর বিরুদ্ধেই দেশের শ্রমিকশ্রেণী বিশেষত মহিলা ও যুব সমাজ তাদের সংগ্রামকে জারি রেখেছে। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সংবিধানকে রক্ষার জন্য এবং শ্রমজীবি নারীদের স্বাধিকার, সমানাধিকার অর্জনে এবং শোষণ ও মজুরী বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’-এ বিশেষ ভূমিকা পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। তাই সিআইটিইউ এর পক্ষ থেকে ৮ মার্চ ২০২০ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে সারা দেশ জুড়ে আইন অমান্য ও জেল ভরো আন্দোলন সংগঠিত করা হবে। যেহেতু ৮ মার্চ রবিবার তাই সারা দেশের শ্রমজীবি মহিলারা ৬ মার্চ ২০২০ তাদের নিজস্ব দাবীতে এই কর্মসূচী পালন করবে।
শ্রমজীবি মহিলাদের দাবিসমূহ –
১. নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)করো। সংবিধান রক্ষা করো । জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ (এনআরসি) এবং জাতীয় জনগণনা পঞ্জীকরণ (এনপিআর) করা যাবে না।
২. সবার জন্য কাজ চাই, মহিলাদের বিনা মজুরীর শ্রমদানকে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
৩. শ্রমজীবি মহিলাদের ন্যূনতম মজুরী ২১০০০ টাকা ও সম কাজে সম মজুরী প্রদান করতে হবে।
৪. প্রকল্প কর্মীদের কর্মীর মর্যাদা দিতে হবে।
৫. সমাজকল্যাণ মূলক কোন প্রকল্প বেসরকারীকরণ করা যাবে না ।
৬. মহিলা কর্মীদের রাত্রে কাজ করতে হলে নিরাপত্তা ও নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. মহিলা ও শিশুদের উপর নৃশংসতা ও অত্যাচার বন্ধ করতে হবে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৮. ৪৫ তম শ্রম সম্মেলেনের সুপারিশকে কার্যকরী করে শ্রমজীবি মহিলাদের মাসিক ১০০০০ টাকা পেনশন সহ সামাজিক সুরক্ষা এবং ,মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার দিতে হবে ।
৯. আমাদের রাজ্যে অস্থায়ী শিক্ষিকা, মহিলা শিক্ষাকর্মী ও অন্যান্য সরকারী ক্ষেত্রে কর্মরত অস্থায়ী মহিলা কর্মীদের ৭৩০ দিনের Child Care Leave ( CCL) দিতে হবে
১০. সমস্ত ধরণের নির্বাচনে মহিলাদের ৩৩% আসন সংরক্ষণ করতে হবে ।
১১. তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক মর্যাদা দান করে তাদের কাজের অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।