Site icon CPI(M)

The Communist Manifesto: A Guide to Liberation -Somnath Bhattacharja

                                  

১৪০০ সাল কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,

“আজি হতে শতবর্ষ পরে

কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি

কৌতুহলভরে -”

সেই কথার অনুরণন তুলে বলা যায় একশ’ পঁচাত্তর বছর অতিক্রম করে একশ’ ছিয়াত্তর বছরে পা দিয়েও মার্কস এঙ্গেলসের লেখা ‘কমিউনিস্ট ইশতেহার’ মানুষ পড়ছে গভীর আগ্রহ নিয়ে। এই বইটি পড়তে হচ্ছে বহু সমস্যার উত্তর খুঁজতে। নিরন্ন মানুষের মুখে অন্নের সংস্থান করতে। ক্ষুধার্তের খাবার, কর্মহীনের কাজ, শীতে উষ্ণ পোশাক আর মাথার ওপর এক চিলতে ছাদের সন্ধানে। এক শোষণহীন সমাজ গড়ার সংকল্পে বারবার ওল্টাতে হয় কমিউনিস্ট ইশতেহারের পাতা। হাজার হাজার বছরের বৈষম্যের সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার ‘ব্লু প্রিন্ট’ হল কমিউনিস্ট ইশতেহার। যার আছে সে খাবে, যার নেই সে খাবে না বা আধ পেটা খাবে – এটাই ছিল পৃথিবীর নিয়ম। শত সহস্র বছর ধরে চলে আসা এই নিয়মকে সমাজ মেনেও নিয়েছিল। তিরিশ ও আঠাশ বছরের দুই যুবক কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩) এবং ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস (১৮২০-১৮৯৫) পৃথিবীর চলে আসা এই নিয়মটাকেই বদলে দেবার নতুন দলিল পেশ করলেন। আত্মপ্রকাশ করল কমিউনিস্ট ইশতেহার। ২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৮৪৮।  সেই দিনটার কথা ভেবেই ২১ ফেব্রুয়ারি ‘রেড বুক ডে’। এই ইশতেহার সমাজে প্রচলিত সব ধরণের বৈষম্যকে দূর করার স্বপ্ন এঁকে দিলো কোটি কোটি মানুষের চোখে। শ্রেণীগত, জাতিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গ ভিত্তিক, বর্ণ ভিত্তিক, সম্প্রদায়গত কোনও বিভেদ নয়। গড়তে হবে বিভেদহীন পৃথিবী। সাম্যের সমাজ।

মার্কস এঙ্গেলস বললেন, যার আছে সে খাক। কিন্তু যার নেই তার কেন নেই ? সে জন্য দায়ী শ্রেণী বিভক্ত সমাজ। তাই সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে সেই মানুষকে খেতে দেবার। যে সমাজ দেবে না, বদলে দাও সেই সমাজটাকেই। এই সমাজ বদলের দলিল কমিউনিস্ট ইশতেহার। এখানে মার্কস এঙ্গেলস বুর্জোয়া শ্রেণীকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা এমন এক সমাজের জন্ম দিয়েছে যেখানে মাত্র দশ শতাংশ মানুষের সম্পত্তি আছে বাকি নব্বই শতাংশের না থাকার বিনিময়ে। অর্থাৎ সমাজে প্রতি দশজনে একজনের সম্পদ নিশ্চিত হয়েছে অন্য ন’জনের সম্পদ না থাকাকে নিশ্চিত করার মাধ্যমে। এত স্পষ্ট, তীক্ষ্ণ ও বলিষ্ঠ বক্তব্য এর আগে পৃথিবী শোনেনি। ম্যানিফেস্টোতে মার্কস এঙ্গেলস তাদের সময়ের পুঁজিবাদকে ব্যাখ্যা করেছিলেন  এবং ভবিষ্যতে এটি কোন্ অভিমুখে যেতে পারে সেই সম্পর্কে তাদের অনুমান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এখানে একটি অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে পরবর্তী একশ’ ছিয়াত্তর বছরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে যখনই এই বইটি পড়েছে সে তার নিজের সময়ের প্রতিচ্ছবি এখানে দেখতে পেয়েছে। তাই যুগ, কাল, শতাব্দী, সার্ধশতাব্দী পেরিয়েও কমিউনিস্ট ইশতেহারের ঔজ্জ্বল্য কমেনি বরং তা স্বমহিমায় ভাস্বর। এখানেই সে কালোত্তীর্ণ।

২০০৮ সাল থেকে বিশ্ব আর্থিক মন্দা আচ্ছন্ন করল গোটা পৃথিবীকে। আর এর ছ’মাসের মধ্যে ব্রিটেনের ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা লিখল, কমিউনিস্ট ইশতেহারের বিক্রি বেড়েছে ৯০০ শতাংশ। পৃথিবীতে পুঁজিবাদ, ধনতন্ত্র, লগ্নিপুঁজি, সাম্রাজ্যবাদ বাড়াবাড়ি করলেই মানুষ খোঁজ করে মার্কস এঙ্গেলসের। অমোঘ অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নেয় তাদের লেখা। আঁকড়ে ধরে দাস ক্যাপিটাল, কমিউনিস্ট ইশতেহারকে।

এই ছোট্ট পুস্তিকায় মার্কস এঙ্গেলস তুলে ধরলেন পুঁজিবাদী সমাজে ‘অতি উৎপাদনের মহামারী’-র কথা। লোভ আর লালসার বাহুল্যে ডেকে আনা সঙ্কটের কথা। এরই মধ্যে দিয়ে বুর্জোয়া সমাজে সৃষ্টি হয় বিশৃংখলা। বিপন্ন  হয় তার অস্তিত্ব। শুরু হয়ে যায় তারই কবর খোঁড়ার কাজ। তাই তারা ইশতেহারে বললেন, “যে অস্ত্রে বুর্জোয়া শ্রেণী সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভূতলশায়ী করেছিল, সেই অস্ত্র আজ তারই বিরুদ্ধে উদ্যত।” এখানে মার্কস এঙ্গেলসের সোচ্চার ঘোষণা, যে অস্ত্রগুলি তাদের মৃত্যু ডেকে আনে বুর্জোয়া শ্রেণী শুধু সেগুলোই নির্মাণ করেনি। তারা এমন মানুষও সৃষ্টি করেছে যারা বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধেই সেই অস্ত্রগুলি চালনা করবে। তারা হল আধুনিক শ্রমিক শ্রেণী। প্রলেতারিয়েত! যাদের শৃঙ্খল ছাড়া হারাবার কিছুই নেই কিন্তু জয় করবার জন্য আছে গোটা দুনিয়া। এই জন্যই বিশ্বের  খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষের ক্ষুদ্রতম মহাকাব্যের নাম কমিউনিস্ট ইশতেহার। যাকে কমরেড স্তালিন বলেছিলেন, “The Song of the Songs of Marxism” অর্থাৎ মার্কসবাদের সমস্ত সঙ্গীতের মহাসঙ্গীত হল কমিউনিস্ট ইশতেহার। কমিউনিস্ট ইশতেহার, কমিউনিস্ট লীগের কর্মসূচী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে কমিউনিস্টদের লক্ষ্য সম্পর্কে একটি সার্বজনীন রূপ (Universal Programme of the Communists) পরিস্ফুট ছিল। তাই কোনও একটি দেশের প্রেক্ষিতে নয়, দেশ-কালের বেড়া অতিক্রম করে সমগ্র মানবজাতির শৃংখল মোচনের দিক নির্দেশ করা হয়েছে এই ইশতেহারে।

এখানেই কমিউনিস্টদের সুনির্দিষ্ট তিনটি লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। (১) প্রলেতারিয়েতকে শ্রেণী হিসেবে সংগঠিত করা।

(২) বুর্জোয়া আধিপত্যের উচ্ছেদ ঘটানো।

(৩) প্রলেতারিয়েত কর্তৃক রাজনৈতিক ক্ষমতা অধিকার করা।

এ প্রশ্ন স্বাভাবিক যে আত্মপ্রকাশের একশ’ ছিয়াত্তর বছর বাদেও কেন কমিউনিস্ট ইশতেহার নিয়ে আলোচনা ? সেদিনের তুলনায় আজকের জগৎ তো আপাদমস্তক বদলে গেছে! একদম ঠিক কথা। মার্কসবাদ তো এই বদলের কথাটাই বলে। দুনিয়ায় সবকিছুই যে বদলায়, শুধু সেই নিয়মটাই বদলায় না। Changeability is the only unchangeable rule of the world.

তাহলে আজও ইশতেহারকে আঁকড়ে ধরা কেন ?

১৮৭২ সালে ইশতেহার যখন পঁচিশ বছরে পা দিল তখন এর প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে মার্কস এঙ্গেলস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কয়েকটি কথা বলেন। “গত পঁচিশ বছরে অবস্থা যতই বদলাক না কেন, এই ইশতেহারে রচিত সাধারণ নীতি সমূহ আজও মোটের ওপর আগের মতই সঠিক আছে।” তা ছাড়া এর প্রয়োগ যে সবসময় সমসাময়িক ঐতিহাসিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে সে কথাও সেখানে বলা আছে। এই ১৮৭২ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকাতেই লেখকদ্বয় বললেন, “এই ইশতেহার এখন ঐতিহাসিক দলিল হয়ে পড়েছে। আমাদের কোনও অধিকার নেই এর অদলবদল করার।”

ইশতেহার প্রকাশের শতবর্ষ পরে বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হ্যারল্ড ল্যাস্কি লিখেছিলেন, “few documents in the history of mankind have stood up so remarkably to the test of verification of the future as the Communist Manifesto : Essentially after its publication no one has been able to seriously contravene any of its major propositions. All over the world, the crisis of Capitalism have grown more frequent and profound.” (কমিউনিস্ট ইস্তেহারের মত নথি খুব অল্পই আছে যা ভবিষ্যতের যাচাইয়ের পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্যভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। এটি প্রকাশনার পর থেকে মূলগতভাবে এর প্রধান প্রস্তাবনাগুলির কোনটিই আজ পর্যন্ত নস্যাৎ করা সম্ভব হয়নি। বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদের সঙ্কট আরো ঘনীভূত ও গভীরতর রূপে ঘটেছে)। আর এরও প্রায় তেতাল্লিশ বছর বাদে সোভিয়েত সহ পূর্ব ইউরোপের একগুচ্ছ দেশে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পর ১৯৯১-এ ‘ফ্রন্টলাইন’ পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে চিন্তাবিদ নোয়াম চমস্কি বললেন, “পুঁজিবাদের তুলনায় কমিউনিজমকে আমার স্বর্গের মত সুন্দর বলে মনে হয়।”

মাত্র কয়েক বছর আগে বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়ক বললেন, “আমি মনে করি মার্কসবাদ যেভাবে সমসাময়িক বিশ্বকে বিশ্লেষণ করেছে সেভাবে আর কেউ করেনি। লেনিন বলতেন : মার্কসবাদ সত্য, সেটাই তার শক্তি। আসল কথা হল এটা যথার্থ বিজ্ঞানসম্মত আবিষ্কার।”

আচ্ছা বলুন তো ল্যাস্কি, চমস্কি, পট্টনায়করা কেন আদাজল খেয়ে যুগে যুগে, কালে কালে মার্কসবাদের পক্ষে বলে গেলেন? কারণ মার্কসবাদ সত্য ও বিজ্ঞানের পথ ধরে হাঁটে। তাই পৃথিবীটা কেমন হওয়া উচিত বা কেমন হলে ভাল হয়, এ ব্যাপারে কোন সারমন সেখানে দেওয়া হয় নি। ইতিহাসের ফেলে আসা পথের বাঁকে, মোড়ে আলো ফেলে তারা বোঝার চেষ্টা করেছেন অতীত থেকে বর্তমানের গতিপথটা কী ? আর তারই ভিত্তিতে চেনার চেষ্টা করেছেন ভবিষ্যতের অভিমুখটা কোন্ দিকে হতে পারে।

এ হেন বস্তুনিষ্ঠ, বৈজ্ঞানিক, নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গীতে সমাজটাকে দেখেছেন বলেই মার্কসবাদ সত্যের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে।      

এই সত্য সন্ধান করেই ইশতেহারের পাতায় লেখা হয় সেই ঘোষণা, “আজ পর্যন্ত বিদ্যমান সকল সমাজের ইতিহাস হলো শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস।” আর এই উচ্চারনেরই কাব্যিক প্রতিফলন ঘটে রবীন্দ্রনাথের লেখায়, গীতাঞ্জলির পাতায়, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’ কবিতায়।

“যারে তুমি নীচে ফেল’ সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,

পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।”

এই সত্যের স্পর্ধাতেই ইশতেহারের দৃপ্ত তুর্যনিনাদ, “কমিউনিস্টরা আপন মতামত ও লক্ষ্যকে গোপন রাখতে ঘৃণাবোধ করে। তাই তারা খোলাখুলি ঘোষণা করে যে, সমস্ত প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন করেই তাদের লক্ষ্য পূরণ হতে পারে। ”

 ইশতেহারের আগে ও পরে মার্কস এঙ্গেলস যা যা বলেছেন ও লিখেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সুস্পষ্ট রূপরেখা হল এই পুস্তিকা। মার্কস এঙ্গেলসের নতুন ও ব্যতিক্রমী চিন্তাগুলির মধ্যে দুটি অসামান্য বিষয় হল ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ও উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব। এই দুটিরই মূল নির্যাস ইশতেহারে আছে।

শ্রমিক মাত্রেই শোষণের শিকার। দেশ-কাল-পাত্র, বর্ণ-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে শোষণের শিকার। তাই শোষণহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে গোটা পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে ইশতেহারের দৃপ্ত তুর্যনিনাদ : দুনিয়ার মজদুর এক হও।

কমিউনিস্ট ইশতেহার আলোচনার সময় আমাদের দুটি কথা খেয়াল রাখা ভাল।

প্রথমত,  মার্কস এঙ্গেলসকে দেওয়া হয়েছিল ‘কমিউনিস্ট লীগের ইশতেহার’ লেখার দায়িত্ব। সে কাজই তারা শুরু করেছিলেন। কিন্তু লেখাটি চূড়ান্ত হবার পর দেখা গেল ‘কমিউনিস্ট লীগের ইশতেহার’ লেখা হয়নি, লেখা হয়েছে, ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’।

তার কারণ সমাজ ব্যবস্থা বদলানোর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা। সে কাজ লীগের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সেই কাজ লীগের মত সংগঠন সেভাবে করতে পারে না। সেটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক পার্টিই পারে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে লড়তে। তাই ইশতেহার লিখতে লিখতে চিন্তার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, লক্ষ্যকে অর্জন করার রাস্তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে

করতেই লীগের ইশতেহারের উত্তরণ ঘটে সৃষ্টি হয় ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’।

দ্বিতীয়ত : ইশতেহারে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে বহু কথা বলা হলেও, বহু কথা কিন্তু বলা গেল না। আমরা জানি, কোনো কমিটি যখন কোনো দলিল গ্রহণ করে তখন তা একজন বা দু’জন লিখলেও তার ওপর আলোচনা করে সেই কমিটির অন্যান্যরাও মতামত দেন। এক্ষেত্রেও সেই ঘটনাই ঘটেছে এবং সেখানেই কিছু বিভ্রাটও ঘটেছে।

সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ প্রভৃতি বিষয়ে লীগের অধিকাংশ সদস্যেরই চিন্তা ভাবনা ছিল বেশ অস্পষ্ট। তাদের বেশীরভাগই ছিলেন নৈরাজ্যবাদী (Anarchist) বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের (Utopian Socialism) ভাবনায় প্রভাবিত। তাই তারা যখন ইশতেহার নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তখন তাদের সীমাবদ্ধ চিন্তার কিছু কথা মার্কস এঙ্গেলস মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্প হলেও তাদের আপোস করতে হয়েছে। যার ফলে মার্কস এঙ্গেলস যে যে কথা যতটা স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছিলেন, ইশতেহারের কোথাও কোথাও ততটা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।

তবে সেই অসম্পূর্ণতা মার্কস এঙ্গেলস পূর্ণ করে তাকে আরও অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন তাদের পরবর্তী রচনাগুলিতে।

তবে ইশতেহারের সীমাবদ্ধতাগুলি অনেকাংশেই পূরণ করেছেন মার্কস এঙ্গেলস স্বয়ং তাদের লেখা মুখবন্ধগুলিতে। তাই ১৮৭২ থেকে ১৮৮২ সাল পর্যন্ত মার্কস এবং এঙ্গেলসের যৌথ স্বাক্ষরে প্রকাশিত এবং তারপর থেকে ১৮৯৩ পর্যন্ত এঙ্গেলসের এককভাবে স্বাক্ষরিত মুখবন্ধগুলি প্রত্যেক ইশতেহার পাঠক-পাঠিকার কাছে অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য।

তবে এসবের পরেও বলতে হবে, এত সীমাবদ্ধতা নিয়েও ইশতেহার যে আলো আমাদের দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে- তা এক কথায় অভূতবপূর্ব।

আমরা সবাই জানি রবীন্দ্রনাথের ‘জনগণমন’ গানটি অনেক বড়। তার প্রথম অংশটা আমাদের ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসেবে গাওয়া হয়।

এই গানেরই এক জায়গায় রবীন্দ্রনাথ লিখলেন,

“ দারুণ বিপ্লব-মাঝে  তব শঙ্খধ্বনি বাজে

               সঙ্কটদুঃখত্রাতা।”

রবীন্দ্রনাথ আমাদের সঙ্কট ও দুঃখ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিপ্লবের শঙ্খধ্বনি শুনিয়েছিলেন। আর কমিউনিষ্ট ইশতেহারের শেষ প্রান্তে এসে মার্কস এঙ্গেলস বললেন, ”শাসক শ্রেণীরা কাঁপুক কমিউনিস্ট বিপ্লবের আতঙ্কে”।

বিপ্লবী লড়াইয়ের উত্তাল তরঙ্গে শাসকের বুকে কাঁপন ধরাতে পারলেই সঙ্কট ও দুঃখ থেকে মানুষের মুক্তির দিশা মিলবে। গড়ে উঠবে নতুন সমাজ। যে সমাজে সবাই একসঙ্গে গাইতে পারবে, “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”।

এই পথেই রয়েছে মুক্তির ঠিকানা, শোষণহীন সমাজ গড়ার দিশা। তাই সেই লক্ষ্যকে ধ্রুবতারা করেই জারি থাকুক আমাদের পথ চলা। আর সে পথে আলো দেখাক কমিউনিষ্ট ইশতেহার।

Spread the word