Site icon CPI(M)

Is still relevant Kakababu

৫ আগস্ট ২০২৩ (শনিবার)

বিংশ শতকের শুরুর দিকের কথা। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি খুঁজছে ভারত। দেশ স্বাধীন করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে লাখো মানুষ। এই আন্দোলন কে শেষ করতে ইংরেজ রা ও চেষ্টার কসুর করেছে না, শুরু হলো ভাগ করা নীতি প্রথমে ধর্মের ভিত্তিতে, তার পর জাতপাতের ভিত্তিতে। ফল ও কিছুটা পাচ্ছিল তারা, কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, হিন্দু মহাসভা তে মানুষ, আন্দোলন, শক্তি ভাগ হয়ে যাচ্ছিল । মুসলিম চাষিরা কখনো প্রত্যক্ষ লড়াই চালিয়েছে কখনো যুবকরা অংশ নিয়েছে ‘খিলাফৎ আন্দোলনে’। তাদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশদের তাড়িয়ে মুসলমান শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। হিন্দু যুবকদের একাংশ বেছে নিয়েছিল সশস্ত্র বিপ্লবী ধারা। সেই ধারার মতাদর্শগত বুনিয়াদে ছিল হিন্দু জাগরণ। ব্রিটিশ তাড়িয়ে তারা চেয়েছিল হিন্দুরাজ। শিখদের একটা অংশ চেয়েছিল খালসা রাষ্ট্র। আর কংগ্রেসের জমিদার নেতারা তখন ব্রিটিশদের অধীনে থেকেই জমিদার রাজ চাইছে। সেই সময় চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করা এক তরুণ মাদ্রাসা শিক্ষা বর্জন করে আধুনিক শিক্ষা শিখতে চেয়ে বাড়ির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে কলকাতায় এসে পৌঁছেছে। সেও মনে প্রাণে চায় ব্রিটিশমুক্ত ভারত। স্বাধীনতার লড়াই চলছে যে কটা ধারায় একটাতেও সে সন্তুষ্ট হতে পরছে না। ব্রিটিশদের তাড়িয়ে কাদের হাতে দেশের রাজ উঠবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াতে লাগল। ওদিকে শ্রমিকদের দুরাবস্থা তাকে প্রতিনিয়ত বিচলিত করত। শ্রমিকদের কষ্ট লাঘব করার পথ খোঁজার তাড়না থেকেই সেই তরুণের হাতে চলে এল কয়েকটা বই। যার বিষয়বস্তু মার্কস-লেনিনের চিন্তা ও কাজ। ব্যাস, মিলে গেল সব অঙ্ক। ব্রিটিশ তাড়ানোর পর কারা নেতৃত্ব দেবে তার উত্তর আর অজানা রইল না। স্বাধীনতা সংগ্রামের যথাযথ ধারার হদিস পেল ভারতের জনগণ। পরবর্তীতে উপরে সবগুলো ধারা চলার পথে ধাক্কা খেয়ে বিকল্প খোঁজার কাজে অগ্রসর হয়েছিল। ততদিনে রুশ বিপ্লব হয়ে গেছে। দুনিয়ার কোণায় কোণায় ছড়িয়ে গেছে বলশেভিকদের সাফল্যের আলো। ভারতের বিপ্লবীরা আলোকিত হয়েছিল সেই অলোতে। ব্রিটিশ তাড়ানোর লড়াইয়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছিল ওই নবগঠিত কমিউনিস্ট ধারা।

খিলাফৎ আন্দোলন


কিন্তু সবার মাঝে ধ্রূবতারার মতো উজ্জ্বল ছিলেন কাকাবাবু। সাচ্চা কমিউনিস্ট কী করে হতে হবে, তার যেন জীবন্ত প্রতিভূ। শ্রমিকশ্রেণীর অশ্রু মুছতে চেয়ে ছুটে বেড়িয়েছিলেন বাংলার শিরা-উপশিরায়। উপায় খুঁজে পেয়েছিলেন কলেজস্ট্রিটের এক বইয়ের দোকানে। ধরণীর বুকে মার্কসবাদের আবিস্কার যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই মার্কসবাদের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা সারা ভূ-ভারতে বোধহয় ওই একটিই। অবিশ্বাস্য চিন্তাবিদ। বিরল বিপ্লবী।
ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষে যুদ্ধবিরোধীতার কথা বলার জন্য বেনজির সন্ত্রাস নেমে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টির সংগ্রামী অংশের উপর। রাষ্ট্রের বেলাগাম দমন-পীড়নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পার্টি কর্মীদের সংহত করা তখন ভীষণ প্রয়োজন। নইলে সংকটের দিনে পার্টির কার্যক্রম সংগঠিত করা কঠিন হয়ে উঠছিল। উপায় কী! সর্বসম্মতিতে একটি উপলক্ষই উঠে এলো প্রস্তাব হিসেবে। কাকাবাবুর জন্মদিন পালন করতে হবে। ভাবা যায়! ব্যক্তিপুজোর সম্যক বিরোধী কমিউনিস্ট পার্টিতে একজন জীবিত নেতার জন্মদিন পালন হচ্ছে। তাও সর্বসম্মতিক্রমে। না, বিরোধীতা কিন্তু করেছিলেন একজন। প্রবল আপত্তি করেছিলেন তিনি। তিনি কমরেড মুজাফফর আহমেদ। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলার আসামী। কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় অপরাধী। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভূত। স্বাধীন ভারতের রক্তপিপাসুদের যম। আর মেহনতি জনতার কিন্তসুগী (জাপানি লোককথায় প্রচলিত এই পদার্থটি ভাঙা বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দামী জিনিসকে আগের থেকেও মজবুতভাবে জুড়ে রাখে)। কাকাবাবুর জন্মদিন পালনের উপলক্ষটাও ছিল রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সংগ্রামের অংশ। একদিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অন্যদিকে সংশোধনবাদী আক্রমণের সামনে পার্টির বিপ্লবী অংশকে সংগঠিত করার ধাপ।


ইতিহাসের মোড় বদলে দেওয়ার কর্মকাণ্ডে কখনও কিছু ব্যক্তি দারুন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ইতিহাসের গতানুগতিক ধারা ভাঙতে পারার ক্ষমতা ও সাহস রাখা সেই যুগপুরুষরা কখনোই কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ের সম্পদ না। ইতিহাসের আবহমানকালের সম্পদ। চিরহরিৎ। সদা প্রাসঙ্গিক।
কাকাবাবুরাই পরাধীন ভারতে প্রথম পূর্ণ স্বরাজের দাবি তুলেছিলেন। জাতীয় কংগ্রেসের ১৯২১ আহমেদাবাদ অধিবেশনে এই মর্মে সর্বপ্রথম একটি ইশতেহার বিলি করেন ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের কর্মীরা। তারপর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার লাগাতার লড়াই চালিয়ে গেছে কমিউনিস্ট পার্টি। সেই লড়াইয়ে জঙ্গী মেজাজ এসেছিল কমরেড মুজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে। ১৯২৮ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে লাল ঝাণ্ডা হাতে শ্রমিকদের মিছিল ঘীরে ফেলেছিল অধিবেশনস্থল। দাবি ছিল পূর্ণ স্বরাজের দাবিকে প্রধান লক্ষ্য করার। জঙ্গি কুচকাওয়াজের অদ্বিতীয় নেতা ছিলেন সেদিন কমরেড কাকাবাবু।


শুধু আন্দোলন তৈরি না। সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশকে সহজ ভাষায় বোঝানোর জন্য প্রবন্ধ লিখতেন তিনি। রাজনীতিবিদ না হলে হয়তো প্রাবন্ধিকই হতেন যিনি, তার ঝরঝরে বোধগম্য লেখা মানুষকে বুঝিয়ে দিত পূর্ণ স্বরাজের চেহারা। মানুষের সাথে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করে শিক্ষিত করার প্রয়াসে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন কাকাবাবু। যার ফলাফল ন্যাশনাল বুক এজেন্সি। সময়ের বেড়াজাল টপকে আজও মানুষকে শেখানোর ওটাই প্রধান মেকানিজম।
এই বিক্ষিপ্ত কয়েকটা কথা স্মরণ করে নেওয়া আমাদের নিজেদের সময়টাকে দেখার জন্যই। লড়াইয়ের রুটম্যাপের অঙ্ক বুঝতে হলে বারবার ফিরে যেতে হবে কাকাবাবুর কাছে। তাঁর লুকিং গ্লাসেই মিলবে আগামী দিনের রাস্তা ১৯২৬ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর একটা প্রবন্ধ লেখেন যা আজকের দিনে ও প্রাসঙ্গিক। আজকের ভারতের পরতে পরতে পশ্চাদপদতা। কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে নব্য ফ্যাসিস্ট আরএসএসের নির্বাচনী শাখা বিজেপি। তাদের অর্থনৈতিক নীতি সর্বশান্ত করছে ভারতবাসীকে। নৃশংস আক্রমণের শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘু-দলিত-মহিলা-মুক্তচিন্তাধারীরা। বাংলায় মসনদে বসে আছে তাদেরই দোসর তৃণমূল। যাদের বদান্যতায় সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ভোটদানের মতো প্রাথমিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করারই অধিকার হারিয়েছে রাজ্যবাসী। মানুষকে ভোট দেওয়ানোর সুযোগ কেড়ে নিতে গিয়ে তৃণমূলের পৈশাচিক সন্ত্রাস কেড়ে নিয়েছে ৪৭টি প্রাণ। কাকাবাবু পূর্ণ স্বরাজের বৈশিষ্ট্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন সার্বজনীন ভোটাধিকারকে। অবিরাম লড়াই সংগ্রামের পথ ধরে বাংলায় যখন প্রথম বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠা হয় গরীবগূর্ব মানুষ খুঁজে পায় তার রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের নিশ্চয়তা পায়। আর পায় সার্বজনীন ভোটাধিকার। আজ খাতায় কলমে সেই অধিকার টিকে থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্ব নেই আর। এইবারের পঞ্চায়েতে ভোটে ভোটদানের অধিকার আদায়ের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের আখ্যান কাকাবাবুর নেতৃত্বেই রচিত হয়েছে আবারো। ওদিকে বিজেপি কেড়ে নিতে চাইছে মুসলিম দলিত আদিবাসীদের গণতন্ত্র। নির্মূল করতে চাইছে তাদের অস্তিত্ব। কিন্তু মানুষের অধিকার রক্ষা করাই প্রধান কর্তব্য কমিউনিস্টদের। তাই আজও ছুটছে রানার। এখনও সময় হয়নি থামার।


বামফ্রন্ট সরকারের প্রথমদিকের প্রধান রাজনৈতিক অবদান ছিল ভূমিসংস্কার এবং অপারেশন বর্গা। জমিদারদের জমিদারি মুছে গেছিল বাংলা থেকে। মধ্যস্বত্বভোগীরা বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি বনে গিয়েছিল। কিন্তু আজ তৃণমূল কংগ্রেসের জামানা নতুন মোড়কে ফিরিয়ে এনেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের। শহর লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় জোরজুলুম করে চাষীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে অধুনা জমিহাঙর, প্রোমোটাররা। ফাঁদছে রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থা। নতুন করে ভূমিহীন, সহায় সম্বলহীন হচ্ছে কৃষকরা। নতুন ধারার জমিদার হয়ে উঠছে ভুঁইফোড় প্রোমোটারগোষ্ঠী। সাথে আছে ফোঁড়েদের উৎপাত। মেহনত করে যে কৃষকরা ফসল ফলাচ্ছে, তারা কেজি প্রতি ফসলের দাম পাচ্ছে ২-৫ টাকা। বাজারে সেই ফসল বিকোচ্ছে চড়া দামে। লাভের গুড় সব ফোঁড়েদের। এই ফোঁড়েরা সকলেই তৃণমূলের নেতা। পূর্ণ স্বরাজে কোনোপ্রকার মধ্যস্বত্বভোগীদের থাকার কথা নয়। অতএব আজ বিপর্যস্ত আমাদের পূর্ণ স্বরাজ। এ’বারের পঞ্চায়েতে লাল ঝাণ্ডার লড়াই ছিল তৃণমূলের ঘুঘুর বাসা ভাঙার। লড়াই ছিল মধ্যস্বত্বভোগীদের দিন শেষ করার। ঠিক যা করার ডাক দিয়েছিলেন কমানদান্তে মুজফ্ফর আহমেদ। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তাই ফিরে ফিরে এসেছে কাকাবাবুর মতো কমিউনিস্টদের ভূত। ঘুমোতে দেয়নি নতুন জমিদারদের। যেমন যমের মতো তাড়া করে বেরিয়েছিলেন দিল্লীর উপকণ্ঠে হাজির থেকে। ভারতের সব কৃষিজমির ফসলের অধিকার একচেটিয়া কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার আইন এনেছিল কেন্দ্র। আধা সামন্ততান্ত্রিক-আধা পুঁজিবাদী দেশের জমিতে কর্পোরেট হাঙরের সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় পুঁজিবাদী নির্মমতার প্ল্যানিং। রুখে দিয়েছিল জনতার ঐক্য আর গণপ্রতিরোধ। নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা হান্নান মোল্লারা। সে’বার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নো মিডলম্যানের দৃপ্ত আওয়াজ। আজও দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটছে রানার।


ফ্যাসিস্ট বিজেপি তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই কফিনে পাঠিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্রের অবশেষটাও। বিরুদ্ধে মতদান করলেই কপালে জুটছে হয় জেল নয় মৃত্যু। সরাসরি ফরমান জারি করেছে মানুষের খাওয়া, পরা, বিনোদন, ভাষা থেকে শুরু করে যাবতীয় নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপর। গৌরি লঙ্কেশ থেকে দাভেলকার হয়ে স্ট্যান স্বামী। মৃত্যুমিছিল বেড়েই চলেছে। বর্বরতার সমস্ত মাত্রা উলঙঘন করে বেনজিরভাবে চলছে মণিপুর, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড জেনোসাইড। ঘৃণার সংস্কৃতিতে ছেয়ে যাচ্ছে ভারতের জল বায়ু বাতাস। পিছিয়ে নেই আমাদের রাজ্যও। এখানেও গণতন্ত্রের একই দশা। বিরুদ্ধ রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে রোজ। সবক্ষেত্রেই গণমাধ্যম নির্লজ্জ ভূমিকা রাখছে। উল্টোদিকে মুক্তিকামী মানুষের কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কাকাবাবুর ডাক। গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার অনুপস্থিতি কোনোদিনই পূর্ণস্বরাজ নয়। ভারতের মাটিতে আজকের লড়াই কার্যত ভারতের অর্জিত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াই। স্বাভাবিকভাবেই সেই লড়াইয়ের সবথেকে যথাযথ ধারাকে চ্যাম্পিয়ন করতে হলে প্রতি মুহূর্তে আমাদের চারপাশে থাকবে সেই ধারার ক্যাপ্টেনরা। কাকাবাবুর কমরেডরা। জনগণের পয়লা নম্বর বন্ধু কমিউনিস্টরা। রাত্রির পথে পথে চলছে, কোনো নিষেধ জানে না মানার।


কাকাবাবু তার ‘ভবিষ্য ভারত’ প্রবন্ধে স্বাধীন ভারতের যে ছবি এঁকেছিলেন তাতে ছিল ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা’, ‘নারী পুরুষ সমাধিকার’ এবং রেলওয়ে-খনির মতো ‘সাধারণ হিতকারী জিনিস’-এর রাষ্ট্রায়ত্তকরণের কথা। প্রতিটি ক্ষেত্রই এখন দেশ তথা রাজ্যে ক্ষতবিক্ষত। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ শিক্ষার কেন্দ্রীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং বানিজ্যিকীকরণ করছে। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে নিশ্চিহ্ন হতে চলছে গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক উপাদান। গরীব মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে শিক্ষা। পিছিয়ে নেই রাজ্য সরকারও। আমাদের রাজ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৮৩০৭টি সরকারি বিদ্যালয়। ডিজিটাল ডিভাইডে শিক্ষার আঙিনার বাইরে চলে গেছে অজস্র গরীব ছাত্র।
অথচ অনেক লড়াই আন্দোলনের ফসল হিসেবে বাংলার মাটিতে বামফ্রন্ট সরকার কায়েম করেছিল দ্বাদশ শ্রেণী অবধি অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা। বিজেপিকে রুখতে ২০০৪-এ বামপন্থীরা যখন ইউপিএ সরকারকে সমর্থন দেয়, তখন মন্ত্রীত্ব না নিয়েও মানুষের দাবিকে চ্যাম্পিয়ন করতে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে একাধিক জনকল্যাণকর আইন পাশ করিয়ে নেয়। তার মধ্যেই ছিল ‘রাইট টু এডুকেশন’-এর দাবিও। বামপন্থীরা সরকারের অংশ হলে মানুষের জন্য যা ভালো, তাই প্রতিষ্ঠা হবে। হয়ে এসেছে।
মহিলাদের জন্য নরক হয়ে উঠেছে দেশ। মনুবাদী বিধানে নারীসমাজের সর্বনাশ সর্বোচ্চ পরিমাণে পৌঁছেছে। মণিপুর, হাথরাস, উন্নাও থেকে মালদা, হাসখালি, কামদুনি। সর্বত্র একই চেহারা। এযাবৎকাল অবধি নজিরবিহীন অত্যাচার। আর দেশজ সাধারণ হিতকারী জিনিস সবই আম্বানি আদানিদের হাতে।
৪৭-এর স্বাধীনতা কাঙ্খিত পূর্ণ স্বরাজের সব স্বাচ্ছন্দ্য দেয়নি। কিন্তু তিলে তিলে অনেকটাই গড়ে তোলা গেছিল, বা গড়ে তোলার পরিস্থিতি তৈরি করা গেছিল। সেই সবই আজ বিপর্যয়ের কবলে। দেশকে এই বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করার কাজে অগ্রসর হতে চাইলে শপথের প্রতিলিপি অবশ্যই কাকাবাবুর ভবিষ্য ভারত। মুক্তির পথ কাকাবাবুর প্রদর্শিত রাজনৈতিক চিন্তা। সেই চিন্তা আজ আরো বিকশিত। অনেক প্রসারিত। তাই অনেক বেশি কার্যকারী। কিন্তু বুনিয়াদি দৃঢ়তা আজও একই। আজও লড়াইয়ের পুরাভাগে কাকাবাবু স্বয়ং। অজস্র রানার ছুটেছে চিঠি আর সংবাদে।


সেদিন ব্রিটিশ তাড়াতে চেয়েছিল অনেকে। তাদের সবার মত ও পথের সাথে একমত হতে পারেননি কাকাবাবু। কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী গণভিত্তি মজবুত করতে তাদের সম্পূর্ণ দূরেও ঠেলে দেননি তিনি, তার পার্টি। কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের ষষ্ট কংগ্রেসের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রস্তত করেছিলেন ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টে’র ব্লু প্রিন্ট। জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মুক্তি সংগ্রামকে জোরদার করেছিলেন। আজ লড়াই ফ্যাসিস্ট তাড়ানোর। তার দোসরদের তাড়ানোর। বিজেপি হটিয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। তৃণমূল হটিয়ে রাজ্য বাঁচাতে হবে। যারা যারা সৎ ও আন্তরিকভাবে এই লড়াইয়ে থাকতে চাইছে তাদের সবাইকে একসূত্রে গাঁথতে হবে। কাকাবাবুদের দেখানো রাস্তা সেই নির্দেশই দেয়। তবে তার মধ্যেও সেই ধারাতে অবিচল থাকতে হবে, যে ধারা ফ্যাসিস্ট তাড়ানোর পর দেশের শাসনভার সাধারণ গরীব ভারতবাসীর হাতে সঁপে দেবে। যারা মানুষের ভালো চেয়েও অন্য পথে হাঁটছে তারা ঠকে শিখে নেবে সময়ের নিয়মে। এভাবেই চিরকাল জ্বলজ্বল করেন কাকাবাবুরা। প্রাসঙ্গিক থেকে যান প্রতিটা লড়াইয়ের মুখরিত সখ্যে। সংশয়ের উদ্রেকে ধোঁয়াশা কাটাতে আজও স্মরণ করতে হয় তাকে। অবিশ্বাস্য চিন্তাবিদ। বিরল বিপ্লবী। মেহনতি জনতার কিন্তসুগী। একজন সাচ্চা কমিউনিস্ট মাত্রই যা হয়ে থাকে।


আরো জোরে, আরো জোরে, হে রানার দুর্বার দুর্জয়
তার জীবনের স্বপ্নের মত পিছে সরে যায় বন, আরো পথ,আরো পথ-বুঝি হয় লাল ও-পূর্ব কোণ

Spread the word