২০ অক্টোবর ২০২২ (বৃহস্পতি বার)
দ্বিতীয় পর্ব
অথ নির্মলা উবাচ
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন দাবী করেছেন – ‘টাকার দাম নাকি কমেনি’। তাই?
২০১৪ সালে ১কেজি/লিটার ভোজ্য তেল কিনতে ৬০টাকা খরচ হতো। এখন ১৮০টাকা খরচ হয়। ২০১৪ সালে যে পরিমাণ টাকার বিনিময়ে কোনও পণ্য পাওয়া যেত, ২০২২ সালে সেই পরিমাণ পণ্য কিনতে ২/৩গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হয়। এর পরেও কোন যুক্তিতে নির্মলাজি দাবী করেন টাকা দাম মোদিজি’র রাজত্বে কমেনি?
এ তো গেল দেশের ভিতরে টাকার শক্তি/দাম কমার কথা। দেশের ভিতরে টাকার দাম কমলে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম একই থাকবে, কোন যুক্তিতে এই বিচিত্র দাবী করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী?
টাকা-ডলার সম্পর্ক
১ মার্কিন ডলার = ৮৩.০১টাকা (১৯অক্টোবর,২২), ২০১৪ সালে ছিল ৬২.৩৩ টাকা।
অনেকেই ভাবতে পারেন, ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমলে সাধারণ গরীব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের কি এসে যায়? আদার ব্যাপারীদের জাহাজের খবর রেখে কাজ কি!
এই বছর (২০২২) আগষ্ট মাসে আমাদের দেশ মোট ৬১.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মানে ৪,৯৩,৪৪০ কোটি টাকার পণ্য-পরিষেবা আমদানি করেছে বিদেশ থেকে। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৭,৭৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যার ভারতীয় মুদ্রায় মূল্য ছিল ২,৩০,১৬৪.৫০ কোটি টাকা। এর মানে মোদিজি’র রাজত্বে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। মোদিজি’র ‘Make in India’ শ্লোগান এখন অতীত। বিদেশী পণ্য-পরিষেবার ওপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে বছর বছর।
এখন যদি আজকের টাকার বিনিময় মূল্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে বিদেশ থেকে সমপরিমাণ পণ্য-পরিষেবা মার্কিন ডলারের বিনিময়ে আমদানি করতে হ’ত, তাহলে ওই একই পরিমাণ পণ্য- পরিষেবা কেনার জন্য ৩৭,৭৯৬ মিলিয়ন x ৮৩.০১ টাকা = ৩,১৩,৭৪৪ কোটি টাকা খরচ করতে হতো। অর্থাৎ একই পরিমাণ পণ্য-পরিষেবা কিনতে দেশবাসীকে ২লক্ষ ৯হাজার ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হতো।
যেহেতু যে কোনো দেশ থেকেই আমরা পণ্য-পরিষেবা কিনি না কেন, সামান্য কিছু দেশ ও ক্ষেত্র ছাড়া সব কিছুই মার্কিন ডলার খরচ করেই কিনতে হয়। তাই টাকার দাম ডলারের তুলনায় কমলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, সাধারণ মানুষেরই দুর্দশা বাড়ে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শুধু কয়লা, পেট্রোল বা ডিজেল নয়, বিপুল পরিমাণ ওষুধও বিদেশ থেকে কিনতে হয়, যা আমাদের প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য কাজে লাগে। ২০২১ সালে এই ওষুধ আমদানির পরিমাণ ছিল ৫১,৭৩৭ কোটি টাকা। এখন ৮৩.০১ টাকা দিয়ে ১ মার্কিন ডলার কেনা, আর ৬২.৩৩ টাকা দিয়ে ১ মার্কিন ডলার কেনার তফাৎটা বুঝতে নিশ্চয়ই কারুরই অসুবিধা হচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রীর আবিষ্কার
২০১৪ সাল থেকে টাকা দুর্বল হয়নি, কিন্তু মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েই চলেছে – এটাই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নতুন আবিষ্কার। আর কয়েকদিন আগে এই আবিষ্কারটা প্রকাশ করলে নির্মলাজি’র তত্বকে নোবেল কমিটি পুরষ্কার না দিয়ে পারতো!?
ভেঙে পড়া অর্থনীতি
আসলে মুদ্রাস্ফীতি, তীব্র বেকারত্ব বৃদ্ধি, মানুষের রোজগার কমে যাওয়া, ব্যাঙ্ক বিপর্যয় আর তার সাথে কর্পোরেট লুঠ, দেশের অর্থনীতিকে বিপদের এক গভীর কিনারায় নিয়ে গেছে বিজেপির রাজত্বে। বিজেপির কর্পোরেট তোষণকারী ও জনবিরোধী নীতির জন্যই অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, যার ফলশ্রুতিতে টাকার দামও কমছে, আর দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
চাই সরকার বদলের লড়াই
এই জন্যই বিজেপির কর্পোরেট তোষণকারী জনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে সব গরীব-নিম্নবিত্ত- মধ্যবিত্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়াজ তুলতে হবে – নীতি বদলাও, নয় মানুষ বদলে দেবে বিজেপি সরকার।
প্রবন্ধতে ব্যবহার করা ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত…