Site icon CPI(M)

Tilottoma: A Voice of Audacity

Tilottoma

বর্ণনা মুখোপাধ্যায়

সময় তখন রাত দেড়টার কাছাকাছি,শ্যামবাজারে ছাত্র-যুব-মহিলাদের অবস্থানের চতুর্থ দিন অতিক্রান্ত হয়ে পঞ্চম দিনে পদার্পণ করেছে। ”তিলোত্তমার জন্য ইলা মিত্র নাইট স্কুল”-এ তখন বেশ কিছু খুদে পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটছে কাগজে।তারই মাঝে প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে তিলোত্তমা চত্তর। ক্যানভাসে রং তুলির টানে প্রতিবদী চিত্ররা গর্জে উঠছে প্রতিবাদে।

২৯ দিন অতিক্রান্ত। তিলোত্তমার ধর্ষকরা এখনও এই সমাজের বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্দিধায়। গৃহকোন থেকে শিক্ষাক্ষেত্র কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকার। হাথরাস থেকে হাসখাঁলি তার তার জলন্ত উদাহরণ।

৯ই আগস্ট ২০২৪,নিদ্রিত শহরে ঘটে যাওয়া এক নৃশংস ঘটনা যা মানব সভ্যতা কে বারংবার প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের এক “মহিলা” পিজিটির ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা যা আবারও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দেয় কর্মক্ষেত্রে ও সমাজের বুকে নারী সুরক্ষার কথা। পার্কস্ট্রিট থেকে হাসখাঁলি হয়ে আরজিকর,ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে এগিয়ে চলেছে আমাদের বাংলা। এই বীভ্যৎসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে গোটা রাজ্য-দেশ। এই প্রতিবাদ স্ফুলিঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পরেছে বিশ্ব জুড়ে। তবে, প্রতিবারের মতই দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা না করে, আত্মহত্যা-মানসিক ভারসাম্যহীন,রাতে একা থাকার দোষে জর্জরিত হতে হয়েছে ওই একত্রিশ বছরের নিথর দেহটাকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি পোস্ট-মর্টেম করে মা-বাবার অজান্তেই ন্যায় বিচারের দাবীতে ইনসাফ চাওয়া একদল ছাত্র-যুবদের প্রায় গায়েই উপর দিয়েই শববাহী গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো মেয়েটির সোদপুরের বাসভবনে। কয়েকঘন্টার মধ্যেই পানিহাটি অঞ্চলের তৃণমূল ও পুলিশের তত্ত্বাবধানে প্রমাণ লোপাটের স্বার্থে দাহ করা হলো মেয়েটির ক্ষত বিক্ষত দেহটা। তবে যে যত্নে ও তৎপরতায় দেহ দাহ করা হয়েছিলো তার বিন্দুমাত্র তৎপরতার দেখা তদন্তের ক্ষেত্রে মেলেনি। কাকে এতো আড়াল করতে তৎপর এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও কেন বারংবার দোষীদের আড়াল করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় নির্যাতিতাদের। কেন প্রতিবার ফাঁসি দেওয়া হয় নির্যাতিতাদের! কোন দুঃসাহসে টাকার বিনিময়ে কিনতে চাওয়া হয় এই বাংলার মা-বোনেদের আব্রুকে। এই সব বর্বরতার বিচার চাইতে রাস্ট্রের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে গোটা সমাজ। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় এখনও দোষীদের শাস্তি দিতে না পারলেও প্রতিবাদী স্বরকে দমন করতে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের উপরও পুলিশ-র‍্যাফ-কাঁদানে গ্যাস-মিথ্যে মামলা কোন কিছুতেই কার্পণ্য করেননি মাননীয়া।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদ ধন্য আরজিকরের দুর্নীতিগ্রস্ত তৎকালীন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন বাহিনি বারংবার “অরাজনীতির” মোড়োকে মুড়ে আরজিকরের ঘটনাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টার চালিয়ে গেছে ঠিক যেমন সন্দেশখালির ঘটনার প্রকাশ্যে আসতেই ফেরি ঘাটেই পুলিশি তত্ত্বাবধানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিলো ছাত্র-যুবর মহিলা আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের। এই প্রচেষ্টা কার্যকর না হওয়ায় নাটকীয় আঙ্গিকে সংবাদমাধ্যমের সামনে সন্দীপ ঘোষ প্রিন্সিপাল পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই পুরস্কার স্বরূপ তাকে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হইসে নিযুক্ত করে প্রশাসন। তবে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের “গো-ব্যাক” স্লোগান কে উপেক্ষা করে এখনও অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করতে পারেনি।

আর জি করের ক্যাম্পাস থেকে নারিদের নিরাপত্তা অধিকার পুনরুদ্ধার করার দাবী তুলেছিল ডাক্তারী পড়ুয়ারা। গত ১৪ই আগস্ট, ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে গোটা রাজ্যে-দেশে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সমাজের নারীদের নেতৃত্বে পালিত হয়েছে “Reclaim The Night” এই বর্বরচিত ধর্ষণের প্রতিবাদে। স্বাদ-হীনতার শিকল ভেঙে,নারীদের সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাধীনতার অধিকারকে সুনিশ্চিত করার শুরুয়াত ছিলো এই রাতদখল।

আজ থেকে প্রায় ৫০বছর আগে, ১৯৭৫ সালে, ফিলাডেলফিয়ায় নির্যাতন করে খুন করা হয়েছিল সুসান আলেক্সজ্যান্ডার স্পিথকে, তারই প্রতিবাদে নিরাপত্তাহীন রাতের রাস্তার দখল নিয়েছিলো মেয়েরা আর আজ ২০২৪সালের পশ্চিমবঙ্গ কে সেই একই সুতোয় বেঁধে দিলো এক স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দলোন।

ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের মাঝেও নির্ভীক ধর্ষকরা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে। বেহালার ১০বছরের নাবালিকার শ্লীলতাহানি,হাওড়া জেলা হাসপাতালে ১৩বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।

এই সমাজকে ধর্ষণের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন অসমাপ্ত, আমাদের শস্য-শ্যামলা রাজ্যে ধর্ষকদের আশ্রয়দাতা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই আর যতদিন না পর্যন্ত নারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হচ্ছে, তিলোত্তমার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে,ততদিন এই লড়াই প্রবহমান…

এই ধারাবাহিক আন্দোলনের শেষে আমাদের জয় নিশ্চিত। গণআন্দলোনে জনগণের জয় নিশ্চিত।

Spread the word