Site icon CPI(M)

Red flag will chase Mamata

“সিঙ্গুরে টাটাকে আমি তাড়াইনি, সিপিএম তাড়িয়েছে।” শিলিগুড়ির বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে অনর্গল বলেছেন বাঙলা থেকে চাকরি তাড়ানো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঙলার আরেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০১১-র নির্বাচনী পরাজয়ের পর বলেছিলেন-আমরা হেরে গেছি তৃণমূল জিতে গেছে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল, এ রাজ্যে শিল্প না এলে রাজ্যের শিক্ষিত বেকাররা ৫ বছর কোথায় যাবে? বাঙলায় নতুন কর্মসংস্থানের কি হবে? এটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাজ্যের উন্নতির প্রশ্ন!

Singur Lands Today


এরকমই একটা হেমন্তের বিকেল। সিঙ্গুর ইস্যুতে উত্তাল রাজনীতি। গোটা রাজ্যের মানুষের চোখ সেদিন গভর্নর হাউসের মিটিং-র দিকে। বহুগুণ বর্ধিত সোলেসিয়াম নিয়ে মমতার সাথে মিটিং-এ বসছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বামফ্রন্ট সরকার বাজারদরের থেকে দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছে সিঙ্গুরের কৃষকদের। বুদ্ধবাবু সেদিন অনুরোধ করেছিলেন মমতা কে, “রাজ্যের স্বার্থে শিল্পটা হতে দিন। ওখানে শিল্প হবে না বলে যে মিথ্যাচার আপনি করছেন দয়া করে সেটা করবেন না।” মিটিং শেষে, ভেবে দেখছি বলে বেরিয়ে এসে, বাইরে প্রতীক্ষারত সাংবাদিকদের মমতা বলেছিলেন, “যা বুঝলাম, ওখানে শিল্প হবে না! স্পা হবে, মদের বার হবে, হোটেল হবে, রেস্তোরাঁ হবে। জোর করে জমি নিয়ে, গরীবের পেটে লাথি মারছে সিপিএম।”

পার্থক্য! আজকের মুখ্যমন্ত্রী আর তৎকালীন বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রীর! ঐ যে গৃহপালিত বাঙলার মিডিয়া আপনাকে পাখি পড়া করিয়েছে “আমরা-ওরা।” ঠিক তাই, এটাই পার্থক্য আমাদের আর ওদের। পার্থক্য মুড়ি আর মিছরির!


আলিমুদ্দিনের ফটক ভেবে সিঙ্গুরের কনক্রিটে নয়, সেদিন মমতা বুলডোজার চালিয়েছিলেন রাজ্যের হাজার কোটি বেকারের স্বপ্ন বাঁধা বুকে। ভবিষ্যতদ্রষ্টারা বলেছিলেন “সিঙ্গুরের রায়ে সিপিএম’র কবর খোঁড়া হয়ে গেলো।” বুদ্ধবাবুর ‘নৈতিক পরাজয়ে’ উল্লাসিত হয়েছিল বামবিরোধী শিবিরের কেন্ট থেকে ক্যাওড়াতলা, লন্ডন থেকে লোনাভেলা। মমতা বলেছিলেন সিঙ্গুর কে চাষযোগ্য করেই হবে ষড়যন্ত্রের পাপস্খলন।


কেমন ‘চাষযোগ্য’ হয়েছে সিঙ্গুর? মাছের ভেড়ি? না কাশফুলের বালিশ? কি চাষ হচ্ছে ওখানে? ডিনামাইট চার্জ করেও ভাঙা যায়নি ঢালাই জমির প্রায় ৪০০ একর। সরকারী হিসেব বলছে ২২৫ একরের বেশী এক ছটাক জমিও সরকার তথাকথিত ‘অনিচ্ছুক কৃষকদের’ ফিরিয়ে দিতে পারেনি। সার ও সেচের অভাবে ফলন হয়নি গোপালনগর মৌজার সেই দু-বিঘা জমিতেও যেখানে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের সামনে দাঁড়িয়ে সাফল্যের হাসি হেসে মুখ্যমন্ত্রী সর্ষে বুনে গিয়েছিলেন। বেড়াবেড়িতে, খাসেরভেড়ি আর সিঙ্গেরভেড়ি মৌজা তে চাষযোগ্য হয়নি এক ইঞ্চি জমিও। বাজেমেলিয়া মৌজা তে ফলন হয়না এক আনারও।


আর কোন ‘পাপস্খলন’ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? আজ যে, নিশ্চিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাওয়া বেকার যুবসমাজ কে নিয়ন্ত্রণ করছে পাড়ার ক্লাবে দাদাগিরিতে অভ্যস্ত বাহুবলী, আজ যে, ভদ্র-গুণী মানুষরা ব্রাত্য হয়ে ‘মা-মাটি-মানুষে’র যাত্রাপালায় মূল শক্তি হয়ে উঠেছে লুম্পেন একটা ‘শ্রেণী’, আজ যে ‘সিন্ডিকেট রাজ’ এবং ‘তোলা রাজ’ সর্বস্ব বাংলা রাজনীতির আকাশে নীতি-আদর্শর লড়াই ক্রমশ পর্যবসিত লাভ লোকসানের অঙ্কে -সেই পাপস্খলনের দায়িত্ব নেবার যোগ্যতা, তার দায় বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা, সেদিনও বর্তমান শাসক দলের ছিল না, আর আজও নেই। রাজ্যের যুবসমাজের এই সামাজিক ও নৈতিক স্খলন চাক্ষুষ করার মত দূরবীন সেদিনও জাতীয় সড়ক অবরোধকারী অনশন মঞ্চে ছিল না, আজও নবান্নের চোদ্দ তলায় নেই।


আপামর দুনিয়ার বহমান কমিউনিস্ট আন্দোলনের ও পুঁজিবাদের দ্বান্দ্বিকতার যে প্রেক্ষিতে বুদ্ধবাবু বাংলা কে গড়ার চেষ্টা করেছিলেন সেই সময়ে, রাজ্য তো বটেই, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও তার গুরুত্ব বোঝে সিপিএম। ৬২ সাংসদ নিয়ে অপ্রতিরোধ্য বামেদের সেই সময় বোতলবন্দী না করতে পারলে কোন শ্রেণীর মানুষের ক্ষতি হতে পারতো সেই শ্রেণীশত্রুদের চেনে সিপিএম। নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর জঙ্গলমহল, কিম্বা গোর্খাল্যান্ড -সেই সময়ের বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে রামধনু জোটের বে-নি-আ-স-হ-ক-লা, প্রতিটা রঙ কে আলাদা করে বিশ্লেষণের ক্ষমতা আছে সিপিএম-র। ২০১১-র বামফ্রন্টের নির্বাচনী পরাজয় কোনও সিম্পল লিনিয়ার ইকুয়েশন ছিল না! জামাত থেকে সঙ্ঘ পরিবার হয়ে ইদানিং সিঙ্গুর ইস্যুতে সাধু সাজা বিজেপি, দেশের বামবিরোধী সমস্ত শক্তির রামধনু জোটের মুখ হিসেবে প্রজেক্টেড হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ফিনান্স ক্যাপিটালের ব্লু-আইড কন্যা মমতা!


ডিয়ার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, টালার ট্যাঙ্কে বিষ মেশানো, হুল দিবসে সিধু-কানুর সাথে ‘ডহর’ বাবুর খোঁজ, বাঙলার বিধানসভায় রাজা রামমোহন রায় কে বসানো কিম্বা আজকে সিঙ্গুরে টাটা তাড়ানো আপনার ফেরেকবাজির পেপ টকে চিড়ে কিন্তু আর ভিজবেনা। মিথ্যের ছকবাজি অনেক হয়েছে। মুদ্দা হল, নিয়োগ কাণ্ডে দুর্নীতি দায়ে আপনার ক্যাবিনেটের প্রাক্তন মন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রী জেলে ঘানি টানছেন। লাইন দিয়ে জেলে গেছেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলি, নিয়োগ কমিটির প্রাক্তন উপদেষ্টা শাস্তি প্রসাদ সিনহা, SSC’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য -বাঙলার শিক্ষা ব্যবস্থার পলিসি মেকিং-র ‘ফ্যাব ফাইভ’! যোগ্য চাকুরি প্রার্থীরা টানা রাজপথে ধর্না দিচ্ছেন কিম্বা সল্টলেকে অনশন করছেন।


মুদ্দা হল, রাজ্যে শূন্যপদ ৬ লক্ষ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতে বঞ্চিত বেকারের সংখ্যা ১৫ লক্ষ। কয়লা থেকে গরু, বালি থেকে সারদা – এই রাজ্যে তৃণমূলের আমলে লুঠ হয়েছে আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট। লুঠ হয়েছে মানুষের পঞ্চায়েত। বুজরুগি ছাড়ুন, গরীব মানুষের রোদে পোড়া, জলে ভেজা কষ্টার্জিত টাকা ফেরৎ আপনাকে দিতেই হবে। শালকু সরেন থেকে অজিত লোহার, প্রদীপ তা, কমল গায়েন হয়ে হালফিলের মইদুল কিম্বা আনিশ। লাশ আমার কুড়িয়েছি। হিসেব আমরা রেখেছি মাননীয়া। কড়াই-গণ্ডায় হিসেব রেখেছি। ইঞ্চিতে-ইঞ্চিতে হিসেব রেখেছি। জনতার আদালতে জবাব তো আপনাকে দিতেই হবে।
বাঙলা থেকে তৃণমূল খেদানোর লড়াই শুরু হয়েছে গেছে মাননীয়া। গ্রাম বাঙলায় অলিতে গলিতে এক চিলতে লাল পতাকা কিন্তু আবার ফিরছে। সিঙ্গুরের শশ্মান থেকে ফিনিক্স কিন্তু আবার উড়ছে। ফিদেল বলেছিলেন History will absolve me। বুদ্ধবাবু বলেছিলেন “একটা বড় চক্রান্তের শিকার রাজ্য। ১০ বছর মানুষ ঠিক বুঝতে পারবেন।” পারছেনও। History কি Absolve করবে কি করবেনা সেটা তো সময় বলবে। কিন্তু ইতিহাসে লেখা আছে, বাঙলা থেকে টাটা কে তাড়িয়েছিলেন, আপনি, খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ইতিহাসে এটাও লেখা থাকবে, বাঙলা থেকে আপনাকে তাড়াবে বামপন্থীরাই। আপনাকে তাড়াবে এই লাল ঝাণ্ডাই!

Spread the word