১৬ সেপ্টেম্বর – ২০২২ (শুক্রবার)
১৫-১৬ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লীতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিটব্যুরোর সভায় গৃহীত বিবৃতি।
হিন্দুত্বের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিসমূহের ব্যাপকতম সমাবেশ গড়ে তোলার প্রসঙ্গে
আগামী দিনে পার্টি নিজেদের কাজে তিনটি লক্ষ্যে এগোবে। পলিট ব্যুরোর সিদ্ধান্ত, পার্টির নিজস্ব সামর্থ্যের বৃদ্ধি ঘটাতে হবে, বাম ঐক্যের শক্তিবৃদ্ধি করতে হবে এবং একইসাথে বাম ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংগ্রামী ঐক্য নির্মাণ। আমাদের সংবিধানের মর্যাদা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও অধিকার সহ নাগরিক অধিকারসমূহকে সুরক্ষিত রাখতে এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্রকে রক্ষা করতে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমুহকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্রিয় হবে সিপিআই(এম)।
অর্থনৈতিক অবনমন
মোদী সরকারের তরফে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক প্রচার চালানো স্বত্বেও দেশের আর্থিক অবনমন চলছেই। বিভিন্ন দেশের আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ‘ফ্লিচ’ সংস্থার পক্ষে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ (আর্থিক বছর হিসাবে বিবেচনা করে)-এ ভারতে উপাদনের হার ৭.৮ থেকে কমে হবে ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২০,২০২১ ও ২০২২-পর্বে প্রকৃত অর্থে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার মাত্র ০.৮ শতাংশ।
এই সময়েই অস্বাভাবিক হারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি পভাব পড়েছে খাদ্যসামগ্রীতেই, যার মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাংক গত আটমাস ৬ শতাংশ হারে সিলিং বজার রেখে চলছে। আগস্ট মাসে পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে পৌঁছায়। খাদ্যসামগ্রীতে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৬২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও খারাপ, গ্রামে মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৭.১৫ শতাংশ।
শিল্পোৎপাদনে বৃদ্ধির পরিমাণ ১২.৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২.৪ শতাংশে। জুন মাসের তুলনায় কন্স্যুমার ড্যুরেবেলস প্রোডাকশন কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতির স্বাভাবিক পরিণতিতেই দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারির অবস্থা আরও জটিল চেহারা নিয়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য জানাচ্ছে ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছেন এমন ভারতীয়দের মধ্যে দৈনিক মজুরি আয় করে জীবিকা নির্বাহকারীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে প্রচারের কাজ
কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানে ১৪ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর সময়কালে দেশজোড়া প্রচার অভিযানের কর্মসূচীর ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ভারতের সংবিধান রক্ষা করাই এই প্রচার কর্মসূচির প্রধান ইস্যু। দেশের বিভিন প্রান্তে বিভিন্ন পন্থায় সেই প্রচারের কাজ চলবে। রাজ্যস্তরে বিরাট আকারের মিছিল এবং জনসমাবেশের মধ্যে দিয়েই সেই কর্মসূচী সম্পাদিত হবে।
অতি ধনীদের জন্য কর ছাড় ও সরকারী সম্পদের লুটেরাদের মর্জিমাফিক কোনোরকম ঋণ মঞ্জুর না করার আর্জি জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। ঐ অর্থ জনস্বার্থে ব্যয়বরাদ্দ হিসাবে নির্ধারিত হোক, বেকারদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরিতে খরচ করা হোক।
মহিলাদের উপরে হিংসার ঘটনা
২০২১ সালে মহিলাদের উপরে হিংসার ঘটনা বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এই একই সময়ে অপরাধীদের শাস্তি হয়েছে তুলনায় অনেকটাই কম। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুটি মেয়েকে গণধর্ষণের মতো ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় সেই রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষায় সরকারী ব্যবস্থার হকিকত স্পষ্ট হয়েছে।
হায়দ্রাবাদ – বিজেপি পুনরায় ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাচ্ছে
১৯৪৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদের নিজাম ভারতের সরকারের সমীপে আত্মসমর্পণ করে, ঐদিন থেকেই হায়দ্রাবাদ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর দিনটিকে ‘মুক্তিদিবস’ হিসাবে পালনের সাথেই বছরভর দেশজুড়ে সেই কর্মসূচী আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছে বিজেপি। ‘মুক্তি’র অছিলায় মুসলমান শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের ধুয়ো তুলে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোই এমন ঘোষণার উদ্দেশ্য।
অত্যাচারী জমিদারশাসনের বিরুদ্ধে ১৯৪৬ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে যে সশস্ত্র সংগ্রাম চলেছিল তারই পরিনতিতে নিজাম শাসনের ভিত টলে যায়। ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর যখন ভারতীয় বাহিনী হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে ততদিনে স্বৈরাচারী নিজামের শাসন প্রায় ভেঙ্গেই পড়েছিল। ৪৮’ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নিজামের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে সেই শাসনের উচ্ছেদ সরকারীভাবে ঘোষিত হয়েছিল।
এই মুক্তি আন্দোলনে আরএসএস’র কোন ভূমিকাই নেই। নির্লজ্জ ব্যতীত আর কেউ এমন কোন দাবী করবে না। মহাত্মা গান্ধীকে খুন করার পরে সর্দার প্যাটেলই আরএসএস’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১৯৪৯ সালের ১১ জুলাই অবধি সেই রায় বলবৎ ছিল। ১৯৪৮ সালে নিজামের আত্মসমর্পণের ঘটনার কৃতিত্বে বসাতে আরএসএস’র মনগড়া দাবী আসলে প্রহসন।
সামন্ততান্ত্রিক শাসন উচ্ছেদের লক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ কৃষকজনতার গৌরবময় সশস্ত্র সংগ্রামকে মর্যাদা দিতে এবং সেই লড়াইতে অসংখ্য শহীদের স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত দিবস হিসাবেই সিপিআই(এম) নিজামের আত্মসমর্পণের দিনটিকে পালন করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেই কৃষকআন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল। এই সকল আন্দোলন সংগ্রামই একদিকে ভূমি সংস্কার আরেকদিকে স্বাধীন ভারতের দাবীতে সংগঠিত হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী সভা
২০২২ সালের ২৯-৩১ অক্টোবর তারিখে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠকের সূচি নির্ধারিত হয়েছে।